আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনে ৬১ জেলায় প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ। শুক্রবার রাতে গণভবনে অনুষ্ঠিত দলটির মনোনয়ন বোর্ডের সভায় এই প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। পরে সংবাদ সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন।
ওবায়দুল কাদের জানান, তৃণমূলের কাছে প্রস্তাব চাওয়া হয়েছিল। সেই প্রস্তাবের ওপর যাচাই-বাছাই করে এই তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
আগামী ২৮ ডিসেম্বর এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে না বলে আগেই ঘোষণা দিয়েছে। এজন্য এই নির্বাচন নিয়ে তেমন কোনো উত্তাপ নেই। তবে সরকারি দলের প্রার্থী কেন হচ্ছেন সেটা নিয়ে রয়েছে ব্যাপক কৌতূহল। যারা মনোনয়ন পাবেন তারাই যে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হচ্ছেন সেটা অনেকটা নিশ্চিত। তিন পার্বত্য জেলা বাদে দেশের ৬১টি জেলা পরিষদে এই নির্বাচন হবে।
যাঁরা মনোনয়ন পেলেন
রংপুর বিভাগ: ঠাকুরগাঁওয়ে মুহাম্মদ সাদেক কোরাইশী, নীলফামারীতে মমতাজুল হক, পঞ্চগড়ে আবু বকর ছিদ্দিক, কুড়িগ্রামে জাফর আলী, গাইবান্ধায় সৈয়দ শামসুল আলম, লালমনিরহাটে মতিয়ার রহমান, দিনাজপুরে আজিজুল ইমাম চৌধুরী, রংপুরে ছাফিয়া খানম।
রাজশাহী বিভাগ: পাবনায় মোহাম্মদ রেজাউল রহিম লাল, চাঁপাইনবাবগঞ্জে মইনুদ্দীন মন্ডল, বগুড়ায় মকবুল হোসেন, নাটোরে সাজেদুর রহমান খাঁন, জয়পুরহাটে আরিফুর রহমান (রকেট), রাজশাহীতে মাহবুব জামান ভুলু, নওগাঁয় একেএম ফজলে রাব্বী, সিরাজগঞ্জে আব্দুল লতিফ বিশ্বাস।
খুলনা বিভাগ: বাগেরহাটে শেখ কামরুজ্জামান টুকু, যশোরে শাহ হাদীউজ্জামান, কুষ্টিয়ায় হাজী রবিউল ইসলাম, সাতক্ষীরা মুনসুর আহমেদ, মেহেরপুরে অ্যাডভোকেট মো. মিয়াজান আলী, চুয়াডাঙ্গায় মাহফুজুর রহমান (মনজু), খুলনায় শেখ হারুন অর রশিদ, নড়াইলে সৈয়দ আইয়ুব আলী, মাগুরায় পঙ্কজ কুমার কুন্ডু, ঝিনাইদহে কনক কান্তি দাস।
বরিশাল বিভাগ: বরগুনায় দেলোয়ার হোসেন, বরিশালে খান আলতাফ হোসেন, পিরোজপুরে শাহ আলম, ভোলায় আব্দুল মমিন টুলু, পটুয়াখালীতে খান মোশাররফ হোসেন, ঝালকাঠিতে সরদার মো. শাহ আলম।
ঢাকা বিভাগ: টাঙ্গাইলে ফজলুর রহমান খান ফারুক, মানিকগঞ্জে গোলাম মহীউদ্দীন, ঢাকায় মাহবুবুর রহমান, মুন্সীগঞ্জে মহিউদ্দিন, গাজীপুরে আখতারুজ্জামান, নরসিংদীতে অ্যাডভোকেট আসাদোজ্জামান, কিশোরগঞ্জে জিল্লুর রহমান, ফরিদপুরে লোকমান হোসেন মৃধা, রাজবাড়ীতে ফকীর আব্দুল জব্বার, মাদারীপুরে মিয়াজউদ্দিন খান, শরীয়তপুরে ছাবেদুর রহমান (খোকা শিকদার), গোপালগঞ্জে চৌধুরী এমদাদুল হক, নারায়ণগঞ্জে আনোয়ার হোসেন।
ময়মনসিংহ বিভাগ: ময়মনসিংহে ইউসুফ খান পাঠান, শেরপুরে চন্দন কুমার পাল, জামালপুরে এইচ আর জাহিদ আনোয়ার, নেত্রকোনায় প্রশান্ত কুমার রায়।
সিলেট বিভাগ: সিলেটে লুৎফর রহমান, হবিগঞ্জে ডা. মুশফিক হুসেন চৌধুরী, মৌলভীবাজারে আজিজুর রহমান, সুনামগঞ্জে এনামুল কবীর ইমন।
চট্টগ্রাম বিভাগ: চট্টগ্রামে আব্দুচ ছালাম, নোয়াখালীতে ডা. এবিএম জাফর উল্লাহ, কক্সবাজারে মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সৈয়দ একেএম এমদাদুল বারী, লক্ষ্মীপুরে শামসুল ইসলাম, কুমিল্লায় আবু তাহের, ফেনীতে আজিজ আহমেদ চৌধুরী, চাঁদপুরে এম আবু ওসমান চৌধুরী।
যেভাবে নির্বাচিত হবেন চেয়ারম্যানরা
জেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী একজন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের পাঁচজন নারী সদস্য নিয়ে জেলা পরিষদ গঠন হবে। এজন্য প্রতিটি জেলাকে ১৫টি ওয়ার্ডে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে ভোটকেন্দ্র রাখা হবে।
২৫ বছর বয়সী যেকোনো ভোটার জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন, তবে ভোট দিতে পারবেন না। ভোটাধিকার থাকবে কেবল জেলার অন্তর্ভুক্ত সিটি/পৌর মেয়র ও কাউন্সিলর, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের। আর প্রার্থীর প্রস্তাবক-সমর্থক হতে হবে তাদেরই।
জেলা পরিষদ নির্বাচন করার জন্য গত ৬ অক্টোবর জেলা পরিষদ আইন সংশোধন করে সংসদে বিল পাস হয়। ২০০০ সালের জেলা পরিষদ আইনে পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সাময়িক বরখাস্তের বিধান ছিল না। নতুন আইনে আদালতে চেয়ারম্যান ও সদস্যদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলায় অভিযোগপত্র গৃহীত হওয়া সাপেক্ষে সাময়িক বরখাস্তের বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়া আগের আইনে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যানদের জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট দেয়ার সুযোগ ছিল না। এখন তারা ভোট দিতে পারবেন। ওই আইনে বলা হয়েছে নির্বাচন করতে চাইলে জেলা পরিষদের বর্তমান প্রশাসকদের পদ ছাড়তে হবে।
সরকার ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলা বাদে বাকি ৬১টি জেলা পরিষদে দলীয় নেতাদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়। তখন স্থানীয় সরকার বিভাগসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিরা বলেছিলেন, ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন দিয়ে জেলা পরিষদ গঠন করা হবে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে অনির্বাচিত প্রশাসক দিয়ে চলছে জেলা পরিষদ। ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জেলা পরিষদ পাবে নির্বাচিত প্রশাসক।