ঢাকা ০৪:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ২৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিবিসির বিশ্লেষণ সময় ফুরিয়ে আসছে ব্রাজিলিয়ান ‘রাজপুত্র’ নেইমারের, বিশ্বকাপে কি দেখা যাবে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:২৯:৫২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫
  • ২৯ বার
২০২৫ সালের ব্যালন ডি’অর উঠেছে উসমান দেম্বেলের হাতে। ফ্রান্সের এই তারকার পুরস্কার জয়ের মুহূর্তে, তার সাবেক সতীর্থ নেইমার শুয়ে ছিলেন বিছানায়। চিকিৎসা নিচ্ছেন বছরের তৃতীয় ইনজুরির কবলে পড়ে। তবে শুয়ে থেকেও অনলাইন পোকার টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে রানার্সআপ হয়ে প্রায় ৭৩ হাজার ৮০০ পাউন্ড জিতেছেন! তবে এ সান্ত্বনা ক্ষণিকের।

কারণ, দেম্বেলের হাতে উঠেছে সেই ব্যালন ডি’অর, যা জেতার স্বপ্ন নেইমার দেখেছেন বহু বছর ধরে।ব্রাজিলিয়ান মহাতারকা নেইমারের যে শেষ সময়ে চলে এসেছে তা বুঝতে খুব একটা কষ্ট হওয়ার কথা না। ইউরোপ ছেড়ে সৌদি ক্লাবে গিয়েছিলেন আরো আগেই, সেখানেও পড়ে ইনজুরির থাবা। এরপর গত জানুয়ারিতে ১২ বছর পর শৈশবের ক্লাব সান্তোসে ফিরে এসেছিলেন নেইমার।

উদ্দেশ্য ছিল নিজের ছন্দ ফিরে পাওয়া, খেলার প্রতি আগ্রহ জাগানো—যা হারিয়ে গিয়েছিল আল হিলালে ব্যর্থ অধ্যায়ের পর।কিন্তু বাস্তবতা একেবারেই অন্যরকম। প্রত্যাবর্তনের পর থেকেই অতি পরিচিত সেই ইনজুরির ছোবলে জর্জরিত নেইমার—এই মৌসুমে সান্তোসের ৪৭ শতাংশ ম্যাচেই তিনি অনুপস্থিত। আর যখন খেলেছেন, তখনও তিনি আর আগের মতো ভয়ঙ্কর নন।

সাও পাওলো স্টেট চ্যাম্পিয়নশিপে নিচের সারির ক্লাবগুলোর বিপক্ষে করা কয়েকটি গোল ও অ্যাসিস্টই তাঁর একমাত্র উজ্জ্বলতা। ব্রাজিলের শীর্ষ লিগে টিকে থাকার লড়াইয়ে থাকা সান্তোসের জন্য তিনি এখন যেন অতীতের ছায়া মাত্র। এতেই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে নেইমারের ২০২৬ বিশ্বকাপ।

আনচেলত্তির দলে নেই, বিশ্বকাপের ঘড়ি চলছে

ব্রাজিল কোচ কার্লো আনচেলত্তি গত বুধবার ঘোষণা করেছেন দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচের দল। তাতে নেই নেইমারের নাম।

২০২৩ সালের অক্টোবরে উরুগুয়ের বিপক্ষে ২–০ গোলে হার ছিল তার শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। এরপর থেকে আর ব্রাজিলের জার্সিতে দেখা মেলেনি ‘রাজপুত্র’ নেইমারের।

আনচেলত্তি অবশ্য এখনো আশাবাদী, ‘তার লক্ষ্য হওয়া উচিত আগামী জুনে বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত থাকা। অক্টোবর বা মার্চে দলে থাকা ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।’

কিন্তু নেইমারের নিজের বক্তব্য ছিল অন্যরকম। ব্রাজিলিয়ান এই সুপারস্টার বলেন, ‘আমাকে বাদ দেওয়ার কারণ ফিটনেস নয় বরং টেকনিক্যাল।’ এই পরস্পরবিরোধী বক্তব্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বিতর্ক।

এদিকে ব্রাজিলের কিংবদন্তি অধিনায়ক কাফুর বলেন, ‘যদি নেইমারের মতো একজন খেলোয়াড় টেকনিক্যাল কারণে বাদ পড়ে, তাহলে বোঝাই যাচ্ছে কিছু একটা ঠিক নেই।’

তিনি আরো বলেন, ‘১৫ বছর ধরে নেইমার একাই ব্রাজিলের আশা-ভরসা ছিল। কিন্তু এখন তিনি তিন ম্যাচ একসঙ্গে খেলতেও হিমশিম খান।’

গবেষণা সংস্থা ডাটা ফোলহার জরিপে দেখা গেছে, ৪৮ শতাংশ ব্রাজিলিয়ান চায় নেইমারকে আবার দলে দেখতে, ৪১ শতাংশ তা চান না।

সান্তোসে ফিরে আসার পর মাঠের পারফরম্যান্সের চেয়ে নিজের আচরণের কারণে থেকেছেন আলোচনায়। দর্শকদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা, হারের পর কান্না, সাংবাদিকদের প্রশ্নে বিরক্তি—সবই যেন তার চারপাশে তৈরি করেছে অনিশ্চয়তার ঘন মেঘ।

তার বাবা ও এজেন্ট নেইমার সিনিয়রও বিতর্কে ঘি ঢেলেছেন, ‘সান্তোসে ফিরে আসা ছিল কেবল পুনরুদ্ধারের জন্য, পাঁচ মাসের পরিকল্পনা।’ এই মন্তব্যে ক্ষুব্ধ সমর্থকরা প্রশ্ন তুলেছেন, নেইমারের মনোযোগ আসলেই ফুটবলে আছে তো?

তবু আশা ছাড়ছেন না সবাই। কিংবদন্তি রোনালদো ‘ফেনোমেনন’ মনে করেন, নেইমার এখনও ব্রাজিলের জন্য অপরিহার্য।

তিনি বলেন, ‘যারা বলে নেইমার নিজের যত্ন নিচ্ছেন না, তারা বুঝতে পারে না ইনজুরি থেকে ফিরে আসা কতটা কঠিন। আমি নিজে জানি, বিশ্বাস করুন—ও সঠিক পথে আছে।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বিবিসির বিশ্লেষণ সময় ফুরিয়ে আসছে ব্রাজিলিয়ান ‘রাজপুত্র’ নেইমারের, বিশ্বকাপে কি দেখা যাবে

আপডেট টাইম : ১১:২৯:৫২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫
২০২৫ সালের ব্যালন ডি’অর উঠেছে উসমান দেম্বেলের হাতে। ফ্রান্সের এই তারকার পুরস্কার জয়ের মুহূর্তে, তার সাবেক সতীর্থ নেইমার শুয়ে ছিলেন বিছানায়। চিকিৎসা নিচ্ছেন বছরের তৃতীয় ইনজুরির কবলে পড়ে। তবে শুয়ে থেকেও অনলাইন পোকার টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে রানার্সআপ হয়ে প্রায় ৭৩ হাজার ৮০০ পাউন্ড জিতেছেন! তবে এ সান্ত্বনা ক্ষণিকের।

কারণ, দেম্বেলের হাতে উঠেছে সেই ব্যালন ডি’অর, যা জেতার স্বপ্ন নেইমার দেখেছেন বহু বছর ধরে।ব্রাজিলিয়ান মহাতারকা নেইমারের যে শেষ সময়ে চলে এসেছে তা বুঝতে খুব একটা কষ্ট হওয়ার কথা না। ইউরোপ ছেড়ে সৌদি ক্লাবে গিয়েছিলেন আরো আগেই, সেখানেও পড়ে ইনজুরির থাবা। এরপর গত জানুয়ারিতে ১২ বছর পর শৈশবের ক্লাব সান্তোসে ফিরে এসেছিলেন নেইমার।

উদ্দেশ্য ছিল নিজের ছন্দ ফিরে পাওয়া, খেলার প্রতি আগ্রহ জাগানো—যা হারিয়ে গিয়েছিল আল হিলালে ব্যর্থ অধ্যায়ের পর।কিন্তু বাস্তবতা একেবারেই অন্যরকম। প্রত্যাবর্তনের পর থেকেই অতি পরিচিত সেই ইনজুরির ছোবলে জর্জরিত নেইমার—এই মৌসুমে সান্তোসের ৪৭ শতাংশ ম্যাচেই তিনি অনুপস্থিত। আর যখন খেলেছেন, তখনও তিনি আর আগের মতো ভয়ঙ্কর নন।

সাও পাওলো স্টেট চ্যাম্পিয়নশিপে নিচের সারির ক্লাবগুলোর বিপক্ষে করা কয়েকটি গোল ও অ্যাসিস্টই তাঁর একমাত্র উজ্জ্বলতা। ব্রাজিলের শীর্ষ লিগে টিকে থাকার লড়াইয়ে থাকা সান্তোসের জন্য তিনি এখন যেন অতীতের ছায়া মাত্র। এতেই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে নেইমারের ২০২৬ বিশ্বকাপ।

আনচেলত্তির দলে নেই, বিশ্বকাপের ঘড়ি চলছে

ব্রাজিল কোচ কার্লো আনচেলত্তি গত বুধবার ঘোষণা করেছেন দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচের দল। তাতে নেই নেইমারের নাম।

২০২৩ সালের অক্টোবরে উরুগুয়ের বিপক্ষে ২–০ গোলে হার ছিল তার শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। এরপর থেকে আর ব্রাজিলের জার্সিতে দেখা মেলেনি ‘রাজপুত্র’ নেইমারের।

আনচেলত্তি অবশ্য এখনো আশাবাদী, ‘তার লক্ষ্য হওয়া উচিত আগামী জুনে বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত থাকা। অক্টোবর বা মার্চে দলে থাকা ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।’

কিন্তু নেইমারের নিজের বক্তব্য ছিল অন্যরকম। ব্রাজিলিয়ান এই সুপারস্টার বলেন, ‘আমাকে বাদ দেওয়ার কারণ ফিটনেস নয় বরং টেকনিক্যাল।’ এই পরস্পরবিরোধী বক্তব্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বিতর্ক।

এদিকে ব্রাজিলের কিংবদন্তি অধিনায়ক কাফুর বলেন, ‘যদি নেইমারের মতো একজন খেলোয়াড় টেকনিক্যাল কারণে বাদ পড়ে, তাহলে বোঝাই যাচ্ছে কিছু একটা ঠিক নেই।’

তিনি আরো বলেন, ‘১৫ বছর ধরে নেইমার একাই ব্রাজিলের আশা-ভরসা ছিল। কিন্তু এখন তিনি তিন ম্যাচ একসঙ্গে খেলতেও হিমশিম খান।’

গবেষণা সংস্থা ডাটা ফোলহার জরিপে দেখা গেছে, ৪৮ শতাংশ ব্রাজিলিয়ান চায় নেইমারকে আবার দলে দেখতে, ৪১ শতাংশ তা চান না।

সান্তোসে ফিরে আসার পর মাঠের পারফরম্যান্সের চেয়ে নিজের আচরণের কারণে থেকেছেন আলোচনায়। দর্শকদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা, হারের পর কান্না, সাংবাদিকদের প্রশ্নে বিরক্তি—সবই যেন তার চারপাশে তৈরি করেছে অনিশ্চয়তার ঘন মেঘ।

তার বাবা ও এজেন্ট নেইমার সিনিয়রও বিতর্কে ঘি ঢেলেছেন, ‘সান্তোসে ফিরে আসা ছিল কেবল পুনরুদ্ধারের জন্য, পাঁচ মাসের পরিকল্পনা।’ এই মন্তব্যে ক্ষুব্ধ সমর্থকরা প্রশ্ন তুলেছেন, নেইমারের মনোযোগ আসলেই ফুটবলে আছে তো?

তবু আশা ছাড়ছেন না সবাই। কিংবদন্তি রোনালদো ‘ফেনোমেনন’ মনে করেন, নেইমার এখনও ব্রাজিলের জন্য অপরিহার্য।

তিনি বলেন, ‘যারা বলে নেইমার নিজের যত্ন নিচ্ছেন না, তারা বুঝতে পারে না ইনজুরি থেকে ফিরে আসা কতটা কঠিন। আমি নিজে জানি, বিশ্বাস করুন—ও সঠিক পথে আছে।’