গত দুই সপ্তাহ ধরে চালের বাজারে অস্থিরতা চলছে। আগের সপ্তাহে কেজিপ্রতি চালের দাম বেড়েছিল ৪ থেকে ৫ টাকা। এই সপ্তাহে চালের বাজার আরও চড়া হয়েছে। কেজিতে দাম বেড়েছে ২ থেকে ৩ টাকা। মিনিকেট চালের কেজি ৮২ থেকে ৮৫ টাকা, নাজিরশাইল চালের কেজি ৮৫ থেকে ৮৬ টাকা এবং মোটা চালের কেজি ৫৬ থেকে ৫৮ টাকায় ঠেকেছে। বাজারে চালের কোনো সংকট না থাকলেও ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে দাম বাড়ছে বলে মনে করছেন ভোক্তারা।
এদিকে চালের পর বাজারে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। অথচ কুরবানি ঈদের পর থেকে বেশ কিছু দিন সবজিসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল ছিল। এখন নতুন করে বাজারে অধিকাংশ পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
চালের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ঈদের পর এখন খুচরা বাজারে চালের দাম বাড়ছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দেশের প্রত্যন্ত এলাকার মোকামগুলোতেই চালের দাম বেড়েছে। ঢাকার ব্যবসায়ীদের দাবি, চালকল মালিকরা ঈদের পর কারবার চাঙ্গা হওয়ায় এই দাম বাড়িয়েছেন।
গত সপ্তাহ পর্যন্ত বিভিন্ন মিলগেটে ৫০ কেজির বস্তাপ্রতি চালের দাম ২৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছিল। এ সপ্তাহে আরও প্রায় দেড়শ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়ার তথ্য জানিয়েছেন খুচরা বিক্রেতারা। সবমিলে ঈদের পর প্রতি বস্তা চালের দাম সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
যে কারণে ঈদের আগের চেয়ে এখন প্রতি কেজি চাল মানভেদে ২ থেকে ৮ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। এখন খুচরায় প্রতি কেজি মোটা চাল (বিআর-২৮, পারিজা) মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৫৮ টাকা দরে। সরু চালের মধ্যে জিরাশাইলের কেজি ৭৪ থেকে ৮০ টাকা এবং মিনিকেট ৮২ থেকে ৮৫ টাকা। কাটারিভোগ বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের জননী রাইস এজেন্সির চাল বিক্রেতা আবুল কালাম বলেন, নাজিরশাইল ছাড়া পাইজাম, বিআর-২৮, মিনিকেটের দাম কেজিপ্রতি ৮ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আগে ৭০ টাকা কেজি দরে পাইকারিতে যে মিনিকেট চাল কিনতাম, এখন কিনতে হচ্ছে ৭৮ থেকে ৮০ টাকায়। আমরা বিক্রি করছি ৮২ থেকে ৮৪ টাকা কেজিতে। মিল পর্যায়ে দাম বাড়ার কারণেই মূলত এখন চালের দাম বেড়েছে।
এই বাজারের ক্রেতা আনিসুর রহমান সময়ের আলোকে বলেন, বাজারে তো চালের কোনো সংকট নেই। প্রতিটা দোকানে শত শত বস্তা চাল। তা হলে সংকট কোথায়। আর সংকট যদি না থাকে তা হলে চালের দাম বাড়বে কেন। আসলে অন্য কোনো কারণ নেই। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণেই দাম বাড়ছে চালের। এদিকে ঢাকার বাজারে ঈদের পর থেকে বেশ স্বস্তিদায়ক ছিল মুরগির দাম, যা এখন বাড়তি। আগে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৫০-১৬০ টাকার মধ্যে বিক্রি হলেও এখন ১৬০-১৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া সোনালি মুরগির দাম কেজিপ্রতি ২০ টাকা বেড়ে ৩০০-৩২০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এদিকে গ্রীষ্মকালীন সবজির সরবরাহ ভালো থাকার পরও সবজির দাম বেড়েছে। বাজারে বেগুনের কেজি প্রকারভেদে ৬০ থেকে ৭০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, বরবটি ৫০ টাকা, দেশি পটোল ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ধুন্দল ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, কচুর লতি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কচুমুখি ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে সজনে ডাঁটার কেজি ১২০ টাকা, ঝিঙ্গা ৬০ টাকা, কাঁচা আম ৪০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা ও কাঁচামরিচ ৫০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, প্রতি কেজি টমেটো ৮০ টাকা, ভারতীয় গাজর ১২০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, দেশি শসা ৫০ টাকা এবং হাইব্রিড শসা ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। বাজারে লেবুর হালি ১০ থেকে ২০ টাকা, ধনেপাতা ৩০০ টাকা কেজি, কাঁচা কলার হালি ২০ টাকা, চাল কুমড়া ৪০ টাকা পিস, ক্যাপসিকাম ৩৫০ টাকা, কাঁকরোল ৫০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারগুলোতে লালশাক ১০ টাকা আঁটি, লাউশাক ৩০ থেকে ৪০ টাকা, কলমিশাক দুই আঁটি ২০ টাকা এবং পুঁইশাক ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব বাজারে আলু ২৫ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৫৫ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে মাছের বাজার গত সপ্তাহের মতোই চড়া দেখা গেছে। এসব বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশ ২ হাজার ৭০০ টাকা এবং ৭০০ গ্রামের ইলিশ ২ হাজার ৪০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
চাষের এক কেজি শিং মাছ (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়, দেশি শিং ১০০০ টাকা, প্রতি কেজি রুই মাছের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, দেশি মাগুর মাছ ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা, মৃগেল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, চাষের পাঙাশ ২০০ থেকে ২৩০ টাকা, চিংড়ি ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, বোয়াল ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বড় কাতল ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা, পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কই ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, মলা ৫০০ টাকা, বাতাসি টেংরা ১৩০০ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি ৫০০ টাকা এবং পাঁচমিশালি মাছ ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে গরুর মাংস কেজিপ্রতি ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকা, গরুর কলিজা ৮০০ টাকা, মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারগুলোতে আদার কেজি ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা, দেশি রসুন ১৩০ টাকা এবং ভারতীয় রসুন ১৮০ টাকা, দেশি মসুর ডাল ১৪০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা, খেসারির ডাল ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়, হাঁসের ডিম ২২০ টাকায়, দেশি মুরগির ডিমের হালি ৯০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।