বাংলাদেশ সচিবালয়ের অভ্যন্তরে ক্যান্টিন পরিচালনা নিয়ে দুই কর্মচারী গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহতদের মধ্যে রয়েছেন সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি নুরুল ইসলাম, যিনি মাথায় লোহার রডের আঘাতে আহত হয়ে বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এক প্রত্যক্ষদর্শী কর্মচারীর মাধ্যমে জানা যায়, ক্যান্টিন চালানো নিয়ে দীর্ঘ কয়েকদিন যাবত দুই পক্ষ কর্মচারীদের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নুরুল ইসলামের লোকজন ক্যান্টিনের পরের দিনের কর্মচারীদের খাবার যোগানের জন্য বাজার করে নিলে রাখার পরে প্রতিপক্ষ পূর্বের কমিটির কর্মচারীগন ও বাদিউল কবীরের লোকজন মিলে হঠাৎ হামলা চালায়। এতে লাঠি, লোহার রড ও চেয়ার ব্যবহার করে একে অপরের ওপর আক্রমণ চালানো হয়।
জেলা সমবায় অফিসার সূত্রে জানা গেছে, সমিতির বিরুদ্ধে তদন্তে পাওয়া অভিযোগগুলো হচ্ছে— ক্ষমতার অপব্যবহার, অর্থ আত্মসাৎ, দায়িত্ব পালনে অবহেলা, রেকর্ড সংরক্ষণের ব্যর্থতা ও সাধারণ সদস্যদের স্বার্থহানিকর কার্যক্রম পরিচালনা।
তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, পূর্বে কমিটিকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হলেও তারা তা গ্রহণ করেননি এবং শুনানিতে উপস্থিত হননি। পরবর্তীতে বিশেষ সাধারণ সভা আয়োজনের নির্দেশ দিলেও তা মানা হয়নি। এসব অনিয়মের কারণে সমবায় আইন অনুযায়ী বর্তমান কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
নতুন অন্তর্বর্তী কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জুলাই-আগস্ট মাসের নিহত ছাত্রের বাবা একজন কর্মচারী বিধায় তাকে সচিবালয় বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড’-এর সভাপতি করে একটি ১০ সদস্যের কমিটি গঠন করে তাদের নামে প্রশাসনিক দায়িত্ব দিয়েছেন।
কিন্তু পূর্বের কমিটির কর্মচারীগন ও বাদিউল কবীর পক্ষের লোকজন এই বরাদ্দকে অগ্রাহ্য করে জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা করে।
মঙ্গলবার, ক্যান্টিন চালু করতে নুরুল ইসলামের লোকজন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক কর্মচারীদের জন্য টিসিবির বরাদ্দ চাউল, আটা ও সচিবালয়ের ক্যান্টিন চালু রাখার জন্য বাজার থেকে চাউল, ডাল, মাংস, সবজি বোঝাই গাড়ি নিয়ে আসে। সেই সময় হোস্টেলের লেবার ও কর্মচারীরা মালামাল নামানোর মুহূর্তে বাদিউল কবীরের লোকজন ও পূর্বের কমিটির কর্মচারীরা অতর্কিতে হামলা চালায়। এতে একাধিক ব্যক্তি আহত হন, নুরুল ইসলামের অবস্থা গুরুতর।
এক গোপন সূত্রে জানা যায়, বিকাল বেলা থেকে বাদিউল কবীরের পক্ষের লোকজন ও পূর্বের কমিটির কর্মচারীরা সিদ্ধান্ত নেন—আজকের মধ্যেই ক্যান্টিন দখল নিতে হবে এবং প্রতিপক্ষকে যেকোনো উপায়ে সচিবালয় থেকে বের করে দিতে হবে।
সংঘর্ষের ফলে সচিবালয়ের পরিবেশ আতঙ্কিত হয়ে ওঠে এবং রাতের সচিবালয় এক পর্যায়ে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলা এ সংঘর্ষে দোকানপাটও ভাঙচুর হয় বলে জানিয়েছেন কর্মচারীরা।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সচিবালয়ের কর্মরত পুলিশ, শাহবাগ থানা পুলিশ ও সচিবালয় নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয় পক্ষকে সরিয়ে দেয়। এখনো পর্যন্ত থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।