বর্ষাকালের বৃষ্টির দোহাই দিয়ে এবার চালের দাম বাড়ালেন চাল ব্যবসায়ীরা। গত কয়েক দিন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার কোথাও না কোথাও বৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া মেঘলা আকাশের কারণে চাতালে ধান শুকানোয় বিঘ্ন ঘটছে। এই দুই কারণ দেখিয়ে এবার কেজিতে ৩ থেকে ৫ টাকা দাম বাড়ল চালের। বিশেষ করে সব ধরনের চিকন চালের দাম বেড়েছে বেশি, মোটা চালের চেয়ে। শুক্রবার রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এ তথ্য জানা যায়।
দেশের বাজারে ইরি-বোরোর নতুন চাল আসার পর চালের দাম কিছুটা কমেছিল। তবে সে স্বস্তি বেশি দিন টিকল না। ঈদের পর এখন খুচরা বাজারে চালের দাম ফের বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দেশের প্রত্যন্ত এলাকার মোকামগুলোতেই চালের দাম বেড়েছে। ঢাকার ব্যবসায়ীদের দাবি- চালকল মালিকরা ঈদের পরে কারবার চাঙ্গা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই দাম বৃদ্ধি করেছেন। এ ছাড়া বৃষ্টির অজুহাতেও দাম বাড়িয়েছেন তারা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বিভিন্ন মিলগেটে ৫০ কেজির বস্তাপ্রতি চালের দাম ২৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
শুক্রবার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ঈদের আগের চেয়ে এখন প্রতি কেজি চাল ৩ থেকে ৫ টাকা টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। এখন খুচরায় প্রতি কেজি মোটা চাল (বিআর-২৮, পারিজা) মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬২ টাকা দরে। সরু চালের মধ্যে জিরাশাইলের কেজি ৭৪ থেকে ৭৮ টাকা এবং মিনিকেট ৭৬ থেকে ৮০ টাকা। কাটারিভোগ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজিতে।
এদিকে ঢাকার বাজারে ঈদের পর থেকে বেশ স্বস্তিদায়ক মুরগি, ডিম ও সবজিসহ অন্যান্য বেশকিছু পণ্যের দাম। আবার এর মধ্যে মুদি পণ্যগুলোর দামেও তেমন হেরফের হয়নি। কম দামে কেনা যাচ্ছে পেঁয়াজ, আলুসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যও। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ব্রয়লার মুরগির দাম ১৫০ টাকায় নেমে এসেছে। আর ডিমের ডজন এখন এরপর পৃষ্ঠা ১১ কলাম ৩
বৃষ্টির দোহাই দিয়ে চালের দাম বাড়ালেন ব্যবসায়ীরা ১২০-১৩০ টাকা। ঈদের পর রাজধানীর বাজারে এখনও ক্রেতা উপস্থিতি কম। আবার ঈদুল আজহার কুরবানির মাংসও রয়েছে বেশিরভাগ ঘরে। যে কারণে ডিম-মুরগির চাহিদা কম।
শুক্রবারও বেশিরভাগ দোকানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। যেখানে ঈদের আগে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছিল ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়। সেই হিসাবে ঈদের ছুটির আগে-পরে বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম ২০ টাকা কমেছে। ব্রয়লারের পাশাপাশি সোনালি মুরগির দামও কমেছে। বাজারে প্রতি কেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হয়েছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায়। এ ছাড়া ডিমের বাজারে লাল ডিম ডজনপ্রতি ১৩০ টাকা, হাঁসের ডিম ২২০ টাকা এবং দেশি মুরগির ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়।
বাজারে গরুর মাংসের চড়া দাম। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকায়, যা অনেক মধ্যবিত্ত ও স্বল্পআয়ের মানুষের জন্য অনেকটাই নাগালের বাইরে। এদিকে বাজারে আগের মতোই চড়া রয়েছে খাসির মাংসের দাম। প্রতি কেজি খাসির মাংস ১ হাজার ২৫০ টাকা ও ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ টাকায়।
রাজধানীর বাজারে সবজির সরবরাহ ভালো থাকায় কেজিপ্রতি ১০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত কমেছে দাম। এতে সাধারণ ভোক্তাদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। সবজির বাজারে করলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়, বরবটি ৫০ টাকা, দেশি পটল ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ধুন্দুল ৪০ থেকে ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, কচুর লতি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকা, সাজনা ডাটা ১০০ টাকা, ঝিঙ্গা ৬০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, কাঁচামরিচ ৬০ থেকে ৮০ টাকা, কাঁচা আম ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া ছোট ফুলকপি প্রতি পিস ৫০ টাকা, লাউ ৪০ থেকে ৫০ টাকা, টমেটো ৬০ টাকা, ইন্ডিয়ান গাজর ১২০ টাকা, মুলা ৫০ টাকা, দেশি শসা ৫০ টাকা এবং হাইব্রিড শসা ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে লালশাক ১০ টাকা আঁটি, লাউশাক ৩০ থেকে ৪০ টাকা, কলমিশাক দুই আঁটি ২০ টাকা, পুঁইশাক ৩০ টাকা এবং ডাটাশাক দুই আঁটি ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আলু ২৫ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৫৫ টাকা এবং ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাছের বাজারে ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা গেছে। এক কেজি ওজনের ইলিশ ২ হাজার ৬০০ টাকা, ৭০০ গ্রাম ইলিশ ২ হাজার ৪০০ টাকা, চাষের শিং মাছ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, দেশি শিং ১ হাজার টাকা, রুই ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, দেশি মাগুর ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা, মৃগেল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, চাষের পাঙাশ ২০০ থেকে ২৩০ টাকা, চিংড়ি ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, বোয়াল ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বড় কাতল ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা, পোয়া ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কৈ মাছ ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, মলা ৫০০ টাকা, বাতাসি টেংরা ১ হাজার ৩০০ টাকা, টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি মাছ ৫০০ টাকা এবং পাঁচমিশালি মাছ ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।