ঢাকা ০৭:৫০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বৃষ্টি নেই, তবু আষাঢ় এসেছে, প্রকৃতির দ্বিধায় শুরু বর্ষা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:২৪:২৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫
  • ২৯ বার

বাংলা পঞ্জিকার পাতা বলছে আজ আষাঢ়ের প্রথম দিন। বর্ষার আনুষ্ঠানিক সূচনা হলেও প্রকৃতিতে তার সাড়া নেই। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে এখনো নামেনি সেই কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টিধারা। চারদিকে শুধুই ভ্যাপসা গরম, গুমোট বাতাস আর রোদের দাবদাহ।

বর্ষাকাল বাংলা বছরের তৃতীয় ঋতু, যে আষাঢ় ও শ্রাবণ জুড়ে বিস্তৃত। যদিও আবহাওয়াবিদরা জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়কে বর্ষা মৌসুম হিসেবে বিবেচনা করেন। তবে যেভাবেই দেখা হোক, বর্ষা মানেই বাংলার প্রকৃতিতে প্রাণের নতুন সঞ্চার।

এ সময়টিকে ঘিরে আমাদের সাহিত্যে, সঙ্গীতে ও আবেগে রয়েছে গভীর রোমান্টিকতা। আষাঢ় মানেই রিমঝিম বৃষ্টি, কদমফুল, ভেজা মাটি আর প্রেমে-ভেজা বিকেল। ব্যাঙের ডাক, ইলিশ ভাজা আর রবীন্দ্রসঙ্গীত। গাঢ় সবুজ হয়ে ওঠা প্রকৃতি, নরম মাটি ভেদ করে অঙ্কুরোদ্গম, আর কৃষিপ্রধান বাংলায় চাষাবাদের জন্য অপরিহার্য এই বর্ষার বৃষ্টি। অথচ এবারের আষাঢ়ের শুরুটাই যেন উল্টো সুরে বাজছে।

রাজধানীতে মেঘের আনাগোনা থাকলেও নেই এক ফোঁটা বৃষ্টিও। বরং গরমে হাঁসফাঁস করছে জনজীবন। আকাশে মেঘ, অথচ তার নিচে ঝরছে ঘাম। প্রকৃতি যেন অপেক্ষার খেলা খেলছে। বিদায় নেয়নি পুরোপুরি গ্রীষ্ম, আসেনি পুরোপুরি বর্ষাও।

তবে প্রকৃতি যে বর্ষার আগমনী বার্তা দিচ্ছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। মাঠে কদম ফুল ফুঁটেছে, সাদা-হলুদ গোলাকার ফুলগুলো জানান দিচ্ছে, বর্ষা আসতে চলেছে। পল্লী প্রান্তর থেকে শহরের পার্ক—সবখানেই কদম গাছ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বৃষ্টির অপেক্ষায়।

শিল্প-সাহিত্যে বর্ষা সবসময়ই একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ থেকে শুরু করে আধুনিক কবিরাও এই ঋতুকে ভরিয়ে দিয়েছেন প্রেম ও প্রতীক্ষার আবেগে। কদমফুল হাতে দেখা, কিংবা বৃষ্টির ছোঁয়ায় পুরনো স্মৃতির ঘ্রাণ খুঁজে পাওয়া এসব বর্ষার আবশ্যিক অনুষঙ্গ। বর্ষা মানেই রোমান্টিকতার ঋতু হলেও অভিসার, বিরহ আর ভোগান্তির দিন কিন্তু কম নয়। রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে আধুনিক কবীর সুমন পর্যন্ত,সৃষ্টিশীল মানুষদের কণ্ঠে বর্ষা কখনো প্রেম, কখনো প্রতিবাদ, আবার কখনো নিঃসঙ্গতার প্রতীক হয়ে ধরা দেয়।

যদিও এখনো বৃষ্টি শুরু হয়নি, তবুও হৃদয়ের জানালায় বর্ষা এসে গেছে বহু আগেই। আষাঢ় এসেছে, বৃষ্টি এখনো পথেই। আবহাওয়াবিরা বলছেন, মৌসুমি বায়ুর প্রভাব ধীরে ধীরে বাড়ছে। খুব শিগগিরই শুরু হতে পারে বৃষ্টি। আর একবার শুরু হলে, সেই বর্ষার চেনা ছন্দেই ভিজে উঠবে বাংলার শহর-গ্রাম।

প্রকৃতি হয়তো একটু সময় নিচ্ছে, কিন্তু বর্ষা থেমে থাকবে না। আষাঢ়-শ্রাবণ আবারও ভিজিয়ে দেবে বাংলার মাটি, মনে ছড়িয়ে দেবে স্নিগ্ধতা ও আবেগের জলছোঁয়া।

তবে বর্ষার একপাক্ষিক রূপ নয়, বর্ষা যেমন ভালোবাসা, অভিসার কিংবা কবিতার রস এনে দেয়, তেমনি শহুরে জীবনে ডেকে আনতে পারে দুর্ভোগও। জলাবদ্ধতা, যানজট কিংবা খোলা ড্রেনে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ে।

তাই বর্ষার রোমান্টিক সৌন্দর্য যেমন আছে, তেমনি আছে বাস্তব জীবনের নানা চ্যালেঞ্জও। আজকের দিনের বৃষ্টির ফোঁটাগুলো আমাদের মনকেও ভিজিয়ে দিয়ে যেতে পারে, কখনো ভালোবাসায়, কখনো শূন্যতায়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বৃষ্টি নেই, তবু আষাঢ় এসেছে, প্রকৃতির দ্বিধায় শুরু বর্ষা

আপডেট টাইম : ১১:২৪:২৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫

বাংলা পঞ্জিকার পাতা বলছে আজ আষাঢ়ের প্রথম দিন। বর্ষার আনুষ্ঠানিক সূচনা হলেও প্রকৃতিতে তার সাড়া নেই। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে এখনো নামেনি সেই কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টিধারা। চারদিকে শুধুই ভ্যাপসা গরম, গুমোট বাতাস আর রোদের দাবদাহ।

বর্ষাকাল বাংলা বছরের তৃতীয় ঋতু, যে আষাঢ় ও শ্রাবণ জুড়ে বিস্তৃত। যদিও আবহাওয়াবিদরা জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়কে বর্ষা মৌসুম হিসেবে বিবেচনা করেন। তবে যেভাবেই দেখা হোক, বর্ষা মানেই বাংলার প্রকৃতিতে প্রাণের নতুন সঞ্চার।

এ সময়টিকে ঘিরে আমাদের সাহিত্যে, সঙ্গীতে ও আবেগে রয়েছে গভীর রোমান্টিকতা। আষাঢ় মানেই রিমঝিম বৃষ্টি, কদমফুল, ভেজা মাটি আর প্রেমে-ভেজা বিকেল। ব্যাঙের ডাক, ইলিশ ভাজা আর রবীন্দ্রসঙ্গীত। গাঢ় সবুজ হয়ে ওঠা প্রকৃতি, নরম মাটি ভেদ করে অঙ্কুরোদ্গম, আর কৃষিপ্রধান বাংলায় চাষাবাদের জন্য অপরিহার্য এই বর্ষার বৃষ্টি। অথচ এবারের আষাঢ়ের শুরুটাই যেন উল্টো সুরে বাজছে।

রাজধানীতে মেঘের আনাগোনা থাকলেও নেই এক ফোঁটা বৃষ্টিও। বরং গরমে হাঁসফাঁস করছে জনজীবন। আকাশে মেঘ, অথচ তার নিচে ঝরছে ঘাম। প্রকৃতি যেন অপেক্ষার খেলা খেলছে। বিদায় নেয়নি পুরোপুরি গ্রীষ্ম, আসেনি পুরোপুরি বর্ষাও।

তবে প্রকৃতি যে বর্ষার আগমনী বার্তা দিচ্ছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। মাঠে কদম ফুল ফুঁটেছে, সাদা-হলুদ গোলাকার ফুলগুলো জানান দিচ্ছে, বর্ষা আসতে চলেছে। পল্লী প্রান্তর থেকে শহরের পার্ক—সবখানেই কদম গাছ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বৃষ্টির অপেক্ষায়।

শিল্প-সাহিত্যে বর্ষা সবসময়ই একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ থেকে শুরু করে আধুনিক কবিরাও এই ঋতুকে ভরিয়ে দিয়েছেন প্রেম ও প্রতীক্ষার আবেগে। কদমফুল হাতে দেখা, কিংবা বৃষ্টির ছোঁয়ায় পুরনো স্মৃতির ঘ্রাণ খুঁজে পাওয়া এসব বর্ষার আবশ্যিক অনুষঙ্গ। বর্ষা মানেই রোমান্টিকতার ঋতু হলেও অভিসার, বিরহ আর ভোগান্তির দিন কিন্তু কম নয়। রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে আধুনিক কবীর সুমন পর্যন্ত,সৃষ্টিশীল মানুষদের কণ্ঠে বর্ষা কখনো প্রেম, কখনো প্রতিবাদ, আবার কখনো নিঃসঙ্গতার প্রতীক হয়ে ধরা দেয়।

যদিও এখনো বৃষ্টি শুরু হয়নি, তবুও হৃদয়ের জানালায় বর্ষা এসে গেছে বহু আগেই। আষাঢ় এসেছে, বৃষ্টি এখনো পথেই। আবহাওয়াবিরা বলছেন, মৌসুমি বায়ুর প্রভাব ধীরে ধীরে বাড়ছে। খুব শিগগিরই শুরু হতে পারে বৃষ্টি। আর একবার শুরু হলে, সেই বর্ষার চেনা ছন্দেই ভিজে উঠবে বাংলার শহর-গ্রাম।

প্রকৃতি হয়তো একটু সময় নিচ্ছে, কিন্তু বর্ষা থেমে থাকবে না। আষাঢ়-শ্রাবণ আবারও ভিজিয়ে দেবে বাংলার মাটি, মনে ছড়িয়ে দেবে স্নিগ্ধতা ও আবেগের জলছোঁয়া।

তবে বর্ষার একপাক্ষিক রূপ নয়, বর্ষা যেমন ভালোবাসা, অভিসার কিংবা কবিতার রস এনে দেয়, তেমনি শহুরে জীবনে ডেকে আনতে পারে দুর্ভোগও। জলাবদ্ধতা, যানজট কিংবা খোলা ড্রেনে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ে।

তাই বর্ষার রোমান্টিক সৌন্দর্য যেমন আছে, তেমনি আছে বাস্তব জীবনের নানা চ্যালেঞ্জও। আজকের দিনের বৃষ্টির ফোঁটাগুলো আমাদের মনকেও ভিজিয়ে দিয়ে যেতে পারে, কখনো ভালোবাসায়, কখনো শূন্যতায়।