ঢাকা ১১:০৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রোজায় সাধারণ কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা এবং প্রতিকার

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:৫৬:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ জুন ২০১৫
  • ৪৪৮ বার
রোজার উপকারিতা অনেক। রোজা নানা অসুখ-বিসুখ থেকে রক্ষা করে। রোজা মেদভুঁড়ি, শরীরের অতিরিক্ত ওজন, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে খারাপ চর্বির পরিমাণ কমিয়ে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, পেটের পীড়াসহ নানা ধরনের জটিলতা থেকে দেহকে রক্ষা করে। রোজার সময় আমাদের খাবারের সময়সূচিতে পরিবর্তন আসে। একটানা ১০-১২ ঘণ্টা না খেয়ে থাকতে হয়। এ পরিবর্তনকে মেনে নিতে গিয়ে দেহে কিছু কিছু সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু খুব সহজেই এ সমস্যাগুলো সমাধান করা সম্ভব।
বুক জ্বলা
রমজান মাসে খাবারের ধরন ও সময়ের তারতম্যের কারণে পাকস্থলীর এসিডের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে বুকে জ্বালাপোড়া করে। যাঁদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে, তাঁরা সাধারণত এ সমস্যায় বেশি ভোগেন। রোজার শুরুর দিনগুলোতে যে কেউ এ সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন। এ সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে রমজান মাসে অতিরিক্ত না খেয়ে পরিমিত ও সুষম খাদ্য খান। সে সঙ্গে ভাজাপোড়া ও মসলাযুক্ত খাবার কম খান। বন্ধ করুন কফি ও ধূমপান। একটু উঁচু বালিশে শুতে পারেন। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার জন্য অ্যান্টাসিড, অ্যান্টিহিসটামিন বা প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর, যেমন—ওমিপ্রাজল, পেন্টোপ্রাজল ইত্যাদি ওষুধ খেতে পারেন। তবে যেকোনো ওষুধ খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
পানিশূন্যতা
একটানা ১৬-১৭ ঘণ্টা পানি পান না করায় প্রায় সব রোজাদার পানিশূন্যতায় ভোগেন। তবে বয়স্ক ও যাঁরা ডাইইউরেটিকস, যেমন—ফ্রুসেমাইড, থায়াজাইড, স্পাইরোনোল্যাকটোন জাতীয় ওষুধ খান, তাঁদের পানিশূন্যতা বেশি হয়। আপনি প্রচণ্ড মাথা ঘোরার কারণে যদি দাঁড়িয়ে থাকতে না পারেন বা পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্বন্ধে ভুলে যাওয়া শুরু করেন, তাহলে দ্রুত শরবত পান করুন। সে সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে থাকুন। আর কেউ যদি রোজা রেখে অচেতন হয়ে পড়েন, তাহলে তাঁর মাথা নিচু করে পা উপরে তুলে ধরুন। এর পর জ্ঞান ফিরলে প্রচুর পানি পান করুন। পানিশূন্যতা থেকে রক্ষা পেতে হলে ইফতারির পর থেকে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত স্বাভাবিক তাপমাত্রার প্রচুর পানি পান করুন। ফ্রিজের খুব ঠান্ডা পানি পান করবেন না। ইফতারিতে রাখুন বিভিন্ন প্রকারের শরবত। সে সঙ্গে শসা, পাকা কলা ও অন্যান্য ফলমূল।
কোষ্ঠকাঠিন্য
সারা দিন পানি পানের পরিমাণ কমে যাওয়ায় রমজান মাসে সব রোজাদারই কমবেশি কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন। আঁশযুক্ত খাবার কম খেলেও হতে পারে কোষ্ঠকাঠিন্য। এ থেকে রক্ষা পেতে হলে প্রচুর পানি পান করুন। আঁশযুক্ত খাবার, যেমন—আটা, শিমের বিচি, ছোলা, শাকসবজি, ফলমূল বেশি বেশি করে খান। চিনি, মিষ্টি ও ময়দা কম করে খান। এসবের পরও যদি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর না হয়, তাহলে লেক্সিটিভ, যেমন—ল্যাকটুলোজ ওষুধ খেতে পারেন।
বদহজম বায়ু
খাবারের পরিমাণ বেশি হলে, অতিরিক্ত মসলাযুক্ত ও ভাজাপোড়া খাবার খেলে রোজাদারদের অনেক সময় পেট ফেঁপে যায়, পেটে শব্দ হয়, পায়ুপথ দিয়ে ঘন ঘন বায়ু বের হয়। খাবার ঠিকমতো হজম না হলে এ রকম হতে পারে। আবার ডিম, ছোলা পেটে গ্যাস উৎপন্ন করে। তাই এ সমস্যা থেকে মুক্ত থাকতে চাইলে এসব খাবার পরিহার করতে হবে। সে সঙ্গে প্রচুর পানি ও ফলের জুস পান করুন।
মাথাব্যথা
ধূমপায়ী ও কফি পানকারীরা রমজান মাসে কফি বা ধূমপান না করায়, রমজানে ঘুমের পরিমাণ কম হওয়ায় এবং ক্ষুধা-পানিশূন্যতার জন্য সাধারণত দিনের শেষে- ইফতারের আগে প্রচণ্ড মাথাব্যথা হতে পারে। সে সঙ্গে থাকতে পারে বমি বমি ভাব। এ সমস্যা থেকে বাঁচতে হলে রোজা শুরুর সপ্তাহখানেক আগে থেকেই কফি- ধূমপান ত্যাগের অভ্যাস করতে হবে। শেষ রাতে পরিমিত ও সুষম সেহরি খেতে হবে। সে সঙ্গে প্রচুর পানি পান করতে হবে। রোজা রেখে রোদে বেশি ঘোরাঘুরি করবেন না। বাইরে বেরোলে ছাতা বা টুপি ব্যবহার করুন। যদি মাথাব্যথা অসহ্য হয়, তাহলে সেহরির পর প্যারাসিটামল খেতে পারেন।
দুর্বলতা
সাধারণত দিনের শেষে, ইফতারের আগে রক্তচাপ কমে যাওয়ায় অনেকেই অতিরিক্ত দুর্বলতায় ভোগেন। এটা প্রতিরোধ করার জন্য প্রচুর লবণ-পানি বা শরবত পান করুন। সেহরি খেতে অবশ্যই ভুলবেন না।
মানসিক অবসাদ
সারা দিন পানি ও খাবার না খাওয়া, ঘুমের পরিমাণ কম হওয়ার জন্য আপনি মানসিক অবসাদে ভুগতে পারেন। এ থেকে রক্ষা পেতে হলে দুচিন্তা পরিহার করুন, রাগ নিয়ন্ত্রণ করুন আর ধূমপান ত্যাগ করুন।
মাংসপেশির টান
ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম লবণের পরিমাণ কমে গেলে মাংসপেশিতে টান পড়তে পারে। এ থেকে রক্ষা পেতে হলে শাকসবজি, ফলমূল, দুধ এবং দুধজাত খাবার ও খেজুর খেতে হবে।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

রোজায় সাধারণ কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা এবং প্রতিকার

আপডেট টাইম : ০৪:৫৬:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ জুন ২০১৫
রোজার উপকারিতা অনেক। রোজা নানা অসুখ-বিসুখ থেকে রক্ষা করে। রোজা মেদভুঁড়ি, শরীরের অতিরিক্ত ওজন, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে খারাপ চর্বির পরিমাণ কমিয়ে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, পেটের পীড়াসহ নানা ধরনের জটিলতা থেকে দেহকে রক্ষা করে। রোজার সময় আমাদের খাবারের সময়সূচিতে পরিবর্তন আসে। একটানা ১০-১২ ঘণ্টা না খেয়ে থাকতে হয়। এ পরিবর্তনকে মেনে নিতে গিয়ে দেহে কিছু কিছু সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু খুব সহজেই এ সমস্যাগুলো সমাধান করা সম্ভব।
বুক জ্বলা
রমজান মাসে খাবারের ধরন ও সময়ের তারতম্যের কারণে পাকস্থলীর এসিডের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে বুকে জ্বালাপোড়া করে। যাঁদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে, তাঁরা সাধারণত এ সমস্যায় বেশি ভোগেন। রোজার শুরুর দিনগুলোতে যে কেউ এ সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন। এ সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে রমজান মাসে অতিরিক্ত না খেয়ে পরিমিত ও সুষম খাদ্য খান। সে সঙ্গে ভাজাপোড়া ও মসলাযুক্ত খাবার কম খান। বন্ধ করুন কফি ও ধূমপান। একটু উঁচু বালিশে শুতে পারেন। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার জন্য অ্যান্টাসিড, অ্যান্টিহিসটামিন বা প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর, যেমন—ওমিপ্রাজল, পেন্টোপ্রাজল ইত্যাদি ওষুধ খেতে পারেন। তবে যেকোনো ওষুধ খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
পানিশূন্যতা
একটানা ১৬-১৭ ঘণ্টা পানি পান না করায় প্রায় সব রোজাদার পানিশূন্যতায় ভোগেন। তবে বয়স্ক ও যাঁরা ডাইইউরেটিকস, যেমন—ফ্রুসেমাইড, থায়াজাইড, স্পাইরোনোল্যাকটোন জাতীয় ওষুধ খান, তাঁদের পানিশূন্যতা বেশি হয়। আপনি প্রচণ্ড মাথা ঘোরার কারণে যদি দাঁড়িয়ে থাকতে না পারেন বা পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্বন্ধে ভুলে যাওয়া শুরু করেন, তাহলে দ্রুত শরবত পান করুন। সে সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে থাকুন। আর কেউ যদি রোজা রেখে অচেতন হয়ে পড়েন, তাহলে তাঁর মাথা নিচু করে পা উপরে তুলে ধরুন। এর পর জ্ঞান ফিরলে প্রচুর পানি পান করুন। পানিশূন্যতা থেকে রক্ষা পেতে হলে ইফতারির পর থেকে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত স্বাভাবিক তাপমাত্রার প্রচুর পানি পান করুন। ফ্রিজের খুব ঠান্ডা পানি পান করবেন না। ইফতারিতে রাখুন বিভিন্ন প্রকারের শরবত। সে সঙ্গে শসা, পাকা কলা ও অন্যান্য ফলমূল।
কোষ্ঠকাঠিন্য
সারা দিন পানি পানের পরিমাণ কমে যাওয়ায় রমজান মাসে সব রোজাদারই কমবেশি কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন। আঁশযুক্ত খাবার কম খেলেও হতে পারে কোষ্ঠকাঠিন্য। এ থেকে রক্ষা পেতে হলে প্রচুর পানি পান করুন। আঁশযুক্ত খাবার, যেমন—আটা, শিমের বিচি, ছোলা, শাকসবজি, ফলমূল বেশি বেশি করে খান। চিনি, মিষ্টি ও ময়দা কম করে খান। এসবের পরও যদি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর না হয়, তাহলে লেক্সিটিভ, যেমন—ল্যাকটুলোজ ওষুধ খেতে পারেন।
বদহজম বায়ু
খাবারের পরিমাণ বেশি হলে, অতিরিক্ত মসলাযুক্ত ও ভাজাপোড়া খাবার খেলে রোজাদারদের অনেক সময় পেট ফেঁপে যায়, পেটে শব্দ হয়, পায়ুপথ দিয়ে ঘন ঘন বায়ু বের হয়। খাবার ঠিকমতো হজম না হলে এ রকম হতে পারে। আবার ডিম, ছোলা পেটে গ্যাস উৎপন্ন করে। তাই এ সমস্যা থেকে মুক্ত থাকতে চাইলে এসব খাবার পরিহার করতে হবে। সে সঙ্গে প্রচুর পানি ও ফলের জুস পান করুন।
মাথাব্যথা
ধূমপায়ী ও কফি পানকারীরা রমজান মাসে কফি বা ধূমপান না করায়, রমজানে ঘুমের পরিমাণ কম হওয়ায় এবং ক্ষুধা-পানিশূন্যতার জন্য সাধারণত দিনের শেষে- ইফতারের আগে প্রচণ্ড মাথাব্যথা হতে পারে। সে সঙ্গে থাকতে পারে বমি বমি ভাব। এ সমস্যা থেকে বাঁচতে হলে রোজা শুরুর সপ্তাহখানেক আগে থেকেই কফি- ধূমপান ত্যাগের অভ্যাস করতে হবে। শেষ রাতে পরিমিত ও সুষম সেহরি খেতে হবে। সে সঙ্গে প্রচুর পানি পান করতে হবে। রোজা রেখে রোদে বেশি ঘোরাঘুরি করবেন না। বাইরে বেরোলে ছাতা বা টুপি ব্যবহার করুন। যদি মাথাব্যথা অসহ্য হয়, তাহলে সেহরির পর প্যারাসিটামল খেতে পারেন।
দুর্বলতা
সাধারণত দিনের শেষে, ইফতারের আগে রক্তচাপ কমে যাওয়ায় অনেকেই অতিরিক্ত দুর্বলতায় ভোগেন। এটা প্রতিরোধ করার জন্য প্রচুর লবণ-পানি বা শরবত পান করুন। সেহরি খেতে অবশ্যই ভুলবেন না।
মানসিক অবসাদ
সারা দিন পানি ও খাবার না খাওয়া, ঘুমের পরিমাণ কম হওয়ার জন্য আপনি মানসিক অবসাদে ভুগতে পারেন। এ থেকে রক্ষা পেতে হলে দুচিন্তা পরিহার করুন, রাগ নিয়ন্ত্রণ করুন আর ধূমপান ত্যাগ করুন।
মাংসপেশির টান
ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম লবণের পরিমাণ কমে গেলে মাংসপেশিতে টান পড়তে পারে। এ থেকে রক্ষা পেতে হলে শাকসবজি, ফলমূল, দুধ এবং দুধজাত খাবার ও খেজুর খেতে হবে।