ঢাকা ০৪:০৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সবাই তো পড়ালেখা করে প্রতিষ্ঠিত হয়, আমি না হয় ফুটবলে হলাম

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৫০:২৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫
  • ১৬ বার

জাতীয় দলে ডাক পড়বে কি না, তা নিয়ে সকাল থেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলেন জাহিদ হাসান শান্ত। কারণ গত মার্চে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের জন্য ৩৮ জনের দলে ছিলেন তিনি। কিন্তু ক্যাম্প শুরু হওয়ার আগেই বাদ পড়েন দল থেকে। তাই শান্তর মনে নেতিবাচক চিন্তাও উঁকি দিচ্ছিল। তবে বিকেল গড়াতেই কেটে গেল সব সংশয়। জাতীয় দলে নিজের নাম দেখে শান্ত ফেটে পড়লেন খুশিতে।

এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে ১০ জুন সিঙ্গাপুর ম্যাচ ও ৪ জুন ভুটানের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচের ২৬ সদস্যের দল বাছাই করেছেন কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। ক্যাম্প শুরু হবে আগামীকাল থেকে। আগেরবার ক্যাম্প শুরুর আগেই ৮ ফুটবলারকে ছেঁটে ফেলেছিলেন তিনি। সেই ৮ ফুটবলারের মধ্যে শান্তও ছিলেন। তবে এবার আর এই সেই সুযোগ নেই।

আজকের পত্রিকার সঙ্গে গতকাল আলাপে শান্ত বলেন, ‘৩৮ জনের স্কোয়াডে ডাক পাওয়ার পর তার সঙ্গে কাজ করতে উন্মুখ হয়ে ছিলাম। তখন হয়তো পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে আমি অপেক্ষায় ছিলাম। এখন অনুশীলনের সুযোগ পেলে ইনশা আল্লাহ ভালো কিছু করার চেষ্টা করব।’

২৩ বছর পর লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মোহামেডান। সেন্টারব্যাক হিসেবে শান্ত সেখানে রেখেছেন অনন্য ভূমিকা। পরশু লিগ শেষ হওয়ার পর ক্লাব ছেড়ে নিজ নিজ বাড়িতে যান অনেক ফুটবলার। কিন্তু শান্ত থেকে যান একটি কারণে, ‘লিগ শেষ হওয়ায় অনেকেই ক্লাব ছেড়ে বাড়িতে চলে গেছে। আমি অপেক্ষায় ছিলাম যে জাতীয় দলের তালিকা দেখেই বাড়ি যাব। একটা খবরে দেখেছিলাম যে যারা অভিজ্ঞ তাদেরই ডাকা হবে। তাই ডাক পাওয়া না পাওয়ার ব্যাপারে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলাম। আগেই জানতাম যে আজ দল ঘোষণা করা হবে। তাই অপেক্ষা নিয়ে বসেছিলাম। পরে যখন বাফুফের ফেসবুক পেজে নিজের নামটা দেখতে পেলাম, খুব খুশি হই।’

বাড়ি কুমিল্লায় হলেও ২১ বছর বয়সী শান্তর বেড়ে ওঠা নরসিংদীতে। সেখানকার রিপন স্পোর্টিং ক্লাবে তাঁর হাতেখড়ি। এরপর দ্বিতীয় বিভাগ, প্রথম বিভাগ ও চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ খেলে মোহামেডানে আছেন তিন বছর ধরে। প্রথম দুই বছর অবশ্য সেভাবে সুযোগ পাননি। তবে এবার লিগে সাদা-কালোদের হয়ে ১৪টি ম্যাচ খেলেছেন এই ডিফেন্ডার। আছে একটি অ্যাসিস্টও। প্রতিপক্ষের ওপর সেভাবে নৃশংস হওয়ার স্বভাব নেই তাঁর, কারণ পুরো লিগে হলুদ কার্ডই দেখেছেন একটি।

শান্ত বলেন, ‘মোহামেডানের হয়ে দারুণ একটি মৌসুম কাটিয়েছি এবার। নিজের পারফরম্যান্স নিয়েও সন্তুষ্ট। জাতীয় দলে ডাক পেয়েছি। চেষ্টা করব জায়গাটা ধরে রাখার। ভারত ম্যাচের আগে সেভাবে কষ্ট পাইনি। তবে বাদ পড়ার পর চেষ্টা করেছি কীভাবে আরও ভালো করা যায়। দ্বিতীয় পর্বে ইনশা আল্লাহ আমি সবগুলো ম্যাচ খেলেছি।’

ফুটবলার হয়ে ওঠার রাস্তাটা সহজ ছিল না শান্তর জন্য। প্রশ্ন এসেছিল পরিবার থেকেও। তবে পড়ালেখা ও ফুটবল দুটোই সমানতালে চালিয়েছেন তিনি, ‘বাংলাদেশের ফুটবলের পরিবেশ সম্পর্কে সবাই তো জানে। এখানে সুযোগ-সুবিধার অভাব থাকে। প্রথম-দ্বিতীয় বিভাগের ক্লাবগুলো অতটা সচ্ছল নয়। খাবারের খরচ নিজেরই জোগাড় করতে হয়েছে। জিমও আমি নিজ থেকে করেছি। পরিবার থেকেও প্রশ্ন ছিল কেন ফুটবলার হব। তবে আমি তাদের বোঝাতে পেরেছি। বলেছিলাম সবাই তো পড়ালেখা করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে, আমি না হয় ফুটবল খেলে হলাম। এর জন্য অবশ্য লেখাপড়া ঠিক রাখতে হয়েছে।’

হামজা চৌধুরীর আগমনের পর থেকেই ফুটবল জ্বরে কাঁপছে দেশের ক্রীড়াঙ্গন। এবার যোগ হয়েছেন কানাডাপ্রবাসী ফুটবলার শমিত শোম। এমন উন্মাদনার মাঝে জাতীয় দলে নিজের নাম দেখে একটু বেশিই খুশি লাগছে শান্তর, ‘এবার দেশের মাটিতে খেলা হবে। অনেক আত্মীয়স্বজন খেলা দেখবেন। তা ছাড়া হামজা চৌধুরী ও শমিত শোম আসার কারণে সবাই ফুটবলের খোঁজখবর রাখছে। সে কারণে একটু বেশিই খুশি।’

হামজা-শমিতের একসঙ্গে এবারই প্রথম মাঠে নামতে যাচ্ছেন একসঙ্গে। দুজনের অভিজ্ঞতার ভান্ডার থেকে কিছু আদায় করতে চান শান্ত, ‘হামজার কাছ থেকে শেখার ইচ্ছা আছে। আমি যদিও সেন্টারব্যাক, তবে শেষ কয়েকটি ম্যাচে রাইটব্যাক হিসেবে খেলেছি। হামজাও তার শেষ কয়েকটি ম্যাচে রাইটব্যাকে খেলেছে। তাই তার কাছ থেকে রাইটব্যাকে খেলা নিয়ে কিছু টিপস চাই। আর শমিতের কাছে শিখতে চাই শৃঙ্খলা। তারা দুজনে আসলে বড় মাপের খেলোয়াড়।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

সবাই তো পড়ালেখা করে প্রতিষ্ঠিত হয়, আমি না হয় ফুটবলে হলাম

আপডেট টাইম : ১০:৫০:২৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫

জাতীয় দলে ডাক পড়বে কি না, তা নিয়ে সকাল থেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলেন জাহিদ হাসান শান্ত। কারণ গত মার্চে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের জন্য ৩৮ জনের দলে ছিলেন তিনি। কিন্তু ক্যাম্প শুরু হওয়ার আগেই বাদ পড়েন দল থেকে। তাই শান্তর মনে নেতিবাচক চিন্তাও উঁকি দিচ্ছিল। তবে বিকেল গড়াতেই কেটে গেল সব সংশয়। জাতীয় দলে নিজের নাম দেখে শান্ত ফেটে পড়লেন খুশিতে।

এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে ১০ জুন সিঙ্গাপুর ম্যাচ ও ৪ জুন ভুটানের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচের ২৬ সদস্যের দল বাছাই করেছেন কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। ক্যাম্প শুরু হবে আগামীকাল থেকে। আগেরবার ক্যাম্প শুরুর আগেই ৮ ফুটবলারকে ছেঁটে ফেলেছিলেন তিনি। সেই ৮ ফুটবলারের মধ্যে শান্তও ছিলেন। তবে এবার আর এই সেই সুযোগ নেই।

আজকের পত্রিকার সঙ্গে গতকাল আলাপে শান্ত বলেন, ‘৩৮ জনের স্কোয়াডে ডাক পাওয়ার পর তার সঙ্গে কাজ করতে উন্মুখ হয়ে ছিলাম। তখন হয়তো পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে আমি অপেক্ষায় ছিলাম। এখন অনুশীলনের সুযোগ পেলে ইনশা আল্লাহ ভালো কিছু করার চেষ্টা করব।’

২৩ বছর পর লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মোহামেডান। সেন্টারব্যাক হিসেবে শান্ত সেখানে রেখেছেন অনন্য ভূমিকা। পরশু লিগ শেষ হওয়ার পর ক্লাব ছেড়ে নিজ নিজ বাড়িতে যান অনেক ফুটবলার। কিন্তু শান্ত থেকে যান একটি কারণে, ‘লিগ শেষ হওয়ায় অনেকেই ক্লাব ছেড়ে বাড়িতে চলে গেছে। আমি অপেক্ষায় ছিলাম যে জাতীয় দলের তালিকা দেখেই বাড়ি যাব। একটা খবরে দেখেছিলাম যে যারা অভিজ্ঞ তাদেরই ডাকা হবে। তাই ডাক পাওয়া না পাওয়ার ব্যাপারে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলাম। আগেই জানতাম যে আজ দল ঘোষণা করা হবে। তাই অপেক্ষা নিয়ে বসেছিলাম। পরে যখন বাফুফের ফেসবুক পেজে নিজের নামটা দেখতে পেলাম, খুব খুশি হই।’

বাড়ি কুমিল্লায় হলেও ২১ বছর বয়সী শান্তর বেড়ে ওঠা নরসিংদীতে। সেখানকার রিপন স্পোর্টিং ক্লাবে তাঁর হাতেখড়ি। এরপর দ্বিতীয় বিভাগ, প্রথম বিভাগ ও চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ খেলে মোহামেডানে আছেন তিন বছর ধরে। প্রথম দুই বছর অবশ্য সেভাবে সুযোগ পাননি। তবে এবার লিগে সাদা-কালোদের হয়ে ১৪টি ম্যাচ খেলেছেন এই ডিফেন্ডার। আছে একটি অ্যাসিস্টও। প্রতিপক্ষের ওপর সেভাবে নৃশংস হওয়ার স্বভাব নেই তাঁর, কারণ পুরো লিগে হলুদ কার্ডই দেখেছেন একটি।

শান্ত বলেন, ‘মোহামেডানের হয়ে দারুণ একটি মৌসুম কাটিয়েছি এবার। নিজের পারফরম্যান্স নিয়েও সন্তুষ্ট। জাতীয় দলে ডাক পেয়েছি। চেষ্টা করব জায়গাটা ধরে রাখার। ভারত ম্যাচের আগে সেভাবে কষ্ট পাইনি। তবে বাদ পড়ার পর চেষ্টা করেছি কীভাবে আরও ভালো করা যায়। দ্বিতীয় পর্বে ইনশা আল্লাহ আমি সবগুলো ম্যাচ খেলেছি।’

ফুটবলার হয়ে ওঠার রাস্তাটা সহজ ছিল না শান্তর জন্য। প্রশ্ন এসেছিল পরিবার থেকেও। তবে পড়ালেখা ও ফুটবল দুটোই সমানতালে চালিয়েছেন তিনি, ‘বাংলাদেশের ফুটবলের পরিবেশ সম্পর্কে সবাই তো জানে। এখানে সুযোগ-সুবিধার অভাব থাকে। প্রথম-দ্বিতীয় বিভাগের ক্লাবগুলো অতটা সচ্ছল নয়। খাবারের খরচ নিজেরই জোগাড় করতে হয়েছে। জিমও আমি নিজ থেকে করেছি। পরিবার থেকেও প্রশ্ন ছিল কেন ফুটবলার হব। তবে আমি তাদের বোঝাতে পেরেছি। বলেছিলাম সবাই তো পড়ালেখা করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে, আমি না হয় ফুটবল খেলে হলাম। এর জন্য অবশ্য লেখাপড়া ঠিক রাখতে হয়েছে।’

হামজা চৌধুরীর আগমনের পর থেকেই ফুটবল জ্বরে কাঁপছে দেশের ক্রীড়াঙ্গন। এবার যোগ হয়েছেন কানাডাপ্রবাসী ফুটবলার শমিত শোম। এমন উন্মাদনার মাঝে জাতীয় দলে নিজের নাম দেখে একটু বেশিই খুশি লাগছে শান্তর, ‘এবার দেশের মাটিতে খেলা হবে। অনেক আত্মীয়স্বজন খেলা দেখবেন। তা ছাড়া হামজা চৌধুরী ও শমিত শোম আসার কারণে সবাই ফুটবলের খোঁজখবর রাখছে। সে কারণে একটু বেশিই খুশি।’

হামজা-শমিতের একসঙ্গে এবারই প্রথম মাঠে নামতে যাচ্ছেন একসঙ্গে। দুজনের অভিজ্ঞতার ভান্ডার থেকে কিছু আদায় করতে চান শান্ত, ‘হামজার কাছ থেকে শেখার ইচ্ছা আছে। আমি যদিও সেন্টারব্যাক, তবে শেষ কয়েকটি ম্যাচে রাইটব্যাক হিসেবে খেলেছি। হামজাও তার শেষ কয়েকটি ম্যাচে রাইটব্যাকে খেলেছে। তাই তার কাছ থেকে রাইটব্যাকে খেলা নিয়ে কিছু টিপস চাই। আর শমিতের কাছে শিখতে চাই শৃঙ্খলা। তারা দুজনে আসলে বড় মাপের খেলোয়াড়।’