ঢাকা ০৪:৩৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবিদাওয়া নিয়ে সংগঠনের আন্দোলনে প্রশাসনে অচলাবস্থা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:৪২:৪০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ মে ২০২৫
  • ২১ বার

আওয়ামী লীগ পতনের পর প্রশাসনে যে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়েছিল, তার মধ্যেই নতুন করে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে সরকারি একাধিক সংগঠন। সচিবালয়ের ভেতরে-বাইরে চলছে মিছিল, অবস্থান কর্মসূচি, কর্মবিরতি ও আল্টিমেটাম। এতে করে প্রশাসনের প্রাত্যহিক কার্যকলাপ ব্যাহত হয়ে একপ্রকার অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

গত ৫ই আগস্ট থেকেই প্রশাসনে যে অস্থিতিশীলতা শুরু হয়, তা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এর মধ্যে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল, বিতর্কিত আমলাদের অপসারণ, সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ বাতিল, অভিন্ন নিয়োগবিধি প্রত্যাহারসহ নানা দাবিতে আন্দোলন করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অবসরে যাওয়া সরকারি আমলা  কর্মকর্তারাও বিভিন্ন দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছেন।

সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আজ সচিবালয়ে প্রায় তিন হাজার মানুষের উপস্থিতিতে বিক্ষোভ করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সচিবালয়ের সবগুলো প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছিলেন তারা। বিকেল ৪টার মধ্যে তাদের সঙ্গে আলোচনায় না বসলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুমকি দিয়েছেন তারা । সোমবার ২৬ মে সকাল সোয়া ১১টার পর ৬ নম্বর ভবনের পাশে বাদামতলায় জড়ো হয়ে তারা বিক্ষোভ শুরু করেন। সাড়ে ১১টার পর কর্মচারীরা মিছিল নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং জনপ্রশাসন সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে তাদের দপ্তরের দিকে যান। কর্মচারীদের অবস্থানের কারণে সচিবালয়ে প্রবেশের প্রধান ফটক বন্ধ রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের কো-চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ও বদিউল কবির সোমবার বেলা তিনটার দিকে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেন।

আজকের মতো কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টায় বিক্ষোভ শুরু হবে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে। যতক্ষণ পর্যন্ত অধ্যাদেশ বাতিল না হবে ততক্ষণ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে সংগঠনের পক্ষ থেকে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দপ্তর যে ভবনে ওই ভবনের সামনে বিকেল পর্যন্ত অবস্থান করার ঘোষণা দিয়েছেন কর্মচারীরা। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে কর্মচারীরা সচিবালয়ে প্রবেশের প্রধান ফটক বন্ধ করে দিয়ে সেখানে অবস্থান নেন। সচিবালয়ে প্রবেশের অন্য ফটকগুলোও বন্ধ করে দিয়েছেন কর্মরত কর্মচারীরা।

এর মধ্যে সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কর্মচারী নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা না হলে বিকেল ৪টায় কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে আলটিমেটাম দিয়েছেন কর্মচারী নেতারা।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে মাঠ প্রশাসনে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের ফের অবরুদ্ধ করার ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে । এর আগে ডিসি নিয়োগ নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছিল।

গত কিছুদিন ধরেই বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে সচিবালয়ের ভেতরে কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের মিছিল করছেন, অবস্থান নিচ্ছেন।

বিক্ষোভের কেন্দ্রে সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ

সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ ২০২৫-এর খসড়া অনুমোদন বাতিল ও প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন করেছে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ।

সোমবার ২৬ মে সকাল থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ অধ্যাদেশের বিরোধিতা করে সচিবালয়ে মিছিল ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন। কর্মকর্তারা এ অধ্যাদেশকে ‘নিবর্তনমূলক ও কালাকানুন’ আখ্যায়িত করে অধ্যাদেশ থেকে অসঙ্গতিপূর্ণ ধারা বাতিলের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবকে অনুরোধ জানান।

গত ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য চারজন উপদেষ্টাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে পরিষদের সভাপতি মো. নুরুল ইসলাম বাংলাবাজারকে বলেন, এই অধ্যাদেশে এমন কিছু ধারা রয়েছে, যা সরকারি কর্মকর্তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই শাস্তি বা চাকরিচ্যুতির পথ খুলে দিয়েছে। অধ্যাদেশের খসড়াটিকে ‘সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক’ আখ্যায়িত করে তা আমরা পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছি ।

তিনি ও বলেন, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-তে সব আচরণবিধি ও অন্যান্য বিধান বিবৃত আছে। এখন অধ্যাদেশের মাধ্যমে ‘নিবর্তনমূলক’ ধারা সংযোজন করা হচ্ছে। এটি একটি কালাকানুন। আমরা দ্রুত সময়ে এই অধ্যাদেশ প্রত্যাহার চাই।

২০১৮ সালের সরকারি চাকরি আইন সংশোধনে অধ্যাদেশের যে খসড়া নিয়ে সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ, তাতে শৃঙ্খলা বিঘ্নিত, কর্তব্য সম্পাদনে বাধা, ছুটি ছাড়া কর্মে অনুপস্থিত, কর্তব্য পালন না করার জন্য উসকানির জন্য কোনো ধরনের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে চাকরিচ্যুতির বিধান যুক্ত করা হয়েছে।

এর প্রতিবাদে গতকালও (রোববার) সচিবালয়ে বিক্ষোভ করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ। এ সময়ের অধ্যাদেশটি বাতিল না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন পরিষদের নেতারা ।

বৈষম্যবিরোধী ফোরামের কর্মসূচি

এদিকে, আওয়ামী দোসর হিসেবে চিহ্নিত আমলাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চেয়ে আন্দোলনে নেমেছে ‘বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম’।

সংগঠনটির সদস্য সচিব কাজী মেরাজ হোসেনের দাবি, ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগী ও লুটেরা ওইসব কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করতে হবে। জনপ্রশাসন সচিবসহ চুক্তিভিত্তিক কাজে নিয়োজিত সবার চুক্তি বাতিল করতে হবে। উপদেষ্টা, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও জনপ্রশাসন সচিবসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের অপসারণের অনুরোধ জানিয়ে একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা এ নিয়ে বারবার আশ্বাস দিলেও কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখতে পাচ্ছে না বলে আক্ষেপ জানান।

এমন বাস্তবতায় বিতর্কিত কর্মকর্তাদের অপসারণের প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে রোববার (২৫ মে) সকাল ১০টায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে সংগঠনটি।

এর আগে, গত ১৩ মে বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কার্যকরী সভাপতি ও সাবেক সচিব আবদুল খালেকের নেতৃত্বে ৪০-৫০ জন কর্মকর্তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ (এপিডি) অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিবের দপ্তরে সামনে অবস্থান নেন। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এরফানুল হককে সারা দিন অবরুদ্ধ করে রাখেন কর্মকর্তারা।

জনপ্রশাসনের জ্যেষ্ঠ সচিবের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

সম্প্রতি সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে বর্তমানে কর্মরত পতিত আওয়ামী লীগের দোসর ৪৪ জন সচিব ও ৯৫ জন ম্যাজিস্ট্রেটের তালিকা প্রকাশ করেছে জুলাই ঐক্য নামের একটি সংগঠন।

সংগঠনটি এসব আমলা ও ম্যাজিস্ট্রেটকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোসহ সাত দফা দাবি জানিয়েছে। ৩১ মের মধ্যে দাবি মানা না হলে ‘মার্চ টু সচিবালয়’ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোখলেস উর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে  কথা বলতে রাজি হননি।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, জুলাই ঐক্যের প্রকাশিত ফ্যাসিস্ট কর্মকর্তাদের এই তালিকা নিয়ে বড় ধরনের চাপের মুখে পড়েছে সরকারের শীর্ষ মহল। এ ব্যাপারে মোখলেস উর রহমানের ভূমিকা নিয়ে সরকারের ভেতরের মহলে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। তার বিরুদ্ধে দুদকে মামলা, অভিযোগ, তিনি প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে সমাধান না হওয়ায় প্রতিনিয়ত অস্থিরতা বাড়ছে। বিভিন্ন দাবির কারণে জনপ্রশাসনের কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

জনপ্রশাসন বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরকারের নেতৃত্বে দুর্বলতা এবং অভিজ্ঞতার ঘাটতির কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে পরিস্থিতির দ্রুত সমাধান না হলে প্রশাসনে অচলাবস্থা তৈরি হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।

 

 

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবিদাওয়া নিয়ে সংগঠনের আন্দোলনে প্রশাসনে অচলাবস্থা

আপডেট টাইম : ০৩:৪২:৪০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ মে ২০২৫

আওয়ামী লীগ পতনের পর প্রশাসনে যে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়েছিল, তার মধ্যেই নতুন করে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে সরকারি একাধিক সংগঠন। সচিবালয়ের ভেতরে-বাইরে চলছে মিছিল, অবস্থান কর্মসূচি, কর্মবিরতি ও আল্টিমেটাম। এতে করে প্রশাসনের প্রাত্যহিক কার্যকলাপ ব্যাহত হয়ে একপ্রকার অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

গত ৫ই আগস্ট থেকেই প্রশাসনে যে অস্থিতিশীলতা শুরু হয়, তা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এর মধ্যে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল, বিতর্কিত আমলাদের অপসারণ, সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ বাতিল, অভিন্ন নিয়োগবিধি প্রত্যাহারসহ নানা দাবিতে আন্দোলন করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অবসরে যাওয়া সরকারি আমলা  কর্মকর্তারাও বিভিন্ন দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছেন।

সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আজ সচিবালয়ে প্রায় তিন হাজার মানুষের উপস্থিতিতে বিক্ষোভ করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সচিবালয়ের সবগুলো প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছিলেন তারা। বিকেল ৪টার মধ্যে তাদের সঙ্গে আলোচনায় না বসলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুমকি দিয়েছেন তারা । সোমবার ২৬ মে সকাল সোয়া ১১টার পর ৬ নম্বর ভবনের পাশে বাদামতলায় জড়ো হয়ে তারা বিক্ষোভ শুরু করেন। সাড়ে ১১টার পর কর্মচারীরা মিছিল নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং জনপ্রশাসন সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে তাদের দপ্তরের দিকে যান। কর্মচারীদের অবস্থানের কারণে সচিবালয়ে প্রবেশের প্রধান ফটক বন্ধ রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের কো-চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ও বদিউল কবির সোমবার বেলা তিনটার দিকে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেন।

আজকের মতো কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টায় বিক্ষোভ শুরু হবে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে। যতক্ষণ পর্যন্ত অধ্যাদেশ বাতিল না হবে ততক্ষণ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে সংগঠনের পক্ষ থেকে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দপ্তর যে ভবনে ওই ভবনের সামনে বিকেল পর্যন্ত অবস্থান করার ঘোষণা দিয়েছেন কর্মচারীরা। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে কর্মচারীরা সচিবালয়ে প্রবেশের প্রধান ফটক বন্ধ করে দিয়ে সেখানে অবস্থান নেন। সচিবালয়ে প্রবেশের অন্য ফটকগুলোও বন্ধ করে দিয়েছেন কর্মরত কর্মচারীরা।

এর মধ্যে সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কর্মচারী নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা না হলে বিকেল ৪টায় কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে আলটিমেটাম দিয়েছেন কর্মচারী নেতারা।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে মাঠ প্রশাসনে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের ফের অবরুদ্ধ করার ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে । এর আগে ডিসি নিয়োগ নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছিল।

গত কিছুদিন ধরেই বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে সচিবালয়ের ভেতরে কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের মিছিল করছেন, অবস্থান নিচ্ছেন।

বিক্ষোভের কেন্দ্রে সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ

সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ ২০২৫-এর খসড়া অনুমোদন বাতিল ও প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন করেছে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ।

সোমবার ২৬ মে সকাল থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ অধ্যাদেশের বিরোধিতা করে সচিবালয়ে মিছিল ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন। কর্মকর্তারা এ অধ্যাদেশকে ‘নিবর্তনমূলক ও কালাকানুন’ আখ্যায়িত করে অধ্যাদেশ থেকে অসঙ্গতিপূর্ণ ধারা বাতিলের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবকে অনুরোধ জানান।

গত ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য চারজন উপদেষ্টাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে পরিষদের সভাপতি মো. নুরুল ইসলাম বাংলাবাজারকে বলেন, এই অধ্যাদেশে এমন কিছু ধারা রয়েছে, যা সরকারি কর্মকর্তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই শাস্তি বা চাকরিচ্যুতির পথ খুলে দিয়েছে। অধ্যাদেশের খসড়াটিকে ‘সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক’ আখ্যায়িত করে তা আমরা পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছি ।

তিনি ও বলেন, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-তে সব আচরণবিধি ও অন্যান্য বিধান বিবৃত আছে। এখন অধ্যাদেশের মাধ্যমে ‘নিবর্তনমূলক’ ধারা সংযোজন করা হচ্ছে। এটি একটি কালাকানুন। আমরা দ্রুত সময়ে এই অধ্যাদেশ প্রত্যাহার চাই।

২০১৮ সালের সরকারি চাকরি আইন সংশোধনে অধ্যাদেশের যে খসড়া নিয়ে সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ, তাতে শৃঙ্খলা বিঘ্নিত, কর্তব্য সম্পাদনে বাধা, ছুটি ছাড়া কর্মে অনুপস্থিত, কর্তব্য পালন না করার জন্য উসকানির জন্য কোনো ধরনের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে চাকরিচ্যুতির বিধান যুক্ত করা হয়েছে।

এর প্রতিবাদে গতকালও (রোববার) সচিবালয়ে বিক্ষোভ করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ। এ সময়ের অধ্যাদেশটি বাতিল না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন পরিষদের নেতারা ।

বৈষম্যবিরোধী ফোরামের কর্মসূচি

এদিকে, আওয়ামী দোসর হিসেবে চিহ্নিত আমলাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চেয়ে আন্দোলনে নেমেছে ‘বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম’।

সংগঠনটির সদস্য সচিব কাজী মেরাজ হোসেনের দাবি, ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগী ও লুটেরা ওইসব কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করতে হবে। জনপ্রশাসন সচিবসহ চুক্তিভিত্তিক কাজে নিয়োজিত সবার চুক্তি বাতিল করতে হবে। উপদেষ্টা, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও জনপ্রশাসন সচিবসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের অপসারণের অনুরোধ জানিয়ে একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা এ নিয়ে বারবার আশ্বাস দিলেও কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখতে পাচ্ছে না বলে আক্ষেপ জানান।

এমন বাস্তবতায় বিতর্কিত কর্মকর্তাদের অপসারণের প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে রোববার (২৫ মে) সকাল ১০টায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে সংগঠনটি।

এর আগে, গত ১৩ মে বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কার্যকরী সভাপতি ও সাবেক সচিব আবদুল খালেকের নেতৃত্বে ৪০-৫০ জন কর্মকর্তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ (এপিডি) অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিবের দপ্তরে সামনে অবস্থান নেন। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এরফানুল হককে সারা দিন অবরুদ্ধ করে রাখেন কর্মকর্তারা।

জনপ্রশাসনের জ্যেষ্ঠ সচিবের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

সম্প্রতি সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে বর্তমানে কর্মরত পতিত আওয়ামী লীগের দোসর ৪৪ জন সচিব ও ৯৫ জন ম্যাজিস্ট্রেটের তালিকা প্রকাশ করেছে জুলাই ঐক্য নামের একটি সংগঠন।

সংগঠনটি এসব আমলা ও ম্যাজিস্ট্রেটকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোসহ সাত দফা দাবি জানিয়েছে। ৩১ মের মধ্যে দাবি মানা না হলে ‘মার্চ টু সচিবালয়’ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোখলেস উর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে  কথা বলতে রাজি হননি।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, জুলাই ঐক্যের প্রকাশিত ফ্যাসিস্ট কর্মকর্তাদের এই তালিকা নিয়ে বড় ধরনের চাপের মুখে পড়েছে সরকারের শীর্ষ মহল। এ ব্যাপারে মোখলেস উর রহমানের ভূমিকা নিয়ে সরকারের ভেতরের মহলে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। তার বিরুদ্ধে দুদকে মামলা, অভিযোগ, তিনি প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে সমাধান না হওয়ায় প্রতিনিয়ত অস্থিরতা বাড়ছে। বিভিন্ন দাবির কারণে জনপ্রশাসনের কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

জনপ্রশাসন বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরকারের নেতৃত্বে দুর্বলতা এবং অভিজ্ঞতার ঘাটতির কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে পরিস্থিতির দ্রুত সমাধান না হলে প্রশাসনে অচলাবস্থা তৈরি হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।