অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ‘বন্ধ্যা’ উল্লেখ করে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘এই সরকারের পক্ষে কোনো ধরনের সংস্কার সম্ভব নয়।’ আজ রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউ মুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত সভায় তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়া ৫০টির বেশি রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা প্রস্তুত করা হয়েছে। সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েই ২০২২ সালে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করেছি। এত বড় বড় বিজ্ঞ লোক আনার কী দরকার ছিল, পরীক্ষার খাতা দেখার জন্য। ৩১ দফার মধ্যে কোনটা বাদ দেবেন অথবা সংযোজন করবেন, করেন পাঁচজনকে বসিয়ে দেন। যতই আকর্ষণ থাকুক না কেন বন্ধ্যা নারীর পক্ষে সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা নেই। এই অন্তর্বর্তী সরকারও বন্ধ্যা। তার পক্ষে সংস্কার করা সম্ভব নয়। শুধুমাত্র প্রতিশ্রুতিগুলো একত্রিত করতে পারে।’
ড. ইউনূস পদত্যাগ করার কথা ভাবছেন, তার সঙ্গে দেখা করে সম্প্রতি এমন কথা বলেছিলেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। এ প্রসঙ্গে গয়েশ্বর বলেন, ‘ভাবছিলেন নাহিদ এ কথা বলবেন, আর ইউটিউবাররা বললেন আমরা দেশে আসছি। আসেন ভাই আসেন, আন্দোলন করেন। ইউনূসের জন্য সারাদেশের মানুষ অশ্রু বিসর্জন দেবে, রাস্তায় রাস্তায় সেই বন্যায় ইউনূস সাহেব যাতে বিমানবন্দরে যেতে না পারে। সেটা হয়েছে? হয়নি। এখানে আমরা যারা আছি তারা যদি বলি আমরা আগামীকাল রাস্তায় নামব, ইউনূস সাহেব ২৪ ঘণ্টা থাকতে পারবেন না। তাহলে ভবিষ্যত কি? এই বিবেচনায় এখানেই সমাপ্ত করতে চাই। আমরা চাই ড. ইউনূস সফল হোক। তার সফলতা মানেই তো আমাদের জুলাই আন্দোলনের সফলতা।’
আজকে দেশ বাঁচাতে গিয়ে সবাই গণতন্ত্রের প্রশ্নে একমত বলে উল্লেখ করেন গয়েশ্বর। জুলাই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছাত্রদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন,‘আপনাদের মধ্যে ৯০ শতাংশ ছাত্র পড়ার টেবিলে ফিরে গেছেন। কিন্তু আপনারা যারা এখনো যাননি তারা সচিবালয়, এসপি ও ইউএনও অফিসে যাচ্ছেন। সেখানে আপনাদের কাজ কী?’
তিনি বলেন, ‘দেশে তো দুর্নীতি বন্ধ হয়নি বরং দুর্নীতির হার বেড়েছে। কারণ হাসিনার আমলের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা তো এখনো রয়ে গেছে। এই সরকারের দুর্নীতিরোধে কোনো পদক্ষেপ নেই। এই সরকার দুর্নীতিবাজ কয়জনকে ধরছে বা তাদের বিচার করেছে। আজকে মানুষ বলাবলি করছে অন্তর্বর্তীকালীর সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যত সুবিধা নেওয়া দরকার তা নেবেন এবং সে জন্য তিনি দেহত্যাগ করলেও পদত্যাগ করবেন না।’
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে দেওয়া হলে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন অন্যান্য বক্তারা। মোস্তফা জামাল হায়দার সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ‘নয় মাসে একজনেরও বিচার হয়নি। তারা চট্টগ্রাম বন্দর লিজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা স্পষ্টভাবে বলছি- সেটি বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। দরকার হলে দেশের মেধাবী কর্মকর্তা দিয়ে বন্দর পরিচালনা করুন। আমরা আমাদের অর্থনীতির মূল ক্ষেত্রকে কারও কাছে দিব না। আপনাদের ব্যর্থতার কোনো সুযোগ নেই। আপনারা দ্রুত নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। উপদেষ্টারা একের পর এক বক্তব্য দিয়ে বিতর্ক করছেন।’
রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘আমরা কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দর লিজ দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু করেছি। সবকিছু করার ম্যান্ডেট তো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেই। তাদের কাজ হলো গণহত্যার বিচার করা, আহতদের সুচিকিৎসা করা, নিহতদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া, সংস্কার দ্রুত শেষ করে নির্বাচন দেওয়া। বন্দর লিজ দেওয়া, এনবিআর ভাঙা আপনাদের কাজ না। সংস্কারের নামে কালক্ষেপণ করবেন না। দ্রুত নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা দিয়ে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। করিডোর, বন্দর নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকুন। নির্বাচিত সরকার সেটি দেখবে।’
মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘যেকোনো বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উত্তম। বন্দর দেওয়ার বিষয়ে গণশুনানি করুন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করুন। কারণ আপনারা তো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। সরকারের উচিত দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা।’
সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, ‘আগামীতে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। সরকার চট্টগ্রাম বন্দর লিজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে ফেরত না আসলে আমরা বৃহত্তর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হব।’
দেশ বাঁচাও বন্দর বাঁচাও আন্দোলন এই সভার আয়োজন করে। এতে বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদার সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান ও দেশ বাঁচাও বন্দর বাঁচাও আন্দোলনের মূল সমন্বয়ক শাহাদাত হোসেন সেলিম, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নূরুল হক নূর, আমজনতা পার্টির সাধারণ সম্পাদক তারেক রহমানসহ আরও অনেকে।