বিদ্যালয়ে যাওয়ার পরেই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। আজ সোমবার পাবনার বেড়া উপজেলার কাজিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। যদিও এর আগে গতকাল রবিবার একই ধরনের রোগে অসুস্থ হন সাত শিক্ষার্থীসহ এক শিক্ষক ও গ্রন্থাগারিক। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাজুড়ে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।
আহত শিক্ষার্থীদের বেড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে চিকিৎসকেরা এটাকে প্রাথমিকভাবে ‘ম্যাস হিস্টিরিয়া বা গণমনস্তাত্বিক’ অসুস্থতা বলে ধারণা করলেও শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের দাবি স্কুলে চেতনানাশক কোন কিছু ছিটানো ছিল।
শিক্ষক ও অভিভাবকদের দাবি, বেশির ভাগ শিক্ষার্থী আজ অসুস্থ হলেও ঘটনাটি প্রথম দেখা যায় গতকাল রবিবারে। ওই দিন দুপুর ২টার দিকে সাতজন ছাত্রী হঠাৎ করেই অসুস্থতাবোধ করে। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে কয়েকজন জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরে তাদের স্থানীয় চিকিৎসাকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তবে গতকালের এই ঘটনাটি শিক্ষক-অভিভাবকেরা অনেকটা স্বাভাবিক হিসেবেই নিয়েছিলেন।
কিন্তু আজ সোমবার ক্লাস শুরুর আগে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের আঙিনায় ঢোকার পর থেকে একইরকম অসুস্থতাবোধ করতে থাকে। একপর্যায়ে অ্যাসেম্বলি শুরু হলে কয়েকজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে সেখানেই পড়ে যায়। ভয়ে অন্য শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে দৌঁড়ে ঢুকলে সেখানেও গণহারে তারা অসুস্থ হতে থাকে। তাদের বেশির ভাগই একপর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এভাবে ৪৫ থেকে ৫০ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে।
শিক্ষক ও সুস্থ থাকা শিক্ষার্থীরা দৌঁড়ে গিয়ে তাদের মাথায় পানি ঢালে। খবর পেয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা বিদ্যালয়ে ছুটে আসেন। শিক্ষক ও অভিভাবকেরা অসুস্থ শিক্ষার্থীদের নিয়ে বেড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কাশিনাথপুর উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রসহ বিভিন্ন চিকিৎসাকেন্দ্র নিয়ে তাদের চিকিৎসা দেন।
সরেজমিনে আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়টি ছুটি দেওয়া হয়েছে। আশেপাশের ওষুধের দোকানগুলোতে অসুস্থ শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক চিকিৎসা চলছে। এমনই কয়েকজন শিক্ষার্থীকে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি অথবা হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা যায়।
প্রাথমিক চিকিৎসার পর কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠা সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া খাতুন বলেন, ‘ক্লাসে ঢোকার পর মাথা ঘুরতে থাকে ও বমি বমি লাগে। একপর্যায়ে কিছুক্ষণের জন্য জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। এখন কিছুটা ভালো লাগছে।’
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘গত রবিবার দুপর ২টার দিকে হঠাৎ করেই সাতজন ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে। আমরা তাদের বিভিন্ন চিকিৎসাকেন্দ্রে পাঠাই। পরে তারা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ায় বিষয়টি আমরা অনেকটা স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবেই নিয়েছিলাম। কিন্তু আজ সোমবার সকাল ১০টার দিকে অ্যাসেম্বলিতে একজন ছাত্র ও ছাত্রী অসুস্থ হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলার বিষয়টি অন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দ্রুত ক্লাসে পাঠানোর পর একে একে আরও ৪০ জনের বেশি শিক্ষার্থী জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আমরা দ্রুত অসুস্থ শিক্ষার্থীদের আশপাশের বিভিন্ন চিকিৎসাকেন্দ্রে পাঠাই। ইতিমধ্যেই অনেক শিক্ষার্থী সুস্থ হয়েছে বলে খবর পেয়েছি। তবে কী কারণে তারা অসুস্থ হয়েছে তা বলতে পারছি না।’
বিষয়টি নিশ্চিত করে আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘এতগুলো শিক্ষার্থী অসুস্থ হওয়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থরে পুলিশ পাঠাই এবং শিক্ষার্থীদের চিকিৎসাকেন্দ্রে পাঠানোয় সহায়তা করি। কী কারণে শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়েছে তা চিকিৎসকরাই বলতে পারবেন। তবে আমাদের কাছে শ্রেণিকক্ষগুলো অস্বাস্থ্যকর ও অপরিচ্ছন্ন মনে হয়েছে।’
বেড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তাহমিনা সুলতানা বলেন, ‘আমাদের হাসপাতাল থেকে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয় ও তিনজনকে ভর্তি করা হয়। ভর্তি হওয়া তিন শিক্ষার্থী এখন অনেকটাই সুস্থ। প্রাথমিকভাবে আমরা এটিকে ম্যাস হিস্টিরিয়া বা গণমনস্তাত্বিক অসুস্থতা বলে ধারণা করছি। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’