ঢাকা ১২:১৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুট জেট ফুয়েলের মূল্য হ্রাসে কমবে উড়োজাহাজ ভাড়া আমার সোনার বাংলা’ যেভাবে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হলো মাহফুজ ভাইয়ের সঙ্গে যা ঘটলো, তাতে হতাশ হয়েছি: আসিফ মাহমুদ আমি কখনই ক্রিকেট খেলা শিখিনি, এখন চেষ্টা করছি: তিশা মাদক-অপকর্মের আখড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যান আগেভাগেই ঢাকায় আসবেন হামজা উপদেষ্টা মাহফুজকে লাঞ্ছিত করায় হাসনাতের ক্ষোভ জনদাবির মুখে ছাত্র উপদেষ্টাদের ঠেলে দেওয়ার আচরণ সন্দেহজনক বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে শওকত ওসমানের ২৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভা বৃষ্টিতে ভিজে শাহবাগে আন্দোলন করছেন নার্সিং শিক্ষার্থীরা ইউক্রেন যুদ্ধ তুরস্কে গিয়ে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করতে চান ট্রাম্প

অসাধু মজুদদারের কারসাজি চড়ছে পেঁয়াজের বাজার

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৫০:২০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫
  • ৯ বার

চলতি মৌসুমে ভালো উৎপাদন সত্ত্বে¡ও লাফিয়ে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। মৌসুমের শুরুতে ক্ষেত থেকে বিক্রি হয়ে বাজারে আসা পেঁয়াজ কম দামে পাওয়া গেলেও এখন কিনতে হচ্ছে চড়া দামে। কৃষকের পেঁয়াজ ফুরাতেই বাজারে সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন অসাধু মজুদকারী ও আড়তদাররা। স্থানীয় হাটগুলোতে সক্রিয় তাদের প্রতিনিধিরা। হাট থেকে কম দামে পেঁয়াজ কিনে মজুদ করছেন তারা। বাজারে সরবরাহ কমিয়ে বেশি দামে ছাড়া হচ্ছে সেই পেঁয়াজ। এতে ভরা মৌসুমেও অতিরিক্ত দামে কিনতে হচ্ছে ভোক্তাকে। দরকারি মসলাজাতীয় এ পণ্যটি কিনতে গিয়ে পকেটে টান পড়ছে তাদের।

জানা গেছে, দেশের মোট পেঁয়াজ উৎপাদনের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই পাবনাতে হয়ে থাকে। এবার এই জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩১ হাজার ৮৯৬ মেট্রিক টন বেশি উৎপাদন হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চলতি বছর চারা পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৬ লাখ ৫৯ হাজার ৯৩৭ মেট্রিক টন। উৎপাদন হয়েছে ৬ লাখ ৯১ হাজার ৮৩২ মেট্রিক টন। এখন পর্যন্ত কৃষকের ঘরে পেঁয়াজ মজুদ রয়েছে ৪ লাখ ১৮ হাজার ১৫০ মেট্রিক টন। দাম বেড়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কায় অনেক সাধারণ ক্রেতাও বাড়িতে ২ থেকে ৫ মণ পর্যন্ত পেঁয়াজ ক্রয় করে রেখেছেন। ভালো উৎপাদনের পরও স্থানীয় হাটেই পণ্যটি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে বলে খোঁজ নিয়ে জেনেছেন আমাদের সময়ের পাবনা প্রতিনিধি। এ অঞ্চলে পাইকারিতে এখন প্রতি মণ পেঁয়াজ ১ হাজার ৭০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি।

পেঁয়াজ উৎপাদনের বড় একটি অংশ আসে রাজবাড়ী থেকে। সেখানেও এবার লক্ষ্যমাত্রার অধিক জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে এবং ফলনও সন্তোষজনক। রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর ৩৭ হাজার ২৮৩ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। এ থেকে ৫ লাখ ২৫ হাজার মেট্টিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে।

কথা হলে সোনাপুর বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী রাকিবুল ইসলাম মিন্টু আমাদের সময়ের রাজবাড়ী প্রতিনিধিকে বলেন, এ অঞ্চলে পাইকারিতে লাল পেঁয়াজ প্রতি মণ ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা এবং দেশি জাতের পেঁয়াজ ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে মজুদদার রয়েছে বলেও স্বীকার করেন তিনি।

নাম না প্রকাশের শর্তে স্থানীয় এক আড়তদার এই প্রতিনিধিকে বলেন, রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন হাট-বাজার থেকে কয়েক হাজার মণ পেঁয়াজ ক্রয় করেছে একটি চক্র। মজুদকারীদের প্রতিনিধিরা স্থানীয় হাট-বাজারথেকে কিনে মজুদ করছে। এ ছাড়া ছোট ছোট মজুদদাররাও এ সময় মাঠে রয়েছে। এ কারণে কৃষক পর্যায়ের চেয়ে বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাচ্ছে।

বাজার ব্যবস্থাপনায় ও নজরদারিদের ফাঁক রয়েছে এবং এর সুযোগ নিয়ে কৃষিপণ্যে অসাধু মজুদকারী ও ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকটসহ নানা ইস্যু সৃষ্টি করে অল্প সময়ের মধ্যে বিপুল অঙ্কের অতিরিক্ত মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে মনে করেন বাজার বিশ্লেষকরা।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ভালো উৎপাদনের পরও আমরা দেখতে পাই বাজারে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এর আগে আলুর ক্ষেত্রে এমনটা দেখা গেছে। এখন অবশ্য আলু কম দামে মিলছে। এখন পেঁয়াজে এমনটা হচ্ছে। ভালো উৎপাদনের পরও মৌসুমে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। তাই কেবল উৎপাদন নয়, বাজারের অনিয়মগুলোতেও নজর দিতে হবে। বিশেষ করে, কৃষিপণ্যে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে হবে আগে। সরকারকে খতিয়ে দেখতে হবে, কোথায় কত মজুদ হচ্ছে, সরবরাহ চেইন স্বাভাবিক রয়েছে কি না, ক্রয়মূল্য কত, বিক্রয় করা হচ্ছে কত। স্থানীয় পর্যায়ে প্রশাসনকে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। নজরদারি জোরদার করতে হবে।

নাজের হোসাইন আরও বলেনÑ আমরা দেখেছি, পেঁয়াজের ক্ষেত্রে দাদন চলছে, কমিশন বাণিজ্য চলছে। কৃষকের চেয়ে মধ্যস্বত্বভোগীরা বেশি লাভ করে। অথচ কৃষকের লোকসান হলেও মধ্যস্বত্বভোগীরা লোকশান করতে চান না। এভাবেই চলছে। অন্যদিকে অসাধু মজুদকারীরা মজুদ করে বেশি লাভের লোভে সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।

স্থানীয় হাটের বাড়তি দামের প্রভাব রাজধানীর বাজারেও পড়েছে বলে জানান শ্যামবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, কয়েক হাত ঘুরে রাজধানীতে এসে আরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে এসব পেঁয়াজ। শ্যামবাজারের বিক্রেতাদের তথ্য অনুযায়ী, গত শুক্রবার থেকে পাইকারিতে গড়ে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এক মাস আগে যা ছিল ৩৪ থেকে ৩৭ টাকা পর্যন্ত। আর খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত। অথচ এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকার আশপাশে। এর আগে ৩২ থেকে ৩৫ টাকাতেও কেনা গেছে।

গাজী স্টোরের খুচরা বিক্রেতা মো. রুবেল হোসেনসহ মালিবাগ বাজারের অন্যান্য খুচরা বিক্রেতা জানান, পাইকারিতে এক লাফে দাম বেড়ে যাওয়ায় খুচরাতেও দাম বেড়েছে। ফরিদপুরের পেঁয়াজের কেজি ৫৫ টাকা এবং পাবনার পেঁয়াজের কেজি ৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

কথা হলে শ্যামবাজারের মিতালী আড়তের পাইকারি বিক্রেতা কানাই সাহা বলেন, পাবনা, ফরিদপুরে কৃষকের পেঁয়াজ তোলা শেষ। মৌসুমের শুরুতে উৎপাদন খরচ তুলতে অনেক কৃষকই তাদের পেঁয়াজ বিক্রি করে দিয়েছেন। তখন বাজারে দাম কম ছিল। কিন্তু ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ ফুরাতেই দাম বাড়তে শুরু করেছে। মূলত মজুদদাররা পেঁয়াজ সংরক্ষণ করছেন এবং তারাই বাড়তি দামে বাজারে ছাড়ছেন।

এদিকে পাবনা ও রাজবাড়ী জেলার কৃষকরা বলছেন, বাড়তি দাম পেলে তারাও লাভবান হন। কিন্তু হাতবদলের খেলায় খুচরাপর্যায়ে পৌঁছাতে পৌঁছাতে দাম অতিরিক্ত বাড়ানো হচ্ছে। মাঠে খেটে ফসল বিক্রি করে তাদের লাভ-লোকসান হলেও মধ্যস্বত্বভোগীরা কেবল লাভই করে যাচ্ছে। কৃষকদের দাবি, বর্তমানে দেশে যে পরিমাণ উৎপাদন ও মজুদ রয়েছে, তাতে দেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব। সরকার যেন পেঁয়াজ আমদানি না করে, সে দাবিও জানিয়েছেন তারা।

প্রতিবেদনটি তৈরি করতে সহযোগিতা করেছেন সুশান্ত কুমার সরকার (পাবনা প্রতিনিধি) ও সোহেল রানা (রাজবাড়ী প্রতিনিধি)

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুট জেট ফুয়েলের মূল্য হ্রাসে কমবে উড়োজাহাজ ভাড়া

অসাধু মজুদদারের কারসাজি চড়ছে পেঁয়াজের বাজার

আপডেট টাইম : ১০:৫০:২০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫

চলতি মৌসুমে ভালো উৎপাদন সত্ত্বে¡ও লাফিয়ে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। মৌসুমের শুরুতে ক্ষেত থেকে বিক্রি হয়ে বাজারে আসা পেঁয়াজ কম দামে পাওয়া গেলেও এখন কিনতে হচ্ছে চড়া দামে। কৃষকের পেঁয়াজ ফুরাতেই বাজারে সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন অসাধু মজুদকারী ও আড়তদাররা। স্থানীয় হাটগুলোতে সক্রিয় তাদের প্রতিনিধিরা। হাট থেকে কম দামে পেঁয়াজ কিনে মজুদ করছেন তারা। বাজারে সরবরাহ কমিয়ে বেশি দামে ছাড়া হচ্ছে সেই পেঁয়াজ। এতে ভরা মৌসুমেও অতিরিক্ত দামে কিনতে হচ্ছে ভোক্তাকে। দরকারি মসলাজাতীয় এ পণ্যটি কিনতে গিয়ে পকেটে টান পড়ছে তাদের।

জানা গেছে, দেশের মোট পেঁয়াজ উৎপাদনের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই পাবনাতে হয়ে থাকে। এবার এই জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩১ হাজার ৮৯৬ মেট্রিক টন বেশি উৎপাদন হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চলতি বছর চারা পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৬ লাখ ৫৯ হাজার ৯৩৭ মেট্রিক টন। উৎপাদন হয়েছে ৬ লাখ ৯১ হাজার ৮৩২ মেট্রিক টন। এখন পর্যন্ত কৃষকের ঘরে পেঁয়াজ মজুদ রয়েছে ৪ লাখ ১৮ হাজার ১৫০ মেট্রিক টন। দাম বেড়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কায় অনেক সাধারণ ক্রেতাও বাড়িতে ২ থেকে ৫ মণ পর্যন্ত পেঁয়াজ ক্রয় করে রেখেছেন। ভালো উৎপাদনের পরও স্থানীয় হাটেই পণ্যটি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে বলে খোঁজ নিয়ে জেনেছেন আমাদের সময়ের পাবনা প্রতিনিধি। এ অঞ্চলে পাইকারিতে এখন প্রতি মণ পেঁয়াজ ১ হাজার ৭০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি।

পেঁয়াজ উৎপাদনের বড় একটি অংশ আসে রাজবাড়ী থেকে। সেখানেও এবার লক্ষ্যমাত্রার অধিক জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে এবং ফলনও সন্তোষজনক। রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর ৩৭ হাজার ২৮৩ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। এ থেকে ৫ লাখ ২৫ হাজার মেট্টিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে।

কথা হলে সোনাপুর বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী রাকিবুল ইসলাম মিন্টু আমাদের সময়ের রাজবাড়ী প্রতিনিধিকে বলেন, এ অঞ্চলে পাইকারিতে লাল পেঁয়াজ প্রতি মণ ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা এবং দেশি জাতের পেঁয়াজ ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে মজুদদার রয়েছে বলেও স্বীকার করেন তিনি।

নাম না প্রকাশের শর্তে স্থানীয় এক আড়তদার এই প্রতিনিধিকে বলেন, রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন হাট-বাজার থেকে কয়েক হাজার মণ পেঁয়াজ ক্রয় করেছে একটি চক্র। মজুদকারীদের প্রতিনিধিরা স্থানীয় হাট-বাজারথেকে কিনে মজুদ করছে। এ ছাড়া ছোট ছোট মজুদদাররাও এ সময় মাঠে রয়েছে। এ কারণে কৃষক পর্যায়ের চেয়ে বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাচ্ছে।

বাজার ব্যবস্থাপনায় ও নজরদারিদের ফাঁক রয়েছে এবং এর সুযোগ নিয়ে কৃষিপণ্যে অসাধু মজুদকারী ও ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকটসহ নানা ইস্যু সৃষ্টি করে অল্প সময়ের মধ্যে বিপুল অঙ্কের অতিরিক্ত মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে মনে করেন বাজার বিশ্লেষকরা।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ভালো উৎপাদনের পরও আমরা দেখতে পাই বাজারে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এর আগে আলুর ক্ষেত্রে এমনটা দেখা গেছে। এখন অবশ্য আলু কম দামে মিলছে। এখন পেঁয়াজে এমনটা হচ্ছে। ভালো উৎপাদনের পরও মৌসুমে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। তাই কেবল উৎপাদন নয়, বাজারের অনিয়মগুলোতেও নজর দিতে হবে। বিশেষ করে, কৃষিপণ্যে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে হবে আগে। সরকারকে খতিয়ে দেখতে হবে, কোথায় কত মজুদ হচ্ছে, সরবরাহ চেইন স্বাভাবিক রয়েছে কি না, ক্রয়মূল্য কত, বিক্রয় করা হচ্ছে কত। স্থানীয় পর্যায়ে প্রশাসনকে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। নজরদারি জোরদার করতে হবে।

নাজের হোসাইন আরও বলেনÑ আমরা দেখেছি, পেঁয়াজের ক্ষেত্রে দাদন চলছে, কমিশন বাণিজ্য চলছে। কৃষকের চেয়ে মধ্যস্বত্বভোগীরা বেশি লাভ করে। অথচ কৃষকের লোকসান হলেও মধ্যস্বত্বভোগীরা লোকশান করতে চান না। এভাবেই চলছে। অন্যদিকে অসাধু মজুদকারীরা মজুদ করে বেশি লাভের লোভে সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।

স্থানীয় হাটের বাড়তি দামের প্রভাব রাজধানীর বাজারেও পড়েছে বলে জানান শ্যামবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, কয়েক হাত ঘুরে রাজধানীতে এসে আরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে এসব পেঁয়াজ। শ্যামবাজারের বিক্রেতাদের তথ্য অনুযায়ী, গত শুক্রবার থেকে পাইকারিতে গড়ে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এক মাস আগে যা ছিল ৩৪ থেকে ৩৭ টাকা পর্যন্ত। আর খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত। অথচ এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকার আশপাশে। এর আগে ৩২ থেকে ৩৫ টাকাতেও কেনা গেছে।

গাজী স্টোরের খুচরা বিক্রেতা মো. রুবেল হোসেনসহ মালিবাগ বাজারের অন্যান্য খুচরা বিক্রেতা জানান, পাইকারিতে এক লাফে দাম বেড়ে যাওয়ায় খুচরাতেও দাম বেড়েছে। ফরিদপুরের পেঁয়াজের কেজি ৫৫ টাকা এবং পাবনার পেঁয়াজের কেজি ৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

কথা হলে শ্যামবাজারের মিতালী আড়তের পাইকারি বিক্রেতা কানাই সাহা বলেন, পাবনা, ফরিদপুরে কৃষকের পেঁয়াজ তোলা শেষ। মৌসুমের শুরুতে উৎপাদন খরচ তুলতে অনেক কৃষকই তাদের পেঁয়াজ বিক্রি করে দিয়েছেন। তখন বাজারে দাম কম ছিল। কিন্তু ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ ফুরাতেই দাম বাড়তে শুরু করেছে। মূলত মজুদদাররা পেঁয়াজ সংরক্ষণ করছেন এবং তারাই বাড়তি দামে বাজারে ছাড়ছেন।

এদিকে পাবনা ও রাজবাড়ী জেলার কৃষকরা বলছেন, বাড়তি দাম পেলে তারাও লাভবান হন। কিন্তু হাতবদলের খেলায় খুচরাপর্যায়ে পৌঁছাতে পৌঁছাতে দাম অতিরিক্ত বাড়ানো হচ্ছে। মাঠে খেটে ফসল বিক্রি করে তাদের লাভ-লোকসান হলেও মধ্যস্বত্বভোগীরা কেবল লাভই করে যাচ্ছে। কৃষকদের দাবি, বর্তমানে দেশে যে পরিমাণ উৎপাদন ও মজুদ রয়েছে, তাতে দেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব। সরকার যেন পেঁয়াজ আমদানি না করে, সে দাবিও জানিয়েছেন তারা।

প্রতিবেদনটি তৈরি করতে সহযোগিতা করেছেন সুশান্ত কুমার সরকার (পাবনা প্রতিনিধি) ও সোহেল রানা (রাজবাড়ী প্রতিনিধি)