নতুন চাল বাজারে ওঠায় সরু চালের দাম কিছুটা কমলেও মাঝারি ও মোটা চালে কমেনি। মিনিকেটের কেজি এখন ৭৪ থেকে ৭৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগের তুলনায় কিছুটা কম হলেও সাধারণ ক্রেতার নাগালের বাইরে। অন্যদিকে মাঝারি চাল কিনে খেতে পকেট পুড়ছে সাশ্রয়ী ক্রেতাদের। মাঝারি চাল বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৬৪ টাকা এবং মোটা চাল ৫৬ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় বর্তমানে সরু চালের দাম ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ, মাঝারি চাল ১০ শতাংশ এবং মোটা চালের দাম ৩ শতাংশ বেশি।
মালিবাগ বাজারে চাল কিনতে আসা চাকরিজীবী মো. মোস্তাক হোসেন বলেন, ‘নতুন চাল এলেও দাম এখনও সাধ্যের বাইরে। ৭৪ টাকায় মিনিকেট কিনতে হচ্ছে। আমাদের মতো মধ্যবিত্তের কাছে এ দাম অনেক বেশি। মাঝারি চালের দামও কমছে না, সেটার দামও ৬৪ টাকা কেজি।’
কারওয়ান বাজারের চাল বিক্রেতারা জানিয়েছেন, সপ্তাহের ব্যবধানে রশিদের মিনিকেটের দাম ৮০ টাকা থেকে কমে ৭৪-৭৬ টাকায় নেমেছে। তবে পুরনো চাল এখনও ৮০ টাকাই বিক্রি হচ্ছে। মঞ্জুরের মিনিকেটও ৮৮-৯০ টাকা থেকে নেমে এসেছে ৮৫ টাকায়। একইভাবে ডায়মন্ডের মিনিকেটের দামও কমেছে। তবে মাঝারি আঠাশ ও মোটা স্বর্ণা চালের দাম অপরিবর্তিত- যথাক্রমে ৬২-৬৪ টাকা ও ৫৬-৫৮ টাকা কেজি।
কারওয়ান বাজারের চাল বিক্রেতা মো. মোশাররফ হোসেন জানান, নতুন চালের দাম প্রতি বস্তায় (২৫ কেজি) ৫০ থেকে ১০০ টাকা দাম কম পড়ছে। দুয়েকটি ব্র্যান্ডে আরেকটু বেশি কমেছে। তবে নাজিরশাইল, মাঝারি আঠাশ ও মোটা স্বর্ণা চালের দাম আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার দাবি করেছেন, চালের দাম বর্তমানে ‘সহনশীল’ অবস্থায় রয়েছে। গতকাল নারায়ণগঞ্জের বন্দরে নির্মাণাধীন সাইলো (খাদ্যশস্য রাখার কাঠামো) ও নতুন খাদ্যগুদাম নির্মাণকাজের অগ্রগতি পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, ‘চাল একেবারে সস্তা হয়ে যাওয়া উচিত নয়। কৃষকের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে হবে।’
তবে বাজার বিশ্লেষক ও ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের ক্যাবের সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন ভিন্নমত পোষণ করেন। ক্যাবের সহ-সভাপতি বলেন, ‘বর্তমান দামও সাধারণ মানুষের জন্য ‘সহনীয়’ নয়। আয় না বাড়ায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। অথচ সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে দাম এখনও নাগালের বাইরে।’
তিনি আরও অভিযোগ করেন, চালের বাজারে এখনও বড় মিল ও করপোরেটদের আধিপত্য রয়ে গেছে। নতুন বাংলাদেশে অনেক কিছু বদলালেও ধান-চালের সিন্ডিকেট আগের মতোই সক্রিয়। চালের ভালো ফলন, এমনকি বিদেশ থেকে আমদানির
পরও দাম এখনও অনেক চড়া। এসএম নাজের হোসাইন বলেন, আমরা দেখতে পাই- বাজারে দাম বাড়লেও কৃষক লাভবান হন না। সরকারের মিলগুলো খতিয়ে দেখতে হবেÑ কোথায় কত মজুদ হচ্ছে, কত দামে কিনছে, কত দামে বাজারে ছাড়া হচ্ছে। তাহলে আর অসাধুরা দাম অতিরিক্ত বাড়িয়ে অল্প সময়ে অতিরিক্ত মুনাফা লুটে নিতে পারবে না।
কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, বড় মিলগুলো দাম বাড়িয়ে দেয়, অন্যরা অনুসরণ করে। একইভাবে বিভিন্ন এলাকার সরবরাহ চক্রেও সিন্ডিকেট কাজ করে, যার ফলে বাজারে স্বাভাবিক প্রতিযোগিতা নষ্ট হচ্ছে। আবার মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট থেকে কারওয়ান বাজারসহ রাজধানীর অনেক এলাকায় চাল সরবরাহ হয়। সেখানেও সিন্ডিকেট রয়েছে। তারাও বাজার দর নিয়ন্ত্রণ করে।