দায়িত্ব পেয়েই বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ জামায়াত আমিরের

মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিরোধিতার অভিযোগ যে দলটির বিরুদ্ধে সেই জামায়াতে ইসলামীর নবনির্বাচিত আমিরের দেয়া বিবৃতিতে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি। সোমবার জামায়াতে ইসলামীর নতুন আমির হিসেবে শপথ নেন মকবুল আহমাদ। শপথের পর তিনি দলীয় নেতাকর্মী ও দেশবাসীর উদ্দেশে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। সেই বিবৃতিতে সরকারের বিরুদ্ধে জুলুম-নির্যাতনের নানা অভিযোগ তুললেও বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করা হয়েছে শ্রদ্ধার সঙ্গে। কৃতজ্ঞতা জানানো হয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি।

জামায়াতের আমির বিবৃতির শুরুতে বলেন, ‘আজ দেশের এক কঠিন ক্রান্তিকালে আপনাদের সামনে উপস্থিত হতে পেরে প্রথমেই আমি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি। সেই সাথে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে যে সকল জনগণ ও বীর মুক্তিযোদ্ধার বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা ও অকৃত্রিম ত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছি তাদের কথা আজ গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছি। বিশেষভাবে স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরউত্তম, জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গনি উসমানীসহ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতাদের আমি সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করছি।’

জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালীন হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, ঘরবাড়ি লুটপাট, ধর্মান্তরকরণ ও অগ্নিসংযোগের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ প্রমাণিত। সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে ইতোমধ্যে জামায়াতের শীর্ষ পাঁচ নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। আজীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন আরেক নেতা। দুই নেতার বিচারকাজ শেষ পর্যায়ে। শুধু নেতাদের নয়, দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকেও এসব অপরাধে অভিযুক্ত করেছে সর্বোচ্চ আদালত। মানবতাবিরোধী অপরাধে দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচারের দাবিও উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে। ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধন করে জামায়াতের বিচার হবে বলে একাধিকারবার জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র বিরোধিতা ও পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতার অভিযোগে স্বাধীনতার পর জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ হয়। পরে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে জামায়াতকে রাজনীতির সুযোগ দেন। স্বাধীন দেশের রাজনীতিতে ফিরে এলেও জামায়াত মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপারে ‘উন্নাসিকতা’ দেখিয়ে এসেছে। দেশবিরোধী অবস্থানের জন্য দলের ভেতর থেকে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবি উঠলেও জামায়াত তা করেনি। বরং যারা এই দাবি তুলেছেন তাদেরকে কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেও জামায়াতে ইসলামী কখনও স্বীকৃতি দেয়নি। সবশেষ বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এক বিবৃতিতে জামায়াত জানায়, স্বাধীনতার স্থপতি হিসেবে তারা শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বীকৃতি দেন। তবে ধর্মীয় বিধিনিষেধের কারণে জাতির জনক হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে মেনে নিতে আপত্তি জানায় জামায়াত।

যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর বিচারের দাবি দীর্ঘ দিনের। ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি যোগ করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। ক্ষমতায় আসার পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে সরকার। ২০১০ সালে শুরু হয় বিচারকাজ। এখনো বিচারকাজ চলছে। ইতোমধ্যে ছয়জনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে, যাদের পাঁচজন জামায়াতে ইসলামীর এবং একজন বিএনপির। জামায়াতের এক নেতা আমৃত্যু কারাদণ্ড ভোগ করেছেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় মারা গেছেন জামায়াতের দুই এবং বিএনপির এক নেতা।

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু হওয়ার পর থেকেই দেশের রাজনীতিতে কোণঠাসা জামায়াত। সহিংসতার ভয়াল রূপ নিয়ে প্রথমে সামনে এলেও ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর দলটি চুপসে গেছে। ইতোমধ্যে দলের নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিও আছে বিভিন্ন মহল থেকে। এই অবস্থায় অপেক্ষাকৃত ‘বিতর্কহীন’ একজন আমির নির্বাচন করেছে দলটি। নতুন আমিরের দায়িত্ব নেয়ার পর বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তার শ্রদ্ধা জানানোর বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর