ঢাকা ০২:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
প্রথম সিভিল সার্জন সম্মেলন উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা সড়কে প্রাণ হারালেন ২ মোটরসাইকেল আরোহী গত অর্থবছরে দেশে উৎপাদন ৪২ হাজার টন কমল অত্যধিক তাপপ্রবাহ, নাব্যতা সংকটসহ নদী দূষণে অভ্যন্তরীণ নদী মুখি হচ্ছে না ইলিশ পিরোজপুরে ব্যস্ত সড়কে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে রঙিন কৃষ্ণচূড়া নড়বড়ে কাঠের ব্রিজ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যায় শিশুরা হাসনাতকে অভিবাদন জানালেন সারজিস জুলাইকে অস্বীকার করে শান্তিতে থাকার সুযোগ নেই : আসিফ মাহমুদ হবিগঞ্জে প্রতিবন্ধী নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে দুই ভাই গ্রেপ্তার শুটিং সেটে মাথায় গুরুতর আঘাত, কেমন আছেন তটিনী পা দিয়ে লিখে হাবিপ্রবি’র ভর্তি পরীক্ষায় মানিকের চমক

বাংলাদেশের আমের গন্তব্য এবার চীন, খুলছে রপ্তানির নতুন দিগন্ত

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৫০:৩২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫
  • ২৫ বার

বিশ্বে আম উৎপাদনে প্রথম দশে থাকলেও রপ্তানির দৌড়ে অনেকটাই পিছিয়ে বাংলাদেশ। বিশেষজ্ঞ ও রপ্তানিকারকরা বলছেন, এর মূল কারণ আকাশপথে পরিবহন ব্যয়ের উচ্চতা—যা প্রতিযোগীদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। ফলে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ বাজারে জায়গা ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।

তবে সম্প্রতি চীনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা বাংলাদেশি আম রপ্তানিকারকদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করছে। কারণ চীনে পরিবহন ব্যয় তুলনামূলক কম। ন্যূনতম মান বজায় রাখতে পারলে বাংলাদেশ এই বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বর্তমানে ইউরোপে প্রতি কেজি ফল পাঠাতে ভাড়া গুনতে হয় ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকা, আর মধ্যপ্রাচ্যে ২০০-২২০ টাকা। সেখানে চীনের বাজারে খরচ পড়ে মাত্র ৭০-৮৫ টাকা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আম রপ্তানি প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুর রহমান জানান, বাংলাদেশ আম রপ্তানির জন্য প্রস্তুত। তিনি বলেন, “আমাদের আম স্বাদ ও মানে উন্নত। চীনে রপ্তানির প্রক্রিয়ায় আমরা এগিয়ে রয়েছি। চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইনস আম পরিবহনের জন্য বিশেষ কার্গো চালুর প্রস্তাব দিয়েছে।”

রপ্তানির পরিসংখ্যান অবশ্য আশাব্যঞ্জক নয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৪ লাখ টন আম উৎপাদন হলেও রপ্তানি হয়েছে মাত্র ১,৩২১ টন, যা আগের দুই বছরের তুলনায়ও কম।

চীনকে সম্ভাব্য বড় বাজার হিসেবে দেখছেন রপ্তানিকারক নাজমুল হোসেন ভূঁইয়া। তার মতে, “চীনে নতুন বাজার গড়ার সম্ভাবনা থাকলেও টিকে থাকতে হলে আমাদের অবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের ৪ লাখ টন আম আমদানির বড় অংশ আসে থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনাম থেকে। বাংলাদেশ সেখানে প্রতিযোগিতায় নামলেও মান, নিয়মনীতি ও গ্যাপ কমপ্লায়েন্স মানা জরুরি।

শেরে-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু নোমান ফারুক আহমেদ জানান, চীনে আম রপ্তানির জন্য ৩০টি শর্ত পূরণ করতে হবে। “আমের মধ্যে ২১টি কোয়ারেন্টিন পেস্ট চিহ্নিত হয়েছে, যেগুলো সম্পূর্ণ মুক্ত রাখতে হবে,” বলেন তিনি।

ফারুক আহমেদের মতে, “গ্যাপ অনুসরণ করে উৎপাদন করা গেলে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ সহজ হবে। শুধু চীনের জন্য নয়, এটি বিশ্ববাজারের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।”

এদিকে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক চীন সফরেও এই ইস্যু গুরুত্ব পেয়েছে। চীনা প্রতিনিধিরা ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে এবং শিগগিরই বাংলাদেশে বাগান ও প্যাকেজিং ব্যবস্থা ঘুরে দেখার আগ্রহ জানিয়েছে।

চীন-বাংলাদেশ পার্টনারশিপ প্ল্যাটফর্মের মহাসচিব অ্যালেক্স ওয়াং বলেন, “চীনের বাজারে বাংলাদেশি আমের চাহিদা রয়েছে। চুক্তি স্বাক্ষর হলে রপ্তানি সহজ হবে।”

রপ্তানির খরচ কমাতে চীনের রিটার্ন কার্গো ফ্লাইটগুলো ব্যবহারের প্রস্তাবও এসেছে। বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কবির আহমেদ বলেন, “এসব ফ্লাইট পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারলে কেজিপ্রতি পরিবহন খরচ ৫০-৬০ টাকায় নামানো সম্ভব।”

সবমিলিয়ে সঠিক পরিকল্পনা ও পদক্ষেপের মাধ্যমে চীন বাংলাদেশের আম রপ্তানির জন্য একটি সম্ভাবনাময় নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে বলে মনে করছেন বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রথম সিভিল সার্জন সম্মেলন উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা

বাংলাদেশের আমের গন্তব্য এবার চীন, খুলছে রপ্তানির নতুন দিগন্ত

আপডেট টাইম : ১১:৫০:৩২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫

বিশ্বে আম উৎপাদনে প্রথম দশে থাকলেও রপ্তানির দৌড়ে অনেকটাই পিছিয়ে বাংলাদেশ। বিশেষজ্ঞ ও রপ্তানিকারকরা বলছেন, এর মূল কারণ আকাশপথে পরিবহন ব্যয়ের উচ্চতা—যা প্রতিযোগীদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। ফলে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ বাজারে জায়গা ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।

তবে সম্প্রতি চীনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা বাংলাদেশি আম রপ্তানিকারকদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করছে। কারণ চীনে পরিবহন ব্যয় তুলনামূলক কম। ন্যূনতম মান বজায় রাখতে পারলে বাংলাদেশ এই বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বর্তমানে ইউরোপে প্রতি কেজি ফল পাঠাতে ভাড়া গুনতে হয় ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকা, আর মধ্যপ্রাচ্যে ২০০-২২০ টাকা। সেখানে চীনের বাজারে খরচ পড়ে মাত্র ৭০-৮৫ টাকা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আম রপ্তানি প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুর রহমান জানান, বাংলাদেশ আম রপ্তানির জন্য প্রস্তুত। তিনি বলেন, “আমাদের আম স্বাদ ও মানে উন্নত। চীনে রপ্তানির প্রক্রিয়ায় আমরা এগিয়ে রয়েছি। চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইনস আম পরিবহনের জন্য বিশেষ কার্গো চালুর প্রস্তাব দিয়েছে।”

রপ্তানির পরিসংখ্যান অবশ্য আশাব্যঞ্জক নয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৪ লাখ টন আম উৎপাদন হলেও রপ্তানি হয়েছে মাত্র ১,৩২১ টন, যা আগের দুই বছরের তুলনায়ও কম।

চীনকে সম্ভাব্য বড় বাজার হিসেবে দেখছেন রপ্তানিকারক নাজমুল হোসেন ভূঁইয়া। তার মতে, “চীনে নতুন বাজার গড়ার সম্ভাবনা থাকলেও টিকে থাকতে হলে আমাদের অবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের ৪ লাখ টন আম আমদানির বড় অংশ আসে থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনাম থেকে। বাংলাদেশ সেখানে প্রতিযোগিতায় নামলেও মান, নিয়মনীতি ও গ্যাপ কমপ্লায়েন্স মানা জরুরি।

শেরে-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু নোমান ফারুক আহমেদ জানান, চীনে আম রপ্তানির জন্য ৩০টি শর্ত পূরণ করতে হবে। “আমের মধ্যে ২১টি কোয়ারেন্টিন পেস্ট চিহ্নিত হয়েছে, যেগুলো সম্পূর্ণ মুক্ত রাখতে হবে,” বলেন তিনি।

ফারুক আহমেদের মতে, “গ্যাপ অনুসরণ করে উৎপাদন করা গেলে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ সহজ হবে। শুধু চীনের জন্য নয়, এটি বিশ্ববাজারের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।”

এদিকে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক চীন সফরেও এই ইস্যু গুরুত্ব পেয়েছে। চীনা প্রতিনিধিরা ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে এবং শিগগিরই বাংলাদেশে বাগান ও প্যাকেজিং ব্যবস্থা ঘুরে দেখার আগ্রহ জানিয়েছে।

চীন-বাংলাদেশ পার্টনারশিপ প্ল্যাটফর্মের মহাসচিব অ্যালেক্স ওয়াং বলেন, “চীনের বাজারে বাংলাদেশি আমের চাহিদা রয়েছে। চুক্তি স্বাক্ষর হলে রপ্তানি সহজ হবে।”

রপ্তানির খরচ কমাতে চীনের রিটার্ন কার্গো ফ্লাইটগুলো ব্যবহারের প্রস্তাবও এসেছে। বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কবির আহমেদ বলেন, “এসব ফ্লাইট পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারলে কেজিপ্রতি পরিবহন খরচ ৫০-৬০ টাকায় নামানো সম্ভব।”

সবমিলিয়ে সঠিক পরিকল্পনা ও পদক্ষেপের মাধ্যমে চীন বাংলাদেশের আম রপ্তানির জন্য একটি সম্ভাবনাময় নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে বলে মনে করছেন বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা।