ঢাকা ০৫:২১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বৈষম্য বিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম প্রশাসনে ৫ দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:৪৩:৪২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫
  • ৩৩ বার

নিরপেক্ষ প্রশাসনিক কাঠামো নিশ্চিত করার স্বার্থে অবিলম্বে সব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিলসহ ৫ দফা দাবি জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম।

আজ শনিবার (১৯ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবে মাওলানা আকরাম খান হলে সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি সাবেক সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তার এসব দাবি তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, প্রশাসনকে গতিশীল করা ও আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু-নিরপেক্ষভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে সব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। সিভিল প্রশাসনে কর্মরত ক্যাডার, নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে যারা ফ্যাসিস্টদের দোসর ও দুর্নীতিপরায়ন তাদের অবিলম্বে চাকরি থেকে অপসারণ এবং আইনের আওতায় আনতে হবে।

আবদুস সাত্তার আর বলেন, আমরা বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীকে জানাতে চাই, প্রশাসন থেকে আওয়ামী আস্থাভাজন, দলদাস ও সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদেরদের অপসারণ করতে না পারলে একদিকে যেমন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতামূলক প্রশাসন গড়ে তোলা যাবে না অন্যদিকে পেশাদারত্ব ও বুদ্ধিবৃত্তিক আমলাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করাও সম্ভব হবে না।

৫ দফার অন্য দাবিগুলো হচ্ছে-

ফ্যাসিস্ট আমলে বৈষ্যমের শিকার বর্তমান সব কর্মকর্তা এবং নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ অন্যান্য সংস্থা ও দফতরে গুতুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন, বৈষ্যমের শিকার বঞ্চিতদের পদোন্নতিসহ প্রাপ্য সুবিধা প্রদান এবং ফ্যাসিস্টদের দোসর ও দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি/পদায়নে যারা পৃষ্ঠপোষকতা করছেন তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা।

বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের এসব দাবি অবিলম্বে পূরণ করা না হলে শিগগিরই কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন সংগঠনের সভাপতি।

তিনি বলেন, দাবিগুলো না মানা হলে আমরা কঠোর কর্মসূচি দেবো এবং বিতর্কিত কর্মকর্তাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হবে।

একই সঙ্গে এখন থেকে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলন ও বিবৃতির মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে সিভিল প্রশাসনে সংঘটিত সব অনিয়ম, দুর্নীতি এবং জড়িত ব্যক্তি/কর্মকর্তাদের বিস্তারিত পরিচয় তুলে ধরা হবে বলেও জানান তিনি।

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রসঙ্গে আবদুস সাত্তার বলেন, ফ্যাসিস্ট আমলের মতোই বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ধারা অব্যাহত রেখেছে। এমনকি ফ্যাসিস্ট সরকারের দেওয়া চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হবে- এই মর্মে ঘোষণা দিয়েও কোনো কোনো কর্মকর্তার চুক্তি অব্যাহত রেখেছে। চুক্তি বাতিল করে আবার নতুন করে একই ব্যক্তিকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে। কোনো কোনো পদে পূর্ব পরিচয়, বিশেষ যোগসূত্র বা অজ্ঞাত কারণে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ ব্যতিরেকে ভিনদেশি নাগরকিদেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে বর্তমান সরকার। আবার কোনো কোনো পদে ফ্যাসিস্ট সহযোগী, বিতর্কিত ও ১/১১ এর দোসর কর্মকর্তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এসব কর্মকর্তা দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির করার কাজে সচেষ্ট আছেন। শুধু তাই নয়, ক্ষেত্র বিশেষে মাননীয় উপদেষ্টাদেরকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। তার লক্ষ্য প্রশাসন ও সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে নির্বাচন বিলম্বিত করা ও অনৈতিক ফয়দা লাভ করা। কাজেই অবিলম্বে সব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করতে হবে।

এ বি এম আবদুস সাত্তার অভিযোগ করে বলেন, সাতক্ষীরা জেলায় গণহত্যা পরিচালনাকারী মূল হোতা বর্তমান পানি সম্পদ সচিব নাজমুল হাসান, শেখ মুজিব জন্মবার্ষিকী পালনে শত শত কোটি টাকা লোপাটের নায়ক বর্তমান কৃষি সচিব এমদাদুল্লাহ মিয়া, মুজিবপ্রেমী কর্মকর্তা বর্তমানে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে মাঠ ও সমন্বয় বিভাগের সচিব জাহেদা পারভীন ও অন্যান্য ফ্যাসিস্টের দোসর সচিবরা এখনো কেনো বা কাদের প্রশ্রয়ে চাকরিতে আছে? অবিলম্বে এসব কর্মকর্তাদের চাকরি থেকে অপসারণ করতে হবে।

কিছু কিছু উপদেষ্টা এখনও ফ্যাসিস্টের দোসর কর্মকর্তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওনার ফ্যাসিস্ট মন্ত্রী/সচিবদের একান্ত সচিবদেরকে তাদের একান্ত সচিব হিসেবে বহাল রেখেছেন। তোফাজ্জল হোসেন, মফিদুর রহমানের মতো ফ্যাসিস্টের সহযোগী, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা কোন যোগ্যতায় সচিব হিসেবে পদোন্নতি/পদায়ন পান তা আপনাদের মাধ্যমে আমরা জানতে চাই। আমরা মনে করি, বর্তমান সরকারের এসব কার্যকলাপ জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানীর নামান্তর মাত্র।

জেলা প্রশাসক হিসেবে ফ্যাসিস্টদের পদায়ন এবং অতি সম্প্রতি ২৪ ব্যাচের কর্মকর্তাদের পদোন্নতিতে ১৮৫ জনকে রহস্যজনকভাবে পদোন্নতি না দেওয়া এবং ফ্যাসিস্ট আমলে জেলা প্রশাসক/ফ্যাসিস্ট মন্ত্রী/সচিবদের একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ২২ জন কর্মকর্তাদের যুগ্ম সচিব করা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বৈষ্যমবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের সভাপতি।

তিনি বলেন, পলাতক ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ আমলাদের এখনো কীভাবে এবং কার স্বার্থে পদোন্নতি দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে পদায়ন করা হচ্ছে তা আমাদের বোধগম্য নয়।

বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার গোটা প্রশাসনকে দলতন্ত্রে পরিণত করেছে অভিযোগ করে এ বি এম আবদুস সাত্তার বলেন, বিগত সাড়ে ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার কোনো রকম ন্যায়নীতির তোয়াক্কা করেনি। দক্ষতা, যোগ্যতা দেখার প্রয়োজনবোধ করেনি। ধার ধারেনি প্রশাসনিক নিয়মকানুনের। যোগ্যতা ও দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও অনেক সিনিয়র কর্মকর্তাদের ডিঙিয়ে পছন্দের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ও গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা হয়েছে। ফলে পেশাদার ও যোগ্য আমলাদের অনেকে বঞ্চনা, হতাশা, অপমানে নিগৃহীত হয়ে মারা গেছেন। মিথ্যা অভিযোগে কারো কারো নামে মামলা দেওয়া হয়েছে, তাদের জেলে যেতে হয়েছে। কারণ ছাড়া অনেককে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। কেউ কেউ ক্ষোভে অপমানে দেশত্যাগ করে বিদেশে অভাবনীয় কষ্ট করে জীবন অতিবাহিত করেছেন। আর এর মধ্যে যারা সার্ভিসে ছিলেন তাদের পদোন্নতি তো দূরের কথা পদায়ন হয়েছিল পাহাড়, জঙ্গল, দ্বীপে ও পৌরসভার মতো তৃতীয় স্তরের জায়গায় এবং কনিষ্ঠদের অধীনে চাকরি করতে তাদের বাধ্য করা হয়েছে। আবার কিছু কিছু কর্মকর্তাকে সচিবালয়ে প্রবেশ পর্যন্ত করতে দেওয়া হয়েছে।

আবদুস সাত্তার বলেন, আমরা অসীম সম্ভাবনার এই দেশকে আর ব্যর্থ হতে দিতে পারি না। আমরা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের সাফল্য কামনা করি এবং এই সরকারের আইনানুগ ও স্বৈরাচারমুক্ত প্রশাসন প্রতিষ্ঠার সব পদক্ষেপে সহায়তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

সহস্র শহীদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত এই নতুন বাংলাদেশে বৈষ্যমহীন ও বঞ্চনামুক্ত দেশ গড়ার প্রত্যয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সামনে এগিয়ে যাবে এবং জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামো বিনির্মাণের মাধ্যমে জনগণের

মাঝে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার ফিরে আসবে- এটাই সবার প্রত্যাশা।

একই সঙ্গে কয়েক মাস ধরে সচিবালয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের দফতরে, রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি অফিসে, জেলা-উপজেলা সরকারি অফিসে সমন্বয়ক নামধারী ব্যক্তিরা অবস্থান নিয়ে ‘কাজ-কর্মে বিঘ্নতা’ সৃষ্টি করছে অভিযোগ করে এই বিষয়ে সরকারের ব্যাখ্যা দাবি করেছে বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির মহাসচিব ও সাবেক সচিব কাজী মিরাজ হোসেন, কার্যকরী সভাপতি ও সাবেক সচিব আবদুল খালেক, সাবেক যুগ্নসচিব বিজন কান্তি সরকার, সাবেক সচিব একেএম এহসানুল হক, সাবেক সচিব ড. ফরিদুল ইসলাম, সাবেক সচিব আবদুল বারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

বৈষম্য বিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম প্রশাসনে ৫ দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

আপডেট টাইম : ০৩:৪৩:৪২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫

নিরপেক্ষ প্রশাসনিক কাঠামো নিশ্চিত করার স্বার্থে অবিলম্বে সব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিলসহ ৫ দফা দাবি জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম।

আজ শনিবার (১৯ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবে মাওলানা আকরাম খান হলে সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি সাবেক সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তার এসব দাবি তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, প্রশাসনকে গতিশীল করা ও আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু-নিরপেক্ষভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে সব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। সিভিল প্রশাসনে কর্মরত ক্যাডার, নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে যারা ফ্যাসিস্টদের দোসর ও দুর্নীতিপরায়ন তাদের অবিলম্বে চাকরি থেকে অপসারণ এবং আইনের আওতায় আনতে হবে।

আবদুস সাত্তার আর বলেন, আমরা বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীকে জানাতে চাই, প্রশাসন থেকে আওয়ামী আস্থাভাজন, দলদাস ও সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদেরদের অপসারণ করতে না পারলে একদিকে যেমন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতামূলক প্রশাসন গড়ে তোলা যাবে না অন্যদিকে পেশাদারত্ব ও বুদ্ধিবৃত্তিক আমলাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করাও সম্ভব হবে না।

৫ দফার অন্য দাবিগুলো হচ্ছে-

ফ্যাসিস্ট আমলে বৈষ্যমের শিকার বর্তমান সব কর্মকর্তা এবং নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ অন্যান্য সংস্থা ও দফতরে গুতুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন, বৈষ্যমের শিকার বঞ্চিতদের পদোন্নতিসহ প্রাপ্য সুবিধা প্রদান এবং ফ্যাসিস্টদের দোসর ও দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি/পদায়নে যারা পৃষ্ঠপোষকতা করছেন তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা।

বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের এসব দাবি অবিলম্বে পূরণ করা না হলে শিগগিরই কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন সংগঠনের সভাপতি।

তিনি বলেন, দাবিগুলো না মানা হলে আমরা কঠোর কর্মসূচি দেবো এবং বিতর্কিত কর্মকর্তাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হবে।

একই সঙ্গে এখন থেকে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলন ও বিবৃতির মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে সিভিল প্রশাসনে সংঘটিত সব অনিয়ম, দুর্নীতি এবং জড়িত ব্যক্তি/কর্মকর্তাদের বিস্তারিত পরিচয় তুলে ধরা হবে বলেও জানান তিনি।

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রসঙ্গে আবদুস সাত্তার বলেন, ফ্যাসিস্ট আমলের মতোই বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ধারা অব্যাহত রেখেছে। এমনকি ফ্যাসিস্ট সরকারের দেওয়া চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হবে- এই মর্মে ঘোষণা দিয়েও কোনো কোনো কর্মকর্তার চুক্তি অব্যাহত রেখেছে। চুক্তি বাতিল করে আবার নতুন করে একই ব্যক্তিকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে। কোনো কোনো পদে পূর্ব পরিচয়, বিশেষ যোগসূত্র বা অজ্ঞাত কারণে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ ব্যতিরেকে ভিনদেশি নাগরকিদেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে বর্তমান সরকার। আবার কোনো কোনো পদে ফ্যাসিস্ট সহযোগী, বিতর্কিত ও ১/১১ এর দোসর কর্মকর্তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এসব কর্মকর্তা দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির করার কাজে সচেষ্ট আছেন। শুধু তাই নয়, ক্ষেত্র বিশেষে মাননীয় উপদেষ্টাদেরকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। তার লক্ষ্য প্রশাসন ও সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে নির্বাচন বিলম্বিত করা ও অনৈতিক ফয়দা লাভ করা। কাজেই অবিলম্বে সব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করতে হবে।

এ বি এম আবদুস সাত্তার অভিযোগ করে বলেন, সাতক্ষীরা জেলায় গণহত্যা পরিচালনাকারী মূল হোতা বর্তমান পানি সম্পদ সচিব নাজমুল হাসান, শেখ মুজিব জন্মবার্ষিকী পালনে শত শত কোটি টাকা লোপাটের নায়ক বর্তমান কৃষি সচিব এমদাদুল্লাহ মিয়া, মুজিবপ্রেমী কর্মকর্তা বর্তমানে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে মাঠ ও সমন্বয় বিভাগের সচিব জাহেদা পারভীন ও অন্যান্য ফ্যাসিস্টের দোসর সচিবরা এখনো কেনো বা কাদের প্রশ্রয়ে চাকরিতে আছে? অবিলম্বে এসব কর্মকর্তাদের চাকরি থেকে অপসারণ করতে হবে।

কিছু কিছু উপদেষ্টা এখনও ফ্যাসিস্টের দোসর কর্মকর্তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওনার ফ্যাসিস্ট মন্ত্রী/সচিবদের একান্ত সচিবদেরকে তাদের একান্ত সচিব হিসেবে বহাল রেখেছেন। তোফাজ্জল হোসেন, মফিদুর রহমানের মতো ফ্যাসিস্টের সহযোগী, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা কোন যোগ্যতায় সচিব হিসেবে পদোন্নতি/পদায়ন পান তা আপনাদের মাধ্যমে আমরা জানতে চাই। আমরা মনে করি, বর্তমান সরকারের এসব কার্যকলাপ জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানীর নামান্তর মাত্র।

জেলা প্রশাসক হিসেবে ফ্যাসিস্টদের পদায়ন এবং অতি সম্প্রতি ২৪ ব্যাচের কর্মকর্তাদের পদোন্নতিতে ১৮৫ জনকে রহস্যজনকভাবে পদোন্নতি না দেওয়া এবং ফ্যাসিস্ট আমলে জেলা প্রশাসক/ফ্যাসিস্ট মন্ত্রী/সচিবদের একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ২২ জন কর্মকর্তাদের যুগ্ম সচিব করা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বৈষ্যমবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের সভাপতি।

তিনি বলেন, পলাতক ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ আমলাদের এখনো কীভাবে এবং কার স্বার্থে পদোন্নতি দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে পদায়ন করা হচ্ছে তা আমাদের বোধগম্য নয়।

বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার গোটা প্রশাসনকে দলতন্ত্রে পরিণত করেছে অভিযোগ করে এ বি এম আবদুস সাত্তার বলেন, বিগত সাড়ে ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার কোনো রকম ন্যায়নীতির তোয়াক্কা করেনি। দক্ষতা, যোগ্যতা দেখার প্রয়োজনবোধ করেনি। ধার ধারেনি প্রশাসনিক নিয়মকানুনের। যোগ্যতা ও দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও অনেক সিনিয়র কর্মকর্তাদের ডিঙিয়ে পছন্দের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ও গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা হয়েছে। ফলে পেশাদার ও যোগ্য আমলাদের অনেকে বঞ্চনা, হতাশা, অপমানে নিগৃহীত হয়ে মারা গেছেন। মিথ্যা অভিযোগে কারো কারো নামে মামলা দেওয়া হয়েছে, তাদের জেলে যেতে হয়েছে। কারণ ছাড়া অনেককে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। কেউ কেউ ক্ষোভে অপমানে দেশত্যাগ করে বিদেশে অভাবনীয় কষ্ট করে জীবন অতিবাহিত করেছেন। আর এর মধ্যে যারা সার্ভিসে ছিলেন তাদের পদোন্নতি তো দূরের কথা পদায়ন হয়েছিল পাহাড়, জঙ্গল, দ্বীপে ও পৌরসভার মতো তৃতীয় স্তরের জায়গায় এবং কনিষ্ঠদের অধীনে চাকরি করতে তাদের বাধ্য করা হয়েছে। আবার কিছু কিছু কর্মকর্তাকে সচিবালয়ে প্রবেশ পর্যন্ত করতে দেওয়া হয়েছে।

আবদুস সাত্তার বলেন, আমরা অসীম সম্ভাবনার এই দেশকে আর ব্যর্থ হতে দিতে পারি না। আমরা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের সাফল্য কামনা করি এবং এই সরকারের আইনানুগ ও স্বৈরাচারমুক্ত প্রশাসন প্রতিষ্ঠার সব পদক্ষেপে সহায়তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

সহস্র শহীদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত এই নতুন বাংলাদেশে বৈষ্যমহীন ও বঞ্চনামুক্ত দেশ গড়ার প্রত্যয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সামনে এগিয়ে যাবে এবং জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামো বিনির্মাণের মাধ্যমে জনগণের

মাঝে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার ফিরে আসবে- এটাই সবার প্রত্যাশা।

একই সঙ্গে কয়েক মাস ধরে সচিবালয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের দফতরে, রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি অফিসে, জেলা-উপজেলা সরকারি অফিসে সমন্বয়ক নামধারী ব্যক্তিরা অবস্থান নিয়ে ‘কাজ-কর্মে বিঘ্নতা’ সৃষ্টি করছে অভিযোগ করে এই বিষয়ে সরকারের ব্যাখ্যা দাবি করেছে বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির মহাসচিব ও সাবেক সচিব কাজী মিরাজ হোসেন, কার্যকরী সভাপতি ও সাবেক সচিব আবদুল খালেক, সাবেক যুগ্নসচিব বিজন কান্তি সরকার, সাবেক সচিব একেএম এহসানুল হক, সাবেক সচিব ড. ফরিদুল ইসলাম, সাবেক সচিব আবদুল বারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।