ঢাকায় বসেই আইএস’র (ইসলামিক স্টেটস) কাছে বার্তা লিখে পাঠাতেন নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক তামিম আহম্মেদ চৌধুরী। দায় স্বীকার করা এসব বার্তার অনেকগুলোই আইএসের কথিত ‘আমাক’ এজেন্সি তাদের সাইটে আপলোড করেছে। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের একটি আস্তানা থেকে উদ্ধারকৃত নিহত তামিমের ল্যাপটপের ফরেনসিক বিশ্লেষণ করে এমনই তথ্য পেয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট (সিটি)। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওই ল্যাপটপ থেকে অনেক কিছুই মুছে ফেলা হলেও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। গত ২৭ আগস্ট গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ার ওই জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায় সিটি ইউনিটের সদস্যরা। অভিযানে দুই সহযোগীসহ নব্য জেএমবির মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরী নিহত হয়। খবর বাংলাদেশ প্রতিদিন’র।
সিটি সূত্র জানায়, গুলশান হামলার আগে প্রায় অর্ধ শত হামলার দায় স্বীকার করা হয় আইএসের পক্ষ থেকে। এসব দায় স্বীকারের প্রতিটি টুইট বার্তা লিখে পাঠাতেন তামিম চৌধুরী। আইএসের প্রতিনিধির কাছে পাঠানোর পর সেসব বার্তা আইএসের কথিত আমাক এজেন্সির মাধ্যমে দায় স্বীকার করে প্রকাশ করা হতো। কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তামিমের ল্যাপটপ থেকে উদ্ধার করা বার্তাগুলো বিভিন্ন সময়ে দায় স্বীকার করা আমাক এজেন্সির বার্তার সঙ্গে মিলে গেছে। ঢাকায় বসেই তামিম এসব বার্তা বিশেষ অ্যাপসের মাধ্যমে আইএসের কাছে পাঠাত। তিনি আরও বলেন, তামিমের আস্তানা থেকে অনেক তথ্য উদ্ধার করা হয়েছে। বিশেষ করে তার ল্যাপটপ থেকে নব্য জেএমবির অনেক পরিকল্পনার বিষয়ে জানা গেছে। তাদের নেটওয়ার্ক ও অন্যান্য অনেক তথ্য উদ্ধার করা হয়েছে। তবে অভিযানের আগে অনেক লিখিত তথ্য তারা পুড়িয়ে ফেলেছে। সূত্র বলছে, অভিযানের আগে তামিম ল্যাপটপটি ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ল্যাপটপের ভাঙা অংশ থেকেই আইটি ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে তথ্যগুলো উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া গ্রেফতার হওয়া তামিমের ঘনিষ্ঠ সহযোগী কামরানের কাছ থেকেও কিছু তথ্য উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার টুইট বার্তার পাশাপাশি নিহতদের ছবিও আইএসের কাছে পাঠাতেন তামিম। গুলশান হামলায় অংশ নেওয়া জঙ্গিরা তা বিশেষ অ্যাপসের মাধ্যমে তামিম ও মারজানের কাছে পাঠায়। তামিম সেগুলো তাৎক্ষণিক আইএসের আমাক এজেন্সির কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিল। গত ১ জুলাই গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তা আইএসের কথিত আমাক এজেন্সি দায় স্বীকার করে। এমনকি হলি আর্টিজানের ভিতরে হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়াদের ছবিসহ নিহতদের সংখ্যাও প্রকাশ করে তারা। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় অভিযানের সময় অপর এক জঙ্গির সঙ্গে বিশেষ অ্যাপসের মাধ্যমে কথোপকথনের কিছু তথ্য উদ্ধার করেছে সিটির কর্মকর্তারা। ওই আলাপচারিতায় তামিম চৌধুরী তার বাসার সামনে পুলিশের গাড়ি ও সোয়াত টিমের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা অপর জঙ্গিকে জানায়।
ওই বার্তায় তামিম জানায়, ‘চারটা মাইক্রো। মেইন রাস্তার ওপর থেকে ওরা পজিশন নিচ্ছে। মনে হচ্ছে ওরা শতভাগ কনফার্ম হয়ে আসছে।’ তামিম ওই বার্তায় বলে, ‘আমরা ইনফো আস্তে আস্তে ডেস্ট্রয় করা শুরু করেছি। আপনারা কাজ চালিয়ে যাবেন।’ অভিযানের আগ মুহূর্তে তামিম অভিযানের প্রতি মুহূর্তের তথ্য জানানোর পাশাপাশি কিছু নির্দেশনাও দিয়ে যায়। গোয়েন্দারা ধারণা করছেন, আজিমপুরের জঙ্গি আস্তানায় অবস্থানরত তানভীর কাদেরী ওরফে আবদুল করিমের সঙ্গে এই আলোচনা করেছিল সে। তানভীর কাদেরীকেই তামিম তার সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে মনে করত। তামিম তাকে বলে ‘আপনারা কাজ চালিয়ে যাবেন। তিনটি বিষয়কে বিশেষ গুরুত্ব দেবেন। তা হলো— দীক্ষা, তাকওয়া ও আনুগত্য। বাংলার মুজাহিদীনদের জন্য এই তিনটিই আমার ওয়াসিয়াহ।’
সিটির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, নব্য জেএমবির অন্যতম মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরীসহ শীর্ষ অনেক জঙ্গি নিহত ও গ্রেফতার হয়েছে। ফলে নব্য জেএমবির নতুন করে সংগঠিত হওয়াটা সহজ হবে না। যে কজন এখনো আত্মগোপন করে আছে তাদের গ্রেফতারেও নিয়মিত অভিযান চলছে। বিশেষ করে মারজান, বাশারুজ্জামান ও রাজীব গান্ধীকে ধরতে পারলেই নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে এই গ্রুপটি।