ঢাকা ০৯:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ২৬ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তীব্র খরায় ফাটছে জমি, বোরো আবাদ নিয়ে শঙ্কা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:২৯:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ এপ্রিল ২০২৫
  • ১২ বার

নীলফামারী সদর উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের বানিয়াপাড়ার কৃষক দুলাল হোসেন। প্রতিবছরের মতো এবারও ৯০ শতক জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। তবে এবছর পানির অভাবে তার জমির ধানের গাছগুলো রোদে পুড়ে যাচ্ছে। জমির মাটি ফেটে যাওয়ায় রোপণ করা ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি। শুধু দুলাল হোসেনই নয় বোরো ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন জেলার হাজারো কৃষক।

চৈত্রের শুরু থেকেই তীব্র গরম আর অনাবৃষ্টিতে নীলফামারীতে দেখা দিয়েছে খাবার পানি ও সেচসংকট। তীব্র খরায় অনেক ফসলি জমি ফেটে চৌচির। পানির স্তর নেমে যাওয়ায় পানি উঠছে না নলকূপেও। সেচপাম্পের অগভীর নলকূপে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ পানি উত্তোলন না হওয়ায় বোরো খেতে সময়মতো সেচ দিতে পারছেন না কৃষকরা। উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখতে বিদ্যুৎ বিভাগকে অনুরোধ করেছেন কৃষি বিভাগ।

কৃষক দুলাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতিবছর এ সময় তিস্তা সেচ ক্যানেলের পানি দিয়ে ইরি-বোরো খেতে কম মূল্যে সেচ দিত। কিন্তু এবার জমির পাশ দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা সেচ ক্যানেলের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সংস্কার করায় সেচ বন্ধ রয়েছে। এতে বোরো খেত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পানির অভাবে জমির মাটি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। এতে ধান উৎপাদন নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন হাজারো কৃষক। কৃষকরা বলছেন, এত টাকা খরচ করে বোরো ধানের চারা রোপণ করেছেন, কিন্তু অনাবৃষ্টি আর দাবদাহে জমির মাটি ফেটে যাওয়ায় বোরো ধানের ফলন নিয়ে চিন্তিত তারা।

সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লোকমান হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, নীলফামারীতে গত বছরের মার্চ মাসে ২৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও চলতি বছর একই সময়ে বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ৬ মিলিমিটার। পাশাপাশি গত এক সপ্তাহে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৬ থেকে ১৮ ও সর্বোচ্চ ৩৪ থেকে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। তিনি জানান, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এ অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের তেমন সম্ভাবনা নেই। জেলার ডোমার, ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরগঞ্জ, সদর ও সৈয়দপুর থেকে বাসিন্দারা জানান, তাদের উপজেলায় সেচ ও পানের পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এ সময় বোরো জমিতে পানি থাকা খুবই প্রয়োজন।

সৈয়দপুর উপজেলার বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের লক্ষণপুরের কৃষক জহিরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনেক সেচপাম্প দিয়ে পানিই উঠছে না। আবার কিছু পাম্প দিয়ে অল্প পানি ওঠায় ওই পাম্পের আওতায় রোপণ করা বোরো খেতে দীর্ঘ ১০ দিনেও পানি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে জমি ফেটে চৌচির হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় গ্রামের গভীর পুকুরগুলো শুকিয়ে গেছে। এ ছাড়া নলকূপে পানি না ওঠায় খাবার পানি সংকটে ভুগছেন গ্রামবাসী।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে রংপুরে ১ লাখ ৩২ হাজার ৮০০ হেক্টর, গাইবান্ধায় ১ লাখ ২৯ হাজার ২০ হেক্টর, কুড়িগ্রামে ১ লাখ ১৭ হাজার ৩৬২ হেক্টর, লালমনিরহাটে ৪৮ হাজার ১৫ হেক্টর ও নীলফামারীতে ৮১ হাজার ৮৫৯ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। এবার বোরো ধান আবাদের লক্ষমাত্রা ৫ লাখ ৮ হাজার ৯৭৮ হেক্টর ধরা হলেও অতিরিক্ত ৭৮ হেক্টর বেশি জমিতে বোরো আবাদ করেছেন কৃষকরা।

কৃষি বিভাগ বলছে, কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখতে গভীর নলকূপ দিয়ে সেচের বিকল্প নেই। এ কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অনুরোধ করা হয়েছে।

নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. এস এম আবু বকর সাইফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখতে গভীর নলকূপ দিয়ে সেচের বিকল্প নেই। এ কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অনুরোধ করা হয়েছে। যেখানে তিস্তা সেচনালার পানি সরবরাহ রয়েছে, সেখানে ইরি-বোরো চাষিদের সমস্যা নেই। তিস্তার পানি পাচ্ছে না, এমন এলাকার কৃষকদের ব্যক্তিগত পাম্প দিয়ে সেচের কার্যক্রম চালু রাখার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

তিস্তা সেচ প্রকল্পের উপসম্প্রসারণ কর্মকর্তা অমলেশ চন্দ্র রায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের কমান্ড এলাকায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদান করা হচ্ছে। এরমধ্যে নীলফামারী জেলায় ৩৩ হাজার হেক্টর, রংপুর জেলায় ১০ হাজার হেক্টর, দিনাজপুর জেলায় ৭ হাজার হেক্টর।

তিনি জানান, সেচ কমান্ড এলাকার ৫০ হাজার হেক্টর বোরো জমিতে যথাযথভাবে সেচ প্রদান চলছে। তিনি জানান, সেচ কমাণ্ড এলাকায় সংস্কার কাজ চলছে। ২০২৬ সালে কাজ শেষ হলে ১ লাখ ৪ হাজার হেক্টর জমি সেচ পাবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

তীব্র খরায় ফাটছে জমি, বোরো আবাদ নিয়ে শঙ্কা

আপডেট টাইম : ০৩:২৯:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ এপ্রিল ২০২৫

নীলফামারী সদর উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের বানিয়াপাড়ার কৃষক দুলাল হোসেন। প্রতিবছরের মতো এবারও ৯০ শতক জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। তবে এবছর পানির অভাবে তার জমির ধানের গাছগুলো রোদে পুড়ে যাচ্ছে। জমির মাটি ফেটে যাওয়ায় রোপণ করা ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি। শুধু দুলাল হোসেনই নয় বোরো ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন জেলার হাজারো কৃষক।

চৈত্রের শুরু থেকেই তীব্র গরম আর অনাবৃষ্টিতে নীলফামারীতে দেখা দিয়েছে খাবার পানি ও সেচসংকট। তীব্র খরায় অনেক ফসলি জমি ফেটে চৌচির। পানির স্তর নেমে যাওয়ায় পানি উঠছে না নলকূপেও। সেচপাম্পের অগভীর নলকূপে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ পানি উত্তোলন না হওয়ায় বোরো খেতে সময়মতো সেচ দিতে পারছেন না কৃষকরা। উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখতে বিদ্যুৎ বিভাগকে অনুরোধ করেছেন কৃষি বিভাগ।

কৃষক দুলাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতিবছর এ সময় তিস্তা সেচ ক্যানেলের পানি দিয়ে ইরি-বোরো খেতে কম মূল্যে সেচ দিত। কিন্তু এবার জমির পাশ দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা সেচ ক্যানেলের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সংস্কার করায় সেচ বন্ধ রয়েছে। এতে বোরো খেত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পানির অভাবে জমির মাটি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। এতে ধান উৎপাদন নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন হাজারো কৃষক। কৃষকরা বলছেন, এত টাকা খরচ করে বোরো ধানের চারা রোপণ করেছেন, কিন্তু অনাবৃষ্টি আর দাবদাহে জমির মাটি ফেটে যাওয়ায় বোরো ধানের ফলন নিয়ে চিন্তিত তারা।

সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লোকমান হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, নীলফামারীতে গত বছরের মার্চ মাসে ২৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও চলতি বছর একই সময়ে বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ৬ মিলিমিটার। পাশাপাশি গত এক সপ্তাহে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৬ থেকে ১৮ ও সর্বোচ্চ ৩৪ থেকে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। তিনি জানান, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এ অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের তেমন সম্ভাবনা নেই। জেলার ডোমার, ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরগঞ্জ, সদর ও সৈয়দপুর থেকে বাসিন্দারা জানান, তাদের উপজেলায় সেচ ও পানের পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এ সময় বোরো জমিতে পানি থাকা খুবই প্রয়োজন।

সৈয়দপুর উপজেলার বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের লক্ষণপুরের কৃষক জহিরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনেক সেচপাম্প দিয়ে পানিই উঠছে না। আবার কিছু পাম্প দিয়ে অল্প পানি ওঠায় ওই পাম্পের আওতায় রোপণ করা বোরো খেতে দীর্ঘ ১০ দিনেও পানি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে জমি ফেটে চৌচির হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় গ্রামের গভীর পুকুরগুলো শুকিয়ে গেছে। এ ছাড়া নলকূপে পানি না ওঠায় খাবার পানি সংকটে ভুগছেন গ্রামবাসী।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে রংপুরে ১ লাখ ৩২ হাজার ৮০০ হেক্টর, গাইবান্ধায় ১ লাখ ২৯ হাজার ২০ হেক্টর, কুড়িগ্রামে ১ লাখ ১৭ হাজার ৩৬২ হেক্টর, লালমনিরহাটে ৪৮ হাজার ১৫ হেক্টর ও নীলফামারীতে ৮১ হাজার ৮৫৯ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। এবার বোরো ধান আবাদের লক্ষমাত্রা ৫ লাখ ৮ হাজার ৯৭৮ হেক্টর ধরা হলেও অতিরিক্ত ৭৮ হেক্টর বেশি জমিতে বোরো আবাদ করেছেন কৃষকরা।

কৃষি বিভাগ বলছে, কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখতে গভীর নলকূপ দিয়ে সেচের বিকল্প নেই। এ কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অনুরোধ করা হয়েছে।

নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. এস এম আবু বকর সাইফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখতে গভীর নলকূপ দিয়ে সেচের বিকল্প নেই। এ কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অনুরোধ করা হয়েছে। যেখানে তিস্তা সেচনালার পানি সরবরাহ রয়েছে, সেখানে ইরি-বোরো চাষিদের সমস্যা নেই। তিস্তার পানি পাচ্ছে না, এমন এলাকার কৃষকদের ব্যক্তিগত পাম্প দিয়ে সেচের কার্যক্রম চালু রাখার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

তিস্তা সেচ প্রকল্পের উপসম্প্রসারণ কর্মকর্তা অমলেশ চন্দ্র রায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের কমান্ড এলাকায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদান করা হচ্ছে। এরমধ্যে নীলফামারী জেলায় ৩৩ হাজার হেক্টর, রংপুর জেলায় ১০ হাজার হেক্টর, দিনাজপুর জেলায় ৭ হাজার হেক্টর।

তিনি জানান, সেচ কমান্ড এলাকার ৫০ হাজার হেক্টর বোরো জমিতে যথাযথভাবে সেচ প্রদান চলছে। তিনি জানান, সেচ কমাণ্ড এলাকায় সংস্কার কাজ চলছে। ২০২৬ সালে কাজ শেষ হলে ১ লাখ ৪ হাজার হেক্টর জমি সেচ পাবে।