ঢাকা ০৭:৫২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বর্তমান অর্থনৈতিক কাঠামোতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার সম্ভব নয়

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৮:১৭:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ২০ বার

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের রিসার্চ ডিরেক্টর খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন, প্রস্তাবিত নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালাটি প্রণয়নে সরকার বেশ তাড়াহুড়ো করছে। ফলে একটি দায়সারা ড্রাফট লক্ষ করা যাচ্ছে। সরকারের ভিন্ন ভিন্ন পলিসিতে ভিন্ন ভিন্ন নবায়নযোগ্য জ্বালানি পরিকল্পনা থাকায় বিনিয়োগকারীরা বিভ্রান্ত হতে পারেন। জীবাশ্ম জ্বালানির পরিকল্পনাগুলো অত্যন্ত সুসংহত হলেও নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা ততটা সুসংগঠিত নয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, বর্তমান জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর অর্থনৈতিক কাঠামোর মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার সম্ভব নয়।

রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বাংলামোটরের রূপায়ন ট্রেড সেন্টারে কোস্টাল লাইভলিহুড অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল অ্যাকশন নেটওয়ার্ক (ক্লিন) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, নীতিমালাটি প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা উপেক্ষা করেছে, যা বর্তমান পরিস্থিতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের জ্বালানি লক্ষ্য অর্জনে দেশীয় অর্থায়নের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগ অত্যন্ত জরুরি। বাংলাদেশকে ইন্টিগ্রেটেড এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার মাস্টার প্ল্যানের ওপর নির্ভরশীল না থেকে আরও নির্ভুল বিদ্যুৎ চাহিদা পূর্বাভাস গ্রহণ করতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রক্ষেপণ সঠিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি না হলে কার্যকর হবে না।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ক্লিনের চিফ এক্সিকিউটিভ হাসান মেহেদী, বাংলাদেশের এনভায়রনমেন্টাল লইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের কো-অর্ডিনেটর বারিশ হাসান চৌধুরী, সেন্টার ফর রিনিওয়েবল এনার্জি সার্ভিসেস লিমিটেডের চেয়ারম্যান শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী প্রমুখ।

বক্তব্যে হাসান মেহেদী বলেন, আমাদের নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা প্রণয়নে সবসময় সমন্বয়হীনতা লক্ষ্য করা যায়। এর ফলে এ খাতের সফলতা অধরা থেকে যাচ্ছে এবং ব্যয়বহুল জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর আরও নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি। সরকার একটি নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা প্রণয়নে চার বছরের অধিক সময় নিয়েছে, তবে বর্তমানে কোনো জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা নেই। ফলে পরে এ নীতিমালা সিদ্ধান্ত গ্রহণে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। এ ছাড়া খসড়া নীতিমালা প্রণয়নে নাগরিক সমাজ ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের জন্য মাত্র ২১ দিন দেওয়া হয়েছে, যা একেবারে যথেষ্ট নয়।

তিনি বলেন, খসড়া নীতিমালাটিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্য কমানো হয়েছে, যা বাস্তবসম্মত নয়। ২০৩০ সালের মধ্যে ৬,১৪৫ মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ১৭,৪৭০ মেগাওয়াট। এটি ডিকার্বনাইজেশনের জন্য কোনো স্পষ্ট রোডম্যাপ প্রদান করেনি। এটি ‘গ্রিন ট্যাক্সোনমি’ অন্তর্ভুক্ত করেনি, যা পৃথিবীর বহু দেশ যুক্ত করেছে। এ ছাড়া নবায়নযোগ্য জ্বালানি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন কৌশল বা অর্থায়ন ও বিনিয়োগ পরিকল্পনা নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বারিশ হাসান চৌধুরী বলেন, বেশিরভাগ দেশ নেট-জিরো লক্ষ্য নির্ধারণ করলেও বাংলাদেশ এখনো এ ধরনের কোনো লক্ষ্য স্থির করেনি। নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালার সংজ্ঞাগুলো অনেক ক্ষেত্রেই বিভ্রান্তিকর। যদিও এটি কার্বন নির্গমন হ্রাসের কথা উল্লেখ করেছে, তবুও নির্দিষ্ট পরিমাণ বা সময়সীমা নির্ধারণ করেনি। নীতিমালায় কার্বন মার্কেট অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা এ প্রেক্ষাপটে অপ্রাসঙ্গিক। তাছাড়া ভবিষ্যৎ জ্বালানি পরিবর্তনের জন্য এটি কোনো বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেনি। নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছাড়া এ নীতিমালা এক ধরনের দিকনির্দেশনাহীন নৌকার মতো, যা বাস্তবে কার্যকর ফলাফল দিতে পারবে না।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বর্তমান অর্থনৈতিক কাঠামোতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার সম্ভব নয়

আপডেট টাইম : ০৮:১৭:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের রিসার্চ ডিরেক্টর খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন, প্রস্তাবিত নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালাটি প্রণয়নে সরকার বেশ তাড়াহুড়ো করছে। ফলে একটি দায়সারা ড্রাফট লক্ষ করা যাচ্ছে। সরকারের ভিন্ন ভিন্ন পলিসিতে ভিন্ন ভিন্ন নবায়নযোগ্য জ্বালানি পরিকল্পনা থাকায় বিনিয়োগকারীরা বিভ্রান্ত হতে পারেন। জীবাশ্ম জ্বালানির পরিকল্পনাগুলো অত্যন্ত সুসংহত হলেও নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা ততটা সুসংগঠিত নয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, বর্তমান জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর অর্থনৈতিক কাঠামোর মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার সম্ভব নয়।

রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বাংলামোটরের রূপায়ন ট্রেড সেন্টারে কোস্টাল লাইভলিহুড অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল অ্যাকশন নেটওয়ার্ক (ক্লিন) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, নীতিমালাটি প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা উপেক্ষা করেছে, যা বর্তমান পরিস্থিতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের জ্বালানি লক্ষ্য অর্জনে দেশীয় অর্থায়নের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগ অত্যন্ত জরুরি। বাংলাদেশকে ইন্টিগ্রেটেড এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার মাস্টার প্ল্যানের ওপর নির্ভরশীল না থেকে আরও নির্ভুল বিদ্যুৎ চাহিদা পূর্বাভাস গ্রহণ করতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রক্ষেপণ সঠিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি না হলে কার্যকর হবে না।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ক্লিনের চিফ এক্সিকিউটিভ হাসান মেহেদী, বাংলাদেশের এনভায়রনমেন্টাল লইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের কো-অর্ডিনেটর বারিশ হাসান চৌধুরী, সেন্টার ফর রিনিওয়েবল এনার্জি সার্ভিসেস লিমিটেডের চেয়ারম্যান শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী প্রমুখ।

বক্তব্যে হাসান মেহেদী বলেন, আমাদের নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা প্রণয়নে সবসময় সমন্বয়হীনতা লক্ষ্য করা যায়। এর ফলে এ খাতের সফলতা অধরা থেকে যাচ্ছে এবং ব্যয়বহুল জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর আরও নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি। সরকার একটি নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা প্রণয়নে চার বছরের অধিক সময় নিয়েছে, তবে বর্তমানে কোনো জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা নেই। ফলে পরে এ নীতিমালা সিদ্ধান্ত গ্রহণে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। এ ছাড়া খসড়া নীতিমালা প্রণয়নে নাগরিক সমাজ ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের জন্য মাত্র ২১ দিন দেওয়া হয়েছে, যা একেবারে যথেষ্ট নয়।

তিনি বলেন, খসড়া নীতিমালাটিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্য কমানো হয়েছে, যা বাস্তবসম্মত নয়। ২০৩০ সালের মধ্যে ৬,১৪৫ মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ১৭,৪৭০ মেগাওয়াট। এটি ডিকার্বনাইজেশনের জন্য কোনো স্পষ্ট রোডম্যাপ প্রদান করেনি। এটি ‘গ্রিন ট্যাক্সোনমি’ অন্তর্ভুক্ত করেনি, যা পৃথিবীর বহু দেশ যুক্ত করেছে। এ ছাড়া নবায়নযোগ্য জ্বালানি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন কৌশল বা অর্থায়ন ও বিনিয়োগ পরিকল্পনা নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বারিশ হাসান চৌধুরী বলেন, বেশিরভাগ দেশ নেট-জিরো লক্ষ্য নির্ধারণ করলেও বাংলাদেশ এখনো এ ধরনের কোনো লক্ষ্য স্থির করেনি। নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালার সংজ্ঞাগুলো অনেক ক্ষেত্রেই বিভ্রান্তিকর। যদিও এটি কার্বন নির্গমন হ্রাসের কথা উল্লেখ করেছে, তবুও নির্দিষ্ট পরিমাণ বা সময়সীমা নির্ধারণ করেনি। নীতিমালায় কার্বন মার্কেট অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা এ প্রেক্ষাপটে অপ্রাসঙ্গিক। তাছাড়া ভবিষ্যৎ জ্বালানি পরিবর্তনের জন্য এটি কোনো বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেনি। নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছাড়া এ নীতিমালা এক ধরনের দিকনির্দেশনাহীন নৌকার মতো, যা বাস্তবে কার্যকর ফলাফল দিতে পারবে না।