ঢাকা ০৪:২৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

মামলা তদন্তে চাপে পুলিশ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:০৮:৪২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ২১ বার

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত সারাদেশে ৫৬১টি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলার তদন্তকাজ দ্রুত শেষ করতে প্রচণ্ড চাপে আছেন সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও তদারকি কর্মকর্তারা। পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক তদন্ত তদারকি টিম মামলাগুলো তদারকি করছে। এমনকি জেলা ও রেঞ্জভিত্তিক মামলার তদন্তের হালনাগাদ তথ্যও নিচ্ছেন আইজিপি বাহারুল আলম। পাশাপাশি দিকনির্দেশনাও দিচ্ছেন।

মামলার ভিকটিম কার গুলিতে শহীদ হয়েছেন, গুলির নির্দেশদাতা কে বা কারা ছিল, আসামিদের কার কী ভূমিকা ছিল, চাক্ষুস সাক্ষী আছে কিনা, হত্যাকাণ্ডের সময়কার ভিডিও ফুটেজ ও স্থিরচিত্র আছে কিনাÑ তদন্তকালে এসব বিষয় খতিয়ে দেখছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। আর এসব তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা থেকে শুরু করে পুলিশ সদর দপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের এখন গলদঘর্ম অবস্থা।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনকালে সারাদেশে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি নির্বিচারে গুলি চালায়। তাদের গুলিতে নারী শিশুসহ আনুমানিক ১ হাজার ৪০০ শহীদ হয়েছেন বলে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে তথ্য উঠে এসেছে। এ সময় ৪৪ জন পুলিশ সদস্যও প্রাণ হারান। কোথাও কোথাও আন্দোলন দমাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে অংশ নেয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের অস্ত্রধারী ক্যাডাররা। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা।

এদিকে আন্দোলনকালে নিহত ও আহত হওয়ার ঘটনায় সারাদেশে ১ হাজার ৪০০-এর অধিক মামলা হয়। এর মধ্যে ৫৬১টি হত্যা মামলা রয়েছে। এসব মামলায় এরই মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন ৪৫ পুলিশ সদস্য। এ ছাড়া গ্রেপ্তার হয়েছেন সাবেক মন্ত্রী, সাবেক সেনা কর্মকর্তা, সাবেক সচিব, সাংবাদিক, ব্যবসায়ীসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী। আরও অনেকেই দেশ-বিদেশে আত্মগোপনে আছেন। ৫৬১টি হত্যা মামলার মধ্যে বেশিরভাগ মামলার এজাহারে শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে নির্দেশদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যা ও নির্বিচার গুলির একাধিক বড় অভিযান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ ও তদারকিতে হয়েছে।

সংস্থাটির প্রতিবেদন বলেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য ক্ষেত্রের কর্মকর্তারা কীভাবে একাধিক বৃহৎ আকারের অভিযানের নির্দেশনা দেন ও তদারকি করেন, তার বর্ণনা দিয়েছেন বিক্ষোভ দমনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ও অন্যান্য অভ্যন্তরীণ সূত্র।

অন্যদিকে ৫৬১টি হত্যা মামলার দ্রুত তদন্ত শেষ করতে নানামুখী তদন্ত চলমান রয়েছে। চলছে সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহের কাজ। এ ছাড়া চলছে ঘটনার সাক্ষী ও গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের জবানবন্দি গ্রহণের কাজ। মামলা প্রমাণে আরও যেসব প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি রয়েছে, তাও অনুসরণ করছেন তদন্ত কর্মকর্তা ও তদন্ত তদারকি কর্মকর্তারা। দ্রুত তদন্ত শেষ করতে অধিকাংশ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা একরকম চাপে রয়েছেন। প্রতিটি ইউনিটেই মামলাগুলোর তদন্ত তদারকির পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে।

রাজধানীর বিভিন্ন থানায় দায়েরকৃত হত্যা মামলার একাধিক তদন্ত কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, মামলার তদন্ত দ্রুত শেষ করতে তাদের ওপর নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই তদন্ত শেষ করা হবে। এ জন্য মামলার এজহারে যাদের আসামি করা হয়েছে, তাদের নাম-ঠিকানা যাচাই করাটাই এখন তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, অধিকাংশ মামলাতেই ১০০-৩০০ আসামি। আসামিদের ঠিকানা নেই। আবার যাদের ঠিকানা পাওয়া যাচ্ছে, সেটা যাচাই করতে হচ্ছে। এ জন্য আসামিদের ঠিকানায় অনুসন্ধ্যান সিøপ পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু অধিকাংশ মামলাতেই অনুসন্ধান সিøপের জবাব আসতে বিলম্ব হচ্ছে।

এ ছাড়া মামলার এজহারে নাম থাকা আসামিদের হত্যাকাণ্ডের সময় কার কী ভূমিকা বা দায়-দায়িত্ব ছিল, তার বের করতে হচ্ছে। ঘটনাস্থলে কে গুলি চালাল, কে গুলির নির্দেশ দিল, চাক্ষুস সাক্ষী আছে কিনা, ঘটনার কোনো ভিডিও ফুটেজ, স্থিরচিত্র আছে কিনা, তা বের করতে হচ্ছে। আবার জব্দকৃত ডিজিটাল আলামতের ফরেনসিক করতে হচ্ছে। নিহতদের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট সংগ্রহ করতে হচ্ছে। যাদের ময়নাতদন্ত হয়নি, তাদের লাশ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। এমনকী ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আসামিদের শনাক্তকরণের কাজটিও করতে হচ্ছে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত গুলির ধরনও খতিয়ে দেখতে হচ্ছে বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তারা।

এআইজি ইনামুল হক সাগর আমাদের সময়কে বলেন, ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও হত্যার ঘটনার মামলাগুলোর তদন্তকাজ অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। কোনো মামলার তদন্ত শেষ হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি। প্রতিটি মামলার তদন্ত ঠিকমতো হচ্ছে কিনা, তা তদারকি করছেন পদস্থ কর্মকর্তারা। বিভিন্ন পর্যায় থেকে মামলার তদন্তকাজ তদারকি হচ্ছে।

এদিকে আহত ও হত্যায় দায়েরকৃত প্রায় ১ হাজার ৪০০ মামলায় আসামির মধ্যে ১ হাজার ৫৯ জন পুলিশ সদস্যও রয়েছেন। এর মধ্যে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ ৪৫ জন পুলিশ কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হয়েছেন। আর সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ, সাবেক এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম, সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, মেহেদী হাসান, প্রলয় কুমার জোয়ারদারসহ বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো দুই ডজন পুলিশ কর্মকর্তা এখনও পলাতক।

পুলিশ সূত্র বলেছে, এখন পর্যন্ত পুলিশের তদন্ত বলছে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে শটগান, বন্দুক, পিস্তল, রিভলবার, চাইনিজ রাইফেল, টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার হয়েছে। কোথাও কোথাও একে-৪৭ ও এম-১৬- রাইফেলের মতো ভয়ানক অস্ত্রও ব্যবহার হয়েছে। একে-৪৭ ও এম-১৬ রাইফেল ব্যবহার করেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের সঙ্গে কী কথা হয়েছিল, জানালেন জামায়াত আমির

মামলা তদন্তে চাপে পুলিশ

আপডেট টাইম : ১০:০৮:৪২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত সারাদেশে ৫৬১টি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলার তদন্তকাজ দ্রুত শেষ করতে প্রচণ্ড চাপে আছেন সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও তদারকি কর্মকর্তারা। পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক তদন্ত তদারকি টিম মামলাগুলো তদারকি করছে। এমনকি জেলা ও রেঞ্জভিত্তিক মামলার তদন্তের হালনাগাদ তথ্যও নিচ্ছেন আইজিপি বাহারুল আলম। পাশাপাশি দিকনির্দেশনাও দিচ্ছেন।

মামলার ভিকটিম কার গুলিতে শহীদ হয়েছেন, গুলির নির্দেশদাতা কে বা কারা ছিল, আসামিদের কার কী ভূমিকা ছিল, চাক্ষুস সাক্ষী আছে কিনা, হত্যাকাণ্ডের সময়কার ভিডিও ফুটেজ ও স্থিরচিত্র আছে কিনাÑ তদন্তকালে এসব বিষয় খতিয়ে দেখছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। আর এসব তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা থেকে শুরু করে পুলিশ সদর দপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের এখন গলদঘর্ম অবস্থা।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনকালে সারাদেশে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি নির্বিচারে গুলি চালায়। তাদের গুলিতে নারী শিশুসহ আনুমানিক ১ হাজার ৪০০ শহীদ হয়েছেন বলে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে তথ্য উঠে এসেছে। এ সময় ৪৪ জন পুলিশ সদস্যও প্রাণ হারান। কোথাও কোথাও আন্দোলন দমাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে অংশ নেয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের অস্ত্রধারী ক্যাডাররা। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা।

এদিকে আন্দোলনকালে নিহত ও আহত হওয়ার ঘটনায় সারাদেশে ১ হাজার ৪০০-এর অধিক মামলা হয়। এর মধ্যে ৫৬১টি হত্যা মামলা রয়েছে। এসব মামলায় এরই মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন ৪৫ পুলিশ সদস্য। এ ছাড়া গ্রেপ্তার হয়েছেন সাবেক মন্ত্রী, সাবেক সেনা কর্মকর্তা, সাবেক সচিব, সাংবাদিক, ব্যবসায়ীসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী। আরও অনেকেই দেশ-বিদেশে আত্মগোপনে আছেন। ৫৬১টি হত্যা মামলার মধ্যে বেশিরভাগ মামলার এজাহারে শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে নির্দেশদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যা ও নির্বিচার গুলির একাধিক বড় অভিযান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ ও তদারকিতে হয়েছে।

সংস্থাটির প্রতিবেদন বলেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য ক্ষেত্রের কর্মকর্তারা কীভাবে একাধিক বৃহৎ আকারের অভিযানের নির্দেশনা দেন ও তদারকি করেন, তার বর্ণনা দিয়েছেন বিক্ষোভ দমনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ও অন্যান্য অভ্যন্তরীণ সূত্র।

অন্যদিকে ৫৬১টি হত্যা মামলার দ্রুত তদন্ত শেষ করতে নানামুখী তদন্ত চলমান রয়েছে। চলছে সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহের কাজ। এ ছাড়া চলছে ঘটনার সাক্ষী ও গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের জবানবন্দি গ্রহণের কাজ। মামলা প্রমাণে আরও যেসব প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি রয়েছে, তাও অনুসরণ করছেন তদন্ত কর্মকর্তা ও তদন্ত তদারকি কর্মকর্তারা। দ্রুত তদন্ত শেষ করতে অধিকাংশ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা একরকম চাপে রয়েছেন। প্রতিটি ইউনিটেই মামলাগুলোর তদন্ত তদারকির পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে।

রাজধানীর বিভিন্ন থানায় দায়েরকৃত হত্যা মামলার একাধিক তদন্ত কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, মামলার তদন্ত দ্রুত শেষ করতে তাদের ওপর নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই তদন্ত শেষ করা হবে। এ জন্য মামলার এজহারে যাদের আসামি করা হয়েছে, তাদের নাম-ঠিকানা যাচাই করাটাই এখন তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, অধিকাংশ মামলাতেই ১০০-৩০০ আসামি। আসামিদের ঠিকানা নেই। আবার যাদের ঠিকানা পাওয়া যাচ্ছে, সেটা যাচাই করতে হচ্ছে। এ জন্য আসামিদের ঠিকানায় অনুসন্ধ্যান সিøপ পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু অধিকাংশ মামলাতেই অনুসন্ধান সিøপের জবাব আসতে বিলম্ব হচ্ছে।

এ ছাড়া মামলার এজহারে নাম থাকা আসামিদের হত্যাকাণ্ডের সময় কার কী ভূমিকা বা দায়-দায়িত্ব ছিল, তার বের করতে হচ্ছে। ঘটনাস্থলে কে গুলি চালাল, কে গুলির নির্দেশ দিল, চাক্ষুস সাক্ষী আছে কিনা, ঘটনার কোনো ভিডিও ফুটেজ, স্থিরচিত্র আছে কিনা, তা বের করতে হচ্ছে। আবার জব্দকৃত ডিজিটাল আলামতের ফরেনসিক করতে হচ্ছে। নিহতদের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট সংগ্রহ করতে হচ্ছে। যাদের ময়নাতদন্ত হয়নি, তাদের লাশ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। এমনকী ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আসামিদের শনাক্তকরণের কাজটিও করতে হচ্ছে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত গুলির ধরনও খতিয়ে দেখতে হচ্ছে বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তারা।

এআইজি ইনামুল হক সাগর আমাদের সময়কে বলেন, ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও হত্যার ঘটনার মামলাগুলোর তদন্তকাজ অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। কোনো মামলার তদন্ত শেষ হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি। প্রতিটি মামলার তদন্ত ঠিকমতো হচ্ছে কিনা, তা তদারকি করছেন পদস্থ কর্মকর্তারা। বিভিন্ন পর্যায় থেকে মামলার তদন্তকাজ তদারকি হচ্ছে।

এদিকে আহত ও হত্যায় দায়েরকৃত প্রায় ১ হাজার ৪০০ মামলায় আসামির মধ্যে ১ হাজার ৫৯ জন পুলিশ সদস্যও রয়েছেন। এর মধ্যে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ ৪৫ জন পুলিশ কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হয়েছেন। আর সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ, সাবেক এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম, সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, মেহেদী হাসান, প্রলয় কুমার জোয়ারদারসহ বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো দুই ডজন পুলিশ কর্মকর্তা এখনও পলাতক।

পুলিশ সূত্র বলেছে, এখন পর্যন্ত পুলিশের তদন্ত বলছে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে শটগান, বন্দুক, পিস্তল, রিভলবার, চাইনিজ রাইফেল, টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার হয়েছে। কোথাও কোথাও একে-৪৭ ও এম-১৬- রাইফেলের মতো ভয়ানক অস্ত্রও ব্যবহার হয়েছে। একে-৪৭ ও এম-১৬ রাইফেল ব্যবহার করেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।