নির্বাচন আদায়ের জন্য জনগণকে যেন গুলি খেয়ে মরতে না হয় সেজন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিনীত অনুরোধ জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।আজ রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী তৃণমূল দলের ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই অনুরোধ জানান।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমার পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি বিনীত অনুরোধ— একটা নির্বাচন আদায় করার জন্য জনগণকে যেন রাস্তায় গুলি খেয়ে মরতে না হয়। আপনারা সময় মতো নির্বাচনটা দেন, তাতে আপনারা ফুলের পাপড়িতে ঢাকা পরবেন। আপনাদের গলায় যত মালা পড়াবো তত মালার ওজন আপনারা সইতে পারবেন না। আপনাদেরকে আমরা সম্মানের সঙ্গে আনছি, সম্মানের সঙ্গেই বিদায় করতে চাই। আপনারা দায়িত্বটা পালন করেন। আর যদি আমাদেরকে শেষ পর্যন্ত মাঠে নামান কতটুকু সময় টিকবেন, সেটা একটু ভেবে দেখবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আশা করি, আমাদের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙার আগেই অন্তর্বর্তী সরকার যথাযথভাবে নির্বাচনের উদ্যোগ গ্রহণ করবে। কারণ নির্বাচনের মাধ্যমে ফয়সালা হয়ে যাবে, জনগণ কাকে ক্ষমতা দেবে। জনগণই দেশের মালিক, ক্ষমতার উৎস। সেই জনগণ যদি ১৯৭১ এর যুদ্ধের বিরোধীদের ভোট দিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আনে, আমার আপত্তি নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় এসে যাবে এজন্য এই সরকারকে রাখতে হবে যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সারা জীবনের জন্য দরকার। আর তারা যতক্ষণ পর্যন্ত সুস্থ-সবল না হবে, নতুন দল না হবে, ততদিন পর্যন্ত নির্বাচন দেবেন না, এটা তো পক্ষপাতিত্বমূলক।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘এই সরকার যদি একবার গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, তাহলে তো আমাদের নিজ পক্ষে অবস্থান নিতে হবে। এমন একটা দিন আসুক, চাই না। যা হওয়ার হয়েছে, এখন একটা নির্বাচন হোক।’
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘এই যে রাজনীতিবিদদের মধ্যে সংস্কারের চিন্তা-ভাবনা, ইতিবাচক মনোভাব—এটা তো কম কথা না। আমরা যে ভুলগুলো করেছি, যার জন্য দেশের আজকের এই দুরবস্থা, সেটিকে সঠিক জায়গায় আনতে গেলে একটা স্বাধীন দেশের জন্য যে পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করা দরকার, সেটাই সংস্কার।’
গয়েশ্বর আরও বলেন, ‘আমাদের দেশের বুদ্ধিমান লোকদের আমি শ্রদ্ধা করি। কিন্তু এই বুদ্ধিমান লোকেরাই রাজনীতিবিদদের মানুষ হিসেবে গণ্য করে না। আমরা রাজনীতি করি বলে তারা মনে করে, আমরা মূর্খের দল, কোনো লেখাপড়া করি নাই। সে কারণেই আজকে যেসব জ্ঞানীগুণী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে আছেন, যারা সমাজে সুন্দর সুন্দর কথা বলেন, তাদের কথা সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনতেছেন। আমাদের কথা শুধু একটা ফর্মালিটি যে, বিএনপির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, অমুক দলকে ডাকা হয়েছে। এত ডাকাডাকির দরকারটা কী? নির্বাচনের পদ্ধতি তো আমাদের জানাই আছে। ভোটার তালিকা করবেন. যা করবেন করে ফেলেন। একটা নির্বাচন দিয়ে দেন। আমাদের মতামতের দরকার কী? কোনও দরকার নাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরাতো ৩১ দফা দিয়েই রেখেছি। যে যে কমিশন বানিয়েছেন তাদের ৫ জনকে বসিয়ে দেন। সেখানে কী বাদ দিতে হবে, যোগ করতে হবে করেন, বা তাদের কোনও ভাবনা থাকলে দিতে পারেন। একেকটা কমিশন ২০০ পৃষ্ঠা, ৩০০ পৃষ্ঠা লিখে পাঠাবে আর সারাদিন এগুলো পড়বো, এটা হয়? হয় না।’