ঢাকা ১২:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৪ জানুয়ারী ২০২৫, ২১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাফারি পার্কে জন্ম নিল বিপন্ন প্রজাতির হনুমান শাবক

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:২৭:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ জানুয়ারী ২০২৫
  • ৩ বার

কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে ভূমিষ্ঠ হয়েছেবিপন্ন প্রজাতির হনুমানের দুটি শাবক। সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া শাবক দুটি ঘিরে হনুমান পরিবারে চলছে খুশির বন্যা। শাবকদের আদর করতে কাড়াকাড়ি চলছে মা-বাবা হনুমানের মধ্যে। বিপন্ন প্রজাতির এ শাবক দুটি জন্ম নেওয়ায় খুশি সাফারি পার্কের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। তারাও সার্বক্ষণিক নজর রাখছেন সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া শাবক দুটির দিকে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ভুলাহাজারা সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি হাসপাতালের এক কক্ষে সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া হনুমানের দুই শাবককে নিয়ে বসে আছে হনুমানের দল। মা ও বাবা দুজনে মিলে পরম মমতায় বুকে আগলে রেখেছে শাবকদের। কিছুক্ষণ মা’র কোলে আবার কিছুক্ষণ বাবার কোলে সময় কাটাচ্ছে শাবক দুটি। পার্ক কর্তৃপক্ষ তাদের খাবার হিসেবে কলা দিয়েছে। ওই কলাগুলো সবাই মিলে ভাগ করে খাচ্ছে। মা হনুমান তার দুই সন্তানকে বুকে নিয়ে দুধ খাওয়াচ্ছে। পার্কে আসা দর্শনার্থীরা যেন তাদের কোনো বিরক্ত না করে সেজন্য কর্তৃপক্ষ কঠোর নজরদারিতে রেখেছে।

ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ৮ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন কর্মকর্তার দপ্তর থেকে বিপন্ন প্রজাতির পাঁচটি হনুমান ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে হস্তান্তর করে। তাদের মধ্যে চারটি স্ত্রী হনুমান ও একটি পুরুষ হনুমান ছিল। পরবর্তীতে, একই বছরের ১৭ অক্টোবর আরও তিনটি হনুমান হস্তান্তর করেন ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে। তাদের মধ্যে দুইটি স্ত্রী ও একটি পুরুষ হনুমান ছিল।

২০২৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর ও ১২ ডিসেম্বর হনুমান দম্পতির কোলজুড়ে আসে দুটি হনুমান শাবক। এর ফলে বর্তমানে সাফারি পার্কে মোট ১০টি হনুমান রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই গোত্রের হনুমান একমাত্র খুলনা বিভাগের যশোর ও কুষ্টিয়ার কিছু গ্রামে, বিশেষত যশোরের কেশবপুরে এখন পাওয়া যায়। এ প্রজাতির হনুমানের দেহ সরু ও হাত-পা লম্বা। দেহের তুলনায় লেজ বেশ লম্বা। মাথা থেকে লেজের গোড়া পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ৫০ সেন্টিমিটার ও লেজ ৭০ সেন্টিমিটার লম্বা। ওজন ৮-২০ কেজি। আকার ও ওজনে পুরুষগুলো বেশ বড়। এদের চামড়ার রং কালচে। দেহের ওপরটা ধূসর ও নিচটা সাদাটে-ধূসর থেকে হালকা বাদামি। মুখমন্ডল, কান, হাত ও পায়ের পাতা কালো বা বাদামি। মাথার মাঝখানে হালকা রঙের চূড়া। চোখের ওপর কালো ভ্রু। অপ্রাপ্ত বয়স্কগুলোর রং বাবা-মায়ের থেকে হালকা।

দেশের তিন প্রজাতির হনুমানের মধ্যে একমাত্র এরাই দিনের বেশির ভাগ সময় মাটিতে কাটায়। রাত ছাড়া তেমন একটা গাছে চড়ে না। একাধিক পুরুষের নেতৃত্বে একেকটি দলে ১৫-২৫টি হনুমান বাস করে। যদিও নিজেদের সীমানায় অন্য দলকে ঢুকতে দেয় না, কিন্তু এরা বেশ শান্তি প্রিয়। নিজেদের মধ্যে মারামারি করে না।

শুষ্ক বনভূমি থেকে খোলামেলা জঙ্গল ও ঝোপঝাড়, গ্রাম ও শহরসহ মিশ্র তৃণভূমিতে বাস করে। গাছের কচি পাতা, কুঁড়ি, ফুল, ফল, মূল, শস্যদানা ইত্যাদি খেয়ে জীবনধারণ করে। তবে নাগরিক জীবনের সঙ্গে মিলেমিশে গেছে বলে মানুষের দেওয়া বিভিন্ন খাবার অনায়াসেই খায় এ প্রজাতির হলুমান। সাধারণত সকাল ও বিকেলে খাদ্যের সন্ধানে বের হয়। দুপুরে বিশ্রাম নেয়। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নামলেই নিজেদের নির্দিষ্ট গাছে চলে যায় ও রাত যাপন করে। দিনের অনেকটা সময় একে অন্যের দেহ চুলকিয়ে সময় কাটায়।

জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত এ প্রজাতির হনুমানের প্রজননকাল। স্ত্রী হনুমান ১৮০-২০০ দিন গর্ভধারণের পর একটি বা দুটি বাচ্চা প্রসব করে ও প্রতি দুই বছরে একবার বাচ্চা দেয়। বাচ্চারা ১৩ মাস পর্যন্ত মায়ের দুধ পান করে। পুরুষ হনুমান ৫-৬ ও স্ত্রী ৩-৪ বছরে বয়ঃপ্রাপ্ত হয়। এদেও আয়ুষ্কাল ১৮-৩০ বছর। বর্তমানে এদের সংখ্যা ৩০০টির কম। হনুমান এ দেশে শুধু লোকালয়ে বেঁচে আছে এবং দিনে দিনে নানা কারণে এদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।

ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে হনুমান প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এদের আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় মূলত এরাও বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন কর্মকর্তার দপ্তর থেকে সাফারি পার্কে হনুমানদের আনার পর থেকে ভালো আবাসস্থল পেয়েছে। যার কারণে এরা চলাফেরা ও প্রজননের জন্য ভালো পরিবেশও পেয়েছে। মাসখানেকের মধ্যে আরও দুটি বাচ্চা প্রসবের সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, হনুমান মূলত তৃণভোজী প্রাণী। এরা পার্কে পছন্দের বিভিন্ন ফলমূল খাচ্ছে। এরপরও পার্কের পক্ষ থেকে নিয়মিত তাদের খাদ্য হিসেবে ভূষি, কলা, আপেল, গাজরসহ নানা ধরনের খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সাফারি পার্কে জন্ম নিল বিপন্ন প্রজাতির হনুমান শাবক

আপডেট টাইম : ০৬:২৭:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ জানুয়ারী ২০২৫

কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে ভূমিষ্ঠ হয়েছেবিপন্ন প্রজাতির হনুমানের দুটি শাবক। সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া শাবক দুটি ঘিরে হনুমান পরিবারে চলছে খুশির বন্যা। শাবকদের আদর করতে কাড়াকাড়ি চলছে মা-বাবা হনুমানের মধ্যে। বিপন্ন প্রজাতির এ শাবক দুটি জন্ম নেওয়ায় খুশি সাফারি পার্কের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। তারাও সার্বক্ষণিক নজর রাখছেন সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া শাবক দুটির দিকে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ভুলাহাজারা সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি হাসপাতালের এক কক্ষে সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া হনুমানের দুই শাবককে নিয়ে বসে আছে হনুমানের দল। মা ও বাবা দুজনে মিলে পরম মমতায় বুকে আগলে রেখেছে শাবকদের। কিছুক্ষণ মা’র কোলে আবার কিছুক্ষণ বাবার কোলে সময় কাটাচ্ছে শাবক দুটি। পার্ক কর্তৃপক্ষ তাদের খাবার হিসেবে কলা দিয়েছে। ওই কলাগুলো সবাই মিলে ভাগ করে খাচ্ছে। মা হনুমান তার দুই সন্তানকে বুকে নিয়ে দুধ খাওয়াচ্ছে। পার্কে আসা দর্শনার্থীরা যেন তাদের কোনো বিরক্ত না করে সেজন্য কর্তৃপক্ষ কঠোর নজরদারিতে রেখেছে।

ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ৮ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন কর্মকর্তার দপ্তর থেকে বিপন্ন প্রজাতির পাঁচটি হনুমান ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে হস্তান্তর করে। তাদের মধ্যে চারটি স্ত্রী হনুমান ও একটি পুরুষ হনুমান ছিল। পরবর্তীতে, একই বছরের ১৭ অক্টোবর আরও তিনটি হনুমান হস্তান্তর করেন ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে। তাদের মধ্যে দুইটি স্ত্রী ও একটি পুরুষ হনুমান ছিল।

২০২৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর ও ১২ ডিসেম্বর হনুমান দম্পতির কোলজুড়ে আসে দুটি হনুমান শাবক। এর ফলে বর্তমানে সাফারি পার্কে মোট ১০টি হনুমান রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই গোত্রের হনুমান একমাত্র খুলনা বিভাগের যশোর ও কুষ্টিয়ার কিছু গ্রামে, বিশেষত যশোরের কেশবপুরে এখন পাওয়া যায়। এ প্রজাতির হনুমানের দেহ সরু ও হাত-পা লম্বা। দেহের তুলনায় লেজ বেশ লম্বা। মাথা থেকে লেজের গোড়া পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ৫০ সেন্টিমিটার ও লেজ ৭০ সেন্টিমিটার লম্বা। ওজন ৮-২০ কেজি। আকার ও ওজনে পুরুষগুলো বেশ বড়। এদের চামড়ার রং কালচে। দেহের ওপরটা ধূসর ও নিচটা সাদাটে-ধূসর থেকে হালকা বাদামি। মুখমন্ডল, কান, হাত ও পায়ের পাতা কালো বা বাদামি। মাথার মাঝখানে হালকা রঙের চূড়া। চোখের ওপর কালো ভ্রু। অপ্রাপ্ত বয়স্কগুলোর রং বাবা-মায়ের থেকে হালকা।

দেশের তিন প্রজাতির হনুমানের মধ্যে একমাত্র এরাই দিনের বেশির ভাগ সময় মাটিতে কাটায়। রাত ছাড়া তেমন একটা গাছে চড়ে না। একাধিক পুরুষের নেতৃত্বে একেকটি দলে ১৫-২৫টি হনুমান বাস করে। যদিও নিজেদের সীমানায় অন্য দলকে ঢুকতে দেয় না, কিন্তু এরা বেশ শান্তি প্রিয়। নিজেদের মধ্যে মারামারি করে না।

শুষ্ক বনভূমি থেকে খোলামেলা জঙ্গল ও ঝোপঝাড়, গ্রাম ও শহরসহ মিশ্র তৃণভূমিতে বাস করে। গাছের কচি পাতা, কুঁড়ি, ফুল, ফল, মূল, শস্যদানা ইত্যাদি খেয়ে জীবনধারণ করে। তবে নাগরিক জীবনের সঙ্গে মিলেমিশে গেছে বলে মানুষের দেওয়া বিভিন্ন খাবার অনায়াসেই খায় এ প্রজাতির হলুমান। সাধারণত সকাল ও বিকেলে খাদ্যের সন্ধানে বের হয়। দুপুরে বিশ্রাম নেয়। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নামলেই নিজেদের নির্দিষ্ট গাছে চলে যায় ও রাত যাপন করে। দিনের অনেকটা সময় একে অন্যের দেহ চুলকিয়ে সময় কাটায়।

জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত এ প্রজাতির হনুমানের প্রজননকাল। স্ত্রী হনুমান ১৮০-২০০ দিন গর্ভধারণের পর একটি বা দুটি বাচ্চা প্রসব করে ও প্রতি দুই বছরে একবার বাচ্চা দেয়। বাচ্চারা ১৩ মাস পর্যন্ত মায়ের দুধ পান করে। পুরুষ হনুমান ৫-৬ ও স্ত্রী ৩-৪ বছরে বয়ঃপ্রাপ্ত হয়। এদেও আয়ুষ্কাল ১৮-৩০ বছর। বর্তমানে এদের সংখ্যা ৩০০টির কম। হনুমান এ দেশে শুধু লোকালয়ে বেঁচে আছে এবং দিনে দিনে নানা কারণে এদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।

ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে হনুমান প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এদের আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় মূলত এরাও বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন কর্মকর্তার দপ্তর থেকে সাফারি পার্কে হনুমানদের আনার পর থেকে ভালো আবাসস্থল পেয়েছে। যার কারণে এরা চলাফেরা ও প্রজননের জন্য ভালো পরিবেশও পেয়েছে। মাসখানেকের মধ্যে আরও দুটি বাচ্চা প্রসবের সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, হনুমান মূলত তৃণভোজী প্রাণী। এরা পার্কে পছন্দের বিভিন্ন ফলমূল খাচ্ছে। এরপরও পার্কের পক্ষ থেকে নিয়মিত তাদের খাদ্য হিসেবে ভূষি, কলা, আপেল, গাজরসহ নানা ধরনের খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।