পারিবারিক শত্রুতার জের ধরে ভাইয়ের কবরে ভাইয়ের ঝাড়ু পেটার ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনার একটি ভিডিও ইতোমধ্যে সমাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
গত বুধবার দুপুরে বরিশাল সদর উপজেলার সাপানিয়া এলাকার খান বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় মৃত শাহেদ আলীর স্ত্রী রেহানা বেগম বাদী হয়ে বরিশাল বিজ্ঞ মেট্রোপলিটন আমলী আদালতে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
আদালতের বিচারক অভিযোগটি আমলে নিয়ে কাউনিয়া থানার ওসিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের সাপানিয়া খান বাড়ির মৃত মোশারফ আলী খানের মেজো ছেলে শাহেদ আলী খান ও ছোট ছেলে আইয়ুব আলী খানের সঙ্গে পারিবারিক ও জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ দীর্ঘ দিন যাবৎ চলে আসছিলে। দুই বছর পূর্বে শাহেদ আলী মারা যান। শাহেদ আলী মারা যাওয়ার এক বছর পর ছোট ভাই আইয়ুব আলী বিভিন্ন সময় মৃত শাহেদ আলীর স্ত্রী ও সন্তানদের কাছে ৩ শতাংশ জমি দাবি করেন।
শাহেদ জমি দেয়ার কথা বলে পনের হাজার টাকা নিয়েছেন, জমি না দিয়ে মারা গেছেন। কিন্তু তার কাছে কোনো প্রমান নেই। মৃত শাহেদের পরিবার পনেরো হাজার টাকা ফেরত দিতে চাইলে তা নিতে অপারগতা প্রকাশ করে আইয়ুব।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিন গত ২৫ ডিসেম্বর বুধবার দুপুর ১২টার দিকে মৃত শাহেদের ঘরের সামনে আইয়ুব আলী ও নাসিমা বেগমের নেতৃত্বে অজ্ঞাতনামা ৩-৪ জন লোহার রড, গাবের লাঠি ও ঝাড়ু নিয়ে জমির দাবিতে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।
এতে মৃত শাহেদের স্ত্রী রেহানা বেগম প্রতিবাদ করলে তাকে এলোপাথাড়ি পেটান এবং শরীরের কাপড় চোপড় টানাহেচরা করে শ্লীলতাহানি ঘটান ও রেহানার গলায় থাকা এক ভরি ওজনের স্বর্নের চেইন ছিনিয়ে নেন। এ সময় ছেলে আরাফাত মাকে বাচাতে এগিয়ে আসলে তাকেও বেধরক মারধর করেন তারা।
মারধরের এক পর্যায়ে মৃত শাহেদ আলীর ঘরের সামনে শামিম জামে মসজিদের পাশে পারিবারিক কবর স্থানে আইয়ুব আলী মৃত শাহেদের কবরে ঝাড়ু দিয়ে পিটিয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেন এবং মৃত শাহেদ আলীর প্রতি অসৌজন্য প্রদর্শন করে প্রতিহিংসাবশত ধর্মীয় বিশ্বাসের অবমাননা করেন। ডাক চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে আইয়ুব আলী হুমকি দিয়ে বলে ৭ দিনের মধ্যে ৩ শতাংশ জমি না দিলে মৃত শাহেদের স্ত্রী সন্তানকে খুন করে লাশ নদীতে ফেলে দিবেন।
স্থানীয়রা অহত অবস্থায় রেহেনা বেগমকে উদ্ধার করে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা প্রদান করেন, পরবর্তীতে শারিরিক অবস্থার অবনতি দেখে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ প্রসঙ্গে অভিযুক্ত আইয়ুব বলেন, ‘ভাইয়ের কাছ থেকে ৩ শতাংশ জমি কিনেছি। কিন্তু দলিল হওয়ার আগে তিনি মারা যান। এ ব্যাপারে তেমন কোনো লিখিতভাবে প্রমান নেই।’
কবরে ঝাড়ু পেটার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘রাগের বসে আমার ভাইয়ের কবরে ঝাড়ুপেটা করা আমার অন্যায় হয়েছে।’
মামলার বাদী শাহেদের স্ত্রী রেহানা বেগম জানান, ঘটনার দিন মারামারির এক পর্যায়ে আমার দেবর আইয়ুব আমার স্বামী শাহেদ আলীর কবরে দুটি ঝাড়ু দিয়ে পিটিয়েছেন এবং আমার মেয়েরা বাবার কবরে ঝাড়ু দিয়ে পেটানোর ভিডিও জানালা দিয়ে মুঠোফোনে ধারন করলে প্রাণ নাশের হুমকি দেন তিনি। এ ঘটনায় আইয়ুবের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আশা করি।ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার মত এমন ঘটনা ঘটানোর সাহস কেউ যেন আর না পায়।