মেরুদণ্ডে জোড়া লাগানো অবস্থায় জন্ম নিয়েছিল কুড়িগ্রামের পরিবহন শ্রমিক আলমগীর হোসেন রানার দুই মেয়ে নুহা ও নাবা। তাদের শরীরের পেছন ও নিচের দিক এমনকি দু’জনের পায়ুপথও ছিল একটি। জন্মের ১৪ দিনের মাথায় জোড়া লাগা শিশু দুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করান তাদের বাবা। সবাই ভেবেছিল তাদের দু’জনের জীবন জোড়া লাগানো অবস্থায় থেকে যাবে। তবে আটটি সফল অপারেশনে প্রায় ৩২ মাস পর পৃথক জীবন নিয়ে বাড়ি ফিরেছে তারা।
জানা গেছে, ২০২১ সালের ২২ মার্চ কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কাঠালবাড়ী ইউনিয়নের শিবরাম খামার এলাকার আলমগীর-নাসরিন দম্পতির ঘরে জন্ম হয় জোড়া লাগানো দুই মেয়ের। নুহা ও নাবার জন্মের ১৪ দিন বয়সে জোড়া লাগা অবস্থায় চিকিৎসকদের সহযোগিতায় তাদেরকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করান বাবা আলমগীর। পরিবহন শ্রমিক আলমগীর হোসেন রানা পক্ষে তাদের চিকিৎসার খরচ বহন করা সম্ভব ছিল না। দুই সন্তানের চিকিৎসায় পরিবহনের চাকরি হারানোর পাশাপাশি নিজের জমিটুকু বন্ধক রাখতে হয়েছে তাকে। এরপর জোড়া লাগানো নুহা ও নাবার খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে তাদের চিকিৎসায় এগিয়ে আসেন সরকার, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও দানশীল ব্যক্তিরা। তাদের চিকিৎসায় খরচের প্রায় অর্ধকোটি টাকার বেশির ভাগই ব্যয় করেছে এসব মাধ্যম। আটটি সফল অপারেশনে প্রায় ৩২ মাস পর চলতি বছরের ২৫ নভেম্বর পৃথক জীবন নিয়ে বাড়ি ফিরেছে তারা।
রোববার (১ ডিসেম্বর) সরেজমিনে নুহা ও নাবার বাড়িতে যেয়ে দেখা যায়, নিজ বাড়িতে ফিরে এসে যেন পেয়েছে আলাদা এক জীবন পেয়েছে হাসপাতালের ভিআইপি কেবিনে বেড়ে ওঠা দুই শিশু। কখনও বাবার দুই হাত ধরে হেঁটে বেড়ানো আবার কখনও দুই কোলে উঠে বসছে তারা। যমজ দুই সন্তানের মুখে আলাদা আলাদাভাবে খাবার তুলে দিচ্ছেন তাদের মা নাসরিন বেগম। দেখে বোঝার উপায় নেই যে মেরুদণ্ডে জোড়া লাগানো অবস্থায় জন্ম হয়েছিল তাদের।
শিশু নুহা ও নাবার বাবা আলমগীর হোসেন রানা জানান, তার জমিটুকু বন্ধক রাখতে হলেও সন্তান সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরায় খুশি তিনি। তার সন্তানদের চিকিৎসায় এগিয়ে আসা সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি জানান, নুহা ও নাবার অপারেশন সফল হলেও তাদের মূত্রনালি এখনও স্থাপন করা হয়নি। আরও একটি অপারেশনে দেশবাসীকে পাশে থাকার অনুরোধও জানান তিনি।
আলমগীর হোসেন জানান, সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে পরিবহনের চাকরি হারিয়েছেন তিনি। বর্তমানে শিশু দুটির পিছনে প্রতিমাসে প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ করতে হচ্ছে। তাছাড়া হাতে কাজও নেই। এজন্য নুহা-নাবাকে পুরোপুরি সুস্থ করে তোলার জন্য দেশবাসীর সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।