কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদে টাকা-পয়সা, সোনা-রুপা, বৈদেশিক মুদ্রা ছাড়াও অনেক ধরনের চিঠি পাওয়া যায়। যা আল্লাহর উদ্দেশে পাগলা মসজিদের দানবাক্সে ফেলে রাখেন সাধারণ মানুষ। এবার একটি চিঠিতে এক সৌদি নাগরিককে বিয়ে করার প্রার্থনা জানিয়েছেন এক নারী।
চিঠিতে লেখা রয়েছে ‘আমি একজন সৌদিয়ানকে ভালোবাসি। হে মহান আল্লাহ, তুমি তাকে আমার করে দাও। আমি যেন তাকে বিবাহ করতে পারি (সুম্মা আমিন)। হে আমার রব, তুমি আমাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিও না। হে রব, তুমি আমাকে নবীর দেশে পবিত্র মাটিতে জন্মগ্রহণ করার সৌভাগ্য দিয়েছ। আমি যেন আমার সেই সৌভাগ্য নিয়ে তোমার পবিত্র মাটিতে মৃত্যুবরণ করিতে পারি। আমি যেন পড়ালেখায় ভালো হতে পারি, আমার পরিবারে যেন শান্তি বয়ে আসে (আমিন)। আমি যেন হালাল রুজি রোজগার করিতে পারি। হে রব, হে মহান আল্লাহ তোমার কাছে দুই হাত তুলিয়া চাহিতেছি তুমি আমাকে মক্কাবাসীর ভালো এক উত্তম, দ্বীনি সুদর্শন লোকের সহিত বিবাহ করিয়ে দাও (আমিন)।’
আর একটি চিঠিতে রয়েছে সুন্দর ও একহারা গড়ন (স্লিম) হওয়ার আঁকুতি। নাম না জানা একজন লিখেছেন, ‘আল্লাহ তুমি আমাকে সারাজীবনের জন্য চিকন বানাইয়া দাও দয়া করে। আমি ও পাতিবাবু সারাজীবন একসাথে থাকতে চাই। আমাদের দুইজনকে একসাথে রাইখো। তার আগে আমার মৃত্যু দিও। আমাদের মধ্যে যেন কোনো শাঁকচুন্নী না আসে। জান্নাতেও যেন আমার পাতিবাবু কোনো হুর না পায়। আল্লাহ তুমি ঠাকুমার ঝুলি কার্টুনে যে রকম পুকুর ছিল সে রকম জাদুর পুকুরের সন্ধান দাও। যাতে আমি ওই পুকুরে ডুব দিয়ে সুন্দর হতে পারি। মুখের দাগগুলো যায়, চুল বড় আর ঘন হয়, আর যাতে কমবয়স্ক লাগে সারাজীবন।’
চিঠিতে আরও লেখা রয়েছে, ‘আল্লাহ আমাদের সবাইকে বড় হজ করার ব্যবস্থা কইরা দিও। আমি আর আমার পাতিবাবু যাতে দুইবার অন্তত বড় হজ করতে পারি। আমি একটু সুন্দর হলেই কেউ না কেউ নজর দিয়ে দেয়। আল্লাহ এ রকম যাতে আর না হয় দেইখো। আমি আর আমার পাতিবাবুকে সরকারি জব পাওয়াইয়া দিও। হালালভাবে যাতে চলতে পারি আমরা। আমার পাতিবাবুকে কয়েকদিনের ভেতরে সুস্থ কইরা দাও। আল্লাহ ডাক্তার বলছে ওর একটা মেডিসিন সারা বছর খাওয়া লাগবে। ওর যাতে সারা বছর খাওয়া না লাগে সে যাতে একবারে সুস্থ হয়ে যায় আল্লাহ তুমি দয়া কইরা দেইখো।’
মনের মানুষকে কাছে পাওয়ার ‘অসমাপ্ত কাহিনি’ লেখা অন্য আরেকটি চিঠি পাওয়া যায়।এতে লেখা রয়েছে, ‘প্রিয় খাদিজা আক্তার লিপি, আজ এই ঐতিহাসিক মসজিদে তোমার নামে একটা মানত পূর্ণ করলাম।তুমি নেই তো কী হয়েছে তোমার দেওয়া স্মৃতি নিয়ে বাঁচব আজীবন।আমার কী দোষ ছিল? তুমি একটি ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার পরও আমাকে নষ্ট করলে। আমি তোমাকে অভিশাপ দেব না।আমি আশা রাখি তুমি একসময় আমার হবে। যদিও তুমি বাচ্চার মা হও আমার কোনো আফসোস থাকবে না।’
উল্লেখ্য, গতকাল শনিবার সকাল ৭টায় পাগলা মসজিদের ১১টি দানবাক্স খোলা হয়।এরপর দিনভর চলে গণনা কার্যক্রম।সেখানে মহান আল্লাহ পাকের উদ্দেশে লেখা বেশকিছু চিঠি পাওয়া গেছে। যেগুলো ঘুরে বেড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
এবার কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের ১১টি সিন্দুকে পাওয়া গেছে রেকর্ড ৮ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৪ টাকা। এটি এই মসজিদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পরিমাণ দানের টাকা। এ ছাড়া দানবাক্সে মিলেছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালংকার।
শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে টাকার পরিমাণ আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেছেন কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান।