ঢাকা ০৪:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কষ্টার্জিত সাফল্য ম্লানের উপক্রম

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:৩২:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ জুন ২০১৫
  • ৪৬৫ বার
কারও বাবা নেই আবার কারও থেকেও নেই। নুন আন্তে পান্তা ফুরায় ওদের সংসারে। তাই কেউ কেউ ভ্যান-রিকশা চালিয়ে কিংবা দিনমজুরি করে পড়াশোনার খরচ জোগার করেছে। আর সেই সীমাহীন কষ্ট তাদের এনে দিয়েছে সাফল্য। এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে এসব অদম্য মেধাবী সবাইকে অবাক করে দিয়েছে। এদের কেউ স্বপ্ন দেখছে ডাক্তার বা ম্যাজিস্ট্রেট, কিংবা আইনজীবী হওয়ার। কেউ বা ভালোভাবে পড়াশোনা করে সরকারি চাকরি করতে চায়। কিন্তু সেই স্বপ্নে একমাত্র বাধা হয়ে আছে আগামী দিনের লেখাপাড়ার খরচ। এ অবস্থায় সমাজের হৃদয়বান মানুষের একটু সহযোগিতা পেলে হাতীবান্ধার এসব অদম্য মেধাবীদের ভবিষ্যতের স্বপ্ন পূরণের পথ অনেকটাই সুগম হবে।

শামসুল ইসলাম : লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দক্ষিণ গড্ডিমারী গ্রামের আবদুল হামিদ-হাফিজা দম্পতির ছেলে শামসুল ইসলাম। সেই তৃতীয় শ্রেণী থেকে ভ্যানচালক বাবার পেছনে মালবোঝাই ভ্যানটি ঠেলে দিত শামসুল। অনাহার-অর্ধহারে স্কুলে যাওয়া-আসা। তবুও সাফল্যের সঙ্গে প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়ে মাধ্যমিকে আসা। এর মাঝেই হঠাৎ করেই বাবা আবদুল হামিদ অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে। সেই থেকে বাবার ভ্যানটি চালিয়ে ছোট চার ভাইবোনসহ ছয় সদস্যের পরিবারের খরচ চালাতে হতো তাকে। তবুও দারিদ্র্য বাধা হতে পারেনি এই মেধাবীর। সে এ বছর হাতীবান্ধা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে।

মাজিদুল ইসলাম : বাবা রহমত আলী একজন রিকশাচালাক। প্রায় বছরখানেক আগে তিনি অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। ছোট ছোট ভাইবোন আর বাবা-মায়ের মুখে খাবার তুলে দিতে মাজিদুলের হাতে উঠে রিকশার হ্যান্ডেল। সারা দিন রিকশার প্যাডেল ঘুরিয়ে রাতের খানিকটা সময় পড়াশোনা করে মজিদুলই এ বছর এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে সবাইকে অবাক করেছে। হাতীবান্ধা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মানবিক শাখায় জিপিএ-৫ পেয়েছে।

মোমেনা : তিস্তার পেটে ভিটেমাটি হারিয়ে অন্যের জমিতে কুঁড়েঘরে বসবাস মোমেনার। সেখানে এক বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করার পাশাপাশি পড়াশোনা চলে তার। মানবেতর জীবনযাপন করেও সেই মোমেনাই এ বছর হাতীবান্ধা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে সবাইকে অবাক করেছে। মোমেনা জানায়, তার বাবা মোবারক হোসেনের বাড়ি ছিল উপজেলার সিন্দুর্না ইউনিয়নে। সেখানে নদীভাঙনে সবকিছু হারিয়ে আশ্রয় নেয় গড্ডিমারী গ্রামের স্কুল শিক্ষক আজগার মাস্টারের জমিতে। অন্যের বাড়িতে কাজ করে চলে তাদের সংসার। বর্তমানে তার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকায় দু’বেলা খাবার জোটে না ঠিকমতো। তাই সে নিজেও অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে।

খাদিজা : লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার চরধুবনী গ্রামের খাদিজাতুল কোবরা। সেলাই মেশিনের আয়ে লেখাপড়া চালিয়ে এ বছর হাতীবান্ধা শাহ গরীবুল্লাহ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে। খাদিজা জানায়, শিশু বয়সে তার মা সংসারে অভাব-অনটন দেখে তাকে বাবা শহিদুল ইসলামের কাছে রেখে অন্যত্র চলে যায়। তার বাবা ভ্যান চালিয়ে সংসার চলালেও এখন শারীরিক অক্ষমতার জন্য আর তা চালাতে পারেন না তিনি। তাই উপজেলার টংভাঙ্গা ইউনিয়নের পাশে তার বাবা একটি পানের দোকান করলেও তা দিয়ে সংসার চলেছে না ।

পলাশ চন্দ্র : বাবা নিত্যানন্দ ঢাকায় রিকশা চালিয়ে যে টাকা পাঠান তা দিয়ে ঠিকমতো সংসার চলে না। মা আর ছোট দুই ভাইবোন মিলে কোনো রকমে একটি কুঁড়েঘরে বসবাস। তবুও দারিদ্র্য বাধা হতে পারেনি পলাশের সাফল্যে। কারণ এ বছর হাতীবান্ধা উপজেলার পারুলিয়া তফশীলি দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে একমাত্র পলাশই বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ অর্জন করেছে।

তামান্না আফরোজ : বিধবা মা আর তিন বোনের সংসার ওদের। মাত্র ৭ শতাংশ জমির দুটি টিনের চালা ঘরে খেয়ে-না খেয়ে বসবাস। কুপি জ্বালাতে কেরোসিন তেল মেলেনি ঠিকমতো। তাই অধিকাংশ সময় দিনের আলোতেই পড়াশোনা করতে হতো তামান্না আফরোজকে। তবুও দারিদ্র্য দমাতে পারেনি লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা এলাকার এই অদম্য মেধাবীকে। এ বছর বড়খাতা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে বিজ্ঞান শাখায় জিপিএ-৫ পেয়েছে সে।

আল আমিন : বাবা আবদুর রহমান বড়খাতা বাজারে একটি চালার নিচে চা বিক্রিয় করে কোনো রকমে সংসার চালায়। মা শাহানারা বেগম গৃহিণী। বাড়ি-ভিটে বলতে মাত্র ৫ শতাংশ জমিতে টিনের চালা ঘর করে বসবাস। শুধু চা বিক্রি করে ৬ সদস্যের পরিবারে খাবার জোটে না ভালোভাবে। তাই অতিকষ্টে পড়াশোনা করে আসছে আলা আমিন। এ বছর হাতীবান্ধা উপজেলা বড়খাতা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে সে।

হোসনে আরা : বাবা হাফিজার রহমান বড়খাতা বাজারে মুদির দোকান করে সংসার চালান। জমিজমা বলতে দোলাপাড়া গ্রামের ৬ শতক জমিতে ভিটেবাড়ি। বড় ভাই এইচএসসির প্রথমর্বষের ছাত্র আর ছোট ভাই ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে। তিন ভাইবোনের খরচ জোগাতে পারে না পরিবার। চরম দারিদ্র্যের মাঝে পড়াশোনা করে হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এ বছর এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে সবাইকে আবাক করে দিয়েছে হোসনে আরা।

তানিয়া তাহিদ তানি : লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার পূর্ব সির্ন্দুনা গ্রামের দরিদ্র পরিবারের সন্তান। বাবার যা কিছু ছিলে সবই তিস্তা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। সীমাহীন কষ্টের মাঝে সিদুর্ণা লোকমান হোসেন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে তানিয়া তাহিদ তানি। এর আগেও সে ৫ম ও ৮ম শ্রেণীর পরীক্ষায় ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি লাভ করে।

রফিকুল ইসলাম : রফিকুল ইসলাম বাবার সঙ্গে দিনমজুরের কাজ করে এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে। হাতীবান্ধা এসএস উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। রফিকুল হাতীবান্ধা উপজেলার সিঙ্গিমারী ইউনিয়নের দ. গড্ডিমারী গ্রামের দিনমজুর সাইদুল ইসলামের ছেলে। রফিকুল জানায়, টাকার অভাবে অসংখ্যবার তার লেখাপড়া বন্ধ হতে যাচ্ছিল। তাই সে দিনমজুরি করে সংসারে সহযোগিতার পাশাপাশি পড়াশোনা করে আসছে। তবুও তাদের ৮ সদস্যের পরিবারে নুন আন্তে পান্তা ফুরায় অবস্থা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

কষ্টার্জিত সাফল্য ম্লানের উপক্রম

আপডেট টাইম : ০৪:৩২:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ জুন ২০১৫
কারও বাবা নেই আবার কারও থেকেও নেই। নুন আন্তে পান্তা ফুরায় ওদের সংসারে। তাই কেউ কেউ ভ্যান-রিকশা চালিয়ে কিংবা দিনমজুরি করে পড়াশোনার খরচ জোগার করেছে। আর সেই সীমাহীন কষ্ট তাদের এনে দিয়েছে সাফল্য। এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে এসব অদম্য মেধাবী সবাইকে অবাক করে দিয়েছে। এদের কেউ স্বপ্ন দেখছে ডাক্তার বা ম্যাজিস্ট্রেট, কিংবা আইনজীবী হওয়ার। কেউ বা ভালোভাবে পড়াশোনা করে সরকারি চাকরি করতে চায়। কিন্তু সেই স্বপ্নে একমাত্র বাধা হয়ে আছে আগামী দিনের লেখাপাড়ার খরচ। এ অবস্থায় সমাজের হৃদয়বান মানুষের একটু সহযোগিতা পেলে হাতীবান্ধার এসব অদম্য মেধাবীদের ভবিষ্যতের স্বপ্ন পূরণের পথ অনেকটাই সুগম হবে।

শামসুল ইসলাম : লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দক্ষিণ গড্ডিমারী গ্রামের আবদুল হামিদ-হাফিজা দম্পতির ছেলে শামসুল ইসলাম। সেই তৃতীয় শ্রেণী থেকে ভ্যানচালক বাবার পেছনে মালবোঝাই ভ্যানটি ঠেলে দিত শামসুল। অনাহার-অর্ধহারে স্কুলে যাওয়া-আসা। তবুও সাফল্যের সঙ্গে প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়ে মাধ্যমিকে আসা। এর মাঝেই হঠাৎ করেই বাবা আবদুল হামিদ অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে। সেই থেকে বাবার ভ্যানটি চালিয়ে ছোট চার ভাইবোনসহ ছয় সদস্যের পরিবারের খরচ চালাতে হতো তাকে। তবুও দারিদ্র্য বাধা হতে পারেনি এই মেধাবীর। সে এ বছর হাতীবান্ধা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে।

মাজিদুল ইসলাম : বাবা রহমত আলী একজন রিকশাচালাক। প্রায় বছরখানেক আগে তিনি অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। ছোট ছোট ভাইবোন আর বাবা-মায়ের মুখে খাবার তুলে দিতে মাজিদুলের হাতে উঠে রিকশার হ্যান্ডেল। সারা দিন রিকশার প্যাডেল ঘুরিয়ে রাতের খানিকটা সময় পড়াশোনা করে মজিদুলই এ বছর এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে সবাইকে অবাক করেছে। হাতীবান্ধা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মানবিক শাখায় জিপিএ-৫ পেয়েছে।

মোমেনা : তিস্তার পেটে ভিটেমাটি হারিয়ে অন্যের জমিতে কুঁড়েঘরে বসবাস মোমেনার। সেখানে এক বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করার পাশাপাশি পড়াশোনা চলে তার। মানবেতর জীবনযাপন করেও সেই মোমেনাই এ বছর হাতীবান্ধা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে সবাইকে অবাক করেছে। মোমেনা জানায়, তার বাবা মোবারক হোসেনের বাড়ি ছিল উপজেলার সিন্দুর্না ইউনিয়নে। সেখানে নদীভাঙনে সবকিছু হারিয়ে আশ্রয় নেয় গড্ডিমারী গ্রামের স্কুল শিক্ষক আজগার মাস্টারের জমিতে। অন্যের বাড়িতে কাজ করে চলে তাদের সংসার। বর্তমানে তার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকায় দু’বেলা খাবার জোটে না ঠিকমতো। তাই সে নিজেও অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে।

খাদিজা : লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার চরধুবনী গ্রামের খাদিজাতুল কোবরা। সেলাই মেশিনের আয়ে লেখাপড়া চালিয়ে এ বছর হাতীবান্ধা শাহ গরীবুল্লাহ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে। খাদিজা জানায়, শিশু বয়সে তার মা সংসারে অভাব-অনটন দেখে তাকে বাবা শহিদুল ইসলামের কাছে রেখে অন্যত্র চলে যায়। তার বাবা ভ্যান চালিয়ে সংসার চলালেও এখন শারীরিক অক্ষমতার জন্য আর তা চালাতে পারেন না তিনি। তাই উপজেলার টংভাঙ্গা ইউনিয়নের পাশে তার বাবা একটি পানের দোকান করলেও তা দিয়ে সংসার চলেছে না ।

পলাশ চন্দ্র : বাবা নিত্যানন্দ ঢাকায় রিকশা চালিয়ে যে টাকা পাঠান তা দিয়ে ঠিকমতো সংসার চলে না। মা আর ছোট দুই ভাইবোন মিলে কোনো রকমে একটি কুঁড়েঘরে বসবাস। তবুও দারিদ্র্য বাধা হতে পারেনি পলাশের সাফল্যে। কারণ এ বছর হাতীবান্ধা উপজেলার পারুলিয়া তফশীলি দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে একমাত্র পলাশই বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ অর্জন করেছে।

তামান্না আফরোজ : বিধবা মা আর তিন বোনের সংসার ওদের। মাত্র ৭ শতাংশ জমির দুটি টিনের চালা ঘরে খেয়ে-না খেয়ে বসবাস। কুপি জ্বালাতে কেরোসিন তেল মেলেনি ঠিকমতো। তাই অধিকাংশ সময় দিনের আলোতেই পড়াশোনা করতে হতো তামান্না আফরোজকে। তবুও দারিদ্র্য দমাতে পারেনি লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা এলাকার এই অদম্য মেধাবীকে। এ বছর বড়খাতা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে বিজ্ঞান শাখায় জিপিএ-৫ পেয়েছে সে।

আল আমিন : বাবা আবদুর রহমান বড়খাতা বাজারে একটি চালার নিচে চা বিক্রিয় করে কোনো রকমে সংসার চালায়। মা শাহানারা বেগম গৃহিণী। বাড়ি-ভিটে বলতে মাত্র ৫ শতাংশ জমিতে টিনের চালা ঘর করে বসবাস। শুধু চা বিক্রি করে ৬ সদস্যের পরিবারে খাবার জোটে না ভালোভাবে। তাই অতিকষ্টে পড়াশোনা করে আসছে আলা আমিন। এ বছর হাতীবান্ধা উপজেলা বড়খাতা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে সে।

হোসনে আরা : বাবা হাফিজার রহমান বড়খাতা বাজারে মুদির দোকান করে সংসার চালান। জমিজমা বলতে দোলাপাড়া গ্রামের ৬ শতক জমিতে ভিটেবাড়ি। বড় ভাই এইচএসসির প্রথমর্বষের ছাত্র আর ছোট ভাই ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে। তিন ভাইবোনের খরচ জোগাতে পারে না পরিবার। চরম দারিদ্র্যের মাঝে পড়াশোনা করে হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এ বছর এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে সবাইকে আবাক করে দিয়েছে হোসনে আরা।

তানিয়া তাহিদ তানি : লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার পূর্ব সির্ন্দুনা গ্রামের দরিদ্র পরিবারের সন্তান। বাবার যা কিছু ছিলে সবই তিস্তা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। সীমাহীন কষ্টের মাঝে সিদুর্ণা লোকমান হোসেন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে তানিয়া তাহিদ তানি। এর আগেও সে ৫ম ও ৮ম শ্রেণীর পরীক্ষায় ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি লাভ করে।

রফিকুল ইসলাম : রফিকুল ইসলাম বাবার সঙ্গে দিনমজুরের কাজ করে এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে। হাতীবান্ধা এসএস উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। রফিকুল হাতীবান্ধা উপজেলার সিঙ্গিমারী ইউনিয়নের দ. গড্ডিমারী গ্রামের দিনমজুর সাইদুল ইসলামের ছেলে। রফিকুল জানায়, টাকার অভাবে অসংখ্যবার তার লেখাপড়া বন্ধ হতে যাচ্ছিল। তাই সে দিনমজুরি করে সংসারে সহযোগিতার পাশাপাশি পড়াশোনা করে আসছে। তবুও তাদের ৮ সদস্যের পরিবারে নুন আন্তে পান্তা ফুরায় অবস্থা।