ঢাকা ০৭:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পরকীয়ার শিকারি ধরতে ‘ওয়েইকিং’

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:৪৭:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬
  • ৩৭৬ বার

কয়েক হাজার গৃহবধূর মুখে হাসি ফোটাতে ওদের জুড়ি মেলা ভার। পরকীয়ায় মজে থাকা পুরুষকে সংসারে ফিরিয়ে আনতে সিদ্ধহস্ত মিস্ট্রেস হান্টাররা।

স্বামীর মন যে সংসারে নেই তা বেশ কয়েক মাস ধরেই লক্ষ্য করছিলেন চীনের গৃহবধূ শ্রীমতী ওয়্যাং। খবর পেয়েছিলেন, প্রায় বছর খানেক অন্য নারীর প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন তার স্বামী।

এ নিয়ে রোজই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথা কাটাকাটি, হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। তাদের মধ্যে যখন প্রায় বিবাহ বিচ্ছেদের দিকে এগোচ্ছে, সেই সময় অনলাইন এক বিজ্ঞাপনে চোখ পড়ে মহিলার।

ইন্টারনেটের মাধ্যমেই যোগাযোগ হয় ‘মিস্ট্রেস হান্টার’দের সঙ্গে। শেষে হাজার ডলার খরচ করে বিবাহিত সম্পর্ক অটুট রাখতে সমর্থ হন ওয়্যাং। ঘটনায় তিনি এতটাই আপ্লুত হয়ে পড়েন যে, নিজেই এখন বিচ্ছেদ রুখতে নেমে পড়তে আগ্রহী।

সংস্থার নাম ওয়েইকিং, যার অর্থ ‘অনুভবের রক্ষাকর্তা’। দাম্পত্য জীবনে তৃতীয় পুরুষ বা নারীর প্রবেশে যে ফাটল দেখা দেয়, তার মেরামত করাই ওদের কাজ।

সংস্থার প্রধান শু জিন জানিয়েছেন, আপাতত ৩০০ এজেন্ট এ কাজে জড়িত। এদের বেশির ভাগই অবশ্য মহিলা, মনোবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান

এবং আইনের স্নাতক।

সংবাদ সংস্থা এএফপিকে দেয়া সাক্ষাত্‍কারে শু জানিয়েছেন, ‘প্রতিবছর আমরা গড়ে ৫০০০ বিবাহ বিচ্ছেদ রুখে দিই।’

কীভাবে কাজ করেন মিস্ট্রেস হান্টাররা?

সংস্থার কর্মী বছর সাতচল্লিশের মিং লি জানিয়েছেন, ‘কাজ হাসিল করতে বিভিন্ন ভেক ধরতে হয়। কখনো প্রতিবেশী, কখনো বা ধোপা এমনকি বেবি সিটারের ভূমিকাও পালন করেছি’।

তিনি জানান, ‌‘একবার তো জ্যোতিষীও সাজতে হয়েছিল। সেবার অবশ্য অতি সহজেই কেস মিটিয়ে ফেলেছিলাম। কারণ শিকার সম্পর্কে নিপীড়িত স্ত্রীর থেকে আগেভাগে বহু তথ্য জোগাড় করেছিলাম।’

তিনি জানিয়েছেন, পরকীয়ায় জড়িত পুরুষটির প্রেমিকাকে নানানভাবে বুঝিয়ে, লোভ দেখিয়ে বা বাস্তব বুদ্ধি দিয়ে সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার পরামর্শ দেয়া হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সাফল্য মেলে।

সমীক্ষা বলছে, চীনে বিবাহ বিচ্ছেদের হার হু হু করে বাড়ছে। ২০০৭ সালে প্রতি ১০০০ দম্পতির মধ্যে ১.৫৯% থেকে বেড়ে ২০১৪ সালে তা দাঁড়িয়েছে ২.৬৭%।

২০১৫ সালে শুধুমাত্র বেজিংয়ে ৭৩,০০০ দম্পতির বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে। দাম্পত্যে ফাটল ধরার কারণ হিসেবে দেখা গেছে স্বামী-স্ত্রীর রোজগারের বড়সড় ফারাক, ব্যক্তিত্বের সংঘাত এবং অতি উদার মানসিকতা। তবে এর সঙ্গে রয়েছে নিজের উচ্চাশার জন্য পেশাগত ইঁদুর দৌড়ে সামিল হওয়া।

সমীক্ষায় জানা গেছে, প্রথম বিয়ে ভাঙার পেছনে অন্যতম কারণ স্বামীর বহু রমণীতে আসক্তি। পাশাপাশি ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে বিবাহিত মহিলাদেরও প্রেমিকের সন্ধান মিলেছে।

ইন্টারনেটের দৌলতে এ প্রবণতা বেড়েছে বলে মনে করেন শু জিন। তিনি বলেন, ‘সারাবিশ্বে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের ছড়াছড়ি। তবে চীনা সমাজে তার স্থান অনেক নিচে। এমন সম্পর্ক সমাজের চোখে অপরাধের সামিল।’

মিস্ট্রেস হান্টারদের মুন্সিয়ানায় একদিকে যেমন বহু ভাঙা বিয়ে জোড়া লেগেছে, তেমনি ঘনিষ্ঠ পরকীয়া সম্পর্কে হঠাত্‍ ছেদ ঘটায় মানসিকভাবে বিপন্ন হয়ে পড়ছেন দাম্পত্যের মাঝে ঢুকে পড়া নারী, যাদের অনেকেই একা থাকেন।

বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে শু জানিয়েছেন, ‘সামাজিক প্রয়োজনে তা মেনে নেয়া ছাড়া উপায় নেই। তবে তার সহকর্মী মিং জানিয়েছেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি চেষ্টা করি, ভগ্নহৃদয় মেয়েটিকে অবিবাহিত নতুন প্রেমিক জোগাড় করে দিতে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাতে সাফল্য পেয়েছি।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

পরকীয়ার শিকারি ধরতে ‘ওয়েইকিং’

আপডেট টাইম : ০৪:৪৭:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

কয়েক হাজার গৃহবধূর মুখে হাসি ফোটাতে ওদের জুড়ি মেলা ভার। পরকীয়ায় মজে থাকা পুরুষকে সংসারে ফিরিয়ে আনতে সিদ্ধহস্ত মিস্ট্রেস হান্টাররা।

স্বামীর মন যে সংসারে নেই তা বেশ কয়েক মাস ধরেই লক্ষ্য করছিলেন চীনের গৃহবধূ শ্রীমতী ওয়্যাং। খবর পেয়েছিলেন, প্রায় বছর খানেক অন্য নারীর প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন তার স্বামী।

এ নিয়ে রোজই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথা কাটাকাটি, হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। তাদের মধ্যে যখন প্রায় বিবাহ বিচ্ছেদের দিকে এগোচ্ছে, সেই সময় অনলাইন এক বিজ্ঞাপনে চোখ পড়ে মহিলার।

ইন্টারনেটের মাধ্যমেই যোগাযোগ হয় ‘মিস্ট্রেস হান্টার’দের সঙ্গে। শেষে হাজার ডলার খরচ করে বিবাহিত সম্পর্ক অটুট রাখতে সমর্থ হন ওয়্যাং। ঘটনায় তিনি এতটাই আপ্লুত হয়ে পড়েন যে, নিজেই এখন বিচ্ছেদ রুখতে নেমে পড়তে আগ্রহী।

সংস্থার নাম ওয়েইকিং, যার অর্থ ‘অনুভবের রক্ষাকর্তা’। দাম্পত্য জীবনে তৃতীয় পুরুষ বা নারীর প্রবেশে যে ফাটল দেখা দেয়, তার মেরামত করাই ওদের কাজ।

সংস্থার প্রধান শু জিন জানিয়েছেন, আপাতত ৩০০ এজেন্ট এ কাজে জড়িত। এদের বেশির ভাগই অবশ্য মহিলা, মনোবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান

এবং আইনের স্নাতক।

সংবাদ সংস্থা এএফপিকে দেয়া সাক্ষাত্‍কারে শু জানিয়েছেন, ‘প্রতিবছর আমরা গড়ে ৫০০০ বিবাহ বিচ্ছেদ রুখে দিই।’

কীভাবে কাজ করেন মিস্ট্রেস হান্টাররা?

সংস্থার কর্মী বছর সাতচল্লিশের মিং লি জানিয়েছেন, ‘কাজ হাসিল করতে বিভিন্ন ভেক ধরতে হয়। কখনো প্রতিবেশী, কখনো বা ধোপা এমনকি বেবি সিটারের ভূমিকাও পালন করেছি’।

তিনি জানান, ‌‘একবার তো জ্যোতিষীও সাজতে হয়েছিল। সেবার অবশ্য অতি সহজেই কেস মিটিয়ে ফেলেছিলাম। কারণ শিকার সম্পর্কে নিপীড়িত স্ত্রীর থেকে আগেভাগে বহু তথ্য জোগাড় করেছিলাম।’

তিনি জানিয়েছেন, পরকীয়ায় জড়িত পুরুষটির প্রেমিকাকে নানানভাবে বুঝিয়ে, লোভ দেখিয়ে বা বাস্তব বুদ্ধি দিয়ে সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার পরামর্শ দেয়া হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সাফল্য মেলে।

সমীক্ষা বলছে, চীনে বিবাহ বিচ্ছেদের হার হু হু করে বাড়ছে। ২০০৭ সালে প্রতি ১০০০ দম্পতির মধ্যে ১.৫৯% থেকে বেড়ে ২০১৪ সালে তা দাঁড়িয়েছে ২.৬৭%।

২০১৫ সালে শুধুমাত্র বেজিংয়ে ৭৩,০০০ দম্পতির বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে। দাম্পত্যে ফাটল ধরার কারণ হিসেবে দেখা গেছে স্বামী-স্ত্রীর রোজগারের বড়সড় ফারাক, ব্যক্তিত্বের সংঘাত এবং অতি উদার মানসিকতা। তবে এর সঙ্গে রয়েছে নিজের উচ্চাশার জন্য পেশাগত ইঁদুর দৌড়ে সামিল হওয়া।

সমীক্ষায় জানা গেছে, প্রথম বিয়ে ভাঙার পেছনে অন্যতম কারণ স্বামীর বহু রমণীতে আসক্তি। পাশাপাশি ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে বিবাহিত মহিলাদেরও প্রেমিকের সন্ধান মিলেছে।

ইন্টারনেটের দৌলতে এ প্রবণতা বেড়েছে বলে মনে করেন শু জিন। তিনি বলেন, ‘সারাবিশ্বে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের ছড়াছড়ি। তবে চীনা সমাজে তার স্থান অনেক নিচে। এমন সম্পর্ক সমাজের চোখে অপরাধের সামিল।’

মিস্ট্রেস হান্টারদের মুন্সিয়ানায় একদিকে যেমন বহু ভাঙা বিয়ে জোড়া লেগেছে, তেমনি ঘনিষ্ঠ পরকীয়া সম্পর্কে হঠাত্‍ ছেদ ঘটায় মানসিকভাবে বিপন্ন হয়ে পড়ছেন দাম্পত্যের মাঝে ঢুকে পড়া নারী, যাদের অনেকেই একা থাকেন।

বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে শু জানিয়েছেন, ‘সামাজিক প্রয়োজনে তা মেনে নেয়া ছাড়া উপায় নেই। তবে তার সহকর্মী মিং জানিয়েছেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি চেষ্টা করি, ভগ্নহৃদয় মেয়েটিকে অবিবাহিত নতুন প্রেমিক জোগাড় করে দিতে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাতে সাফল্য পেয়েছি।’