ঢাকা ১০:৪৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাওড় এলাকার জন্য আমরা কি করতে পারি হাওর হচ্ছে স্রোতহীন বিশাল জলাশয়

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০১:১০:০৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬
  • ৪০১ বার

হাওড় হচ্ছে এমন স্রোতহীন বিশাল জলাশয় যা মৃত বা বাঁক পরিবর্তনকারী নদীর প্লাবন ভূমি উত্‍পন্ন৷ সরোবর, উপহ্রদ, বিল, বাঁওড়, জুরি, ডহর ইত্যাদি এর সমার্থক৷ ভূ-প্রাকৃতিক কারণেই পলিমাটির এই বাংলাদেশে অসংখ্য হাওড়ের জন্ম৷ বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ার ক্রান্তীয় অঞ্চলে ৮৮০ থেকে ৯৩০ পূর্ব দ্রাঘিমা এবং ২০০ থেকে ২৭০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশের ভেতরে৷ হিমালয় পর্বতমালা থেকে উত্‍পন্ন এবং এর দক্ষিণে অবস্থিত বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম দুটি নদী গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি এই দেশটির উপর দিয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়েছে৷ এছাড়াও লুসাই পাহাড় থেকে উত্‍পন্ন বরাক নদীর পানিও বাংলাদেশের উপর দিয়ে বঙ্গোপসাগরে বহমান৷ বরাক নদী বাংলাদেশে প্রবেশের মুহূর্তে সিলেটের অমলশিদের কাছে সুরমা ও কুশিয়ারা নামে দুটি শাখায় ভাগ হয়েছে৷ এই সুরমা ও কুশিয়ারা নদীদুটির অববাহিকাতেই বাংলাদেশের বিখ্যাত হাওড়গুলির অবস্থান৷
উত্তর পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত হাওড়গুলি দেশের প্রধান নিম্নাঞ্চল এলাকা৷ ব্রহ্মপুত্র নদ ১৭৮৭ সালের বন্যা ও ভূমিকম্পের পর মধুপুর গড়ের পুবদিক থেকে পশ্চিমে তার প্রবাহপথ পরিবর্তন করলে সেই পরিত্যক্ত অঞ্চলে হাওড় সৃষ্টি হয়৷

তাছাড়া মেঘালয় ও বাংলাদেশের সীমান্ত বরাবর সংঘটিত ‘ডাউকি চু্যতি’র কারণে অতিপ্রাচীনকালে এলাকাটি ৫ থেকে ১৫ মিটার বসে যায়৷ তবে স্থানীয় নদীসমূহের, যথা সোমেশ্বরী, যদুকাটা, রকতি, ধামালিয়া, চলতি এবং সুরমার পলি এলাকাটিকে ক্রমশঃ ভরাট করে চলেছে এবং বদ্ধ জলাশয়ের সৃষ্টি হচ্ছে৷

২০০৪ সালের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের হাওড় এলাকায় একটি বড় ধরনের আগাম বন্যা বয়ে যায়৷ এই বন্যায় সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণা জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার ফসল পানিতে ডুবে গিয়েছিল৷ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধগুলি এলাকার কয়েকটি প্রকল্পে বন্যা প্রতিরোধ করতে সক্ষম হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে অকার্যকর হয়ে পড়ে৷ লক্ষ্য করা গেছে যে, কয়েক বছর পরপরই সুনামগঞ্জকে কেন্দ্র করে হাওড় এলাকায় অসময়ে বন্যা হচ্ছে, যার ফলে ফসল, জীবন ও সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষতি ঘটছে৷ অথচ এই হাওড় এলাকাগুলি অত্যন্ত সম্পদপূর্ণ৷ এখানকার ভূ-বৈচিত্র্য ও পরিবেশ অনন্য৷ তাই হাওড় এলাকার সমস্যা ও সম্ভাবনা বিচার করে আমাদের অবশ্যকরণীয় কিছু বিষয় আলোচনার দাবী রাখে৷

হাওড় যেমন, তেমনি রয়েছে বাঁওড়৷ দেশের নিম্নাঞ্চলীয় বাঁওড় এলাকাগুলো বিচ্ছিন্নভাবে পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত৷ সুদূর অতীতে এই এলাকা দিয়ে গঙ্গা নদীর প্রধান শাখা ভৈরব ও কালীগঙ্গা বয়ে যেত৷ পরবতর্ীতে গঙ্গা নদীর মূল স্রোতধারা পদ্মা অভিমুখে প্রবাহিত হওয়ায় এই নদী দুটোর উত্‍সমুখ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ভাটিতে এর গতিপথে অনেকগুলো অশ্বখুরাকৃতি হ্রদের সৃষ্টি হয়৷ এগুলোই দেশের পশ্চিমাঞ্চলের বর্তমান বাঁওড় এলাকা৷ বাঁওড়গুলো বড় বড় নদীর পরিত্যক্ত খাড়ি হওয়ায় এদের পাড় উঁচু; তাই পাড় বরাবর সামান্য কিছু অবকাঠামো তৈরি করলেই বন্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব৷ বর্তমান এই বাঁওড়গুলোর কোন কোনটিতে মত্‍স্য অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে মাছ চাষ হচ্ছে৷ তবে উপযুক্ত অবকাঠামো এবং পানি ব্যবস্থাপনার রূপরেখা ও পরিকল্পনার অভাবে এইসব কর্মকাণ্ড যথেষ্ট পরিমাণে পরিবেশমুখী নয়৷

দেশের সর্বত্র ছোট বড় বিল এলাকা ছড়িয়ে আছে৷ তবে বড় বড় বিলগুলো রাজশাহী, যশোর, খুলনা, ঢাকা ও ফরিদপুর এলাকায় অবস্থিত৷ এগুলো বড় বড় নদীর বন্যা-বিধৌত এলাকা৷ প্রাকৃতিক কারণেই প্রতি বছর নদীবাহিত পলি দ্বারা বিলের তলদেশ ক্রমশ উঁচু হচ্ছে, ফলে পানির গভীরতাও কমে আসছে৷ বর্তমানে শীতকালে নিষ্কাশন প্রকল্পের মাধ্যমে এই বিলগুলো প্রায় শুকিয়ে-ফেলা ও ব্যাপক চাষাবাদ করা হচ্ছে৷ তবে স্বাভাবিক বর্ষায় এগুলো ১ থেকে ৩ মিটার উচ্চতার পানিতে ডুবে থাকে৷ তখন এই এলাকায় বর্ষাকালীন আমন চাষ হয়৷

বাংলাদেশের মোট এলাকা হলো ১,৪৮,০০০ বর্গ কিলোমিটার৷ এর পূর্বাঞ্চলে রয়েছে কিছু পাহাড়ী এলাকা যা লুসাই পবর্তমালার বর্ধিত অংশ৷ দেশের মাঝখানের ভাওয়াল ও মধুপুরের গড় ভূ-প্রকৃতিগতভাবে টিলায় পূর্ণ৷ এছাড়া উত্তরাঞ্চলে রয়েছে বরেন্দ্র উচ্চভূমি৷ হিসেব মতে তাই দেশের প্রায় ১,০০,০০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকাই নদীর প্লাবনভূমি৷ সারাবছর এই অঞ্চলগুলোর একটা বিরাট অংশ, নদীসমূহের খাড়ি, হাওড়, বাঁওড় এবং বিলগুলি পানিতে ডুবে থাকে এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে৷ বড় নদীগুলোর নির্দিষ্ট প্লাবনভূমি এলাকা বর্ষা ও শরত্‍কালে পানিতে তলিয়ে যায়৷ এসবের মোট পরিমাণ প্রায় ৪৪,০০০ বর্গকিলোমিটার৷

সারণি ১ : খোলা জলমহাল সারণি ২ : বদ্ধ জলমহাল

নদী ও মোহনা ১০,৩২,০০০ হে: পুকুর ২,১৫,০০০ হে:
বিল ও হাওড় ১,১৪,০০০ হে: বাঁওড় ৫,০০০ হে:
কাপ্তাই লেক ৬৮,০০০ হে: উপকূলীয় জলাশয় ১,৩১,০০০ হে:
প্লাবিত ভূমি ২৮,৩৩,০০০ হে:
মোট ৪০,৪৭,০০০ হে: মোট ৩,৫১,০০০ হে:
মোট জলমহাল= ৪৩,৯৮,০০০ হেক্টর = ৪৩,৯৮০ বর্গ কি.মি. = দেশের মোট এলাকার প্রায় ৩০%
[তথ্যসূত্র, কৃষি ডায়েরী]

আমাদের ভূখণ্ডে গড় বৃষ্টিপাতের বার্ষিক হার ২,৩০০ মিলিমিটার৷ এই হার উত্তর পূর্বাঞ্চলে অনেক বেশী, সিলেটে বছরে ৪,০০০ মিলিমিটার (সারণি-৩) এবং সুনামগঞ্জে ৫,০০০ মিলিমিটারের অধিক৷ তাছাড়া বাংলাদেশের চেয়ে প্রায় ১৫ গুণ বেশী এলাকার অন্যদেশের পানি এর উপর দিয়ে বয়ে যায়৷ এই জলপ্রবাহের ফলে ভরে যায় নদী খাল ও বিল এবং অতিরিক্ত পানিতে সৃষ্টি হয় হালকা, মাঝারী কিংবা বড় ধরনের বন্যা৷ তবে বর্ষা ও শরত্‍কালের বন্যা যেমন একটি সাংবাত্‍সরিক ব্যাপার তেমনি এর পানি আবার আমাদের জন্য একটি বিশাল সম্পদও বটে৷

সারণি ৩ : দেশের বিভিন্ন শহরের গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত (মিলিমিটার)

শহর মোট
ঢাকা ১৯৮০
রংপুর ২১৯৪
খুলনা ১৬৭৬
সিলেট ৩৯৯৪
চট্টগ্রাম ২৮৮২
[তথ্যসূত্র : পানি বিজ্ঞান অধিদপ্তর, বাপাউবো]

সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার হাওড় ও নিম্নভূমিগুলোর উচ্চতা সমুদ্রতল থেকে গড়ে ৪ মিটার৷ সুনামগঞ্জ এলাকার হাওড়গুলোর উচ্চতা গড়ে ২ মিটার৷ এই কারণে ভারতের মেঘালয় অথবা বরাক উপত্যকার বৃষ্টিপাতের পানি সবার আগে সুনামগঞ্জ এলাকার হাওড়ের দিকে ধাবিত হয় এবং নিম্নাঞ্চলগুলিকে পূর্ণ করার পর দক্ষিণে সাগরের দিকে প্রবাহিত হতে থাকে৷
বাংলাদেশের হাওড় ও বাঁওড় এলাকাগুলোতে একসময় মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ বিরাজ করতো এবং মাছ ও জলজ প্রাণী সম্পদে পূর্ণ থাকতো৷ বর্তমানে বর্ষাকালের শেষে বেশি বেশি এলাকা চাষাবাদের আওতায় আনা এবং অতিনিষ্কাশনের ফলে এসব জায়গার জলজ প্রাণীসম্পদের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছে৷

অথচ টাঙ্গুয়া, পশুয়া-গুরমার, হাকালুকি, হাওড়, কালিয়াজুড়ি এলাকা, কোম্পানীগঞ্জ এলাকা, বড় হাওড়, কাউয়াদীঘি হাওড় ও বালাই হাওড় বন্যপ্রাণী বিচরণক্ষেত্র হিসাবে আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ৷ ইরানে অনুষ্ঠিত Ramsar Convention এবং ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত Rio Convention -এর প্রতি বাংলাদেশ সরকারের সমর্থন থাকায় এই এলাকার পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করার ব্যাপারে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷

সরকার কতৃক অনুমোদিত Bangladesh National Water Policy 1999 দেশের নিম্নাঞ্চলের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সকল উন্নয়ন প্রকল্পে পরিবেশ সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছেঃ

সরকারীভাবে স্বীকৃত হলেও দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই হাওড়, বাঁওড় ও বিল অঞ্চলগুলি বাস্তবে কিন্তু ভীষণভাবে উপেক্ষিত ও বিশৃঙ্খলাপূর্ণ৷ প্রাকৃতিকভাবেই হাওড়, বাঁওড় ও বিল এলাকাগুলি সাধারণ জনজীবনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে এসেছে৷ এগুলো মাছ উত্‍পাদনের উর্বর ক্ষেত্র এবং দেশের বিশাল মত্‍স্যজীবী সমপ্রদায়ের জীবিকা অর্জনের প্রধান সহায়ক৷ কিন্তু ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্যচাহিদা মেটানোর অজুহাত দেখিয়ে এগুলোকে অতিনিষ্কাশন করে শুকিয়ে ফেলে ক্রমশঃ চাষযোগ্য ভূমিতে পরিণত করা হচ্ছে৷ ফলে আমরা প্রাকৃতিক জলসম্পদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছি৷ একই সাথে এসব এলাকায় বসবাসকারী পাখি ও উভচর প্রাণীসম্পদ ক্রমশঃ নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে৷ কিছুকাল আগেও দেশের হাওড়, বাঁওড় ও বিল নিম্নাঞ্চলগুলোর পানিই শীত ও গ্রীষ্মে দেশের নদীনালাগুলোকে সজীব রাখতো৷ এই নদীনালাগুলো সারা বছরব্যাপী তীরবতর্ী লোকালয়কে যোগাযোগ, নিষ্কাশন, সেচ, স্নান ও গৃহস্থালী কাজের সুবিধা দিতো এবং সেই সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতো৷

হাওড় এলাকাগুলো স্বাভাবিক বন্যায় ২ থেকে ৪ মিটার পানিতে তলিয়ে যায়৷ এইসময় এলাকায় বর্ষাকালীন আমন চাষ হয়৷ তবে দেশের বাইরে থেকে-আসা বন্যার কারণে অনেকসময় পানি বেড়ে যায়, ফলে বাড়িঘর তলিয়ে যায়, সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে ও ফসলের ক্ষতি হয়৷ বাংলাদেশের হাওড় এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিকাংশ বাঁধ অগ্রিম স্বাভাবিক বন্যা ঠেকানোর জন্য তৈরি, যেগুলো বর্ষাকালে ডুবে যায়৷ আগে এসব এলাকায় সনাতনী বোরো চাষ হতো, যার জন্য বীজতলা থেকে ধান পাকা পর্যন্ত সময় লাগতো ১২০ দিন এবং ওই ধান চৈত্র মাসের মাঝামাঝি উঠে যেতো৷ কিন্তু সুনামগঞ্জ ও সিলেট এলাকার নিম্নাঞ্চলে সমপ্রতি হাইব্রিড উচ্চ ফলনশীল বোরো ধানের চাষ শুরু হয়েছে৷ এই ধান বীজতলা থেকে পাকা পর্যন্ত সময় লেগে যায় ১৪০ দিন থেকে ১৫০ দিন৷ তাই হাওড় এলাকায় এসব ফসল তোলার সময় বৈশাখ মাস পর্যন্ত গড়িয়ে যায়৷ আগাম বন্যার কারণে এই সময়টা ঝুঁকিপূর্ণ৷ ২০০৪ সালের এপ্রিল মাসে যখন বন্যা আসে তখনও ক্ষেতের ধান পেকে ওঠেনি৷

তাই হাওড় এলাকার সমস্যা প্রধানত অগ্রিম বন্যা৷ এই অগ্রিম বন্যা ঠেকাতে পারলে বিপুল পরিমাণ বোরো ফসল তোলা সম্ভব৷ অথচ হাওড় এলাকায় এই অগ্রিম বন্যা আসার সম্ভাবনা সবসময়ই থাকছে৷ পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রয়োগ করলে এই এলাকায় বন্যা-প্রতিরোধ সম্ভবপর, কিন্তু তা আবার প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্টসহ তাত্‍ক্ষণিক ও সুদূরপ্রসারী ব্যাপক ক্ষতির কারণও হতে পারে৷

নিম্নাঞ্চলগুলো ক্রমশঃ নিষ্কাশিত হয়ে চাষযোগ্য ভূমিতে পরিণত হওয়ায় স্থানীয় মত্‍স্যজীবী মানুষের জীবনধারণ বিপন্ন হয়ে পড়েছে৷ নিম্নাঞ্চলের জলমহাল দূর্নিতিপূর্ণ সরকারী ব্যবস্থার সহায়তায় লীজের নামে আঞ্চলিক প্রভুদের হাতে চলে যাচ্ছে৷ এভাবে মত্‍স্যজীবী সমপ্রদায় তথা সাধারণ মানুষ তাদের ঐতিহ্যগত ও মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে নিঃস্ব থেকে নিঃস্বতর হয়ে পড়ছে৷ তাছাড়া এলাকার জলসম্পদ কমে যাওয়ায় আমিষের অভাবে এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের দরুণ সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যহানি ঘটছে৷ অথচ অবস্থার পরিবর্তন করলে এবং এলাকাগুলিকে প্রকৃত ব্যবহারকারীদের হাতে ফিরিয়ে দিলে স্থানীয় মানুষের উন্নয়নই কেবল নয়, জাতীয় সম্পদের বিশাল যোগানদানকারী ক্ষেত্রও পাওয়া যেতে পারে৷
হাওড় ও নিম্নাঞ্চল এলাকায় জনজীবন ও কৃষিপণ্য রক্ষা করা ছাড়াও প্রাকৃতিক মত্‍স্য সম্পদসহ অন্যান্য জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর রক্ষণাবেক্ষণে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির প্রচেষ্টা হিসাবে করণীয়গুলোকে এভাবে চিহ্নিত করা যায়৷

১. দেশের হাওড় এলাকায় অগ্রিম বন্যাই শুধু নয় যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবও একটি সমস্যা৷ অতএব হাওড় এলাকাগুলোতে সুষ্ঠু বন্যা-ব্যবস্থাপনা প্রণয়ন এবং এর সাথে সমন্বিতভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাতে হবে৷ বন্যা-নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের বাঁধগুলো এমন হওয়া চাই যা স্থানীয় জনগণকে সারাবছর যোগাযোগ সুবিধা দেবে, কিন্তু বন্যার পানি প্রবেশের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না৷ হাওড় এলাকার জনগণ শুকনা মৌসুম ব্যতীত বছরের অধিকাংশ সময় যাতে নদীপথে যাতায়াত করতে পারে তার ব্যবস্থাপনা অব্যাহত রাখতে হবে৷ বর্তমানে যেসকল থানাসদর সারা বছরব্যাপী সড়ক নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত, ওইসব সড়ক ব্যতীত এমন কোন নতুন সড়ক নির্মাণ করা যাবে না যার ফলে হাওড় এলাকার পরিবেশকে ক্ষুণ্ন করতে পারে৷

২. পরিবেশ, মত্‍স্যসম্পদ, জলজ ও পাখির জীববৈচিত্র্য অক্ষুণ্ন রাখার প্রয়োজনে হাওড়গুলোকে অভয়াশ্রম হিসেবে এবং সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, নেত্রকোণা ও কিশোরগঞ্জ জেলার হাওড় এলাকাকে জাতীয় সংরক্ষিত সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করতে হবে৷ হাওড় এলাকার ফসলবিন্যাস পরিবর্তন করে ফসল যাতে চৈত্র মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে উঠে আসে, পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ তেমন উত্‍পাদনের পরিকল্পনা নিতে হবে৷

৩. দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের বাঁওড়গুলোর পরিবেশ, মত্‍স্যসম্পদ, জলজ পাখির জীববৈচিত্র্য অক্ষুণ্ন রাখার জন্য আইনশৃঙ্খলার উন্নতি করে এদেরকে অভয়াশ্রম ঘোষণা করতে হবে৷ পর্যটন শিল্পের উন্নতির জন্য দেশের বাঁওড় এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং বাঁওড় এলাকাকে জাতীয় সম্পদ ঘোষণা করার দরকার৷

৪. সারাদেশের জলাভূমিগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ড্রেজিং বা পলি অপসারণের নামে অতিনিষ্কাশন বন্ধ করা চাই৷ মত্‍স্যসম্পদ, জলজ পাখির জীববৈচিত্র সংরক্ষণ করার জন্য দেশের প্রতিটি ইউনিয়নের নূ্যনপক্ষে একটি জলাধার চিহ্নিত করে তাতে বছরব্যাপী সকল প্রকার মাছধরা নিষিদ্ধ করা দরকার৷

৫. লীজের নামে জলমহালগুলোকে প্রভাবশালী ও সুবিধাভোগী মহলের অবৈধ দখল থেকে মুক্ত করা অত্যাবশ্যক৷ প্রতিটি ইউনিয়নের নির্দিষ্ট জলাভূমি ব্যতীত সকল জলাভূমিকে সারা বছর উন্মুক্ত মত্‍স্যজীবী তথা আপামর জনগণের সম্পত্তি হিসেবে ফিরিয়ে দিতে হবে৷
৬. পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখার জন্য হাওড়, বাঁওড় ও জলাভূমি এলাকায় শিল্প কারখানা নির্মাণ নিষিদ্ধ করা দরকার৷ কয়েকটি নির্দিষ্ট পথ ব্যতীত সকল পথে ইঞ্জিন চালিত নৌকা বা যান চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে৷ তীরবতর্ী ভূমিতে বিদেশী ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক গাছপালার পরিবর্তে দেশী এবং পরিবেশবান্ধব গাছ লাগানো দরকার৷

৭. বন্যার সময় জনগণের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষা এবং ত্বরিত সহায়তা প্রদানের জন্য হাওড় এলাকায় প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী, চিকিত্‍সার সরঞ্জাম এবং আশ্রয় কেন্দ্রের ব্যবস্থা রাখা জরুরী৷

৮. হাওড় এলাকার জনজীবন, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের শিশু কিশোর তথা জনগণকে অবহিত এবং এই সম্পদের বিষয়ে সচেতন করার জন্য প্রতিটি উপজেলায় একটি করে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা দরকার৷ এই পর্যটন কেন্দ্র কেবলমাত্র সরকারী ব্যবস্থাপনায় চলবে এবং ব্যবসামূলক না হয়ে শিক্ষামূলক হবে৷

সারণি ৪ : হাওড় ও নিম্নাঞ্চলে করণীয় কাজ

করণীয় বিষয়সমূহ হাওড় বাঁওড় জলাভূমি মন্তব্য ও ব্যাখ্যাঃ

# বন্যা ব্যবস্থাপনা করা সমগ্র হাওড় এলাকায় প্রযোজ্য হবে
# যোগাযোগ উন্নতি করা সমগ্র হাওড় ও বাঁওড় এলাকা
# লীজ বন্ধকরণ করা ও সমগ্র বাঁওড়সহ সকল সরকারী বদ্ধ জলাশয়
# মত্‍স্য বিভাগের নিয়ন্ত্রণে থাকবে
# মুক্ত জলাশয় রক্ষা করা সকল জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা
# সারা বছর মাছধরা নিয়ন্ত্রণ করা ও প্রতিটি ইউনিয়নে অন্তত ১টি জলাভূমি
# সারা বছর পাখিধরা নিয়ন্ত্রণ করা ও প্রতিটি উপজেলায় অন্তত ১টি জলাভূমি
# পর্যটন কেন্দ্র করা প্রতিটি উপজেলায় ১টি করে
# অভয়াশ্রম ঘোষণা করা সকল হাওড় এবং বাঁওড়
# জাতীয় সংরক্ষিত সম্পদ ঘোষণা করা হাওড় এবং বাঁওড় এলাকা দুটিকে ২টি
# জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা
# আইন শৃঙ্খলার প্রয়োগ করা ও স্থানীয় পরিষদের বিশেষ বাহিনী দ্বারা
# ক্ষতিকারক বনায়ন রোধ করা এবং পরিবেশের ক্ষতিকারক বিদেশী গাছ লাগিয়ে
# তথাকথিত বনায়ন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে
# ড্রেজিং এর মাধ্যমে জলাভূমি করা ও ড্রেজিং এর মাধ্যমে বালি দিলে
# জলাভূমি ভরাটের কাজ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হবে
# ভরাটকরণ রোধ করা ও সকল হাওড়, বাঁওড় এবং নিম্নভূমি এলাকায়
# শিল্প কলকারখানা নির্মাণ রোধ
# সকল হাওড়, বাঁওড় এবং নিম্নভূমি এলাকায় ইঞ্জিন-চালিত নৌকা চলাচল রোধ করা

আমাদের জাতীয় সমৃদ্ধি যতটা প্রযুক্তিনির্ভর ঠিক ততটাই পরিবেশপ্রকৃতি নির্ভর বটে৷ জলাশয় পরিবেশ ও প্রকৃতিরই অংশ৷ প্রকৃতিবিনাশী বর্তমান মানসিকতা যদি চলতেই থাকে তবে মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে যে-বৈরী সম্পর্ক তৈরি হবে তার ফল কিছুতেই শুভ হবার নয়৷ তাই হাওড়-বাঁওড় সংরক্ষণ আমাদের জাতীয় অস্তিত্বের প্রশ্নে খুবই জরুরী বিষয় বৈকি৷

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

হাওড় এলাকার জন্য আমরা কি করতে পারি হাওর হচ্ছে স্রোতহীন বিশাল জলাশয়

আপডেট টাইম : ০১:১০:০৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

হাওড় হচ্ছে এমন স্রোতহীন বিশাল জলাশয় যা মৃত বা বাঁক পরিবর্তনকারী নদীর প্লাবন ভূমি উত্‍পন্ন৷ সরোবর, উপহ্রদ, বিল, বাঁওড়, জুরি, ডহর ইত্যাদি এর সমার্থক৷ ভূ-প্রাকৃতিক কারণেই পলিমাটির এই বাংলাদেশে অসংখ্য হাওড়ের জন্ম৷ বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ার ক্রান্তীয় অঞ্চলে ৮৮০ থেকে ৯৩০ পূর্ব দ্রাঘিমা এবং ২০০ থেকে ২৭০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশের ভেতরে৷ হিমালয় পর্বতমালা থেকে উত্‍পন্ন এবং এর দক্ষিণে অবস্থিত বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম দুটি নদী গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি এই দেশটির উপর দিয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়েছে৷ এছাড়াও লুসাই পাহাড় থেকে উত্‍পন্ন বরাক নদীর পানিও বাংলাদেশের উপর দিয়ে বঙ্গোপসাগরে বহমান৷ বরাক নদী বাংলাদেশে প্রবেশের মুহূর্তে সিলেটের অমলশিদের কাছে সুরমা ও কুশিয়ারা নামে দুটি শাখায় ভাগ হয়েছে৷ এই সুরমা ও কুশিয়ারা নদীদুটির অববাহিকাতেই বাংলাদেশের বিখ্যাত হাওড়গুলির অবস্থান৷
উত্তর পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত হাওড়গুলি দেশের প্রধান নিম্নাঞ্চল এলাকা৷ ব্রহ্মপুত্র নদ ১৭৮৭ সালের বন্যা ও ভূমিকম্পের পর মধুপুর গড়ের পুবদিক থেকে পশ্চিমে তার প্রবাহপথ পরিবর্তন করলে সেই পরিত্যক্ত অঞ্চলে হাওড় সৃষ্টি হয়৷

তাছাড়া মেঘালয় ও বাংলাদেশের সীমান্ত বরাবর সংঘটিত ‘ডাউকি চু্যতি’র কারণে অতিপ্রাচীনকালে এলাকাটি ৫ থেকে ১৫ মিটার বসে যায়৷ তবে স্থানীয় নদীসমূহের, যথা সোমেশ্বরী, যদুকাটা, রকতি, ধামালিয়া, চলতি এবং সুরমার পলি এলাকাটিকে ক্রমশঃ ভরাট করে চলেছে এবং বদ্ধ জলাশয়ের সৃষ্টি হচ্ছে৷

২০০৪ সালের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের হাওড় এলাকায় একটি বড় ধরনের আগাম বন্যা বয়ে যায়৷ এই বন্যায় সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণা জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার ফসল পানিতে ডুবে গিয়েছিল৷ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধগুলি এলাকার কয়েকটি প্রকল্পে বন্যা প্রতিরোধ করতে সক্ষম হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে অকার্যকর হয়ে পড়ে৷ লক্ষ্য করা গেছে যে, কয়েক বছর পরপরই সুনামগঞ্জকে কেন্দ্র করে হাওড় এলাকায় অসময়ে বন্যা হচ্ছে, যার ফলে ফসল, জীবন ও সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষতি ঘটছে৷ অথচ এই হাওড় এলাকাগুলি অত্যন্ত সম্পদপূর্ণ৷ এখানকার ভূ-বৈচিত্র্য ও পরিবেশ অনন্য৷ তাই হাওড় এলাকার সমস্যা ও সম্ভাবনা বিচার করে আমাদের অবশ্যকরণীয় কিছু বিষয় আলোচনার দাবী রাখে৷

হাওড় যেমন, তেমনি রয়েছে বাঁওড়৷ দেশের নিম্নাঞ্চলীয় বাঁওড় এলাকাগুলো বিচ্ছিন্নভাবে পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত৷ সুদূর অতীতে এই এলাকা দিয়ে গঙ্গা নদীর প্রধান শাখা ভৈরব ও কালীগঙ্গা বয়ে যেত৷ পরবতর্ীতে গঙ্গা নদীর মূল স্রোতধারা পদ্মা অভিমুখে প্রবাহিত হওয়ায় এই নদী দুটোর উত্‍সমুখ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ভাটিতে এর গতিপথে অনেকগুলো অশ্বখুরাকৃতি হ্রদের সৃষ্টি হয়৷ এগুলোই দেশের পশ্চিমাঞ্চলের বর্তমান বাঁওড় এলাকা৷ বাঁওড়গুলো বড় বড় নদীর পরিত্যক্ত খাড়ি হওয়ায় এদের পাড় উঁচু; তাই পাড় বরাবর সামান্য কিছু অবকাঠামো তৈরি করলেই বন্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব৷ বর্তমান এই বাঁওড়গুলোর কোন কোনটিতে মত্‍স্য অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে মাছ চাষ হচ্ছে৷ তবে উপযুক্ত অবকাঠামো এবং পানি ব্যবস্থাপনার রূপরেখা ও পরিকল্পনার অভাবে এইসব কর্মকাণ্ড যথেষ্ট পরিমাণে পরিবেশমুখী নয়৷

দেশের সর্বত্র ছোট বড় বিল এলাকা ছড়িয়ে আছে৷ তবে বড় বড় বিলগুলো রাজশাহী, যশোর, খুলনা, ঢাকা ও ফরিদপুর এলাকায় অবস্থিত৷ এগুলো বড় বড় নদীর বন্যা-বিধৌত এলাকা৷ প্রাকৃতিক কারণেই প্রতি বছর নদীবাহিত পলি দ্বারা বিলের তলদেশ ক্রমশ উঁচু হচ্ছে, ফলে পানির গভীরতাও কমে আসছে৷ বর্তমানে শীতকালে নিষ্কাশন প্রকল্পের মাধ্যমে এই বিলগুলো প্রায় শুকিয়ে-ফেলা ও ব্যাপক চাষাবাদ করা হচ্ছে৷ তবে স্বাভাবিক বর্ষায় এগুলো ১ থেকে ৩ মিটার উচ্চতার পানিতে ডুবে থাকে৷ তখন এই এলাকায় বর্ষাকালীন আমন চাষ হয়৷

বাংলাদেশের মোট এলাকা হলো ১,৪৮,০০০ বর্গ কিলোমিটার৷ এর পূর্বাঞ্চলে রয়েছে কিছু পাহাড়ী এলাকা যা লুসাই পবর্তমালার বর্ধিত অংশ৷ দেশের মাঝখানের ভাওয়াল ও মধুপুরের গড় ভূ-প্রকৃতিগতভাবে টিলায় পূর্ণ৷ এছাড়া উত্তরাঞ্চলে রয়েছে বরেন্দ্র উচ্চভূমি৷ হিসেব মতে তাই দেশের প্রায় ১,০০,০০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকাই নদীর প্লাবনভূমি৷ সারাবছর এই অঞ্চলগুলোর একটা বিরাট অংশ, নদীসমূহের খাড়ি, হাওড়, বাঁওড় এবং বিলগুলি পানিতে ডুবে থাকে এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে৷ বড় নদীগুলোর নির্দিষ্ট প্লাবনভূমি এলাকা বর্ষা ও শরত্‍কালে পানিতে তলিয়ে যায়৷ এসবের মোট পরিমাণ প্রায় ৪৪,০০০ বর্গকিলোমিটার৷

সারণি ১ : খোলা জলমহাল সারণি ২ : বদ্ধ জলমহাল

নদী ও মোহনা ১০,৩২,০০০ হে: পুকুর ২,১৫,০০০ হে:
বিল ও হাওড় ১,১৪,০০০ হে: বাঁওড় ৫,০০০ হে:
কাপ্তাই লেক ৬৮,০০০ হে: উপকূলীয় জলাশয় ১,৩১,০০০ হে:
প্লাবিত ভূমি ২৮,৩৩,০০০ হে:
মোট ৪০,৪৭,০০০ হে: মোট ৩,৫১,০০০ হে:
মোট জলমহাল= ৪৩,৯৮,০০০ হেক্টর = ৪৩,৯৮০ বর্গ কি.মি. = দেশের মোট এলাকার প্রায় ৩০%
[তথ্যসূত্র, কৃষি ডায়েরী]

আমাদের ভূখণ্ডে গড় বৃষ্টিপাতের বার্ষিক হার ২,৩০০ মিলিমিটার৷ এই হার উত্তর পূর্বাঞ্চলে অনেক বেশী, সিলেটে বছরে ৪,০০০ মিলিমিটার (সারণি-৩) এবং সুনামগঞ্জে ৫,০০০ মিলিমিটারের অধিক৷ তাছাড়া বাংলাদেশের চেয়ে প্রায় ১৫ গুণ বেশী এলাকার অন্যদেশের পানি এর উপর দিয়ে বয়ে যায়৷ এই জলপ্রবাহের ফলে ভরে যায় নদী খাল ও বিল এবং অতিরিক্ত পানিতে সৃষ্টি হয় হালকা, মাঝারী কিংবা বড় ধরনের বন্যা৷ তবে বর্ষা ও শরত্‍কালের বন্যা যেমন একটি সাংবাত্‍সরিক ব্যাপার তেমনি এর পানি আবার আমাদের জন্য একটি বিশাল সম্পদও বটে৷

সারণি ৩ : দেশের বিভিন্ন শহরের গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত (মিলিমিটার)

শহর মোট
ঢাকা ১৯৮০
রংপুর ২১৯৪
খুলনা ১৬৭৬
সিলেট ৩৯৯৪
চট্টগ্রাম ২৮৮২
[তথ্যসূত্র : পানি বিজ্ঞান অধিদপ্তর, বাপাউবো]

সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার হাওড় ও নিম্নভূমিগুলোর উচ্চতা সমুদ্রতল থেকে গড়ে ৪ মিটার৷ সুনামগঞ্জ এলাকার হাওড়গুলোর উচ্চতা গড়ে ২ মিটার৷ এই কারণে ভারতের মেঘালয় অথবা বরাক উপত্যকার বৃষ্টিপাতের পানি সবার আগে সুনামগঞ্জ এলাকার হাওড়ের দিকে ধাবিত হয় এবং নিম্নাঞ্চলগুলিকে পূর্ণ করার পর দক্ষিণে সাগরের দিকে প্রবাহিত হতে থাকে৷
বাংলাদেশের হাওড় ও বাঁওড় এলাকাগুলোতে একসময় মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ বিরাজ করতো এবং মাছ ও জলজ প্রাণী সম্পদে পূর্ণ থাকতো৷ বর্তমানে বর্ষাকালের শেষে বেশি বেশি এলাকা চাষাবাদের আওতায় আনা এবং অতিনিষ্কাশনের ফলে এসব জায়গার জলজ প্রাণীসম্পদের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছে৷

অথচ টাঙ্গুয়া, পশুয়া-গুরমার, হাকালুকি, হাওড়, কালিয়াজুড়ি এলাকা, কোম্পানীগঞ্জ এলাকা, বড় হাওড়, কাউয়াদীঘি হাওড় ও বালাই হাওড় বন্যপ্রাণী বিচরণক্ষেত্র হিসাবে আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ৷ ইরানে অনুষ্ঠিত Ramsar Convention এবং ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত Rio Convention -এর প্রতি বাংলাদেশ সরকারের সমর্থন থাকায় এই এলাকার পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করার ব্যাপারে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷

সরকার কতৃক অনুমোদিত Bangladesh National Water Policy 1999 দেশের নিম্নাঞ্চলের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সকল উন্নয়ন প্রকল্পে পরিবেশ সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছেঃ

সরকারীভাবে স্বীকৃত হলেও দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই হাওড়, বাঁওড় ও বিল অঞ্চলগুলি বাস্তবে কিন্তু ভীষণভাবে উপেক্ষিত ও বিশৃঙ্খলাপূর্ণ৷ প্রাকৃতিকভাবেই হাওড়, বাঁওড় ও বিল এলাকাগুলি সাধারণ জনজীবনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে এসেছে৷ এগুলো মাছ উত্‍পাদনের উর্বর ক্ষেত্র এবং দেশের বিশাল মত্‍স্যজীবী সমপ্রদায়ের জীবিকা অর্জনের প্রধান সহায়ক৷ কিন্তু ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্যচাহিদা মেটানোর অজুহাত দেখিয়ে এগুলোকে অতিনিষ্কাশন করে শুকিয়ে ফেলে ক্রমশঃ চাষযোগ্য ভূমিতে পরিণত করা হচ্ছে৷ ফলে আমরা প্রাকৃতিক জলসম্পদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছি৷ একই সাথে এসব এলাকায় বসবাসকারী পাখি ও উভচর প্রাণীসম্পদ ক্রমশঃ নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে৷ কিছুকাল আগেও দেশের হাওড়, বাঁওড় ও বিল নিম্নাঞ্চলগুলোর পানিই শীত ও গ্রীষ্মে দেশের নদীনালাগুলোকে সজীব রাখতো৷ এই নদীনালাগুলো সারা বছরব্যাপী তীরবতর্ী লোকালয়কে যোগাযোগ, নিষ্কাশন, সেচ, স্নান ও গৃহস্থালী কাজের সুবিধা দিতো এবং সেই সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতো৷

হাওড় এলাকাগুলো স্বাভাবিক বন্যায় ২ থেকে ৪ মিটার পানিতে তলিয়ে যায়৷ এইসময় এলাকায় বর্ষাকালীন আমন চাষ হয়৷ তবে দেশের বাইরে থেকে-আসা বন্যার কারণে অনেকসময় পানি বেড়ে যায়, ফলে বাড়িঘর তলিয়ে যায়, সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে ও ফসলের ক্ষতি হয়৷ বাংলাদেশের হাওড় এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিকাংশ বাঁধ অগ্রিম স্বাভাবিক বন্যা ঠেকানোর জন্য তৈরি, যেগুলো বর্ষাকালে ডুবে যায়৷ আগে এসব এলাকায় সনাতনী বোরো চাষ হতো, যার জন্য বীজতলা থেকে ধান পাকা পর্যন্ত সময় লাগতো ১২০ দিন এবং ওই ধান চৈত্র মাসের মাঝামাঝি উঠে যেতো৷ কিন্তু সুনামগঞ্জ ও সিলেট এলাকার নিম্নাঞ্চলে সমপ্রতি হাইব্রিড উচ্চ ফলনশীল বোরো ধানের চাষ শুরু হয়েছে৷ এই ধান বীজতলা থেকে পাকা পর্যন্ত সময় লেগে যায় ১৪০ দিন থেকে ১৫০ দিন৷ তাই হাওড় এলাকায় এসব ফসল তোলার সময় বৈশাখ মাস পর্যন্ত গড়িয়ে যায়৷ আগাম বন্যার কারণে এই সময়টা ঝুঁকিপূর্ণ৷ ২০০৪ সালের এপ্রিল মাসে যখন বন্যা আসে তখনও ক্ষেতের ধান পেকে ওঠেনি৷

তাই হাওড় এলাকার সমস্যা প্রধানত অগ্রিম বন্যা৷ এই অগ্রিম বন্যা ঠেকাতে পারলে বিপুল পরিমাণ বোরো ফসল তোলা সম্ভব৷ অথচ হাওড় এলাকায় এই অগ্রিম বন্যা আসার সম্ভাবনা সবসময়ই থাকছে৷ পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রয়োগ করলে এই এলাকায় বন্যা-প্রতিরোধ সম্ভবপর, কিন্তু তা আবার প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্টসহ তাত্‍ক্ষণিক ও সুদূরপ্রসারী ব্যাপক ক্ষতির কারণও হতে পারে৷

নিম্নাঞ্চলগুলো ক্রমশঃ নিষ্কাশিত হয়ে চাষযোগ্য ভূমিতে পরিণত হওয়ায় স্থানীয় মত্‍স্যজীবী মানুষের জীবনধারণ বিপন্ন হয়ে পড়েছে৷ নিম্নাঞ্চলের জলমহাল দূর্নিতিপূর্ণ সরকারী ব্যবস্থার সহায়তায় লীজের নামে আঞ্চলিক প্রভুদের হাতে চলে যাচ্ছে৷ এভাবে মত্‍স্যজীবী সমপ্রদায় তথা সাধারণ মানুষ তাদের ঐতিহ্যগত ও মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে নিঃস্ব থেকে নিঃস্বতর হয়ে পড়ছে৷ তাছাড়া এলাকার জলসম্পদ কমে যাওয়ায় আমিষের অভাবে এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের দরুণ সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যহানি ঘটছে৷ অথচ অবস্থার পরিবর্তন করলে এবং এলাকাগুলিকে প্রকৃত ব্যবহারকারীদের হাতে ফিরিয়ে দিলে স্থানীয় মানুষের উন্নয়নই কেবল নয়, জাতীয় সম্পদের বিশাল যোগানদানকারী ক্ষেত্রও পাওয়া যেতে পারে৷
হাওড় ও নিম্নাঞ্চল এলাকায় জনজীবন ও কৃষিপণ্য রক্ষা করা ছাড়াও প্রাকৃতিক মত্‍স্য সম্পদসহ অন্যান্য জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর রক্ষণাবেক্ষণে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির প্রচেষ্টা হিসাবে করণীয়গুলোকে এভাবে চিহ্নিত করা যায়৷

১. দেশের হাওড় এলাকায় অগ্রিম বন্যাই শুধু নয় যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবও একটি সমস্যা৷ অতএব হাওড় এলাকাগুলোতে সুষ্ঠু বন্যা-ব্যবস্থাপনা প্রণয়ন এবং এর সাথে সমন্বিতভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাতে হবে৷ বন্যা-নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের বাঁধগুলো এমন হওয়া চাই যা স্থানীয় জনগণকে সারাবছর যোগাযোগ সুবিধা দেবে, কিন্তু বন্যার পানি প্রবেশের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না৷ হাওড় এলাকার জনগণ শুকনা মৌসুম ব্যতীত বছরের অধিকাংশ সময় যাতে নদীপথে যাতায়াত করতে পারে তার ব্যবস্থাপনা অব্যাহত রাখতে হবে৷ বর্তমানে যেসকল থানাসদর সারা বছরব্যাপী সড়ক নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত, ওইসব সড়ক ব্যতীত এমন কোন নতুন সড়ক নির্মাণ করা যাবে না যার ফলে হাওড় এলাকার পরিবেশকে ক্ষুণ্ন করতে পারে৷

২. পরিবেশ, মত্‍স্যসম্পদ, জলজ ও পাখির জীববৈচিত্র্য অক্ষুণ্ন রাখার প্রয়োজনে হাওড়গুলোকে অভয়াশ্রম হিসেবে এবং সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, নেত্রকোণা ও কিশোরগঞ্জ জেলার হাওড় এলাকাকে জাতীয় সংরক্ষিত সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করতে হবে৷ হাওড় এলাকার ফসলবিন্যাস পরিবর্তন করে ফসল যাতে চৈত্র মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে উঠে আসে, পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ তেমন উত্‍পাদনের পরিকল্পনা নিতে হবে৷

৩. দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের বাঁওড়গুলোর পরিবেশ, মত্‍স্যসম্পদ, জলজ পাখির জীববৈচিত্র্য অক্ষুণ্ন রাখার জন্য আইনশৃঙ্খলার উন্নতি করে এদেরকে অভয়াশ্রম ঘোষণা করতে হবে৷ পর্যটন শিল্পের উন্নতির জন্য দেশের বাঁওড় এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং বাঁওড় এলাকাকে জাতীয় সম্পদ ঘোষণা করার দরকার৷

৪. সারাদেশের জলাভূমিগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ড্রেজিং বা পলি অপসারণের নামে অতিনিষ্কাশন বন্ধ করা চাই৷ মত্‍স্যসম্পদ, জলজ পাখির জীববৈচিত্র সংরক্ষণ করার জন্য দেশের প্রতিটি ইউনিয়নের নূ্যনপক্ষে একটি জলাধার চিহ্নিত করে তাতে বছরব্যাপী সকল প্রকার মাছধরা নিষিদ্ধ করা দরকার৷

৫. লীজের নামে জলমহালগুলোকে প্রভাবশালী ও সুবিধাভোগী মহলের অবৈধ দখল থেকে মুক্ত করা অত্যাবশ্যক৷ প্রতিটি ইউনিয়নের নির্দিষ্ট জলাভূমি ব্যতীত সকল জলাভূমিকে সারা বছর উন্মুক্ত মত্‍স্যজীবী তথা আপামর জনগণের সম্পত্তি হিসেবে ফিরিয়ে দিতে হবে৷
৬. পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখার জন্য হাওড়, বাঁওড় ও জলাভূমি এলাকায় শিল্প কারখানা নির্মাণ নিষিদ্ধ করা দরকার৷ কয়েকটি নির্দিষ্ট পথ ব্যতীত সকল পথে ইঞ্জিন চালিত নৌকা বা যান চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে৷ তীরবতর্ী ভূমিতে বিদেশী ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক গাছপালার পরিবর্তে দেশী এবং পরিবেশবান্ধব গাছ লাগানো দরকার৷

৭. বন্যার সময় জনগণের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষা এবং ত্বরিত সহায়তা প্রদানের জন্য হাওড় এলাকায় প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী, চিকিত্‍সার সরঞ্জাম এবং আশ্রয় কেন্দ্রের ব্যবস্থা রাখা জরুরী৷

৮. হাওড় এলাকার জনজীবন, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের শিশু কিশোর তথা জনগণকে অবহিত এবং এই সম্পদের বিষয়ে সচেতন করার জন্য প্রতিটি উপজেলায় একটি করে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা দরকার৷ এই পর্যটন কেন্দ্র কেবলমাত্র সরকারী ব্যবস্থাপনায় চলবে এবং ব্যবসামূলক না হয়ে শিক্ষামূলক হবে৷

সারণি ৪ : হাওড় ও নিম্নাঞ্চলে করণীয় কাজ

করণীয় বিষয়সমূহ হাওড় বাঁওড় জলাভূমি মন্তব্য ও ব্যাখ্যাঃ

# বন্যা ব্যবস্থাপনা করা সমগ্র হাওড় এলাকায় প্রযোজ্য হবে
# যোগাযোগ উন্নতি করা সমগ্র হাওড় ও বাঁওড় এলাকা
# লীজ বন্ধকরণ করা ও সমগ্র বাঁওড়সহ সকল সরকারী বদ্ধ জলাশয়
# মত্‍স্য বিভাগের নিয়ন্ত্রণে থাকবে
# মুক্ত জলাশয় রক্ষা করা সকল জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা
# সারা বছর মাছধরা নিয়ন্ত্রণ করা ও প্রতিটি ইউনিয়নে অন্তত ১টি জলাভূমি
# সারা বছর পাখিধরা নিয়ন্ত্রণ করা ও প্রতিটি উপজেলায় অন্তত ১টি জলাভূমি
# পর্যটন কেন্দ্র করা প্রতিটি উপজেলায় ১টি করে
# অভয়াশ্রম ঘোষণা করা সকল হাওড় এবং বাঁওড়
# জাতীয় সংরক্ষিত সম্পদ ঘোষণা করা হাওড় এবং বাঁওড় এলাকা দুটিকে ২টি
# জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা
# আইন শৃঙ্খলার প্রয়োগ করা ও স্থানীয় পরিষদের বিশেষ বাহিনী দ্বারা
# ক্ষতিকারক বনায়ন রোধ করা এবং পরিবেশের ক্ষতিকারক বিদেশী গাছ লাগিয়ে
# তথাকথিত বনায়ন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে
# ড্রেজিং এর মাধ্যমে জলাভূমি করা ও ড্রেজিং এর মাধ্যমে বালি দিলে
# জলাভূমি ভরাটের কাজ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হবে
# ভরাটকরণ রোধ করা ও সকল হাওড়, বাঁওড় এবং নিম্নভূমি এলাকায়
# শিল্প কলকারখানা নির্মাণ রোধ
# সকল হাওড়, বাঁওড় এবং নিম্নভূমি এলাকায় ইঞ্জিন-চালিত নৌকা চলাচল রোধ করা

আমাদের জাতীয় সমৃদ্ধি যতটা প্রযুক্তিনির্ভর ঠিক ততটাই পরিবেশপ্রকৃতি নির্ভর বটে৷ জলাশয় পরিবেশ ও প্রকৃতিরই অংশ৷ প্রকৃতিবিনাশী বর্তমান মানসিকতা যদি চলতেই থাকে তবে মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে যে-বৈরী সম্পর্ক তৈরি হবে তার ফল কিছুতেই শুভ হবার নয়৷ তাই হাওড়-বাঁওড় সংরক্ষণ আমাদের জাতীয় অস্তিত্বের প্রশ্নে খুবই জরুরী বিষয় বৈকি৷