ঢাকা ০৩:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নদীর বাঁধ ভেঙে ঝিনাইগাতীতে প্লাবিত ৫০ গ্রাম, চরম দুর্ভোগ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:২১:১২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪
  • ১ বার

ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে মহারশি নদীর বাঁধ ভেঙে কমপক্ষে ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া প্রবল বর্ষণে জেলার নালিতাবাড়ী পৌরসভাসহ ৩টি ইউনিয়নের নিুাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আকস্মিক এ বন্যায় পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। পানির প্রবল তোড়ে ভেঙে গেছে অনেক ঘরবাড়ি, গাছপালা। তলিয়েছে ফসলের খেত, ভেসে গেছে মাছের পুকুর ও ঘের। অনেক বাড়িতে রান্না-খাওয়া বন্ধ রয়েছে। তিনদিন ধরে টানা বৃষ্টির কারণে বাড়ছিল নদ-নদীর পানি। সেই সঙ্গে যোগ হয় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল।

এদিকে হঠাৎ করে দেখা দেওয়া বন্যায় ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় ৩০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে হালুয়াঘাটের নিুাঞ্চল। জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে ১৪টি বাড়ি বিলীন হয়েছে। টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর পৌর শহরের বাসা-বাড়িতে ঢুকেছে বৃষ্টির পানি।

ঝিনাইগাতীর মহারশি নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের চারটি স্থান ভেঙে শুক্রবার ভোর থেকে লোকালয়ে পানি আসা শুরু হলে পানিবন্দি হয়ে পড়েন কয়েক হাজার মানুষ।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে রাতভর প্রবল বৃষ্টি আর ঢলের পানিতে শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার নদীটির পানি দুকূল উপচে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে ঝিনাইগাতীর সদর বাজার ও উপজেলা পরিষদ চত্বরসহ চারটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল আকস্মিক বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এদিকে ভারতীয় সীমান্তবর্তী নালিতাবাড়ী উপজেলার ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর পানি বেড়ে দুকূল উপচে প্রবাহিত হওয়ায় নালিতাবাড়ী পৌরসভাসহ ৩টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

এই দুটি উপজেলার অধিকাংশ গ্রামীণ রাস্তাঘাট, বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে। অনেক বাড়িঘর হাঁটু পরিমাণ পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অসংখ্য পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. অশরাফুল আলম রাসেল বলেন, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ঝিনাইগাতী সদর, ধানশাইল, কাংশা ও নলকুড়া ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের আংশিক প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা পরিষদ চত্বরে ঢলের পানি উঠেছে। বিভিন্ন এলাকায় ৭ থেকে ৮শ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা পানিবন্দিদের উদ্ধারে কাজ করছেন। বন্যার্তদের মাঝে বিতরণের জন্য শুকনো খাবার প্রস্তুত করা হচ্ছে। শুক্রবার বিকালের মধ্যেই আকস্মিক বন্যার পানি কমে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।

নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা জানান, উপজেলার পোড়াগাঁও, রামচন্দ্রকুড়া ও নয়াবিল ইউনিয়নের ৫ থেকে ৬টি গ্রামের বন্যা পরিস্থিতি খুবই খারাপ আকার ধারণ করেছে। এসব গ্রামের কোথাও কোথাও কোমর ও গলা সমান পানি হওয়ায় মানুষজন নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছে। অনেকেই পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে। বন্যার্তদের জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এলাকার ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, নালিতাবাড়ী উপজেলার চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার  ৫২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং ভোগাই নদীর পানি ৫৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শুক্রবার শেরপুর সদর উপজেলায় ১৭৭ মিলিমিটার, নালিতাবাড়ী পয়েন্টে ২২৫ মিলিমিটার এবং নাকুগাঁও পয়েন্টে ২৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, মহারশি নদীতে পানি বাড়ায় বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকেই বেশ কয়েকটি স্থানে নদীর বাঁধ ভেঙে যায়। এরপর পানি ঢুকে ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন এলাকায়। উপজেলা পরিষদ কার্যালয়, কৃষি অফিসসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা ও বাড়িঘরে ঢুকে পড়ে পানি। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট। পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে ৪ হাজার ২শ হেক্টর আমনের জমি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন দিলদার জানান, এ পর্যন্ত ৪ হাজার ২শ হেক্টর জমির আমন ধান নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়া এক হাজার হেক্টর সবজির আবাদ পুরোপুরি পানিতে তলিয়ে গেছে।

ধোবাউড়ায় ৩০ গ্রাম প্লাবিত, তলিয়ে গেছে ফসল : ধোবাউড়া (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি জানান, টানা ২২ ঘণ্টা মুষলধারে ভারি বর্ষণের ফলে ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় তলিয়ে গেছে কৃষকের স্বপ্ন। ভারি বর্ষণের সঙ্গে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। তলিয়ে গেছে সদ্য রোপণকৃত আমন ফসল। চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষক। ইতোমধ্যে নেতাই নদীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে হুহু করে পানি প্রবেশ করছে। রয়েছে বড় বন্যার আশঙ্কা।

টানা বর্ষণে উপজেলার দক্ষিণ মাইজপাড়া, গামারীতলা, ঘোষগাঁও, পোড়াকান্দুলিয়া ইউনিয়নের অন্তত ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ঘোষগাঁও ইউনিয়নের আবুল বাশার শিমুল বলেন, নেতাই নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে নদীর আশপাশের বাড়িগুলোতে পানি প্রবেশ করেছে। তাদের বাড়িতে রান্নাবান্না বন্ধ। স্থানীয়দের অভিযোগ, নেতাই নদী থেকে অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে নদীর পাড় ভেঙে ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করছে। দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হুমায়ন কবির সরকার বলেন, রনসিংহপুর, পঞ্চনন্দপুরসহ বিভিন্ন স্থানে নেতাই নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে, মানুষের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করছে।

হালুয়াঘাটের নিুাঞ্চল প্লাবিত : হালুয়াঘাট (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি জানান, দুদিনের অবিরাম বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে হালুয়াঘাটের ১২টি ইউনিয়নের প্রায় সবকটিই প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে হাজার হাজার হেক্টর জমির ধান, সবজি খেত ও ভেসে গেছে পুকুরের মাছ।

দেওয়ানগঞ্জে ১৪টি বাড়ি বিলীন, একজনের মৃত্যু :

দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি জানান, বর্ষণ ও ঢলে সীমান্তবর্তী দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ডাংধরা ইউনিয়নের পাথরের চর গ্রামের জিঞ্জিরাম নদীর পানিতে ১৪টি বাড়ি ভেঙে গেছে। ডাংধরা ইউনিয়নের পাথরেরচর গ্রামের ইউপি সদস্য মাসুদ করিম জীবন যুগান্তরকে বলেন, গ্রামের শুক্কুর ভূইয়া, হাসান ভূইয়া, আশরাফুল, ইদ্রিস আলী, শাহজাহান, দুলাল হোসেন, নুশু মিয়া, রবিউল, আলী আহম্মদ, মজিবরের স্ত্রী জরিনা, রশিদ ফকির, জরিনা বেগম, আ. রশিদের বাড়ি পানিতে ভেঙে বিলীন হয়েছে। মাখনের চর গ্রামের ইউপি সদস্য আ. সালাম জানান, পাহাড়ি ঢলের সময় গরু আনতে গিয়ে রফিকুল ইসলাম নামের এক যুবক পানিতে ডুবে মারা যায়।

ডাংধরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, পাথরের চরে ১৪টি বাড়ি-ঘর জিঞ্জিরাম নদীর ঢলের পানিতে ভেঙে গেছে। ইউপি সদস্যদের নিয়ে তিনি ঘটনাস্থলে রয়েছেন।

দেওয়ানগঞ্জের প্রত্যন্ত সীমান্তবর্তী এলাকা ডাংধরা ইউনিয়নের পাথরের চর গ্রামের ৬০ বছর বয়সের বৃদ্ধ হাসান আলী বলছিলেন, ‘রাইত থিন বৃষ্টি, ঘুম নাই। সকাল বেলা পাহাড়ের ঢলের পানিতে দুইটা ঘর ভেঙে গেল, দরিয়ায় ভাইস্যা গেল। শুক্রবার সকাল থিন সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনডা খাই নাই, ঘরও নাই, খাওন নাই, কষ্টে আছি।’

ভূঞাপুর পৌর শহরের বাসা-বাড়িতে বৃষ্টির পানি : ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি জানান, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে ময়লা-আবর্জনা মিশ্রিত বৃষ্টির পানি পৌর শহরের পাড়া-মহল্লার বাসা-বাড়িতে প্রবেশ করে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠে হাঁটুপানি জমেছে। এমন জনদুর্ভোগ ও ভোগান্তি নিরসনে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি পৌর কর্তৃপক্ষ। ফলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীরা। বৃহস্পতিবার রাত থেকে টানা বৃষ্টি হচ্ছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

নদীর বাঁধ ভেঙে ঝিনাইগাতীতে প্লাবিত ৫০ গ্রাম, চরম দুর্ভোগ

আপডেট টাইম : ১০:২১:১২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪

ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে মহারশি নদীর বাঁধ ভেঙে কমপক্ষে ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া প্রবল বর্ষণে জেলার নালিতাবাড়ী পৌরসভাসহ ৩টি ইউনিয়নের নিুাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আকস্মিক এ বন্যায় পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। পানির প্রবল তোড়ে ভেঙে গেছে অনেক ঘরবাড়ি, গাছপালা। তলিয়েছে ফসলের খেত, ভেসে গেছে মাছের পুকুর ও ঘের। অনেক বাড়িতে রান্না-খাওয়া বন্ধ রয়েছে। তিনদিন ধরে টানা বৃষ্টির কারণে বাড়ছিল নদ-নদীর পানি। সেই সঙ্গে যোগ হয় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল।

এদিকে হঠাৎ করে দেখা দেওয়া বন্যায় ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় ৩০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে হালুয়াঘাটের নিুাঞ্চল। জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে ১৪টি বাড়ি বিলীন হয়েছে। টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর পৌর শহরের বাসা-বাড়িতে ঢুকেছে বৃষ্টির পানি।

ঝিনাইগাতীর মহারশি নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের চারটি স্থান ভেঙে শুক্রবার ভোর থেকে লোকালয়ে পানি আসা শুরু হলে পানিবন্দি হয়ে পড়েন কয়েক হাজার মানুষ।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে রাতভর প্রবল বৃষ্টি আর ঢলের পানিতে শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার নদীটির পানি দুকূল উপচে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে ঝিনাইগাতীর সদর বাজার ও উপজেলা পরিষদ চত্বরসহ চারটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল আকস্মিক বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এদিকে ভারতীয় সীমান্তবর্তী নালিতাবাড়ী উপজেলার ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর পানি বেড়ে দুকূল উপচে প্রবাহিত হওয়ায় নালিতাবাড়ী পৌরসভাসহ ৩টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

এই দুটি উপজেলার অধিকাংশ গ্রামীণ রাস্তাঘাট, বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে। অনেক বাড়িঘর হাঁটু পরিমাণ পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অসংখ্য পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. অশরাফুল আলম রাসেল বলেন, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ঝিনাইগাতী সদর, ধানশাইল, কাংশা ও নলকুড়া ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের আংশিক প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা পরিষদ চত্বরে ঢলের পানি উঠেছে। বিভিন্ন এলাকায় ৭ থেকে ৮শ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা পানিবন্দিদের উদ্ধারে কাজ করছেন। বন্যার্তদের মাঝে বিতরণের জন্য শুকনো খাবার প্রস্তুত করা হচ্ছে। শুক্রবার বিকালের মধ্যেই আকস্মিক বন্যার পানি কমে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।

নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা জানান, উপজেলার পোড়াগাঁও, রামচন্দ্রকুড়া ও নয়াবিল ইউনিয়নের ৫ থেকে ৬টি গ্রামের বন্যা পরিস্থিতি খুবই খারাপ আকার ধারণ করেছে। এসব গ্রামের কোথাও কোথাও কোমর ও গলা সমান পানি হওয়ায় মানুষজন নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছে। অনেকেই পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে। বন্যার্তদের জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এলাকার ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, নালিতাবাড়ী উপজেলার চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার  ৫২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং ভোগাই নদীর পানি ৫৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শুক্রবার শেরপুর সদর উপজেলায় ১৭৭ মিলিমিটার, নালিতাবাড়ী পয়েন্টে ২২৫ মিলিমিটার এবং নাকুগাঁও পয়েন্টে ২৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, মহারশি নদীতে পানি বাড়ায় বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকেই বেশ কয়েকটি স্থানে নদীর বাঁধ ভেঙে যায়। এরপর পানি ঢুকে ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন এলাকায়। উপজেলা পরিষদ কার্যালয়, কৃষি অফিসসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা ও বাড়িঘরে ঢুকে পড়ে পানি। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট। পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে ৪ হাজার ২শ হেক্টর আমনের জমি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন দিলদার জানান, এ পর্যন্ত ৪ হাজার ২শ হেক্টর জমির আমন ধান নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়া এক হাজার হেক্টর সবজির আবাদ পুরোপুরি পানিতে তলিয়ে গেছে।

ধোবাউড়ায় ৩০ গ্রাম প্লাবিত, তলিয়ে গেছে ফসল : ধোবাউড়া (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি জানান, টানা ২২ ঘণ্টা মুষলধারে ভারি বর্ষণের ফলে ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় তলিয়ে গেছে কৃষকের স্বপ্ন। ভারি বর্ষণের সঙ্গে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। তলিয়ে গেছে সদ্য রোপণকৃত আমন ফসল। চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষক। ইতোমধ্যে নেতাই নদীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে হুহু করে পানি প্রবেশ করছে। রয়েছে বড় বন্যার আশঙ্কা।

টানা বর্ষণে উপজেলার দক্ষিণ মাইজপাড়া, গামারীতলা, ঘোষগাঁও, পোড়াকান্দুলিয়া ইউনিয়নের অন্তত ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ঘোষগাঁও ইউনিয়নের আবুল বাশার শিমুল বলেন, নেতাই নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে নদীর আশপাশের বাড়িগুলোতে পানি প্রবেশ করেছে। তাদের বাড়িতে রান্নাবান্না বন্ধ। স্থানীয়দের অভিযোগ, নেতাই নদী থেকে অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে নদীর পাড় ভেঙে ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করছে। দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হুমায়ন কবির সরকার বলেন, রনসিংহপুর, পঞ্চনন্দপুরসহ বিভিন্ন স্থানে নেতাই নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে, মানুষের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করছে।

হালুয়াঘাটের নিুাঞ্চল প্লাবিত : হালুয়াঘাট (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি জানান, দুদিনের অবিরাম বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে হালুয়াঘাটের ১২টি ইউনিয়নের প্রায় সবকটিই প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে হাজার হাজার হেক্টর জমির ধান, সবজি খেত ও ভেসে গেছে পুকুরের মাছ।

দেওয়ানগঞ্জে ১৪টি বাড়ি বিলীন, একজনের মৃত্যু :

দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি জানান, বর্ষণ ও ঢলে সীমান্তবর্তী দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ডাংধরা ইউনিয়নের পাথরের চর গ্রামের জিঞ্জিরাম নদীর পানিতে ১৪টি বাড়ি ভেঙে গেছে। ডাংধরা ইউনিয়নের পাথরেরচর গ্রামের ইউপি সদস্য মাসুদ করিম জীবন যুগান্তরকে বলেন, গ্রামের শুক্কুর ভূইয়া, হাসান ভূইয়া, আশরাফুল, ইদ্রিস আলী, শাহজাহান, দুলাল হোসেন, নুশু মিয়া, রবিউল, আলী আহম্মদ, মজিবরের স্ত্রী জরিনা, রশিদ ফকির, জরিনা বেগম, আ. রশিদের বাড়ি পানিতে ভেঙে বিলীন হয়েছে। মাখনের চর গ্রামের ইউপি সদস্য আ. সালাম জানান, পাহাড়ি ঢলের সময় গরু আনতে গিয়ে রফিকুল ইসলাম নামের এক যুবক পানিতে ডুবে মারা যায়।

ডাংধরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, পাথরের চরে ১৪টি বাড়ি-ঘর জিঞ্জিরাম নদীর ঢলের পানিতে ভেঙে গেছে। ইউপি সদস্যদের নিয়ে তিনি ঘটনাস্থলে রয়েছেন।

দেওয়ানগঞ্জের প্রত্যন্ত সীমান্তবর্তী এলাকা ডাংধরা ইউনিয়নের পাথরের চর গ্রামের ৬০ বছর বয়সের বৃদ্ধ হাসান আলী বলছিলেন, ‘রাইত থিন বৃষ্টি, ঘুম নাই। সকাল বেলা পাহাড়ের ঢলের পানিতে দুইটা ঘর ভেঙে গেল, দরিয়ায় ভাইস্যা গেল। শুক্রবার সকাল থিন সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনডা খাই নাই, ঘরও নাই, খাওন নাই, কষ্টে আছি।’

ভূঞাপুর পৌর শহরের বাসা-বাড়িতে বৃষ্টির পানি : ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি জানান, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে ময়লা-আবর্জনা মিশ্রিত বৃষ্টির পানি পৌর শহরের পাড়া-মহল্লার বাসা-বাড়িতে প্রবেশ করে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠে হাঁটুপানি জমেছে। এমন জনদুর্ভোগ ও ভোগান্তি নিরসনে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি পৌর কর্তৃপক্ষ। ফলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীরা। বৃহস্পতিবার রাত থেকে টানা বৃষ্টি হচ্ছে।