ঢাকা ১২:৪৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের পদ নিয়ে পুলিশ সদরে তুমুল হট্টগোল

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:১২:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ৩২ বার

বিসিএস ক্যাডার পুলিশ কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের কমিটি গঠন নিয়ে দুই পক্ষে তুমুল বাগ্‌বিতণ্ডা ও হট্টগোল হয়েছে। এ সময় দুই পক্ষই একে অপরের দিকে তেড়ে যায়। রাজধানীতে পুলিশ সদর দপ্তরের মূল ভবনের চতুর্থ তলায় মিলনায়তনে গতকাল রোববার এ ঘটনা ঘটে।

অ্যাসোসিয়েশনের বর্তমান সভাপতি পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান অতিরিক্ত আইজি মনিরুল ইসলামকে চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসর এবং সাধারণ সম্পাদক নারায়ণগঞ্জের সাবেক পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল আত্মগোপনে থাকায় নতুন কমিটি গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এ নিয়েই রোববার রাতে আলোচনার আয়োজন করা হয়। শুরুতেই কর্মকর্তাদের একটি অংশ সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের অনুরোধ জানান। তবে ৩০ বছরের ইতিহাসে সরাসরি নির্বাচনে কখনো কমিটি গঠন করা হয়নি।

সভায় উপস্থিত থাকা কর্মকর্তা সূত্রে জানা যায়, সভায় ১২ তম ব্যাচের পক্ষ থেকে ওই ব্যাচের কর্মকর্তা ও র‍্যাবের মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমানের নাম প্রস্তাব করা হয় সভাপতি হিসেবে। ১৭ তম ব্যাচের কর্মকর্তারা তা সমর্থন করেন। তবে ১৫ তম ব্যাচের কর্মকর্তারা তাঁদের ব্যাচ থেকে সভাপতি নিয়োগের দাবি জানান। তাঁরা ১৫ তম ব্যাচের কর্মকর্তা ডিআইজি নজরুল করিম খানের নাম প্রস্তাব করেন। কিন্তু পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের নীতিমালা অনুযায়ী সভাপতি পদটি অতিরিক্ত আইজিপি পদের। ১৫ তম ব্যাচে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে ডিআইজি পদমর্যাদার ওপরে কেউ নেই।

এ নিয়ে ১২ ও ১৫ তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্যে হট্টগোল শুরু হয়। তখন নিজেদের দাবি তোলেন ১৭ তম ব্যাচের কর্মকর্তারা। তাঁদের দাবি, ডিআইজি পদমর্যাদার কাউকে সভাপতি যদি করা হয় তাহলে সেটা ১৭ তম ব্যাচ থেকে করা হোক।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা পুলিশ কর্মকর্তা সূত্র জানায়, সভাপতি পদ নিয়ে তিনটি ব্যাচ দাবি তোলার পর ১৫ তম ব্যাচের ডিআইজি পদমর্যাদার তিন কর্মকর্তা ১৭ তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে উত্তেজনামূলক কথা বলতে থাকেন। এতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন ১৭ তম ব্যাচের কর্মকর্তারা। তখন পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

উত্তেজনাকর পরিস্থিতির একপর্যায়ে সব পক্ষ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলামের কাছে যান। কিন্তু আইজিপিও কোনো সমাধান দিতে না পারায় সভা ও কমিটি গঠন সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়। পরে আবার সভা ডাকা হবে বলে জানানো হয়।

সভায় অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে নিজ নিজ ব্যাচ থেকে দাবি তোলেন ২১, ২২ ও ২৪ তম ব্যাচের কর্মকর্তারা। ফলে এ পদেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সাধারণত এসপি পদমর্যাদার কর্মকর্তারা সাধারণ সম্পাদক হন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ১৫ তম ব্যাচের ডিআইজি আবু নাছের মোহাম্মাদ খালেদ আজ সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুটি ব্যাচ দুই সভাপতি প্রার্থীকে সমর্থন করে। তখন আমাদের সহকর্মীদের মধ্যে চিৎকার ও বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। এই অবস্থায় কমিটি গঠন প্রক্রিয়া অসমাপ্ত রয়েছে।’

আর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১৭ তম ব্যাচের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘একজন ডিআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে সভাপতি হিসেবে চেয়েছেন ১৫ তম ব্যাচের কর্মকর্তারা। যদি নিয়মবহির্ভূতভাবে ডিআইজি পদের কর্মকর্তাই সভাপতি হতে পারেন, তাহলে আমাদের ব্যাচের কর্মকর্তাও তো তা হতে পারেন। কিন্তু এটা তো পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের নিয়ম নয়।’

অবশ্য এই বক্তব্যের বিপরীতে নিজের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছেন ১৫ তম ব্যাচের সভাপতি পদপ্রার্থী নজরুল করিম খান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, তাঁর ব্যাচের ৮ জন ইতিমধ্যে অতিরিক্ত আইজিপি হয়েছেন। বৈষম্যের কারণে তিনি হতে পারেননি। এ বৈষম্য না হলে তিনিও অতিরিক্ত আইজিপি হতেন। তখন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পদের যোগ্য হতেন। তাই তিনি ও তাঁর ব্যাচ দাবি করতেই পারেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের পদ নিয়ে পুলিশ সদরে তুমুল হট্টগোল

আপডেট টাইম : ১১:১২:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বিসিএস ক্যাডার পুলিশ কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের কমিটি গঠন নিয়ে দুই পক্ষে তুমুল বাগ্‌বিতণ্ডা ও হট্টগোল হয়েছে। এ সময় দুই পক্ষই একে অপরের দিকে তেড়ে যায়। রাজধানীতে পুলিশ সদর দপ্তরের মূল ভবনের চতুর্থ তলায় মিলনায়তনে গতকাল রোববার এ ঘটনা ঘটে।

অ্যাসোসিয়েশনের বর্তমান সভাপতি পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান অতিরিক্ত আইজি মনিরুল ইসলামকে চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসর এবং সাধারণ সম্পাদক নারায়ণগঞ্জের সাবেক পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল আত্মগোপনে থাকায় নতুন কমিটি গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এ নিয়েই রোববার রাতে আলোচনার আয়োজন করা হয়। শুরুতেই কর্মকর্তাদের একটি অংশ সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের অনুরোধ জানান। তবে ৩০ বছরের ইতিহাসে সরাসরি নির্বাচনে কখনো কমিটি গঠন করা হয়নি।

সভায় উপস্থিত থাকা কর্মকর্তা সূত্রে জানা যায়, সভায় ১২ তম ব্যাচের পক্ষ থেকে ওই ব্যাচের কর্মকর্তা ও র‍্যাবের মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমানের নাম প্রস্তাব করা হয় সভাপতি হিসেবে। ১৭ তম ব্যাচের কর্মকর্তারা তা সমর্থন করেন। তবে ১৫ তম ব্যাচের কর্মকর্তারা তাঁদের ব্যাচ থেকে সভাপতি নিয়োগের দাবি জানান। তাঁরা ১৫ তম ব্যাচের কর্মকর্তা ডিআইজি নজরুল করিম খানের নাম প্রস্তাব করেন। কিন্তু পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের নীতিমালা অনুযায়ী সভাপতি পদটি অতিরিক্ত আইজিপি পদের। ১৫ তম ব্যাচে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে ডিআইজি পদমর্যাদার ওপরে কেউ নেই।

এ নিয়ে ১২ ও ১৫ তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্যে হট্টগোল শুরু হয়। তখন নিজেদের দাবি তোলেন ১৭ তম ব্যাচের কর্মকর্তারা। তাঁদের দাবি, ডিআইজি পদমর্যাদার কাউকে সভাপতি যদি করা হয় তাহলে সেটা ১৭ তম ব্যাচ থেকে করা হোক।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা পুলিশ কর্মকর্তা সূত্র জানায়, সভাপতি পদ নিয়ে তিনটি ব্যাচ দাবি তোলার পর ১৫ তম ব্যাচের ডিআইজি পদমর্যাদার তিন কর্মকর্তা ১৭ তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে উত্তেজনামূলক কথা বলতে থাকেন। এতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন ১৭ তম ব্যাচের কর্মকর্তারা। তখন পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

উত্তেজনাকর পরিস্থিতির একপর্যায়ে সব পক্ষ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলামের কাছে যান। কিন্তু আইজিপিও কোনো সমাধান দিতে না পারায় সভা ও কমিটি গঠন সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়। পরে আবার সভা ডাকা হবে বলে জানানো হয়।

সভায় অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে নিজ নিজ ব্যাচ থেকে দাবি তোলেন ২১, ২২ ও ২৪ তম ব্যাচের কর্মকর্তারা। ফলে এ পদেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সাধারণত এসপি পদমর্যাদার কর্মকর্তারা সাধারণ সম্পাদক হন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ১৫ তম ব্যাচের ডিআইজি আবু নাছের মোহাম্মাদ খালেদ আজ সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুটি ব্যাচ দুই সভাপতি প্রার্থীকে সমর্থন করে। তখন আমাদের সহকর্মীদের মধ্যে চিৎকার ও বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। এই অবস্থায় কমিটি গঠন প্রক্রিয়া অসমাপ্ত রয়েছে।’

আর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১৭ তম ব্যাচের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘একজন ডিআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে সভাপতি হিসেবে চেয়েছেন ১৫ তম ব্যাচের কর্মকর্তারা। যদি নিয়মবহির্ভূতভাবে ডিআইজি পদের কর্মকর্তাই সভাপতি হতে পারেন, তাহলে আমাদের ব্যাচের কর্মকর্তাও তো তা হতে পারেন। কিন্তু এটা তো পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের নিয়ম নয়।’

অবশ্য এই বক্তব্যের বিপরীতে নিজের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছেন ১৫ তম ব্যাচের সভাপতি পদপ্রার্থী নজরুল করিম খান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, তাঁর ব্যাচের ৮ জন ইতিমধ্যে অতিরিক্ত আইজিপি হয়েছেন। বৈষম্যের কারণে তিনি হতে পারেননি। এ বৈষম্য না হলে তিনিও অতিরিক্ত আইজিপি হতেন। তখন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পদের যোগ্য হতেন। তাই তিনি ও তাঁর ব্যাচ দাবি করতেই পারেন।