ভেঙে পড়া পুলিশিব্যবস্থা সচল করার চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ সরকার-ঘেঁষা কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ সব পদ থেকে সরিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের দিয়ে সাজানো হয়েছে পুলিশের শীর্ষ পর্যায়। এখন তাঁদের কাঁধে পড়েছে পদায়ন ও পদোন্নতির পাশাপাশি ইউনিটগুলোর জনবল গঠনের দায়িত্ব। এ জন্য জেলা পুলিশ ও থানা সাজাতে এসপি ও ওসিরা নিজেদের পছন্দের পুলিশ সদস্যদের নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।
পুলিশের একাধিক পদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাঠ পর্যায়ের জনবল সাজাতে পুলিশ সদর দপ্তর কিছু মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছে। সে অনুযায়ী প্রতিটি ইউনিট শক্তিশালী ও সক্রিয় করতে ইউনিটপ্রধানেরা চাইলেই তাঁদের সমমনা ব্যক্তিদের নিয়ে জনবল সাজাতে পারবেন।
অবশ্য পুলিশেরই কারও কারও আশঙ্কা, পছন্দের কর্মকর্তাদের নিয়ে দল সাজানোর সুযোগ পেলে বাহিনীতে আবার গ্রুপিং ফিরে আসতে পারে। আর এভাবে সিন্ডিকেট তৈরি হয়ে গেলে সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ পুলিশি জুলুম ও হয়রানির শিকার হতে পারেন। যদিও পুলিশের সাবেক ঊর্ধ্বতনরা বলছেন, পছন্দের কর্মকর্তাদের পদায়নের সুপারিশ আগেও করতেন কর্মকর্তারা।
জানতে চাইলে পুলিশের মহাপরিদর্শক মো. ময়নুল ইসলাম গত বৃহস্পতিবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি দ্রুত পুলিশিব্যবস্থা দাঁড় করিয়ে সাধারণ মানুষের মনে স্বস্তি ফেরাতে। ইতিমধ্যে সারা দেশে পুলিশি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এখন এটা আরও গতিশীল করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এ সময় বিক্ষুব্ধ মানুষ সারা দেশে থানাসহ পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। আত্মগোপন করেন পুলিশের অনেক কর্মকর্তা। ভেঙে পড়ে পুলিশিব্যবস্থা।
পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিকভাবে পুলিশকে ব্যবহার না করতে আন্দোলন শুরু করেন নিম্ন পদের সদস্যরা। সেসবের মধ্যেই নতুন আইজি, কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজিসহ পুলিশের বড় বড় পদে পরিবর্তন আনা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের রাতারাতি পদোন্নতি দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়। তাঁরা সাজাতে শুরু করেছেন সারা দেশের পুলিশ বাহিনী।
মাঠ পুলিশে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতিমধ্যে পুলিশ সদর দপ্তরের সুপারিশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ৫০টি জেলায় নতুন পুলিশ সুপার দেওয়া হয়েছে। এসব এসপিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলা পুলিশের কার্যক্রমকে সচল করতে। চেইন অব কমান্ড দ্রুত ফিরিয়ে আনতে তাঁর আওতায় থানাগুলোতে তাঁদের পছন্দের ওসি থাকলে সুপারিশ করতে বলা হয়েছে। যাতে পুরো জেলার পুলিশের কার্যক্রম এসপির নিয়ন্ত্রণে থাকে। অন্য কোনো গ্রুপ মাথা চাড়া দিয়ে না উঠতে পারে।
এসপিদের পছন্দে ওসি নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার মো. রহমত উল্লাহ গতকাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, কেন্দ্রীয়ভাবে একটা আলোচনা চলছে। তবে তিনি নিজেই তিন-চার দিন আগে যোগদান করেছেন। তাই নতুন ওসিদের এখনো থানায় বসাতে পারেননি। রেঞ্জে বদলি হয়ে আসা পরিদর্শকদের মধ্যে থেকে দ্রুতই থানায় ওসি দেওয়া হবে।
রাজশাহী রেঞ্জের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এসপি বলেন, ‘গত সপ্তাহে জেলার দায়িত্ব নিয়েছি। রেঞ্জে ইতিমধ্যে অনেক কর্মকর্তা বদলি হয়ে এসেছেন। তাঁদের মধ্যে থেকে বেছে বেছে কর্মকর্তাদের নিয়ে জেলা সাজানো হবে।’
একইভাবে এসপির কাছে থেকে দায়িত্ব পাওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা (ওসি) তাঁদের নিজেদের মতো করে থানার উপপরির্দশক (এসআই), সহকারী উপপরিদর্শকসহ (এএসআই) কনস্টেবল সুপারিশ করতে পারছেন। যেসব জায়গায় ওসিরা এখনো যোগ দেননি, সেখানে থানার অন্য সদস্যদেরও যোগদান করানো হচ্ছে না।
জানতে চাইলে বগুড়ার শেরপুর থানার ওসি রেজাউল করিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ১৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জেলার বদলি হওয়া ওসিদের কর্মস্থল ছাড়তে বলা হয়েছে। থানার অন্য সদস্যদেরও বদলি করা হয়েছে। তবে নতুন ওসি আসলেই থানার জনবল ঠিক করবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদা আজকের পত্রিকাকে বলেন, অন্যকিছু না ভেবে আপাতত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করাই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। কে কাকে সুপারিশ করল সেগুলো পরেও দেখা যাবে।
ট্রাফিক পুলিশকে সক্রিয়র চেষ্টা, চ্যালেঞ্জ দুর্গাপূজার নিরাপত্তা
পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনামতে পুলিশি কার্যক্রমের মধ্যে সড়কের শৃঙ্খলা ফেরানোতে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে ট্রাফিক পুলিশের কার্যক্রম শতভাগ চালু করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে ঢেলে সাজানো পুলিশের প্রথম চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে আসন্ন দুর্গাপূজাকেন্দ্রিক নিরাপত্তাকে। কর্মকর্তারা বলছেন, যদি এই নিরাপত্তা শতভাগ নিশ্চিত করা যায়, তাহলে পুলিশি ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা ফেরানো যাবে। পুলিশের মনোবলও ফিরে আসবে।