ঢাকা ১২:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সহিংসতা : কাজের গতি ফেরেনি ৫ শতাধিক থানায়

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৩৮:১৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৪
  • ৩২ বার
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশে ব্যাপক সহিংসতার পর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। দেশের পাঁচ শতাধিক থানার কার্যক্রমে গতি ফেরেনি। মাঠ পর্যায়ে পুলিশ না থাকায় সামাজিক অপরাধ বাড়ছে। তবে সার্বিক শৃঙ্খলা ফেরাতে সেনাবাহিনী পুলিশকে সহযোগিতা করছে।

এই অবস্থায় পুলিশকে নতুন নির্দেশনা দিয়ে পরিপত্র জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সারা দেশের থানাগুলোতে মামলা, সাধারণ ডায়েরি (জিডি) ও এফআইআর দ্রুত নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে মামলার তদন্তে বিলম্ব না করার নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে চলে যাওয়ার পর তাঁর এবং তাঁর সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতা এবং আওয়ামী লীগ জোটের শরিকদের বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যা মামলা হচ্ছে।

থানায় এখন যেসব পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন, তাঁরা এসব মামলা নিয়েই ব্যস্ত আছেন। ফলে মাঠ পর্যায়ে সংঘটিত অপরাধ কর্মকাণ্ডের দিকে তাঁরা খুব একটা নজর দিতে পারছেন না। আবার থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার না হওয়া, গাড়িসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম না থাকার কারণেও পুলিশ সদস্যরা মাঠে দায়িত্ব পালনে ভয়ের মধ্যে আছেন বলে একাধিক থানার পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

সারা দেশে থানাগুলো থেকে এ পর্যন্ত কত অস্ত্র, গুলি ও অন্যান্য সরঞ্জাম লুট হয়েছে, তা গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত জানায়নি পুলিশ।

এ ছাড়া লুট হওয়া বেশির ভাগ অস্ত্রই এখনো উদ্ধার হয়নি। গত ১৯ আগস্টের মধ্যে অস্ত্র জমা না দিলে উদ্ধার অভিযান শুরু হবে বলে জানিয়েছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন।সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, থানা-ফাঁড়িতে হামলা করে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার না হওয়া আগামী দিনে নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক ঝুঁকি। লাইসেন্সবিহীন এসব অস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে চলমান পরিস্থিতি আরো অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে।

এরই মধ্যে থানা থেকে লুট হওয়া অনেক অস্ত্র বিক্রি হওয়ার তথ্যও পাওয়া গেছে।গতকাল পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, ২১ আগস্ট পর্যন্ত লুট হওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদের মধ্যে এখন পর্যন্ত এক হাজার ২৩৪টি অস্ত্র এবং ২২ হাজার ২৬০টি গুলি ও টিয়ার  গ্যাসের শেল উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া উদ্ধার করা হয়েছে ২০ হাজার ৭৭৮টি গুলি, এক হাজার ৪৮২টি টিয়ার গ্যাসের শেল ও ৭১টি সাউন্ড গ্রেনেড।

পুলিশ সদর দপ্তর আরো জানায়, অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারকাজ চলছে। কারো কাছে অবৈধ অস্ত্র থাকলে নিকটস্থ থানায় জমা দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এরই মধ্যে সারা দেশের ৬৩৯ থানার সবগুলোতে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

এদিকে থানার কার্যক্রম এখনো স্বাভাবিক হয়নি। গতকাল শাহবাগ থানায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পুলিশ সদস্যরা এখনো স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারছেন না। হামলায় তাঁদের যে ক্ষতি হয়েছে সেটা আর কখনো স্বাভাবিক হবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা।

গতকাল যাত্রাবাড়ী থানায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, থানার কার্যক্রম এখনো ঠিকমতো শুরু হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই থানার এক কর্মকর্তা বলেন, থানার ভেতর কিছুই অবশিষ্ট নেই। নতুন করে সব কিছু ঠিক করতে হবে। কেউ সেবা নিতে এলে তাকে ডেমরা বা ওয়ারী থানায় পাঠানো হচ্ছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৫ আগস্ট সরকার পতনের খবর পাওয়ার পরই কিছু মানুষ থানায় ব্যাপক হামলা চালায়। আগুন ধরিয়ে দেয়। পাশাপাশি অনেকেই থানার ভেতরে লুটপাট চালায়। এমনকি একদল লোক ট্রাক ভরে থানার অস্ত্র লুট করে নিয়ে গেছে। যদিও ভাঙ্গারি দোকানসহ বিভিন্ন স্থান থেকে কয়েকটি গ্রেনেড ও অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। তবে বেশির ভাগ অস্ত্রই এখনো বেহাত হয়ে আছে

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

সহিংসতা : কাজের গতি ফেরেনি ৫ শতাধিক থানায়

আপডেট টাইম : ১১:৩৮:১৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৪
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশে ব্যাপক সহিংসতার পর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। দেশের পাঁচ শতাধিক থানার কার্যক্রমে গতি ফেরেনি। মাঠ পর্যায়ে পুলিশ না থাকায় সামাজিক অপরাধ বাড়ছে। তবে সার্বিক শৃঙ্খলা ফেরাতে সেনাবাহিনী পুলিশকে সহযোগিতা করছে।

এই অবস্থায় পুলিশকে নতুন নির্দেশনা দিয়ে পরিপত্র জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সারা দেশের থানাগুলোতে মামলা, সাধারণ ডায়েরি (জিডি) ও এফআইআর দ্রুত নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে মামলার তদন্তে বিলম্ব না করার নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে চলে যাওয়ার পর তাঁর এবং তাঁর সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতা এবং আওয়ামী লীগ জোটের শরিকদের বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যা মামলা হচ্ছে।

থানায় এখন যেসব পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন, তাঁরা এসব মামলা নিয়েই ব্যস্ত আছেন। ফলে মাঠ পর্যায়ে সংঘটিত অপরাধ কর্মকাণ্ডের দিকে তাঁরা খুব একটা নজর দিতে পারছেন না। আবার থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার না হওয়া, গাড়িসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম না থাকার কারণেও পুলিশ সদস্যরা মাঠে দায়িত্ব পালনে ভয়ের মধ্যে আছেন বলে একাধিক থানার পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

সারা দেশে থানাগুলো থেকে এ পর্যন্ত কত অস্ত্র, গুলি ও অন্যান্য সরঞ্জাম লুট হয়েছে, তা গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত জানায়নি পুলিশ।

এ ছাড়া লুট হওয়া বেশির ভাগ অস্ত্রই এখনো উদ্ধার হয়নি। গত ১৯ আগস্টের মধ্যে অস্ত্র জমা না দিলে উদ্ধার অভিযান শুরু হবে বলে জানিয়েছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন।সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, থানা-ফাঁড়িতে হামলা করে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার না হওয়া আগামী দিনে নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক ঝুঁকি। লাইসেন্সবিহীন এসব অস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে চলমান পরিস্থিতি আরো অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে।

এরই মধ্যে থানা থেকে লুট হওয়া অনেক অস্ত্র বিক্রি হওয়ার তথ্যও পাওয়া গেছে।গতকাল পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, ২১ আগস্ট পর্যন্ত লুট হওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদের মধ্যে এখন পর্যন্ত এক হাজার ২৩৪টি অস্ত্র এবং ২২ হাজার ২৬০টি গুলি ও টিয়ার  গ্যাসের শেল উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া উদ্ধার করা হয়েছে ২০ হাজার ৭৭৮টি গুলি, এক হাজার ৪৮২টি টিয়ার গ্যাসের শেল ও ৭১টি সাউন্ড গ্রেনেড।

পুলিশ সদর দপ্তর আরো জানায়, অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারকাজ চলছে। কারো কাছে অবৈধ অস্ত্র থাকলে নিকটস্থ থানায় জমা দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এরই মধ্যে সারা দেশের ৬৩৯ থানার সবগুলোতে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

এদিকে থানার কার্যক্রম এখনো স্বাভাবিক হয়নি। গতকাল শাহবাগ থানায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পুলিশ সদস্যরা এখনো স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারছেন না। হামলায় তাঁদের যে ক্ষতি হয়েছে সেটা আর কখনো স্বাভাবিক হবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা।

গতকাল যাত্রাবাড়ী থানায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, থানার কার্যক্রম এখনো ঠিকমতো শুরু হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই থানার এক কর্মকর্তা বলেন, থানার ভেতর কিছুই অবশিষ্ট নেই। নতুন করে সব কিছু ঠিক করতে হবে। কেউ সেবা নিতে এলে তাকে ডেমরা বা ওয়ারী থানায় পাঠানো হচ্ছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৫ আগস্ট সরকার পতনের খবর পাওয়ার পরই কিছু মানুষ থানায় ব্যাপক হামলা চালায়। আগুন ধরিয়ে দেয়। পাশাপাশি অনেকেই থানার ভেতরে লুটপাট চালায়। এমনকি একদল লোক ট্রাক ভরে থানার অস্ত্র লুট করে নিয়ে গেছে। যদিও ভাঙ্গারি দোকানসহ বিভিন্ন স্থান থেকে কয়েকটি গ্রেনেড ও অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। তবে বেশির ভাগ অস্ত্রই এখনো বেহাত হয়ে আছে