অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের ৭১ শতাংশ ১৫ শাখায়

রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের ৭১ শতাংশই মাত্র ১৫ শাখায়। এত স্বল্পসংখ্যক শাখায় বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ সৃষ্টি হওয়ায় ব্যাংকটির ঋণ ব্যবস্থাপনার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্প্রতি ঋণ অনিয়মের বিভিন্ন ঘটনায় আলোচিত এ ব্যাংককে পুঞ্জীভূত এই খেলাপি ঋণ আদায় করতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি এক চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংক অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে এ নির্দেশনা দিয়েছে। অগ্রণী ব্যাংকও এসব ঋণ আদায়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এসব খেলাপি ঋণ দ্রুত আদায় করতে সংশ্লিষ্ট ১৫ শাখা ব্যবস্থাপকদের চিঠি দিয়েছে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় একদিকে ব্যাংকের আয় কমছে, অন্যদিকে মূলধন ঘাটতি বাড়ছে। চিঠিতে সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভার আগে এসব খেলাপি ঋণ যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনতে শাখা ব্যবস্থাপকদের জোর দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তা করা না হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও চিঠিতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন শেষে ব্যাংকটির মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৯৯২ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা মোট ঋণের ২৩ শতাংশ। এর মধ্যে মাত্র ১৫টি শাখায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৫৫১ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপি ঋণের ৭১ দশমিক ১৩ শতাংশ। এই বিশাল খেলাপি ঋণের মধ্যে প্রধান শাখায় খেলাপি ঋণ রয়েছে এক হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপি ঋণের ৩৫ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা জানান, আলোচ্য এই শাখাগুলোর মাধ্যমেই ব্যাংকের অধিকাংশ ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। বিশেষ করে প্রধান শাখার মাধ্যমে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর বড় বড় ঋণ বিতরণ হয়ে থাকে। এ ছাড়া অন্যান্য শাখা দেশের প্রধান প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্রে অবস্থিত।

ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের এমন চিঠিতে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন শাখা ব্যবস্থাপকরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকার একটি শাখার ব্যবস্থাপক সমকালকে বলেন, খেলাপি হয়ে পড়া ঋণের মধ্যে অনেক পুরনো ঋণ আছে। যেগুলো বর্তমানে দায়িত্ব পালনকারী ব্যবস্থাপকদের সময়ে বিতরণ করা হয়। আবার অনেক ঋণ রয়েছে, যেগুলোর বিপরীতে মামলা চলছে। আবার অনেক ঋণ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের প্রতিষ্ঠানের নামে। তারা বলেন, হঠাৎ করে এসব ঋণ আদায় করা যাবে না। শাখা ব্যবস্থাপকদের ওপর অযথা চাপ দিয়ে লাভ হবে না। এ জন্য এসব ঋণ আদায়ে একটি আলাদা পরিকল্পনা নেওয়া হবে বলে তিনি মনে করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জুন শেষে প্রধান শাখায় এক হাজার ৭৭৬ কোটি, চট্টগ্রাম লালদীঘি শাখায় ৩২৪ কোটি, ঢাকার আমিন কোর্ট শাখায় ২৬৮ কোটি, রমনা করপোরেট শাখায় ২১৮ কোটি, রংপুর শাখায় ১৭৩ কোটি, রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউ শাখায় ১৫৩ কোটি, চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক এলাকা করপোরেট শাখায় ১২৬ কোটি, রাজধানীর গ্রিন রোড করপোরেট শাখায় ১০৯ কোটি, বরগুনা শাখায় ৭০ কোটি, খুলনা স্যার ইকবাল রোড শাখায় ৬৩ কোটি, ঢাকার বি-ওয়াপদা করপোরেট শাখায় ৫৭ কোটি, চট্টগ্রাম আগ্রাবাদ শাখায় ৫৬ কোটি, রাজশাহী সাহেববাজার শাখায় ৫৪ কোটি, রাজধানীর পুরানা পল্টন করপোরেট শাখায় ৫৩ কোটি ও নারায়ণগঞ্জ কোর্ট রোড করপোরেট শাখায় ৫১ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ রয়েছে।

অগ্রণী ব্যাংকের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকটির ৯৩১টি শাখা রয়েছে। অর্থাৎ বাকি ৯১৬টি শাখায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক হাজার ৪৪১ কোটি টাকা। দেশব্যাপী বিস্তৃত গত জুন পর্যন্ত ব্যাংকটি ২২ হাজার ২১৭ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে।

এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে ব্যাংকটির এক হাজার ৯৪ কোটি টাকার ঋণ রয়েছে স্পেশাল মেনশন অ্যাকাউন্টে (এসএমএ)। এসএমএ হচ্ছে একটি ঋণখেলাপি হওয়ার আগের অবস্থা। এ অবস্থায় থাকা ঋণগুলো বকেয়া কিস্তি পরিশোধ না করলে এক মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণে পরিণত হয়। জানা গেছে, এই এসএমএ ঋণের ৯৩ শতাংশ বা এক হাজার ১৬ কোটি টাকার ঋণ রয়েছে মাত্র ১৫টি শাখায়। এর মধ্যে প্রধান শাখায় এসএমএ পর্যায়ে রয়েছে ৭৫২ কোটি টাকার ঋণ। এ ছাড়া রমনা করপোরেট শাখায় ৯৫ কোটি, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ শাখায় ৮৮ কোটি, আমিন কোর্ট করপোরেট শাখায় ৩১ কোটি ও ফরেন এক্সচেঞ্জ করপোরেট শাখায় ১২ কোটি টাকার ঋণ এসএমএ পর্যায়ে রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর