মতিঝিলের জমিই যেন শেখ রাসেলের কাল

একেবারেই অচেনা। নখদন্তহীন। প্রতিশ্রুতিহীন। অনভিজ্ঞ দেখাচ্ছে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রকে। প্রিমিয়ার ফুটবল লীগের নবম আসরে দলটির চেহারা যেন ফ্যাকাসে হয়ে পড়েছে। একের পর এক হারে মুষড়ে পড়েছেন ফুটবলাররা। যেন তারা ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত। নীল জার্সিটি যেন বেদনার নীলে পরিণত হয়েছে। অলব্লুজদের দেখে মনে হওয়ার কোনো উপায় নেই যে, ২০১২-১৩ মৌসুমে এই দলটিই ট্রেবল জিতেছিল। আর দুই মৌসুম বাদেই কিনা তাদের এই হাল। চলমান মৌসুমে ফেডারেশন কাপ এবং স্বাধীনতা কাপ তো বটেই, পেশাদার লীগেও তথৈবচ অবস্থা তাদের।

শেখ রাসেলের নামে ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র’। প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন শাহজাহান কবির। ১৯৯৬ সালে পাইওনিয়র দিয়ে ফুটবলের রাস্তায় হাঁটতে শুরু করে পালাক্রমে তৃতীয়, দ্বিতীয়, প্রথম বিভাগ, পেরিয়ে উঠে আসে প্রিমিয়ার ফুটবলে। এসেই তাক লাগানো নৈপুণ্য রানার্র্র্র্র্র্সআপ, দুই প্রধান আবাহনী-মোহামেডানকে পেছনে ঠেলে। জন্মলগ্ন থেকে ক্লাবটিকে সাহায্য সহযোগিতা করেন সাবেক সভাপতি রফিকুল আল জর্জ, সাবেক সভাপতি ময়নুল হক মঞ্জু ও সাবেক সহ-সভাপতি মীর সমীর। পাইওনিয়ার লীগে অংশগ্রহণের সময় ক্লাবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন ওবায়দুল কাদের। মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ছিলেন গভর্র্নিং বডির চেয়ারম্যান। কো-চেয়ারম্যান করা হয়েছিল সাবের হোসেন চৌধুরী ও হারুনুর রশীদকে। ১৯৯৮ সালের তৃতীয় বিভাগ লীগে শেখ রাসেল রানার্সআপ হয়। এ দলটির কোচ ছিলেন ওয়াজেদ গাজী। পরের বছর দ্বিতীয় বিভাগে উঠলেও ক্লাবটিকে সাংগঠনিক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়। রাজনৈতিক আক্রোশের শিকার হয়ে ক্লাব সভাপতি মঞ্জু দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। হাল ধরেন নুরুল আলম চৌধুরী। তার আমলেই প্রথম বিভাগ ও প্রিমিয়ার লীগে চ্যাম্পিয়ন হয় শেখ রাসেল। ট্রেবল শিরোপা জিতেছে দলটি, যা দেশের ফুটবলে ইতিহাসও বটে। অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়ে এখন দেশের ফুটবলে অন্যতম একটি নামি ক্লাব। ব্যাস, ওই পর্যন্তই শেষ। এরপর আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না দলটিকে। অবাক হলেও সত্যি যে, মাত্র দুই মৌসুম আগে ট্রেবল জেতা শেখ রাসেল এখন ধুঁকছে মাঠের বাজে পারফরম্যান্সে। ক্লাবটির আর্থিক সঞ্চালনে রয়েছে বসুন্ধরা গ্র“প। গেল বছর শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের দায়িত্ব নেয় প্রতিষ্ঠানটি। ৩০ জুলাই সায়েম সোবহান আনভীরকে চেয়ারম্যান, মীর সমীরকে ভাইস চেয়ারম্যান ও আলীমুজ্জামানকে সদস্য সচিব করে নতুনভাবে ফুটবল কমিটি সাজানো হয়। অর্থের অভাব না থাকলেও সাংগঠনিক ব্যর্থতায় দলটিকে অচেনা ঠেকছে। লীগ শিরোপা জয়ের প্রত্যাশায় প্রায় দশ কোটি টাকা ব্যয়ে এবারের ফুটবল দল গঠন করা হয়েছে। অঢেল অর্থ দিয়ে আনা হয়েছে নিুমানের বিদেশী ফুটবলার। এই জন্য ক্লাবের একক বিশেষ পরিচালককে দুষছেন অন্যরা। প্রথম থেকে ষষ্ঠ রাউন্ড-হারের বৃত্তেই ঘুরপাক খাচ্ছে অলব্ল–জরা। অখ্যাত উত্তর বারিধারার কাছে প্রথম ধাক্কা খায় ট্রেবল জয়ীরা। চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে রহমতগঞ্জের কাছে ২-০ এবং চট্টগ্রাম আবাহনীর কাছে ২-১ গোলে হারে তারা। ময়মনসিংহেও ব্যর্থতাই সঙ্গী ছিল মারুফুলের দলটির। ফেনী সকারের কাছে ২-০ গোলে হারে তারা। বিজেএমসির সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করলেও ফের মুক্তিযোদ্ধার কাছে ২-১ গোলে হেরেছে অলব্লুজরা। ছয় ম্যাচের পাঁচটিতে হার। শুধু একটি ড্র করে এক পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের তলানীতে রয়েছে দলটি। এমন হতাশা নিয়েই এএফসি কাপ বাছাইপর্বের প্লে-অফে খেলতে শুক্রবার ভুটান গেছে তারা। ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে সি-গ্র“পে ২৩ আগস্ট স্বাগতিক ভুটানের এফসি তাতুঙ এবং ২৫ আগস্ট চাইনিজ তাইপের টারটনসের বিপক্ষে খেলবে শেখ রাসেল।

জাতীয় দলের সাবেক তারকা ফুটবলার ও কোচ হাসানুজ্জামান খান বাবলু শেখ রাসেলের বাজে পারফরম্যান্সে হতাশ। তার কথা, ‘এটা ফুটবলের জন্য ক্ষতিকারক। নামিদামি এই ক্লাবটি মাঠে পারফরম্যান্স করতে পারছে না। আমার মনে হচ্ছে, খেলোয়াড়, কোচ ও কর্মকর্তাদের মধ্যে কোথাও কোনো সমন্বয়হীনতা রয়েছে। এজন্যই দলটি জয় পাচ্ছে না।’

অন্য একটি সূত্র দাবি করছে, শেখ রাসেলের এই দৈন্যতার পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে সরকারের কাছ থেকে পাওয়া মতিঝিলের জমিটি। ঢাকা জেলা প্রশাসন মতিঝিলের বিমান অফিসের পাশে ৫৬.৬৭ শতাংশ খাস জমি শেখ রাসেলকে বরাদ্দ দেয়। এই জমিতে ‘শেখ রাসেল স্মৃতি টাওয়ার’ নির্মাণ করার কথা। কিন্তু ক’জন পরিচালক জমিটি ডেভেলপারকে দিয়ে ফায়দা লুটতে চাচ্ছেন। তারা খেলাধুলা বাদ দিয়ে এই জমির পেছনেই সময় পার করছেন। এদিকে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ভুটান থেকে দল ফিরে আসার পরেই কোচ মারুফুল হককে অব্যাহতি দেয়া হতে পারে। নতুন কোচ হিসেবে রহমতগঞ্জের কামাল বাবুর নাম শোনা যাচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর