ঢাকা ০২:৪৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০২ জানুয়ারী ২০২৫, ১৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যেসব আমলে মহানবী (সা.)-এর দোয়া পাওয়া যায়

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:০৩:৩৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ জুলাই ২০২৪
  • ৪৬ বার
বিশ্বনবী (সা.) তাঁর উম্মতের জন্য বিভিন্ন দোয়া করেছেন। এবং তাঁর দোয়া লাভের কিছু আমল বলে দিয়েছেন। সেসব আমল করে কিয়ামত অবধি যে কেউ মহানবী (সা.)-এর দোয়ায় শামিল হতে পারে। নিম্নে এমন কিছু আমল উল্লেখ করা হলো—

প্রথম কাতারে সালাত আদায় 

যারা জামাতে প্রথম বা দ্বিতীয় কাতারে সালাত আদায় করে, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।

ইরবাজ ইবনে সারিয়া (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রথম কাতারের মুসল্লিদের জন্য তিনবার এবং দ্বিতীয় কাতারের মুসল্লিদের জন্য একবার ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। (ইবন মাজাহ, হাদিস : ৯৯৬)আজান দেওয়া ও ইমামতি করা

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইমামদের জন্য হিদায়াতের দোয়া করেছেন এবং মুয়াজ্জিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ইমাম হচ্ছে জিম্মাদার এবং মুয়াজ্জিন আমানতদার। হে আল্লাহ! তুমি ইমামদের সৎ পথে পরিচালিত করো এবং মুয়াজ্জিনদের ক্ষমা করো।

তাহাজ্জুদের ব্যাপারে সহযোগিতা

কোনো দম্পতি যদি তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করে এবং পরস্পরকে সেই ইবাদতে উৎসাহিত করে, তাহলে সেই স্বামী-স্ত্রী রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রহমতের দোয়া লাভের সৌভাগ্য অর্জন করতে পারে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ ওই ব্যক্তির ওপর অনুগ্রহ করুন, যে রাত জেগে সালাত আদায় করে; অতঃপর সে তার স্ত্রীকে ঘুম থেকে জাগ্রত করে। আর যদি সে ঘুম থেকে উঠতে না চায়, তাহলে সে তার মুখে পানি ছিটিয়ে দেয় (নিদ্রাভঙ্গের জন্য)। আর আল্লাহ ওই নারীর ওপরও অনুগ্রহ করুন, যে রাতে উঠে সালাত আদায় করে এবং নিজের স্বামীকে জাগ্রত করে।

যদি সে ঘুম থেকে উঠতে গড়িমসি করে, তখন সে তার মুখে পানি ছিটিয়ে দেয়।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৩০৮; ইবনু মাজাহ, হাদিস : ১৩৩৬)পাওনা আদায় ও ক্রয়-বিক্রয়ে সহনশীল হওয়া

সহনশীলতা মানব চরিত্রের একটি মহান গুণ। জীবনের পথ চলায় লেনদেন, ক্রয়-বিক্রয়, দেনা-পাওনা আদায়ে যারা সহনশীলতা ও কোমলতা প্রদর্শন করে, রাসুল (সা.) তাদের জন্য রহমত ও জান্নাত লাভের দোয়া করেছেন। জাবের (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ ওই বান্দার প্রতি রহমত বর্ষণ করেন, যে বান্দা ক্রয়-বিক্রয়ের সময় উদারচিত্ত হয় এবং (ঋণের) পাওনা আদায়ের ক্ষেত্রে সহনশীল হয়।’ (ইবনু মাজাহ, হাদিস : ২২০৩)

অধীন লোকের ওপর কোমল হওয়া

অধীন যেকোনো ব্যক্তির ওপর কোমলতা ও নম্রতা প্রদর্শনের মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দোয়া লাভ করা যায়।

নবী করিম (সা.) তাঁর উম্মতের কোমলতা প্রদর্শনকারী ব্যক্তিদের জন্য দোয়া করে বলেন, ‘হে আল্লাহ! যে ব্যক্তি আমার উম্মতের কোনোরূপ কর্তৃত্ব লাভ করে এবং তাদের প্রতি কঠোরতা আরোপ করে, তুমি তার প্রতি কঠোর হও। আর যে আমার উম্মতের ওপর কোনোরূপ কর্তৃত্ব লাভ করে তাদের প্রতি কোমল আচরণ করে, তুমিও তার প্রতি কোমল ও সদয় হও।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৮২৮)সকালবেলার সময়কে কাজে লাগানো

সকালবেলায় সম্পাদিত যাবতীয় কাজে বরকত নাজিল হয়। রাসুল (সা.) প্রভাতকালে বরকত নাজিলের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হে আল্লাহ! আমার উম্মতের ভোরবেলার মধ্যে তাদের বরকত দান করুন।’ যখন রাসুলুল্লাহ (সা.) কোথাও কোনো ক্ষুদ্র বা বিশাল বাহিনী প্রেরণের সিদ্ধান্ত নিতেন, তখন সকালবেলায়ই পাঠাতেন। (তিরমিজি : ১২১২)

হাদিস মুখস্থ করা ও প্রচার করা

রাসুলুল্লাহ (সা.) দোয়া লাভের সৌভাগ্য হাসিলের উল্লেখযোগ্য উপায় হলো, তাঁর হাদিস মুখস্থ করা এবং তা মানুষের মধ্যে প্রচার করা। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ ওই ব্যক্তিকে মর্যাদামণ্ডিত করেন, যে আমার কথা শুনেছে, তা মুখস্থ করেছে, সংরক্ষণ করেছে এবং অন্যের কাছে তা পৌঁছে দিয়েছে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৬৫৮)

মহান আল্লাহ আমাদের তাঁর প্রিয় নবীর দোয়ায় শামিল করুন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

যেসব আমলে মহানবী (সা.)-এর দোয়া পাওয়া যায়

আপডেট টাইম : ১১:০৩:৩৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ জুলাই ২০২৪
বিশ্বনবী (সা.) তাঁর উম্মতের জন্য বিভিন্ন দোয়া করেছেন। এবং তাঁর দোয়া লাভের কিছু আমল বলে দিয়েছেন। সেসব আমল করে কিয়ামত অবধি যে কেউ মহানবী (সা.)-এর দোয়ায় শামিল হতে পারে। নিম্নে এমন কিছু আমল উল্লেখ করা হলো—

প্রথম কাতারে সালাত আদায় 

যারা জামাতে প্রথম বা দ্বিতীয় কাতারে সালাত আদায় করে, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।

ইরবাজ ইবনে সারিয়া (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রথম কাতারের মুসল্লিদের জন্য তিনবার এবং দ্বিতীয় কাতারের মুসল্লিদের জন্য একবার ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। (ইবন মাজাহ, হাদিস : ৯৯৬)আজান দেওয়া ও ইমামতি করা

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইমামদের জন্য হিদায়াতের দোয়া করেছেন এবং মুয়াজ্জিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ইমাম হচ্ছে জিম্মাদার এবং মুয়াজ্জিন আমানতদার। হে আল্লাহ! তুমি ইমামদের সৎ পথে পরিচালিত করো এবং মুয়াজ্জিনদের ক্ষমা করো।

তাহাজ্জুদের ব্যাপারে সহযোগিতা

কোনো দম্পতি যদি তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করে এবং পরস্পরকে সেই ইবাদতে উৎসাহিত করে, তাহলে সেই স্বামী-স্ত্রী রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রহমতের দোয়া লাভের সৌভাগ্য অর্জন করতে পারে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ ওই ব্যক্তির ওপর অনুগ্রহ করুন, যে রাত জেগে সালাত আদায় করে; অতঃপর সে তার স্ত্রীকে ঘুম থেকে জাগ্রত করে। আর যদি সে ঘুম থেকে উঠতে না চায়, তাহলে সে তার মুখে পানি ছিটিয়ে দেয় (নিদ্রাভঙ্গের জন্য)। আর আল্লাহ ওই নারীর ওপরও অনুগ্রহ করুন, যে রাতে উঠে সালাত আদায় করে এবং নিজের স্বামীকে জাগ্রত করে।

যদি সে ঘুম থেকে উঠতে গড়িমসি করে, তখন সে তার মুখে পানি ছিটিয়ে দেয়।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৩০৮; ইবনু মাজাহ, হাদিস : ১৩৩৬)পাওনা আদায় ও ক্রয়-বিক্রয়ে সহনশীল হওয়া

সহনশীলতা মানব চরিত্রের একটি মহান গুণ। জীবনের পথ চলায় লেনদেন, ক্রয়-বিক্রয়, দেনা-পাওনা আদায়ে যারা সহনশীলতা ও কোমলতা প্রদর্শন করে, রাসুল (সা.) তাদের জন্য রহমত ও জান্নাত লাভের দোয়া করেছেন। জাবের (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ ওই বান্দার প্রতি রহমত বর্ষণ করেন, যে বান্দা ক্রয়-বিক্রয়ের সময় উদারচিত্ত হয় এবং (ঋণের) পাওনা আদায়ের ক্ষেত্রে সহনশীল হয়।’ (ইবনু মাজাহ, হাদিস : ২২০৩)

অধীন লোকের ওপর কোমল হওয়া

অধীন যেকোনো ব্যক্তির ওপর কোমলতা ও নম্রতা প্রদর্শনের মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দোয়া লাভ করা যায়।

নবী করিম (সা.) তাঁর উম্মতের কোমলতা প্রদর্শনকারী ব্যক্তিদের জন্য দোয়া করে বলেন, ‘হে আল্লাহ! যে ব্যক্তি আমার উম্মতের কোনোরূপ কর্তৃত্ব লাভ করে এবং তাদের প্রতি কঠোরতা আরোপ করে, তুমি তার প্রতি কঠোর হও। আর যে আমার উম্মতের ওপর কোনোরূপ কর্তৃত্ব লাভ করে তাদের প্রতি কোমল আচরণ করে, তুমিও তার প্রতি কোমল ও সদয় হও।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৮২৮)সকালবেলার সময়কে কাজে লাগানো

সকালবেলায় সম্পাদিত যাবতীয় কাজে বরকত নাজিল হয়। রাসুল (সা.) প্রভাতকালে বরকত নাজিলের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হে আল্লাহ! আমার উম্মতের ভোরবেলার মধ্যে তাদের বরকত দান করুন।’ যখন রাসুলুল্লাহ (সা.) কোথাও কোনো ক্ষুদ্র বা বিশাল বাহিনী প্রেরণের সিদ্ধান্ত নিতেন, তখন সকালবেলায়ই পাঠাতেন। (তিরমিজি : ১২১২)

হাদিস মুখস্থ করা ও প্রচার করা

রাসুলুল্লাহ (সা.) দোয়া লাভের সৌভাগ্য হাসিলের উল্লেখযোগ্য উপায় হলো, তাঁর হাদিস মুখস্থ করা এবং তা মানুষের মধ্যে প্রচার করা। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ ওই ব্যক্তিকে মর্যাদামণ্ডিত করেন, যে আমার কথা শুনেছে, তা মুখস্থ করেছে, সংরক্ষণ করেছে এবং অন্যের কাছে তা পৌঁছে দিয়েছে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৬৫৮)

মহান আল্লাহ আমাদের তাঁর প্রিয় নবীর দোয়ায় শামিল করুন।