নীলফামারী : ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের ঝাড়সিংহেশ্বর ও পূর্বছাতনাই মৌজায় প্রায় এক হাজার ৩০০ পরিবার পানিবন্দি। দুপুরের পর থেকে পানি নামতে শুরু করেছে।
বগুড়া : সারিয়াকান্দিতে ৭৫টি গ্রামের ৫০ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উপজেলার কাজলা ইউনিয়নের টেংরাকুড়া চরের একটি রাস্তা ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে।
উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত উপজেলার ছয় হাজার ৬৫০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে প্লাবিত হয়েছে এবং আট হাজারের বেশি কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ৫৮টি ঘর সম্পূর্ণ এবং ১৯০টি ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কাঁচা রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫০টি। এক হাজার ৫০টি নলকূপ পানিতে নিমজ্জিত হয়ে আছে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক বলেন, পানি বৃদ্ধির হার কমে গেছে, তাই দু-এক দিনের মধ্যেই পানি স্থিতিশীল হয়ে কমতে শুরু করবে। ভেঙে যাওয়া রাস্তাটি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
টাঙ্গাইল : সদর, কালিহাতী, ভূঞাপুর ও নাগরপুরে নদীতীরবর্তী এলাকায় দেখা দিয়েছে ভাঙন। ভূঞাপুরে যমুনা নদীর পানি গ্রামে প্রবেশ করায় পাকা সড়ক ভেঙে গেছে। কালিহাতী উপজেলার গোহালিয়াবাড়ী ও দুর্গাপুর এলাকায়ও ভাঙন চলছে। উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের কষ্টাপাড়া ঘোষপাড়া, খানুরবাড়ী ও ভালকুটিয়া এলাকায় দেখা গেছে, দুই দিন ধরে পানিবন্দি মানুষজন মানবেতর জীবন যাপন করছে। যমুনা নদীর পানির তোড়ে গোবিন্দাসী-কষ্টাপাড়া-ভালকুটিয়া রাস্তাটি ভেঙে গেছে। গোবিন্দাসী বাজারের কিছু অংশ তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে উপজেলার গাবসারা, নিকরাইল ও অর্জূনা ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ।
গতকাল সকালে ভূঞাপুরে পানির তীব্র তোড়ে গোবিন্দাসী-ভালকুটিয়া সড়কটি ভেঙে যায়। এতে ভালকুটিয়া, স্থলকাশি, চিতুলিয়াপাড়া ও কষ্টাপাড়া গ্রামের মানুষের যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ভেঙে যাওয়া অংশের পাশেই রয়েছে বিদ্যুতের তিনটি ট্রান্সফরমার। যেকোনো মুহূর্তে সেগুলো ভেঙে পানিতে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সিলেট : জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, ১৩ উপজেলার ৯৮টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত। এসব ইউনিয়নের এক হাজার ১৩৯টি গ্রামের পাঁচ লাখ ৮৮ হাজার ২৮৭ জন মানুষ বন্যাক্রান্ত। ২১৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে গতকাল পর্যন্ত ৯ হাজার ৪৯৩ জন অবস্থান করছিল।
সিরাজগঞ্জ : প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে তলিয়ে যাচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ তাঁত কারখানা, রাস্তাঘাট ও হাটবাজার। পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে সাড়ে চার হাজার হেক্টরেরও বেশি আবাদি জমির ফসল। কাজিপুর, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার কয়েকটি স্থানে দেখা দিয়েছে নদীভাঙন।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান জানান, নদীতীর ও চরাঞ্চলে অবস্থিত জেলার পাঁচটি উপজেলা কাজিপুর, সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুরের ৩৪টি ইউনিয়নের পাঁচ হাজার ৩৬২টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ২৩ হাজার ৮৩৬।
শেরপুর : পাহাড়ি ঢলের তীব্রতা কমলেও নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার ১৬টি গ্রামে ছয় দিন ধরে পানিবন্দি প্রায় ২০ হাজার মানুষ। উজান থেকে আসা পানিতে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ ও দশানী নদীতে পানি বেড়ে কামারের চর ইউনিয়নের ৬ ও ৭ নম্বর চর এবং চরপক্ষীমারি ইউনিয়নে কুলুর চর, বেপারীপাড়া, জঙ্গলদী ও ভাগলদী গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ৬ নম্বর চরের পশ্চিম পাড়া ও মধ্যপাড়া এলাকায় প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকা এবং দশানী নদীর ৭ নম্বর চর বাজার থেকে ব্রহ্মপুত্রের মোহনা পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় তীব্র নদীভাঙন দেখা দিয়েছে।
রাজবাড়ী : প্রতিদিনই বাড়ছে পদ্মার পানি। এতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের বাইরের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে ফসলি ক্ষেত নষ্ট হচ্ছে। রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানায়, পদ্মায় যেভাবে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, আর মাত্র ২৪ সেন্টিমিটার পানি বাড়লে বিপৎসীমা পেরিয়ে যাবে।
রংপুর : গঙ্গাচড়ায় তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে নদীতীরবর্তী পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি। গত কয়েক দিনে তিস্তার পানি চার দফায় বাড়ে, মানুষজন তিন দফায় পানিবন্দি হয়। কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা, চর চিলাখাল, মটুকপুর, নোহালী ইউনিয়নের মিনারবাজার, নোহালীচর, বৈরাতী, মর্নেয়া ইউনিয়নের মর্নেয়া চরের আলফাজটারী, আনছারেরটারী, নরসিং মধ্যপাড়া, আলমারবাজার, গজঘণ্টা ইউনিয়নের আলালচর, ছালাপাকচর, গাওছোয়া, লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের শংকরদহ, পশ্চিম ইচলি, পূর্ব ইচলী, বাগেরহাট, কেল্লারপাড়সহ চরাঞ্চলের প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া কিছু এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভেঙে যাচ্ছে আবাদি জমি ও গাছপালা। রাস্তাঘাট ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তার ব্যবস্থা আছে
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান জানান, দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তার ব্যবস্থা আছে। ১৫ জেলায় এ পর্যন্ত তিন কোটি ১০ লাখ টাকা, আট হাজার ৭০০ টন চাল, ৫৮ হাজার ৫০০ বস্তা শুকনা খাবার, শিশুখাদ্য কেনার জন্য ৬০ লাখ টাকা এবং গোখাদ্য কেনার জন্য ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।