ঢাকা ০৭:১৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শরিয়াভিত্তিক পাঁচটি ব্যাংক আবারও তারল্য ঘাটতিতে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৪৭:২৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন ২০২৪
  • ৩৪ বার

ইসলামি শরিয়াভিত্তিক ৫ ব্যাংক আবারও তারল্য ঘাটতিতে পড়েছে। ব্যাংকগুলো হলো- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিক শেষে ব্যাংকগুলোর তারল্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এক ব্যাংকের ঘাটতি ১ হাজার কোটি টাকারও বেশি। মূলত ধারাবাহিক আমানতে পতন, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি ও ঋণ বিতরণ বেশি হওয়ায় তারল্য সংকট কাটিয়ে উঠতে পারছে না ব্যাংকগুলো। এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ ধারে গত ডিসেম্বর প্রান্তিকে আলোচ্য ব্যাংকগুলো ঘাটতি থেকে উদ্বৃত্ত তারল্যে ফিরেছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০২২ সালের শেষ দিকে এ খাতের কয়েকটি ব্যাংকের অনিয়ম ও ঋণজালিয়াতি নিয়ে গণমাধ্যমে খরব প্রকাশিত হয়। এর পর থেকে ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোর প্রতি মানুষের আস্থা কমছে। অনেক গ্রাহক জমানো অর্থ তুলে নিয়েছে। আবার নতুন আমানত আসাও কমে গেছে। একসঙ্গে ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণও বেড়েছে। এতে তারল্য ব্যাপকহারে কমছে। সূত্রগুলো বলছে,

তীব্র তারল্য সংকটের কারণে অনেক দিন ধরেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধিবদ্ধ নগদ জমা (সিআরআর) এবং বিধিবদ্ধ তারল্য (এসএলআর) সংরক্ষণ করতে পারছে না ব্যাংকগুলো। উপরন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সংরক্ষিত চলতি হিসাবেও বিপুল ঘাটতি নিয়ে চলছে ব্যাংকগুলো। প্রাপ্ত তথ্য বলছে, গত এপ্রিল পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর চলতি হিসাবে ঘাটতির পরিমাণ ছিল প্রায় সাড়ে ২৪ হাজার কোটি টাকা। এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য একাধিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) মুঠোফোনে ফোন দিলেও তারা সাড়া দেননি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, গত মার্চ প্রান্তিক শেষে ইসলামি ধারার ব্যাংকিংয়ে মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা। আগের প্রান্তিকে ডিসেম্বর শেষে আমানত ছিল ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা। তিন মাসের ব্যবধানে ইসলামি ধারার ব্যাংকিংয়ে আমানত কমেছে ৩ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু পূর্ণাঙ্গ ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোর আমানত কমেছে ৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। তবে প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর ইসলামি ব্যাংকিং উইন্ডোজগুলোতে আমানত বেড়েছে ১ হাজার ১১৩ কোটি টাকা। অন্যদিকে গত ডিসেম্বর শেষে দেশের পূর্ণাঙ্গ ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোর ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৪৪ হাজার ৯৭৪ কোটি টাকা, মার্চ প্রান্তিকে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা। ফলে বছরের প্রথম প্রান্তিকে ঋণ বা বিনিয়োগ বেড়েছে ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি। আর আমাতের চেয়ে ঋণ বিতরণ বেশি হয়ে পড়ায় এ খাতের ব্যাংকগুলোর তারল্য ঘাটতি ব্যাপকভাবে বেড়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মার্চ প্রান্তিক শেষে ইসলামি ব্যাংকিংয়ে উদ্বৃত্ত তারল্য কমে হয়েছে ১ হাজার ৫১৮ কোটি টাকা, যা গত ডিসেম্বর প্রান্তিকে ছিল ১১ হাজার ১০৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ মাত্র তিন মাসে এ খাতে উদ্বৃত্ত তারল্যের পরিমাণ কমেছে প্রায় ৯ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা বা ৬ গুণেরও বেশি। অথচ গত বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের তুলনায় ডিসেম্বর প্রান্তিকে এ খাতে উদ্বৃত্ত তারল্য বেড়েছিল প্রায় ৩ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। মূলত আর্থিক অবস্থা ভালো দেখাতে ২০২৩ সালের শেষ কার্যদিবসে তারল্য সংকটে পড়া শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ইসলামিসহ মোট ৭টি বেসসরকারি ব্যাংকে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার বিশেষ ধার দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। আর তাতেই গত বছরের শেষ ত্রৈমাসিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) সংকট থেকে উদ্বৃত্ত তারল্যে ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলো। এর প্রভাবে পুরো ইসলামি ব্যাংকিংয়ে উদ্বৃত্ত তারল্যে বড় উল্লস্ফন ঘটেছিল, যেখানে তার আগের প্রান্তিকে উদ্বৃত্ত তারল্য নিম্নমুখী ছিল। এই পাঁচ ব্যাংককে ২০২২ সালেও একই পন্থায় বড় অঙ্কের অর্থ ধার দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কোন ব্যাংকে কত ঘাটতি : গত মার্চ শেষে সর্বোচ্চ ১ হাজার কোটি টাকারও বেশি ঘাটতি ছিল সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের। যেখানে গত ডিসেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকটির উদ্বৃত্ত তারল্য ছিল দেড়শ কোটি টাকার মতো। তবে আর আগের প্রান্তিকেও ব্যাংকটির ঘাটতি ১ হাজার কোটি টাকার বেশি ছিল। এ সময়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রায় ৭০০ কোটি টাকা ঘাটতি হয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের। গত ডিসেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকটির উদ্বৃত্ত তারল্যে ছিল প্রায় ১২০০ কোটি টাকা। তার আগের প্রান্তিকে ব্যাংকটির ঘাটতি ছিল প্রায় ৬৫৮ কোটি টাকা। এই সময়ে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের তারল্য ঘাটতি দাঁড়ায় ৪০০ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকটির উদ্বৃত্ত ছিল ৩০০ কোটি টাকার মতো। তার আগের প্রান্তিকে ব্যাংকটির ঘাটতি ছিল প্রায় ৮২৬ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর প্রান্তিকে ইউনিয়ন ব্যাংকের উদ্বৃত্ত তারল্য ছিল প্রায় ২০০ কোটি টাকা। সেখানে চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিকে ব্যাংকটি অর্ধশত কোটি টাকার কম তারল্য ঘাটতিতে পড়েছে। তবে গত বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকটির তারল্য ঘাটতি ছিল আরও বেশি, প্রায় ৪৮৩ কোটি টাকা। গত মার্চ প্রান্তিক শেষে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের তারল্য ঘাটতি ছিল প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। যেখানে আগের প্রান্তিকে উদ্বৃত্ত ছিল প্রায় ৫০ কোটি টাকা। তবে গত বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকটির ঘাটতি ছিল প্রায় ৪৬৫ কোটি টাকা।

এই ব্যাংকগুলোর বাইরে গত মার্চ প্রান্তিকে নতুন করে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার তারল্য ঘাটতিতে পড়েছে। সম্প্রতি ব্যাংকটি আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারেনি বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়।

উদ্বৃত্ত তারল্য আছে কয়েকটি ব্যাংকের : গত মার্চ প্রান্তিক শেষে সর্বোচ্চ উদ্বৃত্ত তারল্য রয়েছে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের। এ সময়ে ব্যাংকটির উদ্বৃত্ত তারল্য ছিল প্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর প্রান্তিকেও ব্যাংকটির বড় ধরনের উদ্বৃত্ত তারল্য ছিল, পরিমাণ প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। গত মার্চ প্রান্তিক শেষে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের উদ্বৃত্ত তারল্য প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। আগের প্রান্তিকেও ব্যাংকটির ৭০০ কোটি টাকার বেশি উদ্বৃত্ত তারল্য ছিল। এ প্রান্তিক শেষে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের উদ্বৃত্ত তারল্য কমে ৫০০ কোটি টাকার নিচে নেমেছে, আগের প্রান্তিকে ব্যাংকটির প্রায় ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকার মতো উদ্বৃত্ত তারল্য ছিল। গত মার্চ প্রান্তিকে আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের উদ্বৃত্ত তারল্য দাঁড়ায় প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা, যা আগের প্রান্তিকে ছিল দেড়শ কোটি টাকার মতো। এর বাইরে গত মার্চ প্রান্তিকে প্রচলিত ধারার ইসলামি ব্যাংকিং উইন্ডো ও ইসলামি ব্যাংকিং শাখায় এক হাজার কোটি টাকার বেশি উদ্বৃত্ত তারল্য ছিল।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

শরিয়াভিত্তিক পাঁচটি ব্যাংক আবারও তারল্য ঘাটতিতে

আপডেট টাইম : ১০:৪৭:২৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন ২০২৪

ইসলামি শরিয়াভিত্তিক ৫ ব্যাংক আবারও তারল্য ঘাটতিতে পড়েছে। ব্যাংকগুলো হলো- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিক শেষে ব্যাংকগুলোর তারল্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এক ব্যাংকের ঘাটতি ১ হাজার কোটি টাকারও বেশি। মূলত ধারাবাহিক আমানতে পতন, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি ও ঋণ বিতরণ বেশি হওয়ায় তারল্য সংকট কাটিয়ে উঠতে পারছে না ব্যাংকগুলো। এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ ধারে গত ডিসেম্বর প্রান্তিকে আলোচ্য ব্যাংকগুলো ঘাটতি থেকে উদ্বৃত্ত তারল্যে ফিরেছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০২২ সালের শেষ দিকে এ খাতের কয়েকটি ব্যাংকের অনিয়ম ও ঋণজালিয়াতি নিয়ে গণমাধ্যমে খরব প্রকাশিত হয়। এর পর থেকে ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোর প্রতি মানুষের আস্থা কমছে। অনেক গ্রাহক জমানো অর্থ তুলে নিয়েছে। আবার নতুন আমানত আসাও কমে গেছে। একসঙ্গে ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণও বেড়েছে। এতে তারল্য ব্যাপকহারে কমছে। সূত্রগুলো বলছে,

তীব্র তারল্য সংকটের কারণে অনেক দিন ধরেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধিবদ্ধ নগদ জমা (সিআরআর) এবং বিধিবদ্ধ তারল্য (এসএলআর) সংরক্ষণ করতে পারছে না ব্যাংকগুলো। উপরন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সংরক্ষিত চলতি হিসাবেও বিপুল ঘাটতি নিয়ে চলছে ব্যাংকগুলো। প্রাপ্ত তথ্য বলছে, গত এপ্রিল পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর চলতি হিসাবে ঘাটতির পরিমাণ ছিল প্রায় সাড়ে ২৪ হাজার কোটি টাকা। এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য একাধিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) মুঠোফোনে ফোন দিলেও তারা সাড়া দেননি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, গত মার্চ প্রান্তিক শেষে ইসলামি ধারার ব্যাংকিংয়ে মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা। আগের প্রান্তিকে ডিসেম্বর শেষে আমানত ছিল ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা। তিন মাসের ব্যবধানে ইসলামি ধারার ব্যাংকিংয়ে আমানত কমেছে ৩ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু পূর্ণাঙ্গ ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোর আমানত কমেছে ৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। তবে প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর ইসলামি ব্যাংকিং উইন্ডোজগুলোতে আমানত বেড়েছে ১ হাজার ১১৩ কোটি টাকা। অন্যদিকে গত ডিসেম্বর শেষে দেশের পূর্ণাঙ্গ ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোর ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৪৪ হাজার ৯৭৪ কোটি টাকা, মার্চ প্রান্তিকে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা। ফলে বছরের প্রথম প্রান্তিকে ঋণ বা বিনিয়োগ বেড়েছে ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি। আর আমাতের চেয়ে ঋণ বিতরণ বেশি হয়ে পড়ায় এ খাতের ব্যাংকগুলোর তারল্য ঘাটতি ব্যাপকভাবে বেড়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মার্চ প্রান্তিক শেষে ইসলামি ব্যাংকিংয়ে উদ্বৃত্ত তারল্য কমে হয়েছে ১ হাজার ৫১৮ কোটি টাকা, যা গত ডিসেম্বর প্রান্তিকে ছিল ১১ হাজার ১০৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ মাত্র তিন মাসে এ খাতে উদ্বৃত্ত তারল্যের পরিমাণ কমেছে প্রায় ৯ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা বা ৬ গুণেরও বেশি। অথচ গত বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের তুলনায় ডিসেম্বর প্রান্তিকে এ খাতে উদ্বৃত্ত তারল্য বেড়েছিল প্রায় ৩ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। মূলত আর্থিক অবস্থা ভালো দেখাতে ২০২৩ সালের শেষ কার্যদিবসে তারল্য সংকটে পড়া শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ইসলামিসহ মোট ৭টি বেসসরকারি ব্যাংকে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার বিশেষ ধার দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। আর তাতেই গত বছরের শেষ ত্রৈমাসিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) সংকট থেকে উদ্বৃত্ত তারল্যে ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলো। এর প্রভাবে পুরো ইসলামি ব্যাংকিংয়ে উদ্বৃত্ত তারল্যে বড় উল্লস্ফন ঘটেছিল, যেখানে তার আগের প্রান্তিকে উদ্বৃত্ত তারল্য নিম্নমুখী ছিল। এই পাঁচ ব্যাংককে ২০২২ সালেও একই পন্থায় বড় অঙ্কের অর্থ ধার দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কোন ব্যাংকে কত ঘাটতি : গত মার্চ শেষে সর্বোচ্চ ১ হাজার কোটি টাকারও বেশি ঘাটতি ছিল সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের। যেখানে গত ডিসেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকটির উদ্বৃত্ত তারল্য ছিল দেড়শ কোটি টাকার মতো। তবে আর আগের প্রান্তিকেও ব্যাংকটির ঘাটতি ১ হাজার কোটি টাকার বেশি ছিল। এ সময়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রায় ৭০০ কোটি টাকা ঘাটতি হয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের। গত ডিসেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকটির উদ্বৃত্ত তারল্যে ছিল প্রায় ১২০০ কোটি টাকা। তার আগের প্রান্তিকে ব্যাংকটির ঘাটতি ছিল প্রায় ৬৫৮ কোটি টাকা। এই সময়ে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের তারল্য ঘাটতি দাঁড়ায় ৪০০ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকটির উদ্বৃত্ত ছিল ৩০০ কোটি টাকার মতো। তার আগের প্রান্তিকে ব্যাংকটির ঘাটতি ছিল প্রায় ৮২৬ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর প্রান্তিকে ইউনিয়ন ব্যাংকের উদ্বৃত্ত তারল্য ছিল প্রায় ২০০ কোটি টাকা। সেখানে চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিকে ব্যাংকটি অর্ধশত কোটি টাকার কম তারল্য ঘাটতিতে পড়েছে। তবে গত বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকটির তারল্য ঘাটতি ছিল আরও বেশি, প্রায় ৪৮৩ কোটি টাকা। গত মার্চ প্রান্তিক শেষে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের তারল্য ঘাটতি ছিল প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। যেখানে আগের প্রান্তিকে উদ্বৃত্ত ছিল প্রায় ৫০ কোটি টাকা। তবে গত বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকটির ঘাটতি ছিল প্রায় ৪৬৫ কোটি টাকা।

এই ব্যাংকগুলোর বাইরে গত মার্চ প্রান্তিকে নতুন করে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার তারল্য ঘাটতিতে পড়েছে। সম্প্রতি ব্যাংকটি আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারেনি বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়।

উদ্বৃত্ত তারল্য আছে কয়েকটি ব্যাংকের : গত মার্চ প্রান্তিক শেষে সর্বোচ্চ উদ্বৃত্ত তারল্য রয়েছে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের। এ সময়ে ব্যাংকটির উদ্বৃত্ত তারল্য ছিল প্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর প্রান্তিকেও ব্যাংকটির বড় ধরনের উদ্বৃত্ত তারল্য ছিল, পরিমাণ প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। গত মার্চ প্রান্তিক শেষে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের উদ্বৃত্ত তারল্য প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। আগের প্রান্তিকেও ব্যাংকটির ৭০০ কোটি টাকার বেশি উদ্বৃত্ত তারল্য ছিল। এ প্রান্তিক শেষে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের উদ্বৃত্ত তারল্য কমে ৫০০ কোটি টাকার নিচে নেমেছে, আগের প্রান্তিকে ব্যাংকটির প্রায় ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকার মতো উদ্বৃত্ত তারল্য ছিল। গত মার্চ প্রান্তিকে আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের উদ্বৃত্ত তারল্য দাঁড়ায় প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা, যা আগের প্রান্তিকে ছিল দেড়শ কোটি টাকার মতো। এর বাইরে গত মার্চ প্রান্তিকে প্রচলিত ধারার ইসলামি ব্যাংকিং উইন্ডো ও ইসলামি ব্যাংকিং শাখায় এক হাজার কোটি টাকার বেশি উদ্বৃত্ত তারল্য ছিল।