ঢাকা ০২:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বরেন্দ্র অঞ্চলে আম চাষ করে অনেকেই স্বাবলম্বী

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:৪৪:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ জুন ২০১৫
  • ৩৯৫ বার

অনাবাদি জমিতে আম চাষ করে দারুণ সাফল্য পেয়েছেন নওগাঁর বরেন্দ্র এলাকার কৃষকরা। জেলার ৪টি উপজেলায় আম বাগান করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছে অনেক অস্বচ্ছল পরিবার। বরেন্দ্র এলাকার শক্ত এঁটেল মাটি আমচাষের উপযোগী হওয়ার ফলে এখানে সুস্বাদু আম ফলনের এবং বিশাল বাজার গড়ে উঠার উজ্জল ভবিষ্যত দেখছেন স্থানীয় কৃষি বিশেষজ্ঞগণ।

 

সমতল থেকে প্রায় ৩/৪ ফুট উঁচু হওয়ায় নওগাঁ জেলার ৪টি উপজেলা সাপাহার, পোরশা, নিয়ামতপুর ও পত্নীতলাকে বরেন্দ্র এলাকা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ভূমি অসমতল, মাটি শক্ত এঁটেল এবং সেচ সংকট থাকার ফলে এ এলাকার হাজার হাজার একর জমি গত ৫/৬ বছর আগেও স্থানীয় কৃষকের কোন কাজে আসতো না।

 

এ সব জমির মধ্য কিছু সেচ সুবিধার আওতায় আনা হলেও বেশির ভাগ ছিল পরিত্যক্ত। কিন্তু গত ৬/৭ বছর আগে বানিজ্যিক আকারে এখানে কিছু ব্যাক্তি পরিক্ষামূলক অনাবাদি এসব জমিতে বাগান তৈরি করে আম্রপালি জাতের আম চাষ শুরু করে। মাত্র দেড়-দু’বছরের মধ্যে এসব আমগাছ থেকে আম আসতে শুরু করে।

 

সাপাহার উপজেলার ফোরকান্দা গ্রামের আম চাষি আলাউদ্দিন জানান, ৬ বছর আগে তার বসত সংলগ্ন ৩ বিঘা পরিমাণ জমিতে তিনি আমের বাগান গড়ে তোলেন। চলতি বছর আবহাওয়া ভাল থাকায় তার এ বাগানে আমের ভাল ফলন হয়েছে। বর্তমান তার বাগান সাড়ে ৪ লাখ টাকা দাম হাঁকছে বেপারীরা। কিন্তু তিনি সাড়ে ৫ লাখ টাকার নিচে বিকাতে চান না। এভাবে আরো বাগান গড়ে সফল হয়েছেন পোরশা উপজেলার প্রায় ৫০ জন বেকার যুবক।

 

পোরশা উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘আম চাষের বিপুল সম্ভাবনার কথা ইতিমধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পত্র আকারে দেওয়া হয়েছে। এখানে আম সংরক্ষণ কেন্দ্র ও আমের নায্য বাজার নিশ্চিত করার জন্য একটি বিপণন কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।

 

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও আম গবেষক ড. আবুল হায়াৎ মো: ইসমাইল হোসেন জানান, বরেন্দ্র এলাকার মাটিতে যে পরিমাণ শুষ্কতা রয়েছে সে উপাদান আম মিষ্টি হওয়ার জন্য সহায়ক। ফলে এখানে আমের বিপুল বাজার সৃষ্টি হওয়ার সুযোগ রয়েছে।

 

স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, মাটির গুণ অনুযায়ী এখানকার আম চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমের মত সুস্বাদু হিসাবে বাজারে ব্যাপক কদর দেখা দেয় ।

 

পোরশা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইফতেখারুল উদ্দিন বলেন, ‘আম চাষের উজ্জল সম্ভাবনা লক্ষ্য করে এখানে বাণিজ্যিকভাবে আম চাষে উদ্বুদ্ধ করতে কৃষক পর্যায়ে বিভিন্ন সুযোগ বাড়ানোর জন্য বেশ কিছু প্রকল্প চাওয়া হয়েছে। গত ক’বছর থেকেই এখানে বাণিজ্যিকভাবে আম চাষে এগিয়ে এসেছে এলাকার অসংখ্য চাষি। চলতি বছর অনুকুল আবহাওয়ার ফলে বরেন্দ্র এলাকায় আমের বাগানগুলোতে ভালো ফলন হয়েছে।’

 

জেলার সাপাহার ও পোরশার আড়তে লেংড়া, খিরসাপাত ও গোপাল ভোগ জাতের আম মন প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৪শ থেকে ১৫শ টাকায়।

 

দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বেপারী এসে এসব বাগান থেকে আম কিনছে। মাত্র এক বিঘা পরিমাণ একটি বাগান থেকে দেড় থেকে দু’লাখ টাকা আয় করছে এখানকার আম চাষিরা। পোরশা উপজেলা কৃষি অফিসার মাহবুবুল আলম জানান, শুধু মাত্র পোরশা উপজেলায় এবার প্রায় ৪০ কোটি টাকার আম বিক্রি হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

বরেন্দ্র অঞ্চলে আম চাষ করে অনেকেই স্বাবলম্বী

আপডেট টাইম : ০৬:৪৪:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ জুন ২০১৫

অনাবাদি জমিতে আম চাষ করে দারুণ সাফল্য পেয়েছেন নওগাঁর বরেন্দ্র এলাকার কৃষকরা। জেলার ৪টি উপজেলায় আম বাগান করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছে অনেক অস্বচ্ছল পরিবার। বরেন্দ্র এলাকার শক্ত এঁটেল মাটি আমচাষের উপযোগী হওয়ার ফলে এখানে সুস্বাদু আম ফলনের এবং বিশাল বাজার গড়ে উঠার উজ্জল ভবিষ্যত দেখছেন স্থানীয় কৃষি বিশেষজ্ঞগণ।

 

সমতল থেকে প্রায় ৩/৪ ফুট উঁচু হওয়ায় নওগাঁ জেলার ৪টি উপজেলা সাপাহার, পোরশা, নিয়ামতপুর ও পত্নীতলাকে বরেন্দ্র এলাকা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ভূমি অসমতল, মাটি শক্ত এঁটেল এবং সেচ সংকট থাকার ফলে এ এলাকার হাজার হাজার একর জমি গত ৫/৬ বছর আগেও স্থানীয় কৃষকের কোন কাজে আসতো না।

 

এ সব জমির মধ্য কিছু সেচ সুবিধার আওতায় আনা হলেও বেশির ভাগ ছিল পরিত্যক্ত। কিন্তু গত ৬/৭ বছর আগে বানিজ্যিক আকারে এখানে কিছু ব্যাক্তি পরিক্ষামূলক অনাবাদি এসব জমিতে বাগান তৈরি করে আম্রপালি জাতের আম চাষ শুরু করে। মাত্র দেড়-দু’বছরের মধ্যে এসব আমগাছ থেকে আম আসতে শুরু করে।

 

সাপাহার উপজেলার ফোরকান্দা গ্রামের আম চাষি আলাউদ্দিন জানান, ৬ বছর আগে তার বসত সংলগ্ন ৩ বিঘা পরিমাণ জমিতে তিনি আমের বাগান গড়ে তোলেন। চলতি বছর আবহাওয়া ভাল থাকায় তার এ বাগানে আমের ভাল ফলন হয়েছে। বর্তমান তার বাগান সাড়ে ৪ লাখ টাকা দাম হাঁকছে বেপারীরা। কিন্তু তিনি সাড়ে ৫ লাখ টাকার নিচে বিকাতে চান না। এভাবে আরো বাগান গড়ে সফল হয়েছেন পোরশা উপজেলার প্রায় ৫০ জন বেকার যুবক।

 

পোরশা উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘আম চাষের বিপুল সম্ভাবনার কথা ইতিমধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পত্র আকারে দেওয়া হয়েছে। এখানে আম সংরক্ষণ কেন্দ্র ও আমের নায্য বাজার নিশ্চিত করার জন্য একটি বিপণন কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।

 

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও আম গবেষক ড. আবুল হায়াৎ মো: ইসমাইল হোসেন জানান, বরেন্দ্র এলাকার মাটিতে যে পরিমাণ শুষ্কতা রয়েছে সে উপাদান আম মিষ্টি হওয়ার জন্য সহায়ক। ফলে এখানে আমের বিপুল বাজার সৃষ্টি হওয়ার সুযোগ রয়েছে।

 

স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, মাটির গুণ অনুযায়ী এখানকার আম চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমের মত সুস্বাদু হিসাবে বাজারে ব্যাপক কদর দেখা দেয় ।

 

পোরশা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইফতেখারুল উদ্দিন বলেন, ‘আম চাষের উজ্জল সম্ভাবনা লক্ষ্য করে এখানে বাণিজ্যিকভাবে আম চাষে উদ্বুদ্ধ করতে কৃষক পর্যায়ে বিভিন্ন সুযোগ বাড়ানোর জন্য বেশ কিছু প্রকল্প চাওয়া হয়েছে। গত ক’বছর থেকেই এখানে বাণিজ্যিকভাবে আম চাষে এগিয়ে এসেছে এলাকার অসংখ্য চাষি। চলতি বছর অনুকুল আবহাওয়ার ফলে বরেন্দ্র এলাকায় আমের বাগানগুলোতে ভালো ফলন হয়েছে।’

 

জেলার সাপাহার ও পোরশার আড়তে লেংড়া, খিরসাপাত ও গোপাল ভোগ জাতের আম মন প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৪শ থেকে ১৫শ টাকায়।

 

দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বেপারী এসে এসব বাগান থেকে আম কিনছে। মাত্র এক বিঘা পরিমাণ একটি বাগান থেকে দেড় থেকে দু’লাখ টাকা আয় করছে এখানকার আম চাষিরা। পোরশা উপজেলা কৃষি অফিসার মাহবুবুল আলম জানান, শুধু মাত্র পোরশা উপজেলায় এবার প্রায় ৪০ কোটি টাকার আম বিক্রি হবে।