ঢাকা ০৬:১০ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৬ জানুয়ারী ২০২৫, ২৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মহানবী (সা.) যাদের সফল বলেছেন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৪৫:৫৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ জুন ২০২৪
  • ৪১ বার
ইসলাম মানুষের পার্থিব ও অপার্থিব জীবনের মধ্যে সেতুবন্ধ রচনা করেছে। সাফল্যের মাপকাঠি হিসেবে উভয় জীবনের নিরাপত্তা ও মুক্তির কথা বলেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সফল সেই ব্যক্তি, যে ইসলাম গ্রহণ করেছে, পর্যাপ্ত জীবিকাপ্রাপ্ত হয়েছে এবং আল্লাহ তাকে (পার্থিব জীবনে) যা দান করেছেন তাতে সন্তুষ্ট করেছেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১০৫৪)

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘সুসংবাদ সে ব্যক্তির জন্য ইসলামের জন্য সুপথপ্রাপ্ত হয়েছে, তার ছিল পর্যাপ্ত জীবিকা এবং সে তাতে সন্তুষ্ট ছিল।

’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৩৪৯)নিরাপত্তা ও সাফল্যের তিন স্তম্ভ

উল্লিখিত হাদিসদ্বয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) মানবজীবনে সাফল্যের তিনটি স্তম্ভ উল্লেখ করেছেন। তা হলো, ইসলাম গ্রহণ, জীবন-জীবিকার স্বাচ্ছন্দ্য ও আল্লাহ যা দিয়েছেন তাতে সন্তুষ্ট থাকা।

এক. ঈমান ও ইসলামের সৌভাগ্য : রাসুলের দৃষ্টিতে সাফল্যের প্রথম স্তম্ভ ঈমান ও ইসলামের সৌভাগ্য লাভ করা। ঈমানের অর্থ আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনিত দ্বিনের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা।

আর ইসলাম হলো তা জীবনে বাস্তবায়ন করা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে, তাদের জন্য সুসংবাদ ও শুভ পরিণাম।’ (সুরা রাদ, আয়াত : ২৯)দুই. জীবন-জীবিকার স্বাচ্ছন্দ্য : সচ্ছল ও নিশ্চিন্ত জীবন আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ। ইসলাম পার্থিব জীবনে বিলাসিতা পরিহার এবং উপুড় হয়ে অর্থ উপার্জন করতে নিষেধ করলেও প্রয়োজন পূরণ হয় এতটুকু জীবিকা উপার্জনে উদ্বুদ্ধ করেছে।

যেন জীবন-জীবিকার দুর্ভাবনা তাকে আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ হতে এবং অন্যায় কাজে লিপ্ত হতে বাধ্য না করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় দুজন ফেরেশতা আগমন করেন এবং তাঁরা ঘোষণা দেন, যা মানুষ ও জিন ছাড়া পৃথিবীর সব সৃষ্টি শোনে। তাঁরা বলেন, হে মানুষ, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের দিকে এসো। কেননা, যা পরিমাণে অল্প কিন্তু প্রয়োজন পূরণে যথেষ্ট তা উত্তম তা থেকে, যা পরিমাণে বেশি এবং আল্লাহ থেকে বিমুখ করে।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২১৭২১)রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর পরিবারের জন্য দোয়া করেন, ‘হে আল্লাহ, মুহাম্মদের পরিবারকে জীবিকা দান করুন।

’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪৬০)তিন. সন্তুষ্টি ও পরিতৃপ্তি : আল্লাহ পার্থিব জীবনের উপায়-উপকরণ যতটুকু দান করেছেন, তাতে সন্তুষ্ট ও পরিতৃপ্ত হতে পারা জীবনের অন্যতম সাফল্য। কেননা অতৃপ্তি মানুষের ভেতর সীমাহীন ক্ষুধা ও আকাঙ্ক্ষা তৈরি করে। যা মানুষকে অসৎ পন্থা অবলম্বনে উদ্বুদ্ধ করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) আল্লাহ প্রদত্ত জীবন-জীবিকায় সন্তুষ্টি প্রার্থনা করতেন। তিনি দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ, আপনি আমাকে যে জীবিকা দান করেছেন তাতে সন্তুষ্ট থাকার তাওফিক দিন, তার ভেতর আমার জন্য বরকত দিন এবং আমার জন্য প্রত্যেক অনুপস্থিত কল্যাণ সংরক্ষণ করুন।’ (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৬৮৬)

আল্লাহর আনুগত্যে জীবনের নিরাপত্তা

আল্লাহর নিরাপত্তার মধ্যেই রয়েছে মানবজীবনের শান্তি ও নিরাপত্তা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা সাড়া দাও আল্লাহ ও রাসুলের জন্য, যখন তাঁরা তোমাদের আহবান করেন যেন আল্লাহ তোমাদের জীবন দান করেন।’ (সুরা আনফাল, আয়াত : ২৪)

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বেশির ভাগ তাফসিরবিশারদ বলেন, জীবন দান দ্বারা ঈমান ও ইসলাম উদ্দেশ্য। কেননা তার মাধ্যমে মানুষ উভয় জগতের শান্তি, নিরাপত্তা ও সম্মান লাভ করে। আল্লামা ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই কল্যাণকর জীবন অর্জিত হয় আল্লাহ ও রাসুলের আহ্বানে সাড়া দেওয়ার মাধ্যমে। যে তাঁদের আহ্বানে সাড়া দিতে পারেনি তার জীবন কোনো জীবনই নয়। তার জীবন হয় পশুর মতো (উদ্দেশ্যহীন ও কল্যাণশূন্য)।’ (আজ-জাউয়ুল মুনির আলাত-তাফসির : ৩/২৭৭)

আল্লাহ সবাইকে উভয় জগতে  নিরাপত্তা ও সাফল্যমণ্ডিত করুন। আমিন

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

মহানবী (সা.) যাদের সফল বলেছেন

আপডেট টাইম : ১১:৪৫:৫৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ জুন ২০২৪
ইসলাম মানুষের পার্থিব ও অপার্থিব জীবনের মধ্যে সেতুবন্ধ রচনা করেছে। সাফল্যের মাপকাঠি হিসেবে উভয় জীবনের নিরাপত্তা ও মুক্তির কথা বলেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সফল সেই ব্যক্তি, যে ইসলাম গ্রহণ করেছে, পর্যাপ্ত জীবিকাপ্রাপ্ত হয়েছে এবং আল্লাহ তাকে (পার্থিব জীবনে) যা দান করেছেন তাতে সন্তুষ্ট করেছেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১০৫৪)

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘সুসংবাদ সে ব্যক্তির জন্য ইসলামের জন্য সুপথপ্রাপ্ত হয়েছে, তার ছিল পর্যাপ্ত জীবিকা এবং সে তাতে সন্তুষ্ট ছিল।

’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৩৪৯)নিরাপত্তা ও সাফল্যের তিন স্তম্ভ

উল্লিখিত হাদিসদ্বয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) মানবজীবনে সাফল্যের তিনটি স্তম্ভ উল্লেখ করেছেন। তা হলো, ইসলাম গ্রহণ, জীবন-জীবিকার স্বাচ্ছন্দ্য ও আল্লাহ যা দিয়েছেন তাতে সন্তুষ্ট থাকা।

এক. ঈমান ও ইসলামের সৌভাগ্য : রাসুলের দৃষ্টিতে সাফল্যের প্রথম স্তম্ভ ঈমান ও ইসলামের সৌভাগ্য লাভ করা। ঈমানের অর্থ আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনিত দ্বিনের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা।

আর ইসলাম হলো তা জীবনে বাস্তবায়ন করা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে, তাদের জন্য সুসংবাদ ও শুভ পরিণাম।’ (সুরা রাদ, আয়াত : ২৯)দুই. জীবন-জীবিকার স্বাচ্ছন্দ্য : সচ্ছল ও নিশ্চিন্ত জীবন আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ। ইসলাম পার্থিব জীবনে বিলাসিতা পরিহার এবং উপুড় হয়ে অর্থ উপার্জন করতে নিষেধ করলেও প্রয়োজন পূরণ হয় এতটুকু জীবিকা উপার্জনে উদ্বুদ্ধ করেছে।

যেন জীবন-জীবিকার দুর্ভাবনা তাকে আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ হতে এবং অন্যায় কাজে লিপ্ত হতে বাধ্য না করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় দুজন ফেরেশতা আগমন করেন এবং তাঁরা ঘোষণা দেন, যা মানুষ ও জিন ছাড়া পৃথিবীর সব সৃষ্টি শোনে। তাঁরা বলেন, হে মানুষ, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের দিকে এসো। কেননা, যা পরিমাণে অল্প কিন্তু প্রয়োজন পূরণে যথেষ্ট তা উত্তম তা থেকে, যা পরিমাণে বেশি এবং আল্লাহ থেকে বিমুখ করে।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২১৭২১)রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর পরিবারের জন্য দোয়া করেন, ‘হে আল্লাহ, মুহাম্মদের পরিবারকে জীবিকা দান করুন।

’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪৬০)তিন. সন্তুষ্টি ও পরিতৃপ্তি : আল্লাহ পার্থিব জীবনের উপায়-উপকরণ যতটুকু দান করেছেন, তাতে সন্তুষ্ট ও পরিতৃপ্ত হতে পারা জীবনের অন্যতম সাফল্য। কেননা অতৃপ্তি মানুষের ভেতর সীমাহীন ক্ষুধা ও আকাঙ্ক্ষা তৈরি করে। যা মানুষকে অসৎ পন্থা অবলম্বনে উদ্বুদ্ধ করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) আল্লাহ প্রদত্ত জীবন-জীবিকায় সন্তুষ্টি প্রার্থনা করতেন। তিনি দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ, আপনি আমাকে যে জীবিকা দান করেছেন তাতে সন্তুষ্ট থাকার তাওফিক দিন, তার ভেতর আমার জন্য বরকত দিন এবং আমার জন্য প্রত্যেক অনুপস্থিত কল্যাণ সংরক্ষণ করুন।’ (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৬৮৬)

আল্লাহর আনুগত্যে জীবনের নিরাপত্তা

আল্লাহর নিরাপত্তার মধ্যেই রয়েছে মানবজীবনের শান্তি ও নিরাপত্তা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা সাড়া দাও আল্লাহ ও রাসুলের জন্য, যখন তাঁরা তোমাদের আহবান করেন যেন আল্লাহ তোমাদের জীবন দান করেন।’ (সুরা আনফাল, আয়াত : ২৪)

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বেশির ভাগ তাফসিরবিশারদ বলেন, জীবন দান দ্বারা ঈমান ও ইসলাম উদ্দেশ্য। কেননা তার মাধ্যমে মানুষ উভয় জগতের শান্তি, নিরাপত্তা ও সম্মান লাভ করে। আল্লামা ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই কল্যাণকর জীবন অর্জিত হয় আল্লাহ ও রাসুলের আহ্বানে সাড়া দেওয়ার মাধ্যমে। যে তাঁদের আহ্বানে সাড়া দিতে পারেনি তার জীবন কোনো জীবনই নয়। তার জীবন হয় পশুর মতো (উদ্দেশ্যহীন ও কল্যাণশূন্য)।’ (আজ-জাউয়ুল মুনির আলাত-তাফসির : ৩/২৭৭)

আল্লাহ সবাইকে উভয় জগতে  নিরাপত্তা ও সাফল্যমণ্ডিত করুন। আমিন