আজ ২৫ মে বিশ্ব থাইরয়েড দিবস। প্রতিবছর ২৫ মে থেকে ৩১ মে বিশ্বজুড়ে পালিত হয় আন্তর্জাতিক থাইরয়েড সপ্তাহ হিসেবে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়Ñ ‘থাইরয়েড রোগ হলো একটি অসংক্রামক রোগ।’ এ উপলক্ষে জনসচেতনতা বাড়াতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে সেমিনার, শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে।
অনেকের চোখে থাইরয়েডজনিত সমস্যা হয়। একে বলা হয় থাইরয়েড আই ডিজিজ, বিশেষ করে হাইপার-থাইরযেড হলে চোখও আক্রান্ত হতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে চোখে খচখচ করতে পারে, চোখ লাল হতে পারে, পানি পড়তে পারে, ডিলপোপিয়া বা ডবল ভিশন হতে পারে। একটা পর্যায়ে প্রোপ্টোসিস বা চোখ বড় দেখা যেতে পারে। মনে হবে, চোখ কোটর থেকে বের হযে আসছে। একে বলে এক্সোপথালমস বা প্রোপটোসিস। এ পর্যায়ে ভালো চিকিৎসা না হলে চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে, চোখ তুলে ফেলার প্রয়োজন হতে পারে। দেখা দিতে পারে দুচোখেই সমস্যা। এটা অটো-ইমিউন রোগ, যা অনিয়ন্ত্রিতভাবে থাইরয়েড হরমোন তৈরি করে। রক্তে থাইরযেড হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে এমন হয়। পুরুষের চেয়ে নারী এ রোগে বেশি ভুগে থাকে। সাধারণত ৪০-৫০ বছর বয়সে এ রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়।
সাধারণ লক্ষণ : হরমোন জটিলতায় সারা শরীরে যে সমস্যা দেখা দেয় তা হলো, ওজন কমে যাওয়া। ঠিকমতো খাবার খাওয়ার পরও এমন হতে পারে। শরীর বেশি ঘামে। হাতের তালু প্রায়ই ভিজে যায়। গরম অসহ্য লাগে। নার্ভাসনেস, খিটমিটে স্বভাব, দুর্বলতা ও ক্লান্তি লাগে। কখনো কখনো বুক ধড়ফড় করে। পালস রেট বেড়ে যায়।
চোখের লক্ষণ : চোখের প্রেসার বেড়ে যায়। একে বলে সেকেন্ডারি গ্লুকোমা। চোখের দুই পাতা এক করা যায় না। এ জন্য এক্সপোজার কেরাটোপ্যাথি হয়।
যেভাবে বুঝবেন : হরমোন এনালাইসিস, টিএসএইচ, থাইরয়েড হরমোন টি৩ ও টি৪, থাইরয়েড বাইন্ডিং গ্লোবিউলিন ইতাদি পরিমাপ করে থাইরয়েড অবস্থায় বোঝা যায়। চোখের সার্বিক অবস্থা বুঝতে চোখের কোটরের আল্ট্রাসনোগ্রাম, সিটি স্ক্যান, এমআরআই করা যেতে পারে। চোখের প্রেসার ও ভিজুয়্যাল ফিল্ড করতে হতে পারে।
চিকিৎসা : থাইরয়েড হরমোনের চিকিৎসার জন্য মেডিসিন বা হরমোন বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে। স্বল্পমাত্রার প্রোপ্টোসিসÑ আর্টিফিসিয়াল টিয়ারের সঙ্গে প্রয়োজনে হালকা স্টেরয়েড ড্রপ ব্যবহার করা যায়। মাঝারি ধরনের প্রোপ্টোসিসÑ ঘুমানোর সময় বা অন্য সময় চোখ পুরোপুরি বন্ধ না হলে কর্নিয়ায় ঘা বা এক্সপোজার কেরাটাইটিসের আশঙ্কা বেড়ে যায়। তখন চোখে ঘনঘন আর্টিফিসিয়াল টিয়ার ব্যবহার করতে হয়। প্রযোজনে ঘুমানোর সময় মলম বা জেল জাতীয় আর্টিফিসিয়াল টিয়ার ব্যবহার করতে হয়। তীব্র ধরনের প্রোপ্টোসিস হলে চোখে দেখতে সমস্যা দেখা দিলে বা ডাবল ভিশন সমস্যা হলে স্টেরয়েড ইমিউনো সাপ্রেসিভ ওষুধ সেবনের প্রয়োজন হয়। এছাড়া অনেক সময় রেডিওথেরাপি বা অপারেশনের প্রয়োজন দেখা দেয়। চোখের প্রেশার বেশি হলে তা কমানোর জন্য ড্রপ দেয়া হয়।
লেখক : ফ্যাকো ও গ্লুকোমা সার্জন এবং নির্বাহী পরিচালক বাংলাদেশ আই হসপিটাল লিমিটেড, সুমি টাওয়ার
মিরপুর-২, ঢাকা। ০৯৬১০৯৮৯৭৯৮, ০১৮৪৭৪২২০১০