ঢাকা ০২:০২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ জুন ২০২৪, ২ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক পার্কে বন্ধ হচ্ছে কালো টাকা বিনিয়োগ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৪০:৪৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ মে ২০২৪
  • ১২ বার
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক পার্কে প্রশ্নহীনভাবে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ বন্ধ হতে যাচ্ছে। আগে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক পার্কে বিনিয়োগ করা অর্থের ওপর ১০ শতাংশ কর দিলে উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন করার সুযোগ ছিল না। দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

তবে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে বিনিয়োগকারীরা উৎসাহ হারিয়ে ফেলতে পারেন বলে মত অর্থনীতিবিদদের।

সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন কালের কণ্ঠকে বলেন, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আনতে গেলে পলিসি সাপোর্ট, আর্থিক সাপোর্ট লাগে। এটা একেবারে উঠে গেলে বিনিয়োগকারীরা নিরুৎসাহ হতে পারে। এতে স্বল্প মেয়াদে একটা প্রভাব পড়তে পারে।

এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে মোটাদাগে তিনটি কারণ থাকতে পারে বলে উল্লেখ করেন ফাহমিদা খাতুন।

তিনি বলেন, প্রথমত, অনেক দিন ধরে এই সুযোগ দেওয়ার পরও বিনিয়োগ বাড়েনি। দ্বিতীয়ত, এনবিআরকে কর আদায় করতে হবে। এ জন্য তারা নতুন নতুন ক্ষেত্র খুঁজছে। তৃতীয়ত, যারা এখানে বিনিয়োগ করবে, তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেক ভালো।
কর দিতে হলেও তাদের কোনো সমস্যা হবে না।

বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, বিনিয়োগকারীরা ১০ শতাংশ কর দিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক পার্কে পণ্য বা সেবা উৎপাদনে অবকাঠামো নির্মাণ করতে বিনিয়োগ করলে তাঁদের আয়ের উৎস সম্পর্কে কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় না। ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এই সুবিধা থাকবে।

তবে এনবিআরে আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এই সুবিধা আরো বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল। তারা জানিয়েছিল, এই সুবিধা অব্যাহত থাকলে বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হবে।

ফলে দেশের উৎপাদন ও কর্মসংস্থান দুটিই বৃদ্ধি পাবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই এনবিআর এই সুবিধা দিয়ে আসছে। এর পরও উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ আসেনি। এ ছাড়া রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে নতুন ক্ষেত্র থেকে কর আদায় করার বিকল্প নেই।

এ ছাড়া আসন্ন অর্থবছরে মূলধনী যন্ত্রপাতি এবং নির্মাণসামগ্রী আমদানিতে শূন্য শুল্ক সুবিধাও শেষ হয়ে যেতে পারে বলে জানা গেছে।

এই ধরনের বিনিয়োগকারীকে ২৫ শতাংশ কাস্টমস ডিউটি, ১৫ শতাংশ ভ্যাট এবং যানবাহন আমদানিতে অতিরিক্ত সম্পূরক শুল্ক (এসডি) দিতে হবে। বর্তমানে স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য এখানে সম্পূর্ণ ছাড় দেওয়া হয়েছিল।

২০১৫-১৬ অর্থবছরে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক পার্কে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য লভ্যাংশ আয়কে করের বাইরে রেখেছিল। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ আইন ২০১০-এর অধীনে পরিচালিত অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ আইন ২০১০-এর অধীনে পরিচালিত হাই-টেক পার্কগুলোর জন্য এই সুবিধা দেওয়া হয়েছিল।

বর্তমানে সারা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ চলছে। এর মধ্যে সরকারি ৬৮টি অঞ্চলের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রতিবছর এসব অঞ্চল থেকে পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি করে ৪০ বিলিয়ন ডলার আয়ের পরিকল্পনা বেজার। এ ছাড়া বেজা মনে করে, এখানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

বেজার বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে চীন, ভারত, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও নরওয়ের থেকে এফডিআইয়ের মাধ্যমে ১.৫০ বিলিয়ন ডলার এসেছে।

বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বর্তমানে ৯২টি হাই-টেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, আইটি প্রশিক্ষণ ও ইনকিউবেশন সেন্টার নির্মীয়মাণ। এর মধ্যে ১১টি হাই-টেক পার্কে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এখানে এক হাজার ১২৩.৩০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে, যার মধ্যে এফডিআই হিসেবে এসেছে ৯৬৪ কোটি টাকা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক পার্কে বন্ধ হচ্ছে কালো টাকা বিনিয়োগ

আপডেট টাইম : ১০:৪০:৪৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ মে ২০২৪
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক পার্কে প্রশ্নহীনভাবে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ বন্ধ হতে যাচ্ছে। আগে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক পার্কে বিনিয়োগ করা অর্থের ওপর ১০ শতাংশ কর দিলে উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন করার সুযোগ ছিল না। দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

তবে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে বিনিয়োগকারীরা উৎসাহ হারিয়ে ফেলতে পারেন বলে মত অর্থনীতিবিদদের।

সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন কালের কণ্ঠকে বলেন, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আনতে গেলে পলিসি সাপোর্ট, আর্থিক সাপোর্ট লাগে। এটা একেবারে উঠে গেলে বিনিয়োগকারীরা নিরুৎসাহ হতে পারে। এতে স্বল্প মেয়াদে একটা প্রভাব পড়তে পারে।

এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে মোটাদাগে তিনটি কারণ থাকতে পারে বলে উল্লেখ করেন ফাহমিদা খাতুন।

তিনি বলেন, প্রথমত, অনেক দিন ধরে এই সুযোগ দেওয়ার পরও বিনিয়োগ বাড়েনি। দ্বিতীয়ত, এনবিআরকে কর আদায় করতে হবে। এ জন্য তারা নতুন নতুন ক্ষেত্র খুঁজছে। তৃতীয়ত, যারা এখানে বিনিয়োগ করবে, তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেক ভালো।
কর দিতে হলেও তাদের কোনো সমস্যা হবে না।

বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, বিনিয়োগকারীরা ১০ শতাংশ কর দিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক পার্কে পণ্য বা সেবা উৎপাদনে অবকাঠামো নির্মাণ করতে বিনিয়োগ করলে তাঁদের আয়ের উৎস সম্পর্কে কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় না। ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এই সুবিধা থাকবে।

তবে এনবিআরে আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এই সুবিধা আরো বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল। তারা জানিয়েছিল, এই সুবিধা অব্যাহত থাকলে বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হবে।

ফলে দেশের উৎপাদন ও কর্মসংস্থান দুটিই বৃদ্ধি পাবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই এনবিআর এই সুবিধা দিয়ে আসছে। এর পরও উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ আসেনি। এ ছাড়া রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে নতুন ক্ষেত্র থেকে কর আদায় করার বিকল্প নেই।

এ ছাড়া আসন্ন অর্থবছরে মূলধনী যন্ত্রপাতি এবং নির্মাণসামগ্রী আমদানিতে শূন্য শুল্ক সুবিধাও শেষ হয়ে যেতে পারে বলে জানা গেছে।

এই ধরনের বিনিয়োগকারীকে ২৫ শতাংশ কাস্টমস ডিউটি, ১৫ শতাংশ ভ্যাট এবং যানবাহন আমদানিতে অতিরিক্ত সম্পূরক শুল্ক (এসডি) দিতে হবে। বর্তমানে স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য এখানে সম্পূর্ণ ছাড় দেওয়া হয়েছিল।

২০১৫-১৬ অর্থবছরে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক পার্কে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য লভ্যাংশ আয়কে করের বাইরে রেখেছিল। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ আইন ২০১০-এর অধীনে পরিচালিত অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ আইন ২০১০-এর অধীনে পরিচালিত হাই-টেক পার্কগুলোর জন্য এই সুবিধা দেওয়া হয়েছিল।

বর্তমানে সারা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ চলছে। এর মধ্যে সরকারি ৬৮টি অঞ্চলের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রতিবছর এসব অঞ্চল থেকে পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি করে ৪০ বিলিয়ন ডলার আয়ের পরিকল্পনা বেজার। এ ছাড়া বেজা মনে করে, এখানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

বেজার বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে চীন, ভারত, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও নরওয়ের থেকে এফডিআইয়ের মাধ্যমে ১.৫০ বিলিয়ন ডলার এসেছে।

বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বর্তমানে ৯২টি হাই-টেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, আইটি প্রশিক্ষণ ও ইনকিউবেশন সেন্টার নির্মীয়মাণ। এর মধ্যে ১১টি হাই-টেক পার্কে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এখানে এক হাজার ১২৩.৩০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে, যার মধ্যে এফডিআই হিসেবে এসেছে ৯৬৪ কোটি টাকা।