উচ্চ রক্তচাপকে বলা হয়ে থাকে ‘নীরব ঘাতক’। কারণ অনেকেই নিজের অজান্তে এ রোগে ভোগেন এবং তা নিয়ন্ত্রণে কোনো চিকিৎসা না নেওয়ায় হৃদরোগ, কিডনি বিকল, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ (স্ট্রোক) ও চোখের রোগে আক্রান্ত হন। এমনকি আকস্মিক হৃদরোগ ও স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে কারও কারও মৃত্যুও হয়ে থাকে। তাই নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করা সবার জন্যই জরুরি, বিশেষ করে যাদের বংশগত উচ্চ রক্তচাপের ইতিহাস আছে; অথবা যারা অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করেন, যাদের ওজন বেশি, যারা অতিরিক্ত তেল-চর্বিজাতীয় খাবার খান, যারা ধূমপায়ী বা মদ্যপায়ী।
উচ্চ রক্তচাপ যেমন নীরব ঘাতক, তেমনি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ সেবন করলে এবং কিছু নিয়ম মেনে চললে এ রোগ নিয়ে সুস্থ মানুষের মতো জীবনযাপনও করা যায়। সেক্ষেত্রে রোগটি প্রথমে শনাক্ত হওয়া প্রয়োজন। কাজেই এ ব্যাপারে প্রত্যেককেই সচেতন থাকতে হবে। নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করাতে হবে। উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কে অনেকের মনে নানা ভুল ধারণা রয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এসব বিষয়ে সঠিক ধারণা নিতে হবে। মোদ্দা কথা, প্রথমে কারও উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে কিনা, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে; উক্ত রক্তচাপ থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য যা যা করা প্রয়োজন, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তা করতে হবে। উল্লেখ্য, জরিপে দেখা গেছে, দেশে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তদের মধ্যে মাত্র ৩৮ শতাংশ রোগী চিকিৎসাসেবা নিয়ে থাকেন। আর নিয়মিত ওষুধ সেবনের মাধ্যমে রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছেন মাত্র ১৫ শতাংশ মানুষ, অর্থাৎ প্রতি সাতজনে মাত্র একজন। বাকি ৮৫ শতাংশ রোগীই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছেন। এ ব্যর্থতা কাটাতে ব্যক্তির যেমন দায়িত্ব রয়েছে, তেমনি দায়িত্ব রয়েছে রাষ্ট্রেরও। জানা গেছে, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও দেশব্যাপী নিরবচ্ছিন্ন ওষুধ সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা আশা করব, আসন্ন বাজেটে এ খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ রাখা হবে। ওষুধ কোম্পানিগুলোকেও সহজলভ্য করতে হবে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ।