ঢাকা ১১:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ব্যাংক খাতে ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:১৩:৫৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১ মে ২০২৪
  • ৫৪ বার

বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও এ খাতের পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে। সোমবার প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা মূল্যায়ন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়-ব্যাংক খাতে গত জুনের তুলনায় সেপ্টেম্বরে ঝুঁকির মাত্রা আরও বেড়েছে।

এই ৩ মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ, সুদহার, বিনিময় হারজনিত ঝুঁকিতে থাকা ব্যাংকের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। একইসঙ্গে ব্যাংকগুলোর সার্বিক মূলধন কমেছে। তবে ঋণের স্থিতি বাড়ায় ব্যাংকগুলোর সম্পদ বেড়েছে আর খেলাপি ঋণ কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। এখন মোট খেলাপি ঋণের ৪৫ শতাংশের বেশি রয়েছে শীর্ষ পাঁচ ব্যাংকের কাছে।

প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, গত জুনে যেখানে চারটি ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেড়েছিল, সেপ্টেম্বরে তা বেড়েছে পাঁচটিতে। এছাড়া গত জুনে সুদের হারজনিত কারণে একটি ব্যাংক ঝুঁকিতে থাকলেও সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে দুটিতে দাঁড়িয়েছে। প্রতি ৩ মাস পরপর এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এবারের প্রতিবেদনটি গত বছরের জুন-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের, যা প্রায় ৭ মাস পর প্রকাশ করা হয়।

আমরা মনে করি, বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ব্যাংকগুলো পরিচালনায় শৃঙ্খলা আনতে হবে। আগ্রাসী ব্যাংকিং বন্ধ করতে হবে। পরিচালকদের চাপ কমাতে হবে। গ্রাহকদের আস্থা ধরে রাখার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। খেলাপিদের আর কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া যাবে না।

মনে রাখতে হবে, ব্যাংক হচ্ছে অর্থনীতির প্রাণ। ব্যাংক দুর্বল হলে অর্থনীতিও দুর্বল হয়ে পড়বে। তারল্য সংকটের কারণে ব্যাংক এখন অর্থনীতির চাহিদা অনুযায়ী ঋণের জোগান দিতে পারছে না। এ সংকট কাটাতে তাই আমানত বাড়াতে হবে। দুর্নীতি রোধ করতে হবে। ঋণ আদায় করতে হবে। বিদেশে যে অর্থ পাচার হয়েছে, তার সঠিক হিসাব বের করে ফেরত আনার উদ্যোগ নিতে হবে।

এর ফলে দেশে ডলার সংকট কিছুটা হলেও কাটবে। অবশ্য রাজনৈতিক অঙ্গীকার ছাড়া যে খেলাপিদের ধরা যাবে না, তা বলাই বাহুল্য। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে যারা ঋণখেলাপি বা জাল-জালিয়াতি করে ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ করেছে, তারা সবাই কোনো না কোনোভাবে সরকারের ছায়ার মধ্যেই থাকে। তারা অত্যন্ত প্রভাবশালী। কাজেই সরকার থেকে বার্তা না পেলে ব্যাংক তাদের ধরতে পারবে না। এসব বিষয় আমলে নিয়ে সরকার ব্যাংক খাতকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হবে এটাই কাম্য।

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ব্যাংক খাতে ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি

আপডেট টাইম : ১১:১৩:৫৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১ মে ২০২৪

বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও এ খাতের পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে। সোমবার প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা মূল্যায়ন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়-ব্যাংক খাতে গত জুনের তুলনায় সেপ্টেম্বরে ঝুঁকির মাত্রা আরও বেড়েছে।

এই ৩ মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ, সুদহার, বিনিময় হারজনিত ঝুঁকিতে থাকা ব্যাংকের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। একইসঙ্গে ব্যাংকগুলোর সার্বিক মূলধন কমেছে। তবে ঋণের স্থিতি বাড়ায় ব্যাংকগুলোর সম্পদ বেড়েছে আর খেলাপি ঋণ কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। এখন মোট খেলাপি ঋণের ৪৫ শতাংশের বেশি রয়েছে শীর্ষ পাঁচ ব্যাংকের কাছে।

প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, গত জুনে যেখানে চারটি ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেড়েছিল, সেপ্টেম্বরে তা বেড়েছে পাঁচটিতে। এছাড়া গত জুনে সুদের হারজনিত কারণে একটি ব্যাংক ঝুঁকিতে থাকলেও সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে দুটিতে দাঁড়িয়েছে। প্রতি ৩ মাস পরপর এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এবারের প্রতিবেদনটি গত বছরের জুন-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের, যা প্রায় ৭ মাস পর প্রকাশ করা হয়।

আমরা মনে করি, বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ব্যাংকগুলো পরিচালনায় শৃঙ্খলা আনতে হবে। আগ্রাসী ব্যাংকিং বন্ধ করতে হবে। পরিচালকদের চাপ কমাতে হবে। গ্রাহকদের আস্থা ধরে রাখার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। খেলাপিদের আর কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া যাবে না।

মনে রাখতে হবে, ব্যাংক হচ্ছে অর্থনীতির প্রাণ। ব্যাংক দুর্বল হলে অর্থনীতিও দুর্বল হয়ে পড়বে। তারল্য সংকটের কারণে ব্যাংক এখন অর্থনীতির চাহিদা অনুযায়ী ঋণের জোগান দিতে পারছে না। এ সংকট কাটাতে তাই আমানত বাড়াতে হবে। দুর্নীতি রোধ করতে হবে। ঋণ আদায় করতে হবে। বিদেশে যে অর্থ পাচার হয়েছে, তার সঠিক হিসাব বের করে ফেরত আনার উদ্যোগ নিতে হবে।

এর ফলে দেশে ডলার সংকট কিছুটা হলেও কাটবে। অবশ্য রাজনৈতিক অঙ্গীকার ছাড়া যে খেলাপিদের ধরা যাবে না, তা বলাই বাহুল্য। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে যারা ঋণখেলাপি বা জাল-জালিয়াতি করে ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ করেছে, তারা সবাই কোনো না কোনোভাবে সরকারের ছায়ার মধ্যেই থাকে। তারা অত্যন্ত প্রভাবশালী। কাজেই সরকার থেকে বার্তা না পেলে ব্যাংক তাদের ধরতে পারবে না। এসব বিষয় আমলে নিয়ে সরকার ব্যাংক খাতকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হবে এটাই কাম্য।