অতীতের মতো গ্রামের বাড়িঘরের পাশে গাছের ডালে পাখির কলরব এখন আর চোখে পড়ে না। বিদেশী প্রজাতির গাছগাছালি, রাসায়নিক সার, কীটনাশক আর মনুষ্যসৃষ্ট কর্মকান্ডে প্রজননে বাঁধাগ্রস্ত, আবাসস্থল বিনষ্ট ও খাদ্যসংকটের কারণে বিপন্ন দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন ধরনের পাখি। তবে এখনও কোন কোন স্থানে গ্রামগঞ্জের বাড়ির আশেপাশে প্রাচীনতম গাছ আর বাঁশঝাড়ে পাখি বাসা বাঁধছে। আর পাখির সেই বাসাটি হয়ে পড়ছে বিরল।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার এমনই একটি বাড়ির বাঁশঝাড়ে গত কয়েক বছর ধরে ঝাঁকে ঝাঁকে বক পাখি গড়ে তুলেছে তাদের রাজ্য। কবি মদনমোহন তর্কালঙ্কার এর কবিতার ভাষায় ‘পাখি সব করে রব রাতি পোহাইল, কাননে কুসুম কলি সকলি ফুটিল।’
সত্যিই উপজেলার মুন্সিবাজার ইউনিয়নের সরিষকান্দি গ্রামের এই বাড়িতে পাখির কলকাকলী আর কিচির-মিচির শব্দে লোকজনদের রাত পোহায়। পাখির সাথে মিতালী গড়ে তোলেছে বাড়ির লোকজন। কমলগঞ্জ উপজেলার প্রাক্তন চেয়ারম্যান আনোয়ার খান ও তাঁর পাশের বাড়ির বাঁশঝাড়ে কয়েক বছর ধরে বকসহ নানা প্রজাতির পাখির নিরাপদ অভয়ারণ্য গড়ে উঠেছে। কিন্তু পাখির নিরাপদ এই অভয়ারন্যেও শিকারীদের তৎপরতায় পাখির প্রজননসহ নিরাপদ আবাসভূমি বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মৌলভীবাজার-শমশেরনগর সড়কের গাঁ ঘেষে সরিষকান্দি গ্রামের প্রাক্তন কমলগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার খান ও তাঁর পাশের বাড়ির আতাউর রহমান খানের বাড়ির বাঁশঝাড়ে দীর্ঘ চার, পাঁচ বছর ধরে নিরাপদ আবাসভূমি গড়েছে বকসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। রাস্তা দিয়ে যাতায়াতের সময় যে কারো নজরে পড়বে ধবধবে সাদা, সোনালী বকসহ বিভিন্ন জাতের পাখির কিচির-মিচির শব্দ আর এদিক সেদিক লাফালাফির দৃশ্য।
অতীতে গ্রামগঞ্জের আনাচে-কানাচে এভাবে পাখির বিচরণ দেখা গেলেও সম্প্রতি সময়ে বিভিন্ন কারনে এসব দৃশ্য আর চোখে পড়ছে না। দেশীয় প্রজাতির প্রাচীনতম গাছ বিলুপ্ত, খাবার সংকট এসব কারনে পাখির নিরাপদ আবাসভূমি হারাচ্ছে। সরিষকান্দি গ্রামের ওই দু’টি বাড়ির পুরনো বাঁশঝাড় ও গাছগাছালিতে গত কয়েক বছর ধরে সাদা বক, সোনালী বক, পানকৌড়িসহ কয়েক প্রজাতির পাখির নিরাপদ আবাসস্থল গড়ে তোলেছে।
সকালে আর বিকালে পাখির কিচির মিচির শব্দ গোটা বাড়ির পরিবেশকে একটি ভিন্ন আঙ্গিকে মাতিয়ে তোলে। ওই বাড়ির যুবক নাহিয়ান খান জানায়, কয়েক বছর ধরে এসব পাখি তাদের দু’টি বাড়ির বাঁশঝাড় ও গাছগাছালিতে অবাদ বিচরন করছে। সকালে ও বিকালে পাখির কিচির-মিচির শব্দ দূর থেকেই শোনা যায়। সকালে খাবারের উদ্দেশ্যে সবগুলো পাখিই বেরিয়ে পড়ে। আবার বিকালে ধীরে ধীরে বাসস্থানে ফিরতে থাকে। নাহিয়ান আরো জানায়, তাদের বাড়ির পিছনের ফিসারীসহ আশপাশ এলাকার আবাদী জমি থেকে বেশিরভাগ খাবার খেতে দেখা যায়। তবে পাখির নিরাপদ আবাসভূমি হলেও কিছুসংখ্যক শিকারীদের অপতৎপরতা রয়েছে। এসব শিকারীরা বন্দুক নিয়ে সন্ধ্যায় গোপনে পাখি শিকারের চেষ্টা করে। বাড়ির লোকজন এসব শিকারীদের তাড়িয়ে দেন।
বন্যপ্রাণি বিভাগের মৌলভীবাজারস্থ সিলেট বিভাগীয় কর্মকর্তা মিহির কুমার দো বাড়ির লোকজনকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ওই বাড়িতে পাখির আবাসভূমি এটি খুবই ইতিবাচক। তাদের বাড়িতে বাঁশঝাড় আর গাছ গাছালিতে পাখি নিরাপদে আবাসস্থল গড়েছে এটি খুবই ভালো দিক। তবে সার্বক্ষণিক বন্যপ্রাণি বিভাগের পক্ষ থেকে নজরদারি করতে না পারলেও সুনির্দিষ্টভাবে পাখি শিকার বিষয়ে অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।