ছয় গোলের রোমাঞ্চে কেউ জেতেনি

পিছিয়ে পড়ে প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখা যেনো মামুলি ব্যাপারই বানিয়ে ফেলেছে রিয়াল মাদ্রিদ। কখনো তারা জেতে। কখনো সমতায় শেষ করে। আর খেলাটা যখন নিজের আস্তানা সান্তিয়ানো বার্নাব্যুতে তখন শুধু প্রত্যাবর্তন কেন, ঐতিহ্য আর গৌরবের মিলেশে রোমাঞ্চকর সফর হয়ে যায়। যেখানে নখ কামড়ানো প্রতিটি মুহূর্ত ফুটবল প্রেমে বুদ করে রাখে। প্রতিটি সেকেন্ড ভালোবাসার রং ছিটিয়ে উন্মাদনা ছড়ায়।

চ্যাম্পয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে রিয়াল মাদ্রিদ তেমনই এক রাত উপহার দিল। প্রতিযোগিতার বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে ৩-৩ গোলে ম্যাচ ড্র করে। একবার নয়, দুইবার পিছিয়ে পড়ে এই ম্যাচে ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ে প্রতিযোগিতার সবচেয়ে সফল ১৪বার শিরোপা পাওয়া রিয়াল।

শুরুর দ্বিতীয় মিনিটে গোল হজম করে স্বাগতিকরা। এরপর ১২ মিনিটে সমতায় ফেরায়। ১ মিনিট ৫২ সেকেন্ডের ভেতরেই এগিয়ে যায়। রোমাঞ্চকর প্রথম ১৪ মিনিটের খেলায় বোঝা যাচ্ছিল স্পেন ও ইংলিশ লিগের দুই শীর্ষ ক্লাব কেউ কাউকে ছাড় দেবে না। প্রথমার্ধে ২-১ গোলে এগিয়ে বিরতিতে যায় রিয়াল। ফিরে এসে ৪ মিনিটের ব্যবধানে পাল্টা দুই গোল হজম। আবার পিছিয়ে পড়লেও মাঠ গুছিয়ে সমতায় ফিরতে সময় নেয়নি রিয়াল। ম্যাচের ৭৯ মিনিটে খেলায় ৩-৩ সমতা। এই স্কোরলাইনে শেষ পর্যন্ত ম্যাচ ড্র হয়।

ম্যাচের ২ মিনিটেই স্বাগতিকদের অবাক করে দিয়ে এগিয়ে যায় ম্যানচেস্টার সিটি। ডি বক্সের অনেক বাইরে থেকে ফ্রি কিক পায় ম্যান সিটি। বার্নাডো সিলভা বাম পায়ে শট নিয়ে বল জালে পাঠান। তার দূরপাল্লার গ্রাউন্ড শট বটম লেফট কর্নার দিয়ে রিয়ালের জালে জড়ায়

সমতা ফেরাতে মরিয়া রিয়াল পাল্টা আক্রমণ চালায়। ১২ মিনিটে কামাভিঙ্গা দলের হয়ে কাজটা করে দেন। রদ্রিগোর বাড়ানো বল ২০ গজ দূরে পান কামাভিঙ্গা। বল নিয়ে এগিয়ে বামপায়ে শট নেন। সেখানে প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়ের শরীর ছুঁয়ে বল জালে যায়।

এরপর এক মিনিট ৫২ সেকেন্ডে দ্বিতীয় গোলের স্বাদ পায় রিয়াল। ঠাণ্ডা মাথায় প্রতিপক্ষের জালে বল পাঠাতে একটুও সময় নেননি রদ্রিগো। কাউন্টার অ্যাটাক থেকে ভিনিসিয়াস জুনিয়রের বাড়ানো বল নিয়ে সিটির ডি বক্সের দিকে এগিয়ে যান। সেখানে দুই ডিফেন্ডার তাকে আটকানোর চেষ্টা করে। এগিয়ে আসেন গোলরক্ষকও। কিন্তু বল নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আলতো টোকায় গল করেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড

এগিয়ে যাওয়ার পর রিয়াল আক্রমণ অব্যাহত রাখে। একাধিক সুযোগও তৈরি করে। কিন্তু ব্রাজিলিয়ান দুই ফরোয়ার্ড ভিনিসিয়াস জুনিয়র ও রদ্রিগো লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি। বাকিদের ফিনিশিং ভালো ছিল না। তাতে লিডও বাড়েনি। ২-১ গোলে এগিয়ে রিয়াল মাদ্রিদ বিরতিতে যায়।

ম্যানচেস্টার সিটি সমতা ফেরায় ম্যাচের ৬৭ মিনিটে। ফোডেন বামপায়ে কোনাকুনি শটে টপ কর্ণার দিয়ে গোলটি করেন। চোখ ধাঁধানো গোল। গোলের আগে একাধিকবার রিয়াল শিবিরে কাঁপন ধরিয়েছিলেন তিনি। সুযোগগুলো কাজে লাগেনি। তবে ৬৭ মিনিটে পাওয়া সুযোগটি চোখের পলকে ফিনিশ করেন ফোডেন।

চার মিনিটের ব্যবধানে অতিথিরা আবার এগিয়ে যায়। এবার জোস্কো গার্ডিওল গোল করেন ডি বক্সের ঠিক বাইরে থেকে। সেই একই ধরণের কোনাকুনি শট। বড় মঞ্চে ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে নিজের প্রথম গোল করে স্মরণীয় করে রাখেন ক্রোয়েশিয়ান তারকা।

পিছিয়ে পড়ার যন্ত্রণা খুব বেশিক্ষণ সইতে হয়নি স্বাগতিকদের। মাত্র ৮ মিনিট লিড ধরে রাখতে পারে সিটি। ম্যাচের ৭৯ মিনিটে ভিনিসিয়াসের ক্রস থেকে দারুণ ভলিতে গোল করেন ফেদে ভালভের্দে।

অতিরিক্ত সময়সহ শেষ প্রায় পনের মিনিটে আক্রমণ পাল্টা আক্রমণে ম্যাচ এগিয়ে যায়। শেষ সময়ে কেউ কাউকে ছাড় দেয়নি। ড্র মেনে নেয় দুই দল।

প্রতিপক্ষে মাঠে ৩ গোলে করে ম্যান সিটি এই ম্যাচে এগিয়ে থাকল (অ্যাওয়ে গোলের হিসেবে)। ড্র করেও অসন্তুষ্ট থাকার কথা না রিয়ালের। পরের লেগে তাদের খেলতে হবে ইত্তিহাদ স্টেডিয়ামে। যেখানে ছয়বার খেলে কোনোবারই জিততে পারেনি। চারবার হেরেছে। দুটি ড্র। সেমি ফাইনাল খেলতে হলে এবার ইতিহাসই লিখতে হবে কার্লো আনচেলত্তি শিষ্যদের

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর