সময়মতো কাজ শেষ না হওয়ায় নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের এডিপিভুক্ত অন্তত ১৫টি প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা। আরও কিছু প্রকল্প সংশোধন হচ্ছে। সেসব প্রকল্পেও ব্যয় বাড়তে পারে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার কোটি টাকা। ফলে বাড়তি ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের বোঝা চাপছে সরকারের কাঁধে। এমনও প্রকল্প আছে যা ৩ বছরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও চলছে ১০ বছর ধরে। এভাবে সঠিক সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় বিপুল বিনিয়োগের আর্থিক সুফল থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। সংশ্লিষ্টরা জানান, যথাযথ সমীক্ষা ছাড়া প্রকল্প গ্রহণ, ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতা, ডলার সংকট, প্রকল্পের মাঝপথে নতুন কাজ যুক্ত করা, দক্ষ ও পূর্ণকালীন পিডি না থাকা, দরপত্রে ত্রুটিবিচ্যুতি ও অনিয়মসহ নানা কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ও সময় বাড়ছে। অনুসন্ধানে এসব তথ্য জানা গেছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তফা কামাল সোমবার নিজ দপ্তরে যুগান্তরকে বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব হচ্ছে, এটা আমি মনে করি না। একেক প্রকল্প এককভাবে চলছে। যেসব প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বাড়ছে, সেগুলোর একেক ধরনের কারণও রয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জবাব দিতে সময় নেন তিনি। মঙ্গলবার এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাকে দেওয়া লিখিত প্রশ্নের জবাব পাওয়া যায়নি।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, চারবার ব্যয় ও সময় বাড়ানোর নজির তৈরি করেছে ‘এস্টাব্লিশমেন্ট অব গ্লোবাল মেরিটাইম ডিস্ট্রেস অ্যান্ড সেফটি সিস্টেম অ্যান্ড ইন্ট্রিগ্রেটেড মেরিটাইম নেভিগেশন সিস্টেম (ইজিআইএমএনএস)’ প্রকল্প। সমুদ্রপথে চলাচলকারী জাহাজের সঙ্গে ২৪ ঘণ্টা যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা, নজরদারি ও নৌ নিরাপত্তাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ‘লাইট হাউজ’ বা ‘বাতিঘর’ নামে পরিচিত এ প্রকল্পটি ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তখন মোট ব্যয় ধরা ছিল ৩৭০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। অথচ তিন বছরের এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি ১০ বছরেও। ওই সময়ে শেষ হলে সমুদ্রগামী জাহাজ থেকে প্রতিবছর কমবেশি ৩০ কোটি টাকা করে পেয়ে আসত সরকার। প্রকল্প শেষ না হওয়ায় ওই টাকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশ। অপরদিকে ব্যয় ও মেয়াদ বেড়েছে চারবার। ৩৭০ কোটি ৮৯ লাখ টাকার এ প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮১৮ কোটি ৭৫ লাখ ১১ হাজার টাকায়।
শুধু তাই নয়, এরই মধ্যে দুজন পরিচালক পরিবর্তন হয়েছেন। তাদের একজন পরিচালক থাকাবস্থায় ঘুসের টাকাসহ দুর্নীতি দমন কমিশনের হাতে গ্রেফতারও হন। প্রকল্পের কার্যক্রমে আধিপত্যের জেরে নৌপরিবহণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পদ থেকে এক কর্মকর্তাকে সরে যেতে হয়েছে। এতসব ঘটনার পরও প্রকল্পের কাজ শেষ হয় না। উলটো কাজের মান, কাজ না করে বিল দেওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ বাড়ছে, জমা হচ্ছে অডিট আপত্তি। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৫৪৯ কোটি ২৬ লাখ টাকা বা ৬৭.০৯ শতাংশ। বাস্তব অগ্রগতির গড় ৭৭ শতাংশ। চলতি বছরের জুনে এ প্রকল্প শেষ হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের পরিচালক ক্যাপ্টেন আবু সাইদ মোহাম্মদ দেলোয়ার রহমান যুগান্তরকে বলেন, এখনও যা কাজ বাকি আছে তা জুনের মধ্যে শেষ হবে। তিনি দাবি করেন, তার সময়ে প্রকল্পে অনিয়ম হয়নি।
শুধু এ প্রকল্প নয়, এমন অন্ততটি ১৫টি প্রকল্পের তথ্য পাওয়া গেছে, যেগুলো নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে ব্যর্থ হয়েছে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থাগুলো। ওই ব্যর্থতায় বাড়তি ব্যয় গুনতে হচ্ছে সরকারকে। নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে না পারা ওইসব প্রকল্পে এ পর্যন্ত ব্যয় বেড়েছে ৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা। জুনের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা অন্তত ছয়টি প্রকল্পের কাজ এ সময়ের মধ্যে শেষ হবে না। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি প্রকল্পের ডিপিপি সংশোধন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সেখানেও অন্তত সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার কোটি টাকা ব্যয় বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থাগুলোর ৩১টি প্রকল্প রয়েছে। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এসব প্রকল্পের গড় অগ্রগতি ১৩.৯ শতাংশ। জানুয়ারি পর্যন্ত জাতীয় অগ্রগতি ২৭.১১ শতাংশ।
নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোর ঊর্ধ্বতন সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প শেষ করতে না পারলে একদিকে যেমন বিপুল অর্থের অপচয় হয়, অপরদিকে সুফলও কম পাওয়া যায়। নাম গোপন রাখার শর্তে তারা বলেন, অনেক প্রকল্প আছে নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়ে গেলে ডলার সংকট ও দামের ঊর্ধ্বগতি, করোনা প্রকোপ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মতো অনেক সমস্যায় পড়তে হতো না। ২০২১ সালে কাজ নেওয়া অনেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডলার সংকটের কারণে এখনো এলসি খুলতে পারছে না। তারা জানান, ড্রেজিং সংক্রান্ত প্রকল্পগুলো ধীরে বাস্তবায়নের ফলে কয়েকটি নদী আবার ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এতে অর্থ গচ্চা যাচ্ছে। তারা আরও বলেন, দুই বছর ধরে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় ও অধীনস্থ সংস্থাগুলো প্রকল্প বাস্তবায়নে দক্ষতার পরিচয় দিতে পারছে না। এ কারণে জাতীয়ভাবে এ মন্ত্রণালয় পিছিয়ে রয়েছে।
প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ও সময় কেন বাড়ছে, তা অনুসন্ধানে বেশকিছু কারণ পাওয়া গেছে। অনেক প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে বড় ধরনের ত্রুটি, অদক্ষতা, অদূরদর্শিতা ও অস্বচ্ছতা রয়েছে। এছাড়াও দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাস্তবিক কিছু সমস্যাও আছে। গত বছরের ২২ আগস্ট নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন অংগ্রগতি সংক্রান্ত এক বৈঠকেও এসব বিষয় উঠে আসে। সেখানের নথিপত্রেই ১৫টি সমস্যার কথা উল্লেখ করা হয়। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে-যথাযথ সমীক্ষা ছাড়া প্রকল্প নেওয়ার কারণে ডিপিপি রিভিশন, মেয়াদ ও ব্যয়বৃদ্ধির প্রবণতা; পিপিএ ও পিপিআর অনুসরণ না করে দরপত্র দলিল প্রণয়ন, ক্রয়প্রস্তাবে ত্রুটিবিচ্যুতি এবং মূল্যায়ন প্রক্রিয়া বিলম্ব; টেন্ডার ডকুমেন্টস প্রস্তুত ও টেন্ডার আহ্বানে সয়মক্ষেপণ; ডিপিপির সংস্থান অনুযায়ী বাজেটে বরাদ্দ না থাকা; বরাদ্দ অনুযায়ী বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে অদূরদর্শিতা; ভূমি অধিগ্রহণে দীর্ঘসূত্রতা এবং পূর্ণকালীন প্রকল্প পরিচালক না থাকা।
জানা যায়, মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ার আরও কিছু কারণ আছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্দিষ্ট ঠিকাদারদের কাজ দেওয়ার লক্ষ্যে কিছু টেন্ডারে বিভিন্ন ধরনের শর্ত যুক্ত করা হয়। এতে জটিলতা তৈরি হয়ে সময়ক্ষেপণ হয়। আবার কখনো কখনো প্রাক্কলিত দরের চেয়ে বেশিতে ঠিকাদার মনোনীত করা হয়। এতেও প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। টেন্ডারে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে একটি প্রস্তাব সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন দেয়নি। কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে সেটি আবারও টেন্ডার করতে নৌমন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এতেও কয়েক মাস সময়ক্ষেপণ হয়। টেন্ডারটি হচ্ছে ‘পায়রা সমুদ্রবন্দরের প্রথম টার্মিনাল এবং আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় দুটি মোবাইল হারবার ক্রেন ক্রয় ও স্থাপন। এ খাতে ৮০ কোটি টাকা ধরা থাকলেও সাইফ পাওয়ার টেক লিমিটেডকে ১০৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকায় কাজ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। ওই সুপারিশের বিষয়ে ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার কমিটির আলোচনায় উল্লেখ করা হয়, দরপত্রে তিনটি প্রতিষ্ঠান অংশ নিলেও একটিকে যোগ্য (রেসপনসিভ) হিসাবে ঘোষণা করা হয়; যার মূল্যায়িত দর প্রাক্কলিত দর থেকে ৩৬.৯১ শতাংশ বেশি। এ ক্রয় প্রক্রিয়ায় পর্যাপ্ত প্রতিযোগিতার অভাব ছিল। সেখানে এমনভাবে টেন্ডারের শর্ত দিতে বলা হয়েছে যাতে অনেক প্রতিষ্ঠান অংশ নিতে পারে।
ওই টেন্ডারের বিষয়ে জানতে চাইলে পায়রা বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, যখন টেন্ডার করা হয়, তখন আমি দায়িত্বে ছিলাম না। তবে ওই ক্রেন এখনো কেনা হয়নি। ক্রেন কিনতে আবারও টেন্ডার করা হবে। নতুন জেটি নির্মাণ ও ক্রেন কেনা দুটোই কাছাকাছি সময়ে হবে বলে আশা করছি।
প্রাক্কলনের চেয়ে বেশি দরে ঠিকাদারকে কাজ দেওয়ার আরেকটি প্রস্তাব সম্প্রতি সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। ‘মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পে’ বন্দর নির্মাণের কাজে টেন্ডারে জাপানের পেন্টা-ওশান-টোয়া নামক একটি যৌথ প্রতিষ্ঠানকে ৬১৯৬ কোটি ৬৭ লাখ ১৮ হাজার ৬২৫ টাকার কাজ দিতে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভায় প্রস্তাব পাঠিয়েছে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবিত এ দর প্রাক্কলিত দরের চেয়ে প্রায় ৩১ শতাংশ বেশি। শুধু এ কারণেই এ প্রকল্পের ব্যয় আবারও বাড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
কোন প্রকল্পে কত বেড়েছে : টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি ৩২৪৬ কোটি টাকা ব্যয় বেড়েছে ‘পায়রা সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো/সুবিধাদি উন্নয়ন প্রকল্পে’। ২০১৫ সালে শুরু এ প্রকল্পের ব্যয় ছিল ১১২৮ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের জুনে সেটি শেষ হওয়ার কথা ছিল। বর্তমানে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৩৭৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৯২.৫৮ শতাংশ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এ প্রকল্পের পরিচালক ক্যাপ্টেন মো. মনিরুজ্জামান বলেন, বন্দরের জন্য অধিগ্রহণ করা জমির ক্ষতিগ্রস্ত মালিকদের সরকার বিনামূল্যে তিন হাজারের বেশি ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে। ২০১৭ সালে পাশ হওয়া নতুন ভূমি অধিগ্রহণ আইনে ভূমি মালিকদের অনেক বেশি হারে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছে। এসব কারণে প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে। তবে তিনি জানান, ওই আইন পাশ হওয়ার আগে ক্ষতিপূরণের টাকা দিতে পারলে ব্যয় কম হতো।
পায়রা বন্দরের আরেক প্রকল্প প্রথম টার্মিনাল ও আনুষাঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ ব্যয় ৩ হাজার ৯৮২ কোটি ১০ লাখ টাকা বেড়ে ৪ হাজার ৫১৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা হয়েছে। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে শুরু প্রকল্পটি ২০২১ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। এখন এটি ২০২৫ সালের জুনে শেষ হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কাজ হয়েছে মাত্র ৫৮ শতাংশ।
পায়রা বন্দরের কর্মকর্তারা জানান, সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রাবনাবাদ চ্যানেলে ক্যাপিটাল ড্রেজিং করা হচ্ছে। কিন্তু বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন শেষ না হওয়ায় জাহাজ আসার পর্যাপ্ত সুবিধাদি তৈরি হয়নি। এতে জাহাজ কম আসছে। ফলে এ বন্দর থেকে যে হারে রাজস্ব আয়ের কথা ছিল, তা আসছে না। ২০১৬ সালে চালুর পর থেকে গত ২৫ মার্চ পর্যন্ত মাত্র ৪১১টি বিদেশি জাহাজ এসেছে। ওই সময় থেকে এ পর্যন্ত বন্দরের মোট আয় হয়েছে ১২০৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা। অবঠাকামো থাকলে এ সংখ্যা অনেক হতো। একই অবস্থায় বিআইডব্লিউটিএ-এর ‘নগরবাড়ীতে আনুষঙ্গিক সুবিধাদিসহ নদীবন্দর নির্মাণ’ প্রকল্পের। এ প্রকল্পে দু’বার ব্যয় ও মেয়াদ বেড়েছে। ৫১৪ কোটি টাকার এ বন্দর নির্মাণ বেড়ে দাঁড়িয়ে ৫৬৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকায়। ২০২১ সালে এ বন্দর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কাজ হয়েছে ৬৯ শতাংশ। একই সংস্থার মোংলা বন্দর থেকে চাঁদপুর মাওয়া গোয়ালন্দ হয়ে পাকশী পর্যন্ত নৌরুটের নাব্য উন্নয়ন প্রকল্পের। এর ব্যয় ৯৫৬ কোটি থেকে বেড়ে ১২৯০ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে। ঢাকার চারপাশের নদীর তীরভূমিতে পিলার স্থাপন, তীর রক্ষা, ওয়াকওয়ে, জেটিসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ৮৪৮ কোটি ৫৫ লাখ থেকে বেড়ে ১১৮১ কোটি ১০ লাখ টাকা দাঁড়িয়েছে। এ প্রকল্প ২০২২ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কাজ হয়েছে ৭৬ শতাংশ। এ প্রকল্পের ব্যয় আরও বাড়বে।
অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে বেনাপোল স্থলবন্দরে কার্গো ভেহিক্যাল টার্মিনাল নির্মাণ; বাংলাদেশ রিজিওনাল কানেকটিভিটি প্রজেক্ট-১; পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তুলাই ও পুনর্ভবা নদীর নাব্যতা উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধার; ৩৫টি ড্রেজার ও সহায়ক জলযানসহ আনুষঙ্গিক সরঞ্জামাদি সংগ্রহ এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ; চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি উপজেলার ছিখটিয়া ব্রিজ থেকে সূচিপাড়া ব্রিজ পর্যন্ত ডাকাতিয়া নদীর উত্তর পাড়ে ওয়াকওয়ে ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ; বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ প্রকল্প-১; আশুগঞ্জ অভ্যন্তরীণ কনটেইনার নৌবন্দর স্থাপন; কর্ণফুলী নদীর সদরঘাট থেকে বাকলিয়ার চর পর্যন্ত ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্য বৃদ্ধি এবং মোংলা বন্দর চ্যানেলের ইনার বারে ড্রেজিং।