ঢাকা ১১:৫৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কাজপাগল জাপানিরা মরছে কাজের চাপে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৩২:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ অগাস্ট ২০১৬
  • ২৭৯ বার

জাপানে দীর্ঘক্ষণ কাজ করার সংস্কৃতি আজকের নয়। বলা যায়, কাজের প্রতি ভালোবাসাই জাপানের অর্থনীতিকে শীর্ষে নিয়ে গেছে। তবে অতিরিক্ত কাজের চাপের এই সংস্কৃতি অনেক সময় ডেকে আনছে মানসিক অসুস্থতা। আবার কখনো হার্টএ্যাটাক, স্ট্রোকের মতো শারীরিক অসুস্থতা। এমনকি অতিরিক্ত এই কাজের চাপ থেকে বাঁচতে কেউ কেউ বেছে নেন আত্মহত্যার মতো পথ!

পশ্চিমা বা ইউরোপের মতো সুনির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা মেনে চলেন না জাপানের মানুষ। সেখানে কর্মঘণ্টা দেখলে মনে হবে যেন জীবনের জন্য কাজ নয় বরং কাজের জন্যই জীবন। এই অতিরিক্ত কাজের চাপকে জাপানি ভাষায় বলা হয় ‘কারোশী’।

এদেরই একজন কিয়োটাকা সেরিজাওয়া। মাত্র ৩৪ বছর বয়সে আত্মহত্যা করেন তিনি। জানা যায়, মৃত্যুর আগের এক সপ্তাহ টানা ৯০ ঘণ্টা কাজ করেছিলেন তিনি।

অতিরিক্ত কাজের চাপে এক বছর আগে চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কিন্তু তার পদত্যাগপত্র নিতে অস্বীকার করে কোম্পানিটি। তাই সমস্যা থাকা সত্ত্বেও তাকে কাজে যেতে হয়। তার মা জানান, সময় স্বল্পতার কারণে অনেক সময় তিনি নিজের বাড়িতে যেতে পারতেন না, পথে তার মার বাড়িতে এসে ঘুমিয়ে পড়তেন। তার সাথে জুলাই মাসে শেষ দেখা হয় তার মায়ের। জানান, তখনো তাকে ব্যস্তই দেখাচ্ছিল। তারপর ২৬ জুলাই নিখোঁজ হন কিয়োটাকা। তিন সপ্তাহ পর জাপানের দ্বীপাঞ্চল নাগানোতে নিজ গাড়িতে তার লাশ পাওয়া যায়। জানা যায় বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন তিনি।

কানসাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কোজি মোরিওকা বলেন, জাপানে ওভারটাইম বলতে কিছু নেই, সব জায়গাতেই অতিরিক্ত ঘন্টা কাজ করতে হয়। যা মূল কাজের অংশ হিসেবেই ধরা হয়। আরো জানান, ‘এটা কারো ওপর চাপানো হয় না বরং আবশ্যিক হিসেবেই সবাই কাজ করে।’

যেখানে বিশ্বে সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টাকে কাজের মৌলিক সময় হিসেবে বিবেচনা করা হয় সেখানে খারাপ পারফরম্যান্সের ভয়ে জাপানের বেশিরভাগ মানুষ কাজ করেন ৬০ ঘণ্টা।

কাজের নির্দিষ্ট সময়ের বাইরের সময়টাকেও তারা ওভারটাইম হিসেবে বিবেচনা না করে ‘সার্ভিস ওভারটাইম’ হিসেবেই ধরেন। যেটা করেন তারা বিনামূল্যে।

জাপানের শ্রম মন্ত্রণালয় জানায়, গত বছর অতিরিক্ত কাজের চাপে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন অন্তত ১শ ৮৯ জন। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা এ সংখ্যা হাজার।

কয়েক দশক ধরে চলা এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য সরকার মাত্র ১৮ মাস আগে একটি আইন প্রণয়ন করে। যেখানে সাপ্তাহিক কর্মঘণ্টা ২০ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে আনা, ছুটির সুবিধা বাধ্যতামূলক করাসহ বেশ কয়েকটি বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হয়।

জাপানের একজন আইনজীবী কাওয়াহিতো এ বিষয়ে বলেন, সরকারের নেয়া পদক্ষেপগুলো কর্মক্ষেত্রে কিছু প্রভাব ফেললেও মূল সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। তিনি নিজে জাপানে বসবাস করলেও ইউরোপিয়ান সময় মেনে কাজ করেন বলে জানান ওই তরুণ আইনজীবী।

এদিকে টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কেনিচি কুরোদা জানান, ‘ইউরোপের দেশগুলোতে কাজের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সুবিধা দিয়ে থাকে। আপনি যেখানে ভালো পরিশ্রমিক পাবেন সেখানে যোগ দেয়ার স্বাধীনতা রয়েছে। কিন্তু জাপানে এক কোম্পানি থেকে আরেক কোম্পানি যোগদান অত্যন্ত কঠিন।’

আরো জানালেন, ‘কারাওশি’ থেকে একা মুক্তিলাভ করা অসম্ভব তবে আমাদের এ ‘সার্ভিস ওভারটাইম’ এর সংস্কৃতি বদলাতে হবে। পরিবার ও শখের জন্য সময় বের করতে হবে। যদিও দীর্ঘক্ষণ কাজ করা জাপানের শেকড়ে মিশে আছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

কাজপাগল জাপানিরা মরছে কাজের চাপে

আপডেট টাইম : ১১:৩২:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ অগাস্ট ২০১৬

জাপানে দীর্ঘক্ষণ কাজ করার সংস্কৃতি আজকের নয়। বলা যায়, কাজের প্রতি ভালোবাসাই জাপানের অর্থনীতিকে শীর্ষে নিয়ে গেছে। তবে অতিরিক্ত কাজের চাপের এই সংস্কৃতি অনেক সময় ডেকে আনছে মানসিক অসুস্থতা। আবার কখনো হার্টএ্যাটাক, স্ট্রোকের মতো শারীরিক অসুস্থতা। এমনকি অতিরিক্ত এই কাজের চাপ থেকে বাঁচতে কেউ কেউ বেছে নেন আত্মহত্যার মতো পথ!

পশ্চিমা বা ইউরোপের মতো সুনির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা মেনে চলেন না জাপানের মানুষ। সেখানে কর্মঘণ্টা দেখলে মনে হবে যেন জীবনের জন্য কাজ নয় বরং কাজের জন্যই জীবন। এই অতিরিক্ত কাজের চাপকে জাপানি ভাষায় বলা হয় ‘কারোশী’।

এদেরই একজন কিয়োটাকা সেরিজাওয়া। মাত্র ৩৪ বছর বয়সে আত্মহত্যা করেন তিনি। জানা যায়, মৃত্যুর আগের এক সপ্তাহ টানা ৯০ ঘণ্টা কাজ করেছিলেন তিনি।

অতিরিক্ত কাজের চাপে এক বছর আগে চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কিন্তু তার পদত্যাগপত্র নিতে অস্বীকার করে কোম্পানিটি। তাই সমস্যা থাকা সত্ত্বেও তাকে কাজে যেতে হয়। তার মা জানান, সময় স্বল্পতার কারণে অনেক সময় তিনি নিজের বাড়িতে যেতে পারতেন না, পথে তার মার বাড়িতে এসে ঘুমিয়ে পড়তেন। তার সাথে জুলাই মাসে শেষ দেখা হয় তার মায়ের। জানান, তখনো তাকে ব্যস্তই দেখাচ্ছিল। তারপর ২৬ জুলাই নিখোঁজ হন কিয়োটাকা। তিন সপ্তাহ পর জাপানের দ্বীপাঞ্চল নাগানোতে নিজ গাড়িতে তার লাশ পাওয়া যায়। জানা যায় বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন তিনি।

কানসাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কোজি মোরিওকা বলেন, জাপানে ওভারটাইম বলতে কিছু নেই, সব জায়গাতেই অতিরিক্ত ঘন্টা কাজ করতে হয়। যা মূল কাজের অংশ হিসেবেই ধরা হয়। আরো জানান, ‘এটা কারো ওপর চাপানো হয় না বরং আবশ্যিক হিসেবেই সবাই কাজ করে।’

যেখানে বিশ্বে সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টাকে কাজের মৌলিক সময় হিসেবে বিবেচনা করা হয় সেখানে খারাপ পারফরম্যান্সের ভয়ে জাপানের বেশিরভাগ মানুষ কাজ করেন ৬০ ঘণ্টা।

কাজের নির্দিষ্ট সময়ের বাইরের সময়টাকেও তারা ওভারটাইম হিসেবে বিবেচনা না করে ‘সার্ভিস ওভারটাইম’ হিসেবেই ধরেন। যেটা করেন তারা বিনামূল্যে।

জাপানের শ্রম মন্ত্রণালয় জানায়, গত বছর অতিরিক্ত কাজের চাপে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন অন্তত ১শ ৮৯ জন। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা এ সংখ্যা হাজার।

কয়েক দশক ধরে চলা এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য সরকার মাত্র ১৮ মাস আগে একটি আইন প্রণয়ন করে। যেখানে সাপ্তাহিক কর্মঘণ্টা ২০ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে আনা, ছুটির সুবিধা বাধ্যতামূলক করাসহ বেশ কয়েকটি বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হয়।

জাপানের একজন আইনজীবী কাওয়াহিতো এ বিষয়ে বলেন, সরকারের নেয়া পদক্ষেপগুলো কর্মক্ষেত্রে কিছু প্রভাব ফেললেও মূল সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। তিনি নিজে জাপানে বসবাস করলেও ইউরোপিয়ান সময় মেনে কাজ করেন বলে জানান ওই তরুণ আইনজীবী।

এদিকে টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কেনিচি কুরোদা জানান, ‘ইউরোপের দেশগুলোতে কাজের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সুবিধা দিয়ে থাকে। আপনি যেখানে ভালো পরিশ্রমিক পাবেন সেখানে যোগ দেয়ার স্বাধীনতা রয়েছে। কিন্তু জাপানে এক কোম্পানি থেকে আরেক কোম্পানি যোগদান অত্যন্ত কঠিন।’

আরো জানালেন, ‘কারাওশি’ থেকে একা মুক্তিলাভ করা অসম্ভব তবে আমাদের এ ‘সার্ভিস ওভারটাইম’ এর সংস্কৃতি বদলাতে হবে। পরিবার ও শখের জন্য সময় বের করতে হবে। যদিও দীর্ঘক্ষণ কাজ করা জাপানের শেকড়ে মিশে আছে।