ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক ৪ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে এসে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে তিনটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর এবং একটি পুরোনো চুক্তি নবায়ন হয়েছে। সমঝোতা স্মারকের আওতায় ভুটানের থিম্পুতে একটি বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট করে দেবে বাংলাদেশ। কুড়িগ্রামে ভুটানের জন্য একটি বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হবে। এছাড়া ভোক্তা সুরক্ষায় প্রযুক্তিগত সহযোগিতা জোরদার করা হবে দুদেশের মধ্যে। এদিকে ভুটানের রাজার ঢাকা সফর উপলক্ষ্যে একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার সংহতি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য দুই দেশ সড়ক, রেল ও পানিপথে কানিক্টিভিটি দৃঢ় করবে। বর্তমান যুগটি কানেক্টিভিটির। এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করার মাধ্যমে উন্নয়নের যে ধারণা, তা আমরা ভুটানের সঙ্গেও প্রয়োগ করতে পারি।
ভুটান আমাদের অন্যতম নিকট প্রতিবেশী দেশই শুধু নয়, বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে এই দেশটি একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি প্রদান করেছিল ভুটান। কাজেই ভুটানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আত্মিকও বটে। বাংলাদেশ ও ভুটান দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্কেরও সদস্য। বর্তমানে সার্কের কার্যকারিতা প্রায় স্তিমিত হয়ে পড়ায় এখন দ্বিপক্ষীয় ও উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার বিষয় দুটি গুরুত্বের সঙ্গে সামনে চলে এসেছে। প্রতিবেশী দেশ হিসাবে ভুটানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মাধ্যমে দুই দেশই উপকৃত হতে পারে। এক্ষেত্রে উভয় দেশেই এমন কিছু বিষয় ও পণ্য আছে, যা বিনিময়যোগ্য হয়ে উঠলে দুই দেশেরই সমৃদ্ধি ঘটবে। যেমন, জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে ভুটান বেশ এগিয়ে গেছে। দেশটির কাছ থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বড় সুযোগ রয়েছে আমাদের। এ নিয়ে অনেকদিন ধরেই চলছে আলোচনা। আমরা আশা করব, বিষয়টি অচিরেই চূড়ান্ত হবে। অন্যদিকে ভুটান বাংলাদেশের কাছ থেকে কৃষি, শিক্ষা, আইসিটি ইত্যাদি খাতে সহযোগিতা পেতে পারে। ভুটানের অনেক শিক্ষার্থী বাংলাদেশে পড়ালেখা করছেন। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, দুই দেশের পর্যটন-সম্পর্ক সম্প্রসারণ করা। বাংলাদেশ থেকে যতসংখ্যক পর্যটক ভুটানে যান, বাংলাদেশে আগত ভুটানি পর্যটকদের সংখ্যা তার চেয়ে অনেক কম। দেশে পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটিয়ে ভুটানের পর্যটকদের অধিকমাত্রায় আকৃষ্ট করা সম্ভব। আমরা ভুটানের সঙ্গে আমাদের ভ্রাতৃপ্রতিম সম্পর্কের উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি প্রত্যাশা করছি।