প্রত্যন্ত অঞ্চলে নীরবে আলো ছড়াচ্ছে জিমি কার্টারের নামে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নীরবে গড়ে উঠেছে ভালো কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে খুব একটা প্রচার হয় না। কিন্তু গ্রামের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মানুষের সন্তানরা এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা লাভ করে দেশে ও বিদেশে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করছে। এ ধরনের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে চাঁদপুর জেলার উত্তর মতলব থানার ইসলামাবাদ গ্রামে। প্রত্যন্ত গ্রামের মাঝে বিলের তীরে গড়ে উঠা এই স্কুলের নাম দ্য কার্টার একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজ।

এই স্কুল অ্যান্ড কলেজটি গ্রামের মাঝে গড়ে উঠলেও অন্যান্য গতানুগতিক স্কুল বা কলেজের মতো নয়। জাতীয় শিক্ষাক্রম অনুযায়ী এই স্কুলের পড়ালেখা হয় ইংরেজি মাধ্যমে। শিক্ষাথীদের প্রায় সবাই আবাসিক। অর্থাৎ যারা এই স্কুলে ভর্তি হয় তারা স্কুলের ডরমিটরিতে থাকে।

প্রাথমিক পর্যায়ের লেখাপড়া শেষ করে কার্টার একাডেমিতে ভতি হতে হয় ষষ্ঠ শ্রেণিতে। এখানে তারা একাদশ শ্রেণি বা কলেজ পর্যন্ত পড়তে পারে। দেখা যাচ্ছে, বাংলা মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে ষষ্ঠ শ্রেণিতে এসে শিক্ষার্থীরা ইংরেজি মাধ্যমে লেখা পড়া করছে। স্কুলটির বিশেষত্ব হচ্ছে— ষষ্ঠ শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ভাষা শেখার দক্ষতার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ার কারণে পরবর্তীতে উচ্চ শিক্ষা বা বিদেশে লেখাপড়া কিংবা কর্মসংস্থানে প্রবেশ করা সহজ হয়ে যায়।

কার্টার একাডেমির আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো— এটি আবাসিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বলে রাখা ভালো, এই স্কুলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা যে শুধু জেলার বাইরে দূর থেকে আসে তা নয়। স্থানীয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই আবাসিক। অধিকাংশ শিক্ষার্থীর ওই গ্রাম বা আশপাশের এলাকায় বাড়ি। কিন্তু তারা লেখাপড়া করে ডরমিটরিতে থেকে। এর কারণ হচ্ছে- শিক্ষার্থীরা সার্বক্ষণিক শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে থাকে। যেখানে তাদের নিয়ম করে লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা ও বিনোদনের ব্যবস্থাও আছে।

ফলে বাড়িতে থাকার চেয়ে ডরমিটরিতে থাকাটা শিক্ষার্থীদের জন্য আনন্দদায়ক হয়ে ওঠে। শিক্ষার্থীরা স্কুলের পাশে হলেও বাড়িতে না থেকে যেহেতু ডরমিটরিতে থাকে, সে কারণে শিক্ষকরাও বাড়ি এবং স্কুলের পরিবেশের মধ্যে সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করেন। প্রত্যন্ত গ্রামে ডরমিটরিতে থেকে লেখাপড়া করার এমন উদ্যোগ দেশে খুব একটা নেই বলবাড়িতে না থেকে স্কুলের ডরমিটরিতে থাকার কারণে অভিভাবকরা অনেকটা নিশ্চিত থাকেন। সন্তানরা সবসময় শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে থাকে। স্থানীয় মানুষের কাছেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির প্রতি আছে বিশেষ ধরনের ভালোবাসা।

দেশের যেসব জেলার বেশি মানুষ প্রবাসে থাকে, তার মধ্যে চাঁদপুর জেলা একটি। দেশের শীর্ষ ১০ রেমিট্যান্স আনা জেলার একটি হচ্ছে চাঁদপুর। প্রায় প্রতিটি পরিবারে কেউ না কেউ প্রবাসে থাকেন। ফলে বাবার অবর্তমানে মায়ের পক্ষে সংসার সামলে সন্তানকে আলাদা করে লেখাপড়ার জন্য সময় দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এ কারণে স্কুলটি হয়ে উঠেছে প্রবাসী পরিবারের সন্তানদের লেখাপড়ার আদর্শ স্থান। যেখানে স্কুলের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের ভূমিকা পালন করে থাকেন।

চাঁদপুরের মতলব থানার প্রত্যন্ত গ্রামে এই স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি গোলাম সোহরাওয়ার্দী। যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিতে স্থায়ীভাবে থাকার পরও নিজের গ্রামের মানুষের শিক্ষার প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে তিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছেন।

এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে আছে আরেকটি ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশে সাধারণত বেসরকারি পর্যায়ে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয় নিজের বা পরিবারের কোনো সদস্যর নামে। কিন্তু এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৯তম প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের নামে। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রেসিডেন্ট একজন মানবতাবাদী রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে সারা বিশ্বে ছিলেন সমাদৃত। যিনি বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় নিয়েছিলেন সাহসী অনেক সিদ্ধান্ত। তিনি শুধু রাজনীতিক ছিলেন না, একজন ভালো লেখকও ছিলেন।

প্রেসিডেন্ট কার্টারের জীবন থেকে শিক্ষার্থীরা যাতে অনুপ্রাণিত হতে পারে, সে জন্য স্কুলটির নাম দেওয়া হয়েছে কার্টার একাডেমি। চাঁদপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের স্কুলটি সত্যিকার অর্থেই জ্ঞানের আলো বিতরণ ও অত্র অঞ্চলে শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী ভূমিকা রাখছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর