‘বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ, এটা যে কত কষ্টের’

ছেলে যেন বখে না যায়, এজন্য কর্মে দিয়েছিলেন বাবা। দুই জনের কর্মস্থল ছিলো পাশাপাশি। বাবার সাথেই আসা যাওয়া করতো ১৭ বছরের রাহাত। সেদিনও বাবার সাথেই এসেছিল গুলিস্তানে অফিসে। কিন্তু আর ফেরা হয়নি রাহাতের। ফিরেছে ছেলের প্রাণহীন দেহ।

গত বছরের ৭ মার্চ গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে বিআরটিসি বাসস্ট্যান্ড কাউন্টারের পাশে কুইনস স্যানিটারি মার্কেট নামক ৭ তলা বিল্ডিংয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ওই বিল্ডিংয়ে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস থেকে একটি পার্সেল নিতে এসেছিলো রাহাত। পার্সেল নিয়ে ফেরার সময় বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় রাহাতের। ওই বিস্ফোরণে ২৪ জনের মৃত্যু হয়।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে রাহাত ছিলো মেঝো। ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। এরপর আর স্কুলে যায়নি। বাসায় থাকতো। ছেলেটা যেনো বখে না যায় এজন্য একটি চাকরিতে ঢুকিয়ে দেই। আমার সাথেই কেরানীগঞ্জ থেকে অফিসে আসতো। দুপুরে খাবারের সময় হলে আমার কাছে এসে টাকা চেয়ে নিয়ে খেতো। একটা বছর হয়ে গেলো ছেলেটা আমার সাথে আসে না। সব সময় ছেলের কথা মনে পড়ে।

সেদিনের বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সেদিন ওই বিল্ডিংয়ে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসে অফিসের একটা পার্সেল ফেরত এসেছিলো। ও ওইটা রিসিভ করতে এসেছিলো। রিসিভ করে সেখান থেকে বের হয়। এরপর তার এক বন্ধুর সাথে দেখা হয়। ওই বিল্ডিংয়ের সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে দুই জনে কথা বলছিলো। হঠাৎ বিস্ফোরণ। দুইজনই মারা যায়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল গিয়ে লাশ পাই। সেখানে না দাঁড়িয়ে যদি চলে যেতো তাহলে আল্লাহর ইচ্ছায় হয়তো তারা বেঁচে যেতো।

তিনি বলেন, ওই দিন ছিলো শবে বরাতের রাত। রাতে ওরা ৩০/৪০ জন বন্ধু একই ধরনের পাঞ্জাবি কেনার প্ল্যান করছিলো। টাকাও নিয়েছিলো। কিন্তু কিনতে আর পারলো না। ছেলেটা মরেই গেলো। একজন বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ এটা যে কত কষ্টের তা সেই বাবাই জানেন। অন্য কেউ বুঝবে না। তার অভাব পূরণ হওয়ার না। তার মা সব সময় ছেলের জন্য কান্নাকাটি করে। নিজেকেও ঠিক রাখতে পারি না।

যাদের কারণে সন্তানকে হারিয়েছি তাদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা চাই। এতগুলো প্রাণ চলে গেলো কয়েকজনের অবহেলায়। যারা চলে গেছে তারা তো আর ফিরবে না। তবে দোষীদের সাজা চাই।

উল্লেখ্য, গত বছর ৭ মার্চ গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে বিআরটিসি বাসস্ট্যান্ড কাউন্টারের পাশে কুইনস স্যানিটারি মার্কেট নামক ৭ তলা বিল্ডিংয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় বিস্ফোরণ ঘটে। বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটে প্রথম বিস্ফোরণের খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। এর সাত মিনিটের মাথায় ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে। বিস্ফোরণের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস ছাড়াও সেনাবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ, সিটিটিসি, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াড মোতায়েন করা হয়। ফায়ার সার্ভিসের দেওয়া সর্বশেষ তথ্যমতে, বিস্ফোরণে ২৪ জন মারা যান। এ ঘটনায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ এনে ৯ মার্চ মামলা দায়ের করেন বংশাল থানার সাব-ইন্সপেক্টর পলাশ সাহা। প্রথমে তদন্ত শুরু করে বংশাল থানা পুলিশ। এরপর মামলার তদন্তভার ডিবি পুলিশকে দেওয়া হয়। বর্তমানে মামলার তদন্তের দায়িত্বে রয়েছে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর